অনুসন্ধানী সংবাদ

ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল : রওশন হাবিব ও আব্দুল জব্বার সম্পদের পাহাড়

104126 45
print news

 সিলেট প্রতিনিধি :  ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের দুর্নীতির আরও দুই ‘নায়ক’ ওয়ার্ড মাস্টার রওশন হাবিব ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী সমিতির সভাপতি আব্দুল জব্বার। দুই হাতে টাকা কামিয়ে গড়ে তুলেছেন সম্পদের পাহাড়। এজন্য বারবারই তারা দু’জন বিতর্কিত হয়েছেন। কোনো কিছুর তোয়াক্কা না করে হাসপাতালে সিন্ডিকেট গড়ে টাকা লুটে যাচ্ছেন। সিলেট নগরেও আছে তাদের একাধিক বাড়ি। গত জানুয়ারি মাসে তাদের দুর্নীতির খতিয়ান তুলে ধরে দুর্নীতি দমন কমিশন দুদকের কাছে আবেদন করেছিলেন হাসপাতালের এক কর্মচারী। তার এই অভিযোগ আমলে নিয়ে দুদকের তরফ থেকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে অবগত করা হয়। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হাসপাতাল ক্লিনিক দপ্তরের অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিচালকের কার্যালয় থেকে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালককে বিষয়টি তদন্তের নির্দেশনা দেয়া হয়। ওসমানীর পরিচালক এই চিঠি পাওয়ার পর হাসপাতালের নিউরো সার্জারি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. এসএম আসাদুজ্জামানকে প্রধান করে ৩ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করে দেন। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন- বার্ণ এন্ড প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. আস আদ দীন মাহমুদ ও সিনিয়র স্টোর অফিসার ডা. জলিল কায়সার খোকন।

গত ৭ই মার্চ এক আদেশে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তদন্ত কমিটিকে দায়িত্ব দেয়। তদন্ত কমিটির সদস্যরা অভিযোগের পুঙ্খানুপুঙ্খ যাচাই-বাছাইয়ের পর গত সপ্তাহে পরিচালকের কাছে রিপোর্ট জমা দিয়েছেন। তদন্ত কমিটির প্রধান ডা. এসএম আসাদুজ্জামান  জানিয়েছেন- ‘আমাদের উপর যে দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল সেটি আমরা পালন করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে রিপোর্ট জমা দিয়েছি। অভিযোগের অনেক কিছুরই সত্যতা মিলেছে, আবার কিছু কিছু বিষয়ের মিলেনি।’ তিনি জানান, ‘আমরা হাসপাতালের স্বার্থে সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ থেকে রিপোর্ট জমা দিয়েছি। পরবর্তী বিষয়টি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও মন্ত্রণালয় দেখবে।’ এদিকে- তদন্ত রিপোর্ট প্রাপ্তির কথা স্বীকার করে হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. সৌমিত্র চক্রবর্তী জানিয়েছেন, ‘স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে গঠিত তদন্ত কমিটির রিপোর্ট জমা পড়ার পর সেটি মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। পরবর্তী সিদ্ধান্ত মন্ত্রণালয় থেকে নেয়া হবে।’

সূত্রমতে, হাসপাতালের ব্রাদার সাদেক সিন্ডিকেটের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগসাজোশ ছিল রওশন ও জব্বারের। সাদেক গ্রেপ্তার হওয়ার পর তাদের দু’জনের নাম সবচেয়ে বেশি আলোচিত হচ্ছে। রওশন ও জব্বার হাসপাতালের ওয়ার্ডে নিয়মিত ও আউটসোর্সিং কর্মচারীদের ডিউটি বণ্টন করেন। ওখানে তারা প্রতি মাসে আড়াই থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকা প্রতি কর্মচারীর কাছ থেকে নিয়ে থাকে। প্রতি জুন মাসে চাকরি নবায়নের নামে প্রায় তিনশ’ কর্মচারীর কাছ থেকে ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা নিয়ে থাকে। আউট সোর্সিংয়ে থাকা এসব কর্মচারী টাকা না দিলে তাদের চাকরিচ্যুতসহ নানাভাবে নির্যাতন করা হয়। আর আউট সোর্সিংয়ে ৩০০ লোক নেয়ার কথা থাকলেও ২০০ জন নিয়োগ দিয়ে বাকি ১০০ জনের বেতন আত্মসাৎ করা হয়। হাসপাতালের কর্মচারীদের জন্য ৫টি ভবনে মোট ৬০টি বাসা ও বিশাল খালি জায়গা রয়েছে। অধিকাংশ বাসাই খালি থাকায় রওশন ও জব্বার ভাড়া দিয়ে টাকা লুটে নিচ্ছে। আবার খালি প্লট ১ থেকে ৪ লাখ হারে বিক্রি করছে। ঘরসহ সরকারি কোয়ার্টারের ভূমি বিক্রি করা হচ্ছে ১০ লাখ টাকায়। আর এসব টাকা যাচ্ছে রওশন ও জব্বারের পকেটে। হাসপাতালের প্যথলজি বিভাগে কর্মরত অফিস সহায়ক আলাউদ্দিন সভাপতি আব্দুল জব্বারকে ম্যানেজ করে দুটি কোয়ার্টার দখলে রেখেছে। এতে বাসা ভাড়া দিয়ে রওশন ও জব্বারের মাসে আয় কয়েক লাখ টাকা। সিলেট সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতাল ও কোয়ার্টারে ১৫-১৬টি বাসা ভাড়া দিয়ে টাকা আদায় করা হচ্ছে। আর ভাড়ার টাকা তুলতে তাদের নিজস্ব বাহিনীও রয়েছে। অভিযোগে ওই কর্মচারী জানিয়েছেন, ওসমানী হাসপাতালে আগত রোগীদের দালাল চক্রের মাধ্যমে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দেখানো, হাসপাতালে ভর্তি, বিছানা, ওষুধ প্রদান, দ্রুত অপারেশন করিয়ে দেয়ার জন্য কন্ট্রাকে কাজ করে রওশন ও জব্বার।

এ ছাড়া বিভিন্ন হাসপাতালের সনদ, ইচ্ছেমতো জখমি সনদ প্রদান, ফার্মেসি থেকে ওষুধ, ডায়াগনিস্টক সেন্টার থেকে পরীক্ষা করানো, বেসরকারি এম্বুলেন্সের মাধ্যমে রোগী পরিবহনসহ নানা দুর্নীতির ঘটনার মুলহোতা তারাও। তাদের নিয়োজিত সিন্ডিকেটের সদস্যরা প্রতিদিনই ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে টাকা কামাইয়ের এ ধান্ধা করে থাকে। হাসপাতালের ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে চোর সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছে তারা। এতে রোগীদের সর্বস্ব লুট করা হচ্ছে। প্রতিবাদ করলে রোগীর স্বজনকে পুলিশের ধরিয়ে হয়রানি করা হয়। ওয়ার্ড মাস্টার রওশন হাবিবের বিরুদ্ধে অসংখ্য নারী কর্মীদের শ্লীলতাহানী, যৌন হয়রানি, জোরপূর্বক বিভিন্ন বাসায় নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ রয়েছে। তার বিরুদ্ধে আইনি উদ্যোগও নিয়েছিলেন অনেকেই। অভিযোগে ওই কর্মচারী আরও জানান, ওয়ার্ড মাস্টার রওশন হাবিব ও কর্মচারী সমিতির সভাপতি আব্দুল জব্বার দুর্নীতি করে অঢেল সম্পদ বানিয়েছেন। এর মধ্যে চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী আব্দুল জব্বারের নামে নগরের কানিশাইল এলাকায় তার ও নিজের নামে ও সোনাতলা এলাকায় মেয়ের নামে বাড়ি রয়েছে। আর ওয়ার্ড মাস্টার রওশন হাবিব নগরের বালুচরে একটি বাসা নির্মাণ করেছেন। ওই এলাকায় বাসা রয়েছে দুর্নীতির ঘটনায় গ্রেপ্তার হওয়া আলোচিত ব্রাদার সাদেকেরও। এ ছাড়া রওশন হাবিবের নামে তার নিজ বাড়ি মাগুরা জেলায় ১০ তলা ভবন রয়েছে। তার স্ত্রী, শাশুড়ি, শ্যালিকার নামে বিপুল পরিমাণ সম্পদ রয়েছে। তার শ্যালিকার নামে তিনটি হাইয়েস গাড়ি ক্রয় করে দিয়েছে। গাড়িগুলোর নাম্বার হচ্ছে; ঢাকা মেট্রো-৭৫০২৭৬, ১৯৬৩১০, ১১০৫৬০।

তাদের দুর্নীতির সহযোগী হিসেবে অভিযোগে যাদের নাম উল্লেখ করা হয়েছে তারা হচ্ছে- দুর্নীতির ঘটনায় কারান্তরীণ থাকা ব্রাদার ইসরাঈল আলী সাদেক, টেন্ডার ক্লার্ক জুমের আলী, হিসাব রক্ষক নজরুল ইসলাম, ফটোগ্রাফার সাইফুল মালেক ও প্রধান সহকারী আব্দুল কাশেম। এ ব্যাপারে ওসমানী মেডিকেলের কর্মচারী সমিতির সভাপতি আব্দুল জব্বার  জানিয়েছেন, ‘অভিযোগের বিষয়টি তদন্তাধীন থাকায় কোনো মন্তব্য করতে চাই না। তবে, তদন্ত কমিটি আমাদের কাছে যেসব বিষয় জানতে চেয়েছে সবকিছুর উত্তর দিয়েছি।’ তিনি বলেন, আমাদের সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদকসহ কয়েকজন মিলিয়ে শত্রুতাবশত এসব অভিযোগ করছে। এখন তদন্ত কমিটি কী লিখেছে সেটি তো জানি না। এজন্য এখনই মন্তব্য করতে চাই না- বলে জানান তিনি।

 

* সর্বশেষ  গুরুত্বপূর্ণ  সব  সংবাদ, ছবি ,অনুসন্ধানী প্রতিবেদন লেখা পেতে আমাদের  ফেসবুক পেইজে  লাইক  দিয়ে  অ্যাকটিভ  থাকুন।  ভিজিট করুন : http://www.etihad.news

* অনলাইন  নিউজ পোর্টাল  ইত্তেহাদ নিউজে  লিখতে  পারেন  আপনিও। লেখার বিষয়  ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন  [email protected] ঠিকানায়

সংবাদটি শেয়ার করুন....
ইত্তেহাদ নিউজ ডেস্ক :

ইত্তেহাদ নিউজ ডেস্ক :

About Author

etihad news is one of the famous Bangla news portals published from Abudhabi-UAE. It has begun with a commitment to fearless, investigative, informative, and independent journalism. This online portal has started to provide real-time news updates with maximum use of Smart Technology.

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *