ইত্তেহাদ এক্সক্লুসিভ

ফরিদপুরের শান্তি নিবাসে চোখের জলে নিঃসঙ্গ ঈদ কাটছে বাবা-মায়ের

e8e01522eb4f34600e75975afff3f272cb0354a7d5fbe904
print news

ফরিদপুর প্রতিনিধি :  সন্তান ছাড়া বৃদ্ধাশ্রমে যত্নে থাকলেও ভালো নেই বাবা-মা। বৃদ্ধ বয়সে একাকিত্ব জীবন কাটছে তাদের। ফরিদপুরের শান্তি নিবাসে চোখের জলে নিঃসঙ্গ ঈদ কাটছে বাবা-মার।জরিনা বেগম। বয়স ৬০ বছর। চেহারায় বয়সের ছাপ। দুই বছর ধরে শান্তি নিবাসে জীবন কাটছে। দুই পুত্র সন্তানের মা তিনি। স্বামী মারা যাওয়ার পরই তার জীবনে নেমে আসে অন্ধকার। ছেলেদের নিয়ে কোনোমতে দিন কাটছিল জরিনা বেগমের। বিপত্তি ঘটল বড় ছেলেকে বিয়ে দেয়ার পর। ছেলের বউ সংসারে আসার পরই তার ওপর শুরু হয় অত্যাচার। বাড়ি থেকে বের হয়ে পথে পথে কাটছিল তার দিন, এক পর্যায়ে ঠাঁই হয় শান্তি নিবাসে।জরিনা বেগম বলেন, ‘বড় ছেলে শ্বশুর বাড়ি থাকে। ছোট ছেলে বাড়িতে থাকে। ভালোই ছিলাম, কিন্তু ছেলে বিয়ে দেয়ার পরই আমার জীবনে নেমে এলো অন্ধকার। অনেক কাজ করাতো ছেলে বউ। মুখ বুজে কাজ করতাম। বয়সের কারণে যখন কাজ করতে পারতাম না, তখনই আমাকে বাড়ি থেকে বের করে দিল। ছেলেকে বললাম, আমি কোথায় যাব। ছেলে বলল, যেদিকে চোখ যায় সেখানে যাও।’বৃদ্ধাশ্রমের থাকা এ বাবাদের জীবনের গল্প একেকজনের একেকরকম। ঈদের দিনে নাতি-নাতনী ও সন্তানদের কথাই বেশি মনে পড়ছে তাদের। ছবি: সময় সংবাদ

কথাগুলো বলছিলেন আর চোখ দিয়ে জল পড়ছিল জরিনা বেগমের। কান্না করতে করতে বলছিলেন, ‘আজ ঈদের দিন, ছেলে, নাতি নিয়ে কতো আনন্দ করার কথা, সেখানে একাই ঈদ করতে হচ্ছে। এখানে অনেক ভালো আছি। সবার সঙ্গে মিলে মিশে ঈদের আনন্দ করতেছি। কিন্তু ছেলের জন্য খারাপ লাগছে।’

আরেকজন সাজ্জাদ হোসেন। তিনি সরকারি চাকরি করতেন। স্ত্রী, সন্তানরা সবকিছু লিখে নিয়ে তাকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে। সব হারিয়ে রাস্তায় বেরিয়ে পড়েন তিনি। এরপর ভবঘুরে সাজ্জাদের ঠাঁই হয় শান্তি নিবাসে। আগের মতো আর সন্তানদের হাতে হাত রেখে যেতে পারেন না ঈদের কেনাকাটা করতে। শান্তি নিবাসের চার দেয়ালের মাঝে মুখ লুকিয়ে নীরবে ফেলেন চোখের পানি। গত ৬ বছর ধরে আছেন শান্তি নিবাসে।

সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ‘সবই আমার কপাল। বিয়ে করার পর স্ত্রীর নামে সব সম্পত্তি লিখে দিয়েছিলাম। স্ত্রী ও সন্তানরা আমাকে বাড়ি থেকে বের করে দিল। এরপর দ্বিতীয় বিয়ে করি, সেই স্ত্রীও সম্পত্তি লিখে নিয়ে আমাকে বের করে দিল। পথে পথে ঘুরতে ঘুরতে ঠাঁই হলো শান্তি নিবাসে।’তিনি বলেন, ‘সন্তান জন্ম দিয়ে ভুল করেছি, সম্পত্তি করেও ভুল করেছি। এত সম্পদ না থাকলে আমার সাথে এমনটি হতো না। এখন আমার কেউ খোঁজ নেয় না। তারা অনেক ভালো আছে। আমিও এখানে ভালো থাকার চেষ্টা করি। ভালোই আছি, ভুলের খেসারত দিচ্ছি।’সাজ্জাদ হোসেন, জরিনা বেগমই নন, শান্তি নিবাসে রয়েছেন শাহাদাত খান, আয়শা, আনাফিনসহ আরও অনেকেই। সবারই কথা একই রকম।শান্তিনিবাসে পরিবারহীন বাবা-মায়ের সংখ্যা ১৯ জন। তাদের সবার ঈদ কাটছে পরিবারহীন। যাদের জীবনের সমস্ত সুখ বিসর্জন দিয়ে এসেছেন সন্তানের জন্য। সেই সন্তানদের ছাড়া শান্তিনিবাসে যত্নে থাকলেও ভালো নেই বাবা-মা।বৃহস্পতিবার (১১ এপ্রিল) ঈদের দিন সকালে ফরিদপুর শহরের টেপাখোলা এলাকায় অবস্থিত সমাজসেবা অধিদফতর পরিচালিত শান্তি নিবাসে গিয়ে দেখা যায় মলিন মুখে ঈদ উদযাপন করছেন তারা। ঈদের দিন সকালে তাদের দেয়া হয়েছে উন্নত মানের খাবার। সকালে খিচুড়ি, সেমাই ও ডিম। দুপুরে পোলাও, গরুর মাংস, রোস্ট ও মিষ্টি। রাতেও রয়েছে উন্নতমানের খাবার। দেয়া হয়েছে নতুন পোশাক।শান্তি নিবাসে বর্তমানে ১২ জন নারী ও ৭ জন পুরুষ রয়েছেন। এর মধ্যে দুইজন খুবই অসুস্থ। তাদের চিকিৎসাও দেয়া হচ্ছে এখানে। এর মধ্যে একজন নারী ও একজন পুরুষ কথা বলতে পারেন না।

শান্তি নিবাসের বাসিন্দা শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘জীবনে অনেক ভুল করেছি, তাই আমি আজ এখানে। আমি চাকরি করতাম। চাকরির সুবাদে বাইরে বেশি থাকতাম। হঠাৎ দুর্ঘটনায় আমার পায়ের সমস্যা হয়। চাকরি ছেড়ে দিতে হয়। স্ত্রী পরকীয়া করে টাকা পয়সা নিয়ে চলে যায় অন্যের হাত ধরে। এরপর আর সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারিনি। শান্তি নিবাসেই হলো শেষ ঠিাকানা। এখানে ভালোই আছি, খাওয়া দাওয়া চিকিৎসা সবই দেয়া হয়।’

তিনি আরও বলেন, এখানকার সবার সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করে নিয়েছি। সবকিছু ভুলে গিয়ে ভালো থাকার চেষ্টা করছি।’আরেক বাসিন্দা আয়শা বলেন, ‘কেউ নেই আমার। এখানে আছি অনেকদিন। ঈদের আনন্দ এখানকার সবার সঙ্গে ভাগাভাগি করে নিই। সকালে নতুন পোশাক দিয়েছে, তা পরেছি। সেমাই দিয়েছে, খিচুরি ও ডিম খেয়েছি। দুপুরে মাংস, ভাত, মিষ্টি দিয়েছে। রাতেও ভালো খাবার আছে।’তিনি আরও বলেন, ‘শুধু ঈদের দিনই নয়, সারা বছরই এখানে ভালো খাবার দেয়, যত্ন করে। অনেক ভালো আছি। কেউ নেই মনে হয় না।’

শান্তি নিবাসের বাসিন্দাদের দেখভাল করেন শাহানাজ বেগম। তিনি বলেন, ‘এখানে যারা আছেন সকলের সমানভাবে যত্ন করা হয়। আব্বা-আম্মার মতো করে সকলের খেয়াল রাখি। অনেকেই অসুস্থ আছেন, তাদের দিকে বেশি নজর দিতে হয়।’সমাজসেবা পরিচালিত শান্তি নিবাসের উপ তত্ত্বাবধায়ক তাহসিনা জামান জানান, শান্তি নিবাসে ১২ জন নারী ও ৭ জন পুরুষ রয়েছেন। এর মধ্যে একজন নারী ও একজন পুরুষ খুবই অসুস্থ, তাদের সুস্থ করতে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। যারা রয়েছেন তাদের থাকা-খাওয়া, চিকিৎসাসহ সব ব্যবস্থা এখান থেকেই করা হয়।তিনি জানান, ঈদ উপলক্ষে সব নিবাসীকে নতুন কাপড় দেয়া হয়েছে। এছাড়া ঈদের দিন সকালে রুটি-সেমাই, মিষ্টিসহ বিভিন্ন খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। দুপুরে ও রাতে পোলাও, মুরগির রোস্ট, গরু ও খাসির মাংসসহ বিভিন্ন খাবারের আয়োজন করা হয়েছে।তাহসিনা জামান বলেন, ‘চাকরির পেশাগত দায়িত্ব পালনই নয়, এ মা-বাবাদের সেবা করতে পেরে আমি নিজেকে ধন্য মনে করছি।

 

* সর্বশেষ  গুরুত্বপূর্ণ  সব  সংবাদ, ছবি ,অনুসন্ধানী প্রতিবেদন লেখা পেতে আমাদের  ফেসবুক পেইজে  লাইক  দিয়ে  অ্যাকটিভ  থাকুন।  ভিজিট করুন : http://www.etihad.news

* অনলাইন  নিউজ পোর্টাল  ইত্তেহাদ নিউজে  লিখতে  পারেন  আপনিও। লেখার বিষয়  ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন  [email protected] ঠিকানায়

সংবাদটি শেয়ার করুন....
ইত্তেহাদ নিউজ ডেস্ক :

ইত্তেহাদ নিউজ ডেস্ক :

About Author

etihad news is one of the famous Bangla news portals published from Abudhabi-UAE. It has begun with a commitment to fearless, investigative, informative, and independent journalism. This online portal has started to provide real-time news updates with maximum use of Smart Technology.

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *