ইত্তেহাদ এক্সক্লুসিভ

মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশ,কেমন আছেন বীর উত্তমরা

Background radial gradient dark
print news

ভয়েস অফ আমেরিকা:

১৯৭১ সালে এক সশস্ত্র সংগ্রামের মধ্য দিয়ে বঙ্গপোসাগর তীরবর্তী ৫৬ হাজার বর্গমাইল ভূখণ্ডে নতুন রাষ্ট্র বাংলাদেশের জন্ম।স্বাধীনতা উত্তরকালে ১৯৭২ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন সরকারের মন্ত্রীপরিষদের এক বৈঠকে চার ক্যাটাগরিতে ৬৭৬ জন মুক্তিযোদ্ধাকে বীরত্বপূর্ণ ভূমিকার জন্য সম্মাননা খেতাব দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়।৭ বীরশ্রেষ্ঠ, ৬৮ বীরউত্তম, ১৭৫ বীর বিক্রম এবং ৪২৬ বীর প্রতীক হিসেবে সম্মাননা খেতাব পান।১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্বপরিবারে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় প্রতিরোধ গড়ে তোলার ভূমিকা নেয়ায় একজনকে বীর উত্তম খেতাব দেয়া হয়। ওই হত্যাকাণ্ডে আত্মস্বীকৃত খুনি হিসেবে ৪ জনের খেতাব বাতিল করা হয়।মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ২০২৩ সালের ডিসেম্বর মাসের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে ২ লাখ ৪০ হাজার ১৭৩ জন সম্মানী ভাতাভোগী মুক্তিযোদ্ধা রয়েছেন।সম্মুখ সমরে আত্মাহুতি দেয়া ৭ বীরকে দেয়া হয়েছে ‘বীরশ্রেষ্ঠ’ উপাধি। বীরশ্রেষ্ঠদের বীরত্বের গাথা উঠে এসেছে পাঠ্যবইসহ নানা গবেষণা গ্রন্থে। ব্যক্তি পর্যায়ের কিছু গবেষণায় ও লেখালেখিতে বীর উত্তম, বীর বিক্রম ও বীর প্রতীকদের বীরত্বের কিছু তথ্য পাওয়া যায়।

বীর উত্তম খেতাবপ্রাপ্ত ৬৭ জনের মধ্যে বেঁচে আছেন ১১ জন

ভয়েস অফ আমেরিকা পক্ষে থেকে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বীর উত্তম খেতাবপ্রাপ্ত ৬৭ জনের মধ্যে বর্তমানে মাত্র ১১ জন বেঁচে আছেন। তাদের মধ্যে কয়েকজন গুরুতর অসুস্থ।বীর উত্তম খেতাবপ্রাপ্ত মধ্যে বর্তমানে বেঁচে আছেন মেজর জেনারেল (অব) কাজী মুহাম্মদ সফিউল্লাহ (অসুস্থ), মেজর (অব) রফিকুল ইসলাম, মেজর জেনারেল (অব) হারুন আহমেদ চৌধুরী (বিদেশে), মেজর (অব) মো. শাহজাহান ওমর, লে. কর্ণেল (অব) মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিন আহমেদ (অসুস্থ), মেজর জেনারেল (অব) মোহাম্মদ আজিজুর রহমান, শাহাব উদ্দিন আহম্মেদ, এম এইচ সিদ্দিকী, আব্দুল কাদের সিদ্দিকী, আব্দুল করিম খন্দকার, ও মোঃ জালাল উদ্দিন।

কেমন আছেন বীর উত্তমরা?

১১ জন বীর উত্তমদের মধ্যে অনেকে বার্ধক্য জনিত নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে গুরুতর অসুস্থ পড়েছেন। আবার অনেকে নানান কারণে লোকচক্ষুর আড়ালে চলে গেছেন।এছাড়া, নানা ক্ষোভের কারণে মুক্তিযুদ্ধ ও নিজেদের বীরত্বের বিষয়ে, গণমাধ্যমের সঙ্গে খুব একটা কথা বলতে চান না ।
Sahab Uddin Ahmed BU

সাহাবউদ্দিন আহমেদ বীর উত্তম

জীবিত বীর উত্তমদের একজন সাহাবউদ্দিন আহমেদ। তিনি ১৯৭১ সালে পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইনসে (পিআইএ) কর্মরত ছিলেন।মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে ৭ এপ্রিল ভারতে গিয়ে মুক্তিযুদ্ধের নানা সাংগঠনিক কাজ করেন। ২৮ সেপ্টেম্বর মুক্তিবাহিনীর বিমানবাহিনী গঠিত হলে তিনি তাতে যোগ দেন। তিনি ভয়েস অফ আমেরিকাকে বলেন, তিনি বেশ কয়েকটি অপারেশনে অংশ নেন। এরমধ্যে ৬ ডিসেম্বর মৌলভীবাজারে এবং ৭ ডিসেম্বর সিলেটের শমশেরনগরে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর গুলিতে তাঁর হেলিকপ্টার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল।বীর শ্রেষ্ঠদের মতো বীর উত্তমসহ অন্যান্য মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বের কথা পাঠ্যবইয়ে অন্তর্ভুক্ত করা হলে সহজে নতুন প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাসটা জানতে পারবে।নতুন প্রজন্ম নানাভাবে মুক্তিযুদ্ধ এবং মুক্তিযোদ্ধাদের ইতিহাস জানছে বলে উল্লেখ করে সাহাবউদ্দিন আহমেদ বলেন, “বীর শ্রেষ্ঠদের মতো বীর উত্তমসহ অন্যান্য মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বের কথা পাঠ্যবইয়ে অন্তর্ভুক্ত করা হলে সহজে নতুন প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাসটা জানতে পারবে।”মুক্তিযুদ্ধের সময় নিজের সহকর্মীদের নিয়ে স্মৃতিচারণ করে সাহাবউদ্দিন বলেন, বিমানবাহিনীর আমরা ৯ জন ছিলাম। তার মধ্যে এখন বেঁচে আছেন মাত্র আলমগীর সাত্তার বীর প্রতীক। “আর কেউ নেই।”অবসর সময় কিভাবে কাটে জানতে চাইলে বলেন, “সময় কেটে যায়। আমাদের দেশের মানুষ তো বিপদে আছে। আমাদের ক্ষমতা কম। তার মধ্যে সুযোগ পেলে আন্তরিকভাবে সাহায্য করার চেষ্টা করি। বই পড়ে এইভাবে সময় কেটে যাচ্ছে।”বঙ্গবন্ধুর নির্দেশনায় মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছেন বলে উল্লেখ করে সাহাবউদ্দিন বলেন, ‘‘উনি তো ৭ মার্চ সবই বলে দিয়েছিলেন। তখনি আমাদের মানসিক প্রস্তুতি হয় যুদ্ধে যাওয়ার। আর মার্চের ৫ তারিখে আমরা ১২ জন পাইলট বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে দেখা করলাম। যুদ্ধের শুরুর দিকেই ঢাকায় বাঙালি যে ১২ জন পাইলট ছিলেন তার মধ্যে ৬ জনই প্রথম ভারতে পার হয়ে গেলাম। ভারত সরকারকে বিমানবাহিনী সম্পর্কে বললাম। তারা গ্রহণ করলেন এবং বললেন- এটা কিন্তু তোমাদের সরকারের মাধ্যমে আমাদের কাছে আসতে হবে।’’

Kazi Mohammed Shafiulla BU

কাজী মুহম্মদ সফিউল্লাহ বীর উত্তম

১৯৭১ সালে কাজী মুহম্মদ সফিউল্লাহ পাকিস্তান সেনাবাহিনীর দ্বিতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সেকেন্ড ইন কমান্ড ছিলেন। ২৮ মার্চ বিদ্রোহ করে মুক্তিযোদ্ধে যোগ দেন তিনি। তিনি ৩নং সেক্টরের সেক্টর কমান্ডার এবং এস ফোর্সের প্রধান হিসেবে হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।স্বাধীন বাংলাদেশের দ্বিতীয় সেনাপ্রধান সফিউল্লাহ বর্তমানে অসুস্থ বলে জানা গেছে।

দৈনিক প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমানের- একাত্তরের বীরযোদ্ধাঃ খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা দ্বিতীয় খন্ডে কাজী মুহাম্মদ সফিউল্লাহ বলেন, “২৯ মার্চ বিকেলে জেলা (ময়মনসিংহ) অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের সমস্ত অফিসার, জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচিত এমএনএ ও এমপিএদেরকে নিয়ে এক বৈঠক করা হয়। সেই বৈঠকে কীভাবে যুদ্ধ পরিচালনা করতে হবে তার পরিকল্পনা নিই।”তিনি আরও বলেন, “৩০ মার্চ ময়মনসিংহ থেকে ট্রেনযোগে নরসিংদী রওনা দিই। আসার পূর্বে আমি জনগণকে আশ্বাস দিলাম যে, আমি আমার ব্যাটালিয়ন নিয়ে শত্রুবাহিনীর বিরুদ্ধে আক্রমণ করতে যাচ্ছি। আমার হেডকোয়ার্টার্স স্থাপন করি কিশোরগঞ্জ। আর আমার লোকজন বিভিন্ন গন্তব্যে অগ্রসর হয়।”৩ নম্বর সেক্টর এলাকায় তাঁর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ পরিচালনায় মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে অসংখ্য যুদ্ধে অংশ নেন। তাঁর সার্বিক নেতৃত্বে বেশ কয়েকটি সরাসরি যুদ্ধও সংঘটিত হয়।

MD Ziauddin BU

মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিন বীর উত্তম

মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিন মুক্তিযুদ্ধের সময় ছিলেন প্রথম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের অধিনায়ক। বর্তমানে এই বীর মুক্তিযোদ্ধা গুরুতর অসুস্থ।২২ মার্চ মোবাইল ফোনে সংক্ষপে ভয়েস অফ আমেরিকাকে তিনি বলেন, “নতুন প্রজন্মের জন্য পাঠ্য পুস্তকে মুক্তিযুদ্ধের পুরো ইতিহাস তুলে ধরতে হবে।”মুক্তিযুদ্ধের এতো বছর পরে এসেও এখনও সঠিক মুক্তিযোদ্ধার তালিকা প্রণয়ন করতে না পারার আমাদের জন্য দুঃখজনক।যে লক্ষ্য নিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে তা যে লক্ষ্য নিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে তা এখনও পূর্ণাঙ্গভাবে বাস্তবায়ন হয়নি বলেও উল্লেখ করেন তিনি। বলেন, “মুক্তিযুদ্ধের এতো বছর পরে এসেও এখনও সঠিক মুক্তিযোদ্ধার তালিকা প্রণয়ন করতে না পারার আমাদের জন্য দুঃখজনক।”তার স্ত্রী জাহানারা বেগম বলেন, উনি খুব অসুস্থ, ৮৫ বছর বয়স হয়েছে। ক্যান্সারসহ অনেক জটিল রোগে আক্রান্ত। দেশে চিকিৎসা চলছে। বিদেশে নিয়ে চিকিৎসা করাতে চাইলে তিনি শেষ জীবনে দেশে চিকিৎসা নিতে চান বলে জানান। যার কারণে বাইরে নেওয়া হয়নি। এইভাবে চলছে।

ওমর বীর উত্তম

মো. শাহজাহান ওমর বীর উত্তম

পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সেনাকর্মকর্তা মো. শাহজাহান ওমর ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের শিয়ালকোটে কর্মরত ছিলেন। আগস্ট মাসের মাঝামাঝি সেখান থেকে পালিয়ে ভারতে যান এবং যুদ্ধে যোগ দেন। তাঁকে ৯ নম্বর সেক্টরের টাকি সাবসেক্টরের বরিশাল বেইজের অধিনায়ক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। তিনি বরিশাল এলাকায় একের পর এক পাকিস্তানি সেনাদের ওপর আক্রমণ চালিয়ে তাদের দিশেহারা করে তোলেন। নলছিটি উপজেলার চাচৈর যুদ্ধের কয়েক দিন পর রাজাপুরের যুদ্ধে তিনি আহত হন।২৬ মার্চ, ১৬ ডিসেম্বর আসলে আমাদের ফোন করা হয়। অর্থাৎ দিবসে আটকে আছে মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধারা।বিভিন্ন দিবস কেন্দ্রীক মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণ করা নিয়ে বিরক্ত শাহজাহান ওমর বীর উত্তম। তিনি ভয়েস অফ আমেরিকাকে বলেন, “২৬ মার্চ, ১৬ ডিসেম্বর আসলে আমাদের ফোন করা হয়। তখন এটা-ওটা জানতে চাওয়া হয়। অর্থাৎ দিবসে আটকে আছে মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধারা। এইগুলো নিয়ে এখন আর কথা বলতে ভালো লাগে না।” এর বাইরে আর কোন কথা বলতে রাজি হননি এই মুক্তিযোদ্ধা।

175343 eke

(এ কে খন্দকার) বীর উত্তম

বীর উত্তম আবদুল করিম খন্দকার (এ কে খন্দকার) ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে মুক্তিবাহিনীর উপপ্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। মুক্তিযুদ্ধে তাঁর ভূমিকা বহুমাত্রিক। বিশেষত, মুক্তিবাহিনীর বিমানবাহিনী গঠনে তাঁর ভূমিকা ছিল অনন্য।১৬ই ডিসেম্বর পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর আনুষ্ঠানিক আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে তিনি মুক্তিবাহিনীর পক্ষে প্রতিনিধিত্ব করেন। কিন্তু ২০১৪ সালে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে তার লেখা ‘১৯৭১: ভেতরে বাইরে’ বইটিতে বির্তকিত তথ্য দেওয়ার জন্য চাপে পড়েন। পরবর্তীতে ক্ষমা চেয়ে বইয়ের বির্তকিত অংশ প্রত্যাহার করে নেন। সেই থেকে অনেকটা আড়ালে চলে যান এই বীর উত্তম।২২ মার্চ মোবাইলে ফোনের নিজের শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে একে খন্দকার বলেন, কিছু সমস্যা থাকলেও ভালো আছেন।কিন্তু মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে জানতে চাইলে- এইগুলো পুরাতন বিষয় বলে এড়িয়ে যান এবং কোনও কথা বলতে রাজি হননি।তবে মতিউর রহমানের লেখা, একাত্তরের বীরযোদ্ধাঃ খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা দ্বিতীয় খন্ডে, নিজের মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেওয়ার প্রসঙ্গে এ কে খন্দকার উল্লেখ করেন, “২৫ মার্চের ক্র্যাকডাউনের পর আমি নিজেকে পাকিস্তান বিমানবাহিনীর সদস্য হিসেবে মেনে নিতে পারছিলাম না। আমি ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মারগুবের সঙ্গে যোগাযোগ করে ৩ এপ্রিল স্বাধীনতা যুদ্ধে যাওয়ার চেষ্টা করলাম। কিন্তু যোগাযোগ ব্যবস্থার জন্য যেতে পারিনি। ১৫ মে আগরতলায় পৌঁছি। ১৬ মে সকালে কলকাতার উদ্দেশে রওনা হই। কর্নেল ওসমানীর (আতাউল গনি ওসমানী, পরে জেনারেল) সঙ্গে দেখা হয়।”

635a02fbcbe351666843387635a02fbcbe42

কাদের সিদ্দিকী বীর উত্তম

১৯৭১ সালে বঙ্গবীর আবদুল কাদের সিদ্দিকী শিক্ষার্থী ছিলেন। তার সামরিক প্রশিক্ষণও ছিলো। স্কুলে পড়াকালে তিনি পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে যোগ দিয়েছিলেন। প্রশিক্ষণ শেষে সেনাবাহিনীতে কিছুদিন চাকরি করেন। ১৯৬৭ সালে চাকরি ছেড়ে দিয়ে আবার শিক্ষাজীবনে ফিরে যান।যুদ্ধ চলাকালে টাঙ্গাইলের মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে গড়ে ওঠে কাদেরিয়া বাহিনী। আবদুল কাদের সিদ্দিকী বাহিনীর সামরিক প্রধান এবং আনোয়ার-উল-আলম শহীদ বেসামরিক প্রধান ছিলেন। ওই সময়ে কাদেরিয়া বাহিনীর মুক্তিযোদ্ধারা টাঙ্গাইলে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে অসংখ্য সরাসরি যুদ্ধ ও অ্যামবুশ যুদ্ধ করেন। এর মধ্যে ধলাপাড়ার অ্যামবুশ অন্যতম।১৬ আগস্ট কালিহাতী উপজেলার ধলপাড়ার কাছাকাছি একটি স্থানে মুক্তিযোদ্ধাদের পাল্টা আক্রমণে পাকিস্তানি সেনারা পিছু হটছিল।পলায়নরত পাকিস্তানী সেনাদের আক্রমণ করতে উত্তেজিত হয়ে শোয়া অবস্থা থেকে উঠে পড়েন কাদের সিদ্দিকী। দাঁড়িয়ে এলএমজি দিয়ে পলায়নপর পাকিস্তানি সেনাদের লক্ষ্য করে গুলি করতে থাকেন। হঠাৎ পাকিস্তানি সেনাদের ছোড়া গুলিতে আহত হন তিনি। সহযোদ্ধারা তাঁকে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যান। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য ভারতে পাঠানো হয় তাঁকে।বর্তমানে মুক্তিযুদ্ধ ও নিজের বীরত্ব নিয়ে কথা বলতে রাজি নয় কাদের সিদ্দিকী। ২২ মার্চ ভয়েস অফ আমেরিকার পক্ষ থেকে ফোন করা হলে তিনি বলেন, “মুক্তিযুদ্ধের ৫৩ বছর পরে এসে এই বিষয়ে কোনও কথা বলতে চাই না।”

Untitled 5

হারুন আহমেদ চৌধুরী বীর উত্তম

পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন হারুন আহমেদ চৌধুরী ইপিআরে ছিলেন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় চট্টগ্রাম ইপিআর সেক্টরের অধীন ১৭ নম্বর উইংয়ের সহ-উইং কমান্ডার ছিলেন।২৫ মার্চ রাতেই ১৭ উইংয়ে কর্মরত বাঙালি ইপিআর সদস্যরা তাঁর নেতৃত্বে বিদ্রোহ করে কালুরঘাটে সমবেত হন। বর্তমানে এই বীর উত্তম দেশের বাইরে থাকেন বলে জানা গেছে।খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা বইয়ে হারুন আহমেদ চৌধুরী মুক্তিযুদ্ধের বীরত্বে প্রসঙ্গে বর্ণনা পাওয়া যায় যে — চট্টগ্রাম শহর দখলের পর পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর একটি বড় দল ১১ এপ্রিল সকালে অগ্রসর হয় কালুরঘাট অভিমুখে। পাকিস্তানি সেনাবাহিনী আর্টিলারি, মর্টার ও নৌবাহিনীর গান ফায়ারের সাপোর্ট নিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর প্রচণ্ড আক্রমণ শুরু করে।এরপর পাকিস্তানি সেনাবাহিনী দ্রুত অগ্রসর হয় সেতুর দিকে। হারুন আহমেদ চৌধুরী তাঁর দল নিয়ে ছিলেন সেতু এলাকায়। তাঁরা পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর আকস্মিক আক্রমণের শিকার হন। একদম কাছাকাছি দূরত্বে দুই পক্ষের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হয়ে যায়।মুক্তিযোদ্ধা সেখানে মাত্র ৩৫ জন। অন্যদিকে পাকিস্তানি সেনা কমপক্ষে ১০০ জন। হারুন আহমেদ চৌধুরী বিচলিত হননি। সাহসের সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে থাকলেন। কিন্তু বেশিক্ষণ পারলেন না। পাকিস্তানি সেনাদের ছোড়া একটি গুলি এসে লাগল তাঁর পেটে। সেতুর ওপর তিনি লুটিয়ে পড়েন। সৌভাগ্যক্রমে সেইদিন তিনি বেঁচে যান।

Jalal Bir Uttam BU

মোঃ জালাল উদ্দিন বীর উত্তম

বীর উত্তম মোঃ জালাল উদ্দিন বর্তমানে অসুস্থ বলে জানা যায়। ফোন করা হলে তিনি অসুস্থ কথা বলতে পারবেন না, বলে জানানো হয়।মো. জালাল উদ্দীন পাকিস্তানি নৌবাহিনীতে চাকরি করতেন। ১৯৭১ সালে কর্মরত ছিলেন চট্টগ্রামে। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে যোগ দেন যুদ্ধে। পরে ভারতে যান। মে মাসে তাঁকে মুক্তিবাহিনীর নৌ-কমান্ডো দলে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। বেশ কয়েকটি অপারেশনে অংশ নেন। মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত পর্যায়ে ‘অপারেশন হটপ্যান্টস’ অভিযানেও (৭-১০ ডিসেম্বর) তিনি অংশ নেন। ১০ ডিসেম্বর মিত্রবাহিনীর বিমান ভুলক্রমে তাঁদের গানবোটে বোমা ফেলে। এতে তাঁদের গানবোট ধ্বংস হয়ে যায়। তিনি আহত হন।

যাদের সাথে কথা বলা সম্ভব হয়নি

জীবিত বীর উত্তমদের মধ্যে মোহাম্মদ আজিজুর রহমান, এম এইচ সিদ্দিকী, রফিকুল ইসলাম সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি।

বর্তমানে সংসদ সদস্য দুই জন বীর উত্তম

গত ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেন ৩ জন বীর উত্তম। তার মধ্যে নির্বাচনে জয়লাভ করে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন শাহজাহান ওমর ও রফিকুল ইসলাম। আর নির্বাচনে পরাজিত হন বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী। এর আগে কাদের সিদ্দিকী, কাজী মুহাম্মদ সফিউল্লাহ, এ কে খন্দকার সহ একাধিক বীর উত্তম সংসদ সদস্য ও মন্ত্রী ছিলেন।

খেতাব বাতিল এক বীর উত্তমের

২০১২ সালে এক প্রজ্ঞাপনে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সহ অন্যদের হত্যা মামলায় সাজাপ্রাপ্ত আত্মস্বীকৃত খুনি লে. কর্নেল শরিফুল হক ডালিমের খেতাব বাতিল করা হয়।

 

* সর্বশেষ  গুরুত্বপূর্ণ  সব  সংবাদ, ছবি ,অনুসন্ধানী প্রতিবেদন লেখা পেতে আমাদের  ফেসবুক পেইজে  লাইক  দিয়ে  অ্যাকটিভ  থাকুন।  ভিজিট করুন : http://www.etihad.news

* অনলাইন  নিউজ পোর্টাল  ইত্তেহাদ নিউজে  লিখতে  পারেন  আপনিও। লেখার বিষয়  ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন  [email protected] ঠিকানায়

সংবাদটি শেয়ার করুন....
ইত্তেহাদ নিউজ ডেস্ক :

ইত্তেহাদ নিউজ ডেস্ক :

About Author

etihad news is one of the famous Bangla news portals published from Abudhabi-UAE. It has begun with a commitment to fearless, investigative, informative, and independent journalism. This online portal has started to provide real-time news updates with maximum use of Smart Technology.

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *