রুগ্ন ব্যাংকগুলো একীভূত হচ্ছে সবল -সফল ব্যাংকগুলোর সাথে


ঢাকা প্রতিনিধি : সরকারি ও বেসরকারি সংকটে পড়া ব্যাংক একীভূত হচ্ছে । সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কয়েকটি ব্যাংকের সীমাহীন অনিয়ম-দুর্নীতি পুরো ব্যাংক খাতকে করে ফেলেছে কলুষিত। সৃষ্টি হয়েছে উচ্চ খেলাপি ঋণ, প্রভিশন ও মূলধন ঘাটতি। অনাস্থা, তারল্য সংকট বেড়েই চলেছে। এমন প্রেক্ষাপটে ব্যাংক একীভূত করার যে সিদ্ধান্ত সরকার এবং বাংলাদেশ ব্যাংক নিয়েছে তাতে কী লাভ হবে এখনও বোঝা যাচ্ছে না। তবে তাদের আশঙ্কা-একীভূত করার মাধ্যমে দুর্নীতিবাজদের দায়মুক্তি দেওয়া হতে পারে। এটা যদি হয় তাহলে পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যাবে।
ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক পিএলসির (ইউসিবি) সঙ্গে একীভূত হচ্ছে নানা সংকটে থাকা বেসরকারি ন্যাশনাল ব্যাংক।মঙ্গলবার (৯ এপ্রিল) বাংলাদেশ ব্যাংকে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আজকে ইউসিবি ব্যাংকের একজন পরিচালক ও ব্যবস্থাপনা পরিচালককে ডেকে নিয়ে বৈঠক করেন গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার। বৈঠকে ইউসিবির কর্তৃপক্ষকে একীভূত করার বিষয় উদ্যোগ নেওয়া কথা জানানো হয়। এসময় বৈঠকে ন্যাশনাল ব্যাংকের কেউ উপস্থিত ছিলেন না।একীভূত হওয়া নিয়ে ন্যাশনাল ব্যাংকের পর্ষদ দ্বিধাবিভক্ত হলেও সরকার চাচ্ছে এটিকে একীভূত করতে। এ বিষয়ে কোনো পক্ষই আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো কথা বলতে রাজি হয়নি।
সিটি ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হচ্ছে নানা সমস্যায় থাকা রাষ্ট্রায়ত্ত বেসিক ব্যাংক। সোমবার (৮ এপ্রিল) বাংলাদেশ ব্যাংকে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।সোমবার সকালে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদারের সঙ্গে সিটি ব্যাংকের চেয়ারম্যান আজিজ আল কায়সার ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মাসরুর আরেফিন বৈঠক করেন। সেখানে বেসিক ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করার সিদ্ধান্ত হয়। এখন জারি করা নীতিমালা মেনে একীভূত করার প্রক্রিয়া শুরু করবে ব্যাংক দুটি।
এর আগে গত ১৯ মার্চ সিটি ব্যাংকের পর্ষদকে বেসিক ব্যাংককে একীভূত করার পরামর্শ দেওয়া হয়। তারপর সিটি ও বেসিক ব্যাংকের পর্ষদের মধ্যে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। দুই ব্যাংকের কর্মকর্তারা এ নিয়ে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করেন। ব্যাংক দুটি একীভূত হলেও আগামী তিন বছর পৃথক আর্থিক প্রতিবেদন তৈরি করবে।এ বিষয়ে জানতে সিটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসরুর আরেফিনের সঙ্গে বিভিন্ন মাধ্যমে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। তবে তিনি এ বিষয় কিছু বলেননি।বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. মেজবাউল হক জানান, বৈঠক হয়েছে তবে সিটি ব্যাংকের সঙ্গে বেসিক ব্যাংক একীভূত হওয়ার বিষয় আলোচনা হয়েছে কি না জানা নেই। এমন কিছু হলে জানানো হবে।
এ নিয়ে গত এক মাসে সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে ১০টি ব্যাংকের একীভূত করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এর আগে সোমবার (৮ এপ্রিল) বেসরকারি সিটি ব্যাংকের সঙ্গে সরকারি মালিকানাধীন বেসিক ব্যাংককে একীভূত করার সিদ্ধান্ত হয়। ওই দিন সিটি ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও এমডিকে ডেকে এ সিদ্ধান্তের কথা জানান গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার। ওই বৈঠকেও বেসিক ব্যাংকের কোনো প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন না। ন্যাশনাল ব্যাংক একীভূত করার বিষয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকেও ন্যাশনাল ব্যাংকের কোনো প্রতিনিধি ছিলেন না। গভর্নর এককভাবে এসব সিদ্ধান্ত নিচ্ছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
এর আগে সরকারি দুটি ব্যাংক একীভূত করার সিদ্ধান্ত হয়। এগুলো হলো- বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংককে (বিডিবিএল) এবং রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক (রাকাব)। এর মধ্যে সোনালী ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হচ্ছে বিডিবিএল। আর বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে রাকাব। একীভূত করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোকে জানিয়ে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক।
অনিয়ম-জালিয়াতিতে সংকটে পড়া পদ্মা ব্যাংক (সাবেক ফারমার্স ব্যাংক) শরীয়াহভিত্তিক বেসরকারি এক্সিম ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হওয়ার বিষয় ঘোষণা দেওয়া হয়। এটা একীভূত করা প্রথম সিদ্ধান্ত। এ প্রক্রিয়া এগিয়ে নিতে গত ২৫ মার্চ বেসরকারি খাতের এ দুই ব্যাংকের মধ্যে সমঝোতা চুক্তি (এমওইউ) সই করেছে। পদ্মা ব্যাংকের পর সরকারি খাতের দুই ব্যাংককে একীভূত করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এ ক্ষেত্রে সরকারি দুর্বল দুই ব্যাংককে সরকারি মালিকানাধীন অপর দুটি ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংক জানায়, আগামী বছরের মার্চ থেকে খারাপ ব্যাংক জোরপূর্বক ভালো ব্যাংকের সঙ্গে মিলিয়ে দেওয়া হবে। একীভূতকরণের আগে দুর্বল ব্যাংক চিহ্নিত করার জন্য চারটি সূচকের ভিত্তিতে একটি পিসিএ ফ্রেমওয়ার্ক ঘোষণা করা হয়। চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে কোনো ব্যাংক নিজ থেকে এক হলে বাংলাদেশ ব্যাংক তাতে সমর্থন দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। একীভূতকরণের মাধ্যমে খারাপ ব্যাংকের সংখ্যা কমিয়ে পুরো খাতের চিত্র ভালো দেখানোর চেষ্টা করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ব্যাংক খাতের উচ্চ খেলাপি ঋণ কমানো, মূলধন পরিস্থিতির উন্নতি এবং ব্যবস্থাপনায় দক্ষতা আনার ক্ষেত্রে আইএমএফের চাপ রয়েছে। আবার বর্তমানের আস্থাহীনতা কাটিয়ে তারল্য পরিস্থিতির উন্নতির জন্য একীভূতকরণকে ভালো বিকল্প মনে করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংকের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসতে পারে দ্রুতই। পুরো প্রক্রিয়া সম্পন্ন হচ্ছে গোপনে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর এবং পলিসি অ্যাডভাইজর ছাড়া বিভাগীয় পর্যায়ে কাউকে এসব আলোচনায় রাখা হচ্ছে না। এ কারণে কোন ব্যাংক কার সঙ্গে একীভূত করা হবে তা এখনই বলা যাচ্ছে না।
জানা গেছে, সব আমানতকারীর সুরক্ষা নিশ্চিত করতে ব্যাংক একীভূতকরণের মাধ্যমে ভালো ব্যাংকের সঙ্গে দুর্বল ব্যাংকের দায় ও সম্পদ মিলিয়ে দেওয়া হবে। তবে ভালো ব্যাংক যেন চাপে না পড়ে, সে জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিভিন্ন নীতি-সহায়তা দেবে। এ ক্ষেত্রে খারাপ ব্যাংকের আর্থিক পরিস্থিতির ভিত্তিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে নগদ জমা সংরক্ষণ (সিআরআর) এবং বিধিবদ্ধ তারল্য সংরক্ষণে (এসএলআর) ছাড় দিতে পারে। আবার খেলাপি ঋণের বিপরীতে সাধারণভাবে যে হারে নিরাপত্তা সঞ্চিতি (প্রভিশন) সংরক্ষণ করতে হয়, এ ক্ষেত্রে রাখতে হবে কম। এছাড়া ভালো ব্যাংকে এসেই সব গ্রাহকের যেন আমানত ফেরত নেওয়ার চাপ তৈরি না হয়, সে জন্যও একটি ব্যবস্থা রাখা হবে।
অনিয়ম-জালিয়াতিতে সংকটে পড়া পদ্মা ব্যাংক (সাবেক ফারমার্স ব্যাংক) শরীয়াহ ভিত্তিক বেসরকারি এক্সিম ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হওয়ার বিষয় ঘোষণা দেওয়া হয়। এ প্রক্রিয়া এগিয়ে নিতে গত ২৫ মার্চ বেসরকারি খাতের এ দুই ব্যাংকের মধ্যে সমঝোতা চুক্তি (এমওইউ) সই হয়েছে। পদ্মা ব্যাংকের পর সরকারি খাতের দুই ব্যাংককে একীভূত করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এক্ষেত্রে সরকারি দুর্বল দুই ব্যাংককে সরকারি মালিকানাধীন অপর দুটি ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
এদিকে রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংকের সঙ্গে এবার উচ্চ খেলাপি ঋণের বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক লিমিটেড (বিডিবিএল) এবং বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের সঙ্গে রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক একীভূত হচ্ছে।
* সর্বশেষ গুরুত্বপূর্ণ সব সংবাদ, ছবি ,অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ও লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন। ভিজিট করুন : http://www.etihad.news
* অনলাইন নিউজ পোর্টাল ইত্তেহাদ নিউজে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়