ইত্তেহাদ এক্সক্লুসিভ

পায়রা বন্দরের ১৪ পদে নিয়োগে ব্যাপক দুর্নীতি

image 788592 1711317076
print news

ইত্তেহাদ  নিউজ ডেস্কপায়রা সমুদ্র বন্দরের ১৪টি গুরুত্বপূর্ণ পদে লোক নিয়োগে মোটা অঙ্কের অর্থ লেনদেনের অভিযোগের তদন্ত শুরু করেছে নৌপরিবহণ মন্ত্রণালয়। তদন্তের দায়িত্ব পেয়ে মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব শেখ মো. শরীফ উদ্দিন গত মঙ্গলবার নিয়োগ সংক্রান্ত সব নথিপত্র চেয়ে চিঠি দিয়েছেন বন্দর চেয়ারম্যানকে। এ বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনও (দুদক) পৃথক তদন্ত শুরু করেছে। চাকরি প্রার্থী এক তরুণের অভিযোগের প্রেক্ষিতে ওই তদন্ত করছে দুদক। তবে তদন্ত চলছে স্বীকার করলেও এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল আব্দুল্লাহ আল মামুন চৌধুরী। তদন্ত শেষে অভিযোগ প্রমাণিত হলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।

গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে পায়রা বন্দরের রাজস্ব খাতে সৃষ্ট ১৪টি শূন্য পদে নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু করে বন্দর কর্তৃপক্ষ। গুরুত্বপূর্ণ এসব পদে নিয়োগে শুরু থেকেই ওঠে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বিপুল অর্থ লেনদেনের অভিযোগ। এক পর্যায়ে এই নিয়োগ নিয়ে বন্দর কর্তৃপক্ষসহ দুদক, নৌপরিবহণ মন্ত্রণালয় ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে লিখিত অভিযোগ দেন চাকরি প্রত্যাশীরা। লিখিত অভিযোগে বন্দর কর্তৃপক্ষের উপ-পরিচালক (সংস্থাপন ও নিয়োগ) তায়েবুর রহমান ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. হেলাল উদ্দিনের বিরুদ্ধে সিন্ডিকেট করে অর্থের বিনিময়ে নিয়োগ দেওয়ার অভিযোগ করেন তারা। উল্লিখিত দুজন নিয়োগ কমিটি ও পরীক্ষা কমিটির সদস্য সচিব ছিলেন।

লিখিত অভিযোগে আজিজুর রহমান নামে এক চাকরি প্রার্থী বলেন, ‘নিয়োগ পেতে মোটা অঙ্কের টাকা দিতে হবে বলে আমায় জানান বন্দরের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা। তিনি আরও জানান পুরো বিষয়টি নিয়ন্ত্রণ করছেন উপ-পরিচালক তায়েবুর রহমান। এই তায়েবুর রহমান প্রথমে টাকার বিনিময়ে নিয়োগ দেওয়ার চুক্তি করেন। পরে নির্ধারিত রোল নম্বর ও শর্ত অনুযায়ী টাকা পাঠিয়ে দেন অধ্যাপক হেলাল উদ্দিনের কাছে। হেলাল উদ্দিন সংশ্লিষ্ট নিয়োগ প্রার্থীর খাতায় নম্বর বাড়িয়ে দেওয়াসহ প্রয়োজনে তার খাতা নতুন করে লিখিয়ে চাকরি প্রদানের ব্যবস্থা করেন। দুজনের এই সিন্ডিকেটের মাধ্যমে সম্পন্ন হয় ১৪ পদে নিয়োগের প্রক্রিয়া।’

বিস্ময়কর হলেও সত্য যে বন্দর কর্তৃপক্ষ নিয়োগ পরীক্ষার ফলাফল ঘোষণার আগেই বিভিন্ন পদে নিয়োগপ্রাপ্ত ১২ জনের রোল নম্বর ছড়িয়ে পড়ে চাকরি প্রত্যাশীদের কাছে ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। তাতে দেখা যায় সহকারী পরিচালক (হিসাব) পদে রোল নং ১১০০০০৪২, ইঞ্জিন ড্রাইভার পদে রোল নং ১২০০০০৫৫, ট্রাফিক ইন্সপেক্টর পদে রোল নং ১৭০০০০১৬ ও ১৭০০০০৭০, সিনিয়র অ্যাকাউন্টস অ্যাসিস্ট্যান্ট পদে রোল নং ১৫০০০১৪৯, প্রধান সহকারী পদে রোল নং ১৩০০০১১৭, ব্যক্তিগত সহকারী পদে রোল নং ১৪০০০১০২, স্টেনো টাইপিস্ট কাম কম্পিউটার অপারেটর পদে রোল নং ১৬০০০১০০, অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক পদে রোল নং ১৮০০০৭৩৯, সুকানী পদে রোল নং ২০০০০১১৮, অফিস সহায়ক পদে রোল নং ২১০০০০১৭ এবং নিরাপত্তারক্ষী পদে রোল নং ২২০০০০৫৯ নিয়োগ পেয়েছে। যদিও নিয়োগপ্রাপ্তদের এই ফলাফল এখন পর্যন্ত কোনো গণমাধ্যমে প্রকাশ করেনি পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষ।

বন্দরের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, যাদেরকে নিয়োগের জন্য চূড়ান্ত করা হয়েছে তাদের ডাকযোগে নিয়োগপত্র পাঠানো হয়েছে। তবে কেউ এখন পর্যন্ত চাকরিতে যোগ দিয়েছে কি না তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

কলাপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুক্তিযোদ্ধা আবদুল মোতালেব তালুকদার বলেন, ‘কেবল নিয়োগ নয়, পুরো পায়রা বন্দর চলে একটি সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণে। সেই সিন্ডিকেটের মূল হোতা বন্দরের প্রধান প্রকৌশলী (সিভিল) মো. নাসির উদ্দিন ও নির্বাহী প্রকৌশলী (জেটি) মোস্তফা আসিক আলী। এখানে যত ঠিকাদারি-সাপ্লাইয়ের কাজ তা করানো হয় নাসিরের আপন ভাই এবং তার লোকজনকে দিয়ে। বন্দরের কোটি কোটি টাকা লোপাট করে এরা। যাদের জমিতে এই বন্দর প্রতিষ্ঠিত তাদেরকে চাকরিসহ যে কোনো ধরনের কাজে অগ্রাধিকার দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেই নির্দেশনা উপেক্ষা করে এখানে আজ পর্যন্ত যত নিয়োগ হয়েছে তার সবগুলোই নিজেদের আত্মীয়স্বজন এবং টাকার বিনিময়ে দূর-দূরান্তের লোকজনকে দিয়েছে এই সিন্ডিকেট। সর্বশেষ নিয়োগেও জমিদাতা কিংবা তাদের পরিবারের কাউকে চাকরি দেওয়া হয়নি। এর আগে এই বন্দরে আরো ২৬ জনের নিয়োগ নিয়ে দুর্নীতি-স্বজনপ্রীতির অভিযোগ উঠেছিল।’

১৪ পদে নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগ তদন্তের দায়িত্ব দিয়ে ৭ কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয় অতিরিক্তি সচিব শেখ মো. শরিফ উদ্দিনকে। নৌপরিবহণ মন্ত্রণালয়ের এই আদেশ পাওয়ার পর মঙ্গলবার বন্দর কর্তৃপক্ষকে দেওয়া এক চিঠিতে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় থাকা কর্মকর্তাদের নাম ও পদবিসহ নিয়োগ সংক্রান্ত যাবতীয় কাগজপত্র চান তিনি। দুই কর্মদিবসের মধ্যে এসব নথির সত্যায়িত অনুলিপিসহ সব কাগজপত্র পাঠাতে বলেন তিনি।

এ বিষয়ে কথা বলার জন্য বন্দরের প্রধান প্রকৌশলী নাসির উদ্দিন ও নির্বাহী প্রকৌশলী মোস্তফা আসিক আলীকে ফোন দেওয়া হলেও ধরেননি তারা। উপপরিচালক (সংস্থাপন ও নিয়োগ) তায়েবুর রহমানকে যতবার ফোন দেওয়া হয় ততবারই তিনি কেটে দেন।

বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল আব্দুল্লাহ আল মামুন চৌধুরী বলেন, ‘বন্দরের রাজস্ব খাতভুক্ত ১৪টি সৃষ্ট শূন্য পদে নিয়োগের বিষয়ে একটি অভিযোগের তদন্ত শুরু করেছে মন্ত্রণালয়। এ সংক্রান্ত চিঠি পেয়েছি আমরা। তদন্ত কর্মকর্তাকে সবরকম সহযোগিতা করা হচ্ছে। তবে এটা যেহেতু তদন্তাধীন বিষয় তাই আমি কোনো মন্তব্য করব না। তদন্ত শেষেই জানা যাবে অভিযোগগুলো সত্য নাকি মিথ্যা।

 

* সর্বশেষ  গুরুত্বপূর্ণ  সব  সংবাদ, ছবি ,অনুসন্ধানী প্রতিবেদন লেখা পেতে আমাদের  ফেসবুক পেইজে  লাইক  দিয়ে  অ্যাকটিভ  থাকুন।  ভিজিট করুন : http://www.etihad.news

* অনলাইন  নিউজ পোর্টাল  ইত্তেহাদ নিউজে  লিখতে  পারেন  আপনিও। লেখার বিষয়  ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন  [email protected] ঠিকানায়

সংবাদটি শেয়ার করুন....
ইত্তেহাদ নিউজ ডেস্ক :

ইত্তেহাদ নিউজ ডেস্ক :

About Author

etihad news is one of the famous Bangla news portals published from Abudhabi-UAE. It has begun with a commitment to fearless, investigative, informative, and independent journalism. This online portal has started to provide real-time news updates with maximum use of Smart Technology.

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *