রাজাপুরে পুলিশের গুলিতে গুলিবিদ্ধ সেই চা দোকানী মনিরের ঘরে হয়নি ঈদ পালন


ইত্তেহাদ নিউজ,বরিশাল: ঝালকাঠির রাজাপুর থানার এক কনস্টেবলের বন্দুকের গুলিতে মনির মাহামুদ নামে সেই চা দোকানি আহত হওয়ার পরে তার জিবনধারন পাল্টে গেছে।সকলের ঘরে ঈদের আনন্দ থাকলেও মনিরের ঘরে হয়নি কোন ঈদ। নেই আগের মত হাসি খুশি।দু চোখে এখন ঝড়ছে পানি।চারদিকে অন্ধকার।কেউ খোজ নেয়নি। আপেক্ষ করে বললেন যার মরা তারই মাটি দিতে হয়। পুলিশ বলে কথা।পুলিশের কারনে আজ আমি নিঃস্ব।আমি চিকিৎসা করতে গিয়ে ঋনের যাতাকলে জর্জরিত হয়ে গেছি। পরিবারের কাউকে একটি নুতন জামা কিনে দিতে পারি নাই।যাদের কারনে পঙ্গু হলাম তাদের ঘরে ঈদ ঠিকই হয়েছে। প্রিন্টারের যন্ত্রনায় কাতরাচ্ছে প্রতিদিন।ঢাকায় চিকিৎসা করিয়েও লাভ হয়নি। ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে রাজাপুর উপজেলার লেবুবুনিয়া বাজারে পুলিশের মিস ফায়ারে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
আরও পড়ুন : রাজাপুর থানা পুলিশের এসআই হেলাল ভয় দেখিয়ে টাকা না দিয়ে নিলেন মাছ
দায়ী কনস্টেবলের নাম নূরুল ইসলাম। এ ঘটনায় দায়িত্ব অবহেলার দায়ে কনস্টেবল নুরুল ইসলামকে বরখাস্ত করা হয়েছে বলে তখন জানিয়েছিলো রাজাপুর থানা। আহত চা দোকানি বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পরে ঢাকায় নিজ খরচে চিকিৎসা করিয়ে বর্তমানে লেবুবুনিয়া নিজ বাড়িতে রয়েছেন।
বর্তমান হালহকিকতের ব্যাপারে রাজাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আতাউর রহমানকে কল করা হলেও রিসিভ করেন নি।
গুলিবিদ্ধ চা দোকানি মনির মাহামুদ উপজেলার উত্তর তারাবুনিয়া গ্রামের মৃত জয়নাল আবেদীনের ছেলে। চা দোকানি মনির বলেন, লেবুবুনিয়া বাজারে আমার চায়ের দোকান। শনিবার (২৩ ডিসেম্বর) রাতে থানা পুলিশের এসআই আজাদ মোবাইলে জানান দোকান যেন খোলা রাখি, তাদের ডিউটি আছে। তারা প্রায়ই আমার চায়ের দোকানে চা খান। ১২টার কিছু সময় পর তারা আসেন। সাড়ে ১২টার দিকে এসআই আজাদ সঙ্গের ফোর্সদের বলছিলেন সব কিছু ওকে রাখতে। তখন কনস্টেবল নূরুল ইসলাম তার বন্দুকে গুলি লোড করছিলেন। ওই সময়ে হঠাৎ গুলি বেরিয়ে গিয়ে আমার পায়ে লাগে। বাম পায়ে অনেকগুলো লেগেছে, ডান পায়েও গুলি আছে।
আরও পড়ুন : রাজাপুরে প্রশাসনের অদেশ অমান্য করে সরকারি খালে পারিবারিক সেতু
তিনি বলেন, আমাকে প্রথমে রাজাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়, সেখানে কয়েকটা গুলি বের করে পা থেকে। তারপরের দিন আমাকে বরিশাল হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। এখানের ওয়ার্ডবয় আমার পা থেকে ৪/৫টি গুলি বের করেন। অবস্থার অবনতি হলে মনির ঢাকায় চিকিৎসা করান।
এখনো অনেকগুলো স্প্রিন্টার পায়ের মধ্যেই রয়ে গেছে।
তিনি আরও বলেন, পুলিশ প্রথমে আমার চিকিৎসার খোঁজখবর নিলেও পরে আর খোজ নেয়নি।টাকার অভাবে এখন চিকিৎসা করতে পারছিনা উন্নত চিকিৎসা না হলে আমিতো পঙ্গু হয়ে যাব। আমার পরিবারের আয়ের একমাত্র উপায় চায়ের দোকান দীর্ঘদিন যাবৎ বন্ধ থাকার পরে কিছু দিন আগে চালু করেছি। আমার ঘরের লোকদের মুখে খাবার নেই। আমার ভালো চিকিৎসাও হচ্ছে না। তিনি বলেন আমার একটা দাবি আমাকে দ্রুত উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করে পঙ্গুত্বের হাত থেকে বাঁচান।
আরও পড়ুন : রাজাপুরে ইউএনও ও এলজিইডি ইঞ্জিনিয়ারের দ্বন্ধ চরমে!
ঝালকাঠির পুলিশ সুপার আফরুজুল হক টুটুল তখন সাংবাদিকদের বলেছিলেন দায়িত্ব অবহেলায় কনস্টেবল নুরুল ইসলামকে বরখাস্ত করা হয়েছে। আহত ব্যক্তির চিকিৎসা করানো হচ্ছে। চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুসারে তার আরও উন্নত চিকিৎসার দরকার হলে সেই ব্যবস্থা করা হবে।
মনির আজ খুবই অসহায়।স্প্রিন্টার রয়েছে পায়ের ভিতর অসংখ্য।যন্ত্রনায় রাতে ঘুমাতে পারছেনা।আয়ের একমাত্র লোক মনির এখন অনেকটাই পঙ্গু।দায়ী পুলিশ সদস্যরা এখনো রয়েছেন বহাল তবিয়তে। অথচ যাদের কারনে ঈদ হয়নি মনিরের ঘরে তারাও খোজ নেয়নি মনিরের। এমনকি রাজাপুর থানা পুলিশও কোন খোজ নেয়নি।
* সর্বশেষ গুরুত্বপূর্ণ সব সংবাদ, ছবি ,অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ও লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন। ভিজিট করুন : http://www.etihad.news
* অনলাইন নিউজ পোর্টাল ইত্তেহাদ নিউজে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়