এমভি আবদুল্লাহ মুক্তিপণের টাকা কেন অপ্রকাশযোগ্য?
                                
ইত্তেহাদ নিউজ ডেস্ক : কত টাকায় সোমালিয়ান জলদস্যুরা বাংলাদেশি পতাকাবাহী এমভি আবদুল্লাহ জাহাজসহ ২৩ নাবিককে মুক্তি দিয়েছে? এই প্রশ্নটি সবার কাছে ঘুরপাক খাচ্ছে। এর উত্তর জানতে রবিবার (১৪ এপ্রিল) দুপুরে জাহাজ মালিক প্রতিষ্ঠান কেএসআরএম গ্রুপের সংবাদ সম্মেলনে সরাসরি প্রশ্ন করা হয়েছিল। কিন্তু এর উত্তর দেয়া যাবে না বলে সরাসরি জানিয়ে দিয়েছেন কেএসআরএম গ্রুপের প্রধান নির্বাহি ক্যাপ্টেন মেহেরুল করিম।
তিনি বলেন, জাহাজ মুক্ত করতে আমেরিকা, যুক্তরাজ্য, সোমালিয়া, কেনিয়া ও বাংলাদেশ সরকারের পাশাপাশি সমুদ্র বাণিজ্যে আন্তর্জাতিক আইন মেনে কাজ করা হয়েছে। আর আমরা লিখিতভাবে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ যে মুক্তিপণের টাকার বিষয়ে কোনো মন্তব্য করবো না। এমনকি সরকারের পক্ষ থেকেও জানতে চাওয়া হয়েছিল এ বিষয়ে, কিন্তু লিখিতভাবেই আমি নিজেই স্বাক্ষর করেছি তা অপ্রকাশিতব্য।
জানা যায়, মুক্তিপণের টাকার বিষয়টি জাহাজের মালিক কেএসআরএম গ্রুপ, সোমালিয়ান জলদস্যু ও লন্ডনভিত্তিক বীমা কোম্পানি। এই তিনটি পক্ষের মধ্যে একটি সমঝোতা চুক্তি হয়েছে তা প্রকাশ না করার জন্য। আর এজন্যই তা অপ্রকাশিত।
কেন তা প্রকাশ করা হচ্ছে না এমন প্রশ্ন করা হলে কেএসআরএম গ্রুপের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহরিয়ার জাহান রাহাত বলেন, আমরা দস্যুতে উৎসাহিত করতে চাই না। যদি টাকার অঙ্কটি প্রকাশিত হয় তাহলে অনেকে এতে উৎসাহিত হতে পারে।
তবে সোমালিয়ার স্থানীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে প্রায় ৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে ( বাংলাদেশি টাকায় ১০০ টাকা ডলার হিসেবে যা ৫০ কোটি টাকা) মুক্তি পেয়েছে জাহাজটি। শনিবার সন্ধ্যার দিকে একটি উড়োজাহাজে করে তিনটি ব্যাগে এসব ডলার এমভি আবদুল্লাহ জাহাজের কাছে ফেলা হয়। ২০১০ সালে জাহান মণিকে জিম্মি অবস্থা থেকে মুক্তি করতে দেয়া হয়েছিল দুটি ব্যাগ। এবার তিনটি ব্যাগে করে দেয়া হয়েছে ডলার।
মুক্তিপণের টাকার পরিমাণ অতীতেও কখনো প্রকাশিত হয়নি উল্লেখ করে বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স এসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট ক্যাপ্টেন আনাম চৌধুরী বলেন, ‘মুক্তিপণের টাকা গোপন রাখার জন্য আইন রয়েছে। তাই তা অপ্রকাশিত থাকবে এটাই স্বাভাবিক।’
এর আগে রবিবার ভোর ৩টায় জাহাজ থেকে ৬৫ জন জলদস্যু ৯টি্ বোটে করে সোমালিয়ায় চলে যায়। আর নেমে যাওয়ার সময় দস্যুদের কমান্ডার সোমালিয়ান ভাষায় একটি চিঠি দেয় জাহাজের ক্যাপ্টেনকে। সেই চিঠিতে লেখা ছিল দুবাই বন্দর পর্যন্ত কোনো সোমালিয়ান জলদস্যু আর তাদের আক্রমণ করবে না। তারা সম্পূর্ণ নিরাপদ।
উল্লেখ্য, গত ১২ মার্চ দুপুর দেড়টার দিকে সোমালিয়ার রাজধানী মোগাদিসু থেকে প্রায় ৬০০ নটিক্যাল মাইল দূরে ভারত মহাসাগর থেকে এমভি আবদুল্লাহর সেকেন্ড অফিসার মোজাহেদুল ইসলাম চৌধুরীকে প্রথম অস্ত্র ঠেকিয়েছিল সোমালিয়ান জলদস্যুরা। জাহাজটি মোজাম্বিক থেকে ৫৫ হাজার টন কয়লা নিয়ে দুবাই যাচ্ছিল। জাহাজটি ছিনতাইয়ের পর সোমালিয়ার উত্তর-পূর্ব উপকূলের গ্যরাকাদে নোঙ্গর করে ছিল। রবিবার (১৪ এপ্রিল) ভোর ৩টায় জাহাজ থেকে ৬৫ জন জলদস্যু নেমে গিয়ে নাবিকদের মুক্ত করে দেয়।
এর আগে একই মালিকের এমভি জাহান মনিকে ২০১০ সালে জিম্মি করেছিল একই গ্রুপের জলদস্যুরা। সেবারও মুক্তিপণ দিয়ে তাদের উদ্ধার করা হয়। সোমালিয়ান জলদস্যুরা ২০১৬ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে ৮টি জাহাজ জিম্মি করেছিল। এর আগে ২০০৯ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে জিম্মি করেছিল ৩৫৮টি জাহাজ।
* সর্বশেষ গুরুত্বপূর্ণ সব সংবাদ, ছবি ,অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ও লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন। ভিজিট করুন : http://www.etihad.news
* অনলাইন নিউজ পোর্টাল ইত্তেহাদ নিউজে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়
        
        


