বরিশালের দপদপিয়া সেতুর ইজারা : সরকার হারাতে বসেছে অর্ধশত কোটি টাকার রাজস্ব!


মামুনুর রশীদ নোমানী,বরিশাল : চার জেলাকে বরিশালের সাথে সরাসরি যুক্ত করে দিয়েছিল শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাদ (দপদপিয়া )সেতু। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১১ সালের ২২ ফেব্রুয়ারী প্রায় তিনশত কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ১ দশমিক ৩৯ কিলোমিটার সেতুটির উদ্বোধন করে সেতুর দ্বার খুলে দিয়েছিল।সরকারের বড় অংকের রাজস্ব আদায়ের এটি একটি সেতু। সেই রাজস্ব বাড়াতে অনিহা বরিশাল সড়ক বিভাগের। সরকারি রাজস্ব বাড়ানোকে গুরুত্ব না দিয়ে ইজারাদারের স্বার্থ বাস্তবায়নে ব্যস্ত বরিশাল সড়ক ও জনপথ বিভাগের সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী মাসুদ মাহমুদ সুমন।
গোপনীয়তার সঙ্গে একটি প্রতিষ্ঠানকে ইজারা পাইয়ে দেওয়ার অভিযোগ এ নির্বাহী প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে । অতি গোপনীয়তার সাথে বার বার শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াত (দপদপিয়া) সেতুর বর্তমান ইজারাদার ইজারা পেলে সরকার প্রকৃত রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হবে বলে জেলার সচেতন মানুষ মনে করছেন।
সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের বরিশালের নির্বাহী প্রকৌশলী কীর্তোনখোলা নদীর ওপর শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাত সেতু (দপদপিয়া সেতুর) তিন বছরের জন্য টোল আদায়ের জন্য ইজারা বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেন ২০২৩ সালের ১৯ নভেম্বর। নির্বাহী প্রকৌশলী ১৯ নভেম্বর ২০২৩ তারিখে স্বাক্ষর করলেও ওয়েব সাইটে আপলোড করেন ২৩ নভেম্বর ২৩ তারিখ। সেতুর ইজারা কোটেশন আহবান বিজ্ঞপ্তি নম্বর ০১ (ইজারা) বিআরডি/২০২৩-২০২৪। ইজারা কোটেশনের সিডিউল মূল্য ধরা হয় পাচঁ হাজার টাকা। ইজারা কোটেশন বিক্রয়ের শেষ তারিখ ধার্য্য করা হয় ১১ ডিসেম্বর ২০২৩ তারিখ। অথচ আগ্রহীরা কেউ সিডিউল ক্রয় করতে পারেনি।
দক্ষিনাঞ্চলের লাখ লাখ মানুষ প্রতিদিন এ সেতু দিয়ে পারাপার হয়ে থাকে। সওজ সূত্রে জানা গেছে, নির্বাহী প্রকৌশলী মাসুদ মাহমুদ সুমন সেতুর টোল আদায়ের জন্য একই বিজ্ঞপ্তির ৪র্থ আহ্বান হিসেবে চলতি বছরের ৪ ফেব্রুয়ারী প্রকাশ করেন। এর আগে তিনি বিজ্ঞপ্তির দ্বিতীয় ও তৃতীয় আহ্বান প্রকাশ করেন। প্রথম বিজ্ঞপ্তি ছাড়া তিনি ২য়,৩য় ও চতুর্থ বিজ্ঞপ্তি আহবান ওয়েব সাইটে প্রকাশ করেন নি।
শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাত সেতু (দপদপিয়া সেতুর) ইজারা অতিগোপনে (গুজ)প্রক্রিয়াতে করায় প্রতিযোগীতা হয়নি এমনটাই বলেছেন ইজারায় আগ্রহীরা। আগ্রহী প্রতিষ্ঠানগুলোর পক্ষ থেকে উম্মুক্ত ভাবে ইজারা আহবান জানালেও কর্নপাত করেননি নির্বাহী প্রকৌশলী মাসুদ মাহমুদ সুমন।
একাধিক প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে কয়েক বছর যাবৎ দরপত্র আহ্বানের অনুরোধ জানালে সওজ কার্যালয় থেকে তাদের ভুল তথ্য সরবরাহ করা হয়। ফলে ইজারায় অংশ নিতে পারেনি আগ্রহীরা। সেতু ইজারার দরপত্র আহ্বান করলে আগ্রহী প্রতিষ্ঠান নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয়ে একাধিকবার যোগাযোগ করলেও নানা টালবাহানায় তাদের শিডিউল দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
আরও পড়ুন:
বরিশাল সড়ক বিভাগ যেন দূর্নীতির আখড়া
বরিশাল সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী ,কতিপয় কর্মকর্তা ও কর্মচারী গোপনে বরিশাল সড়ক বিভাগের ম্যারাডোনা খ্যাত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে ইজারা পাইয়ে দিতে তৎপর হয়ে ওঠে। প্রতিযোগীতা বিহীনভাবে শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাত সেতু (দপদপিয়া সেতুর) ইজারা পেতে যাচ্ছেন সড়কের সেই ম্যরাডোনা খ্যাত ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানটি। এ প্রতিষ্ঠানটি বর্তমানে সেতুটির ইজারাদার।
প্রতিযোগীতা না হওয়ায় ২০২১ সালের ইজারা মুল্যের সাথে শতকরা সাত ভাগ যোগ করে সিএস পাশ করানোর জন্য তৎপর হয়ে উঠেছে। সিএস পাশ হলে সেতুটি ইজারা পেতে ইজারাদারের আর কোন বাধাঁ থাকবেনা বলে সড়ক অফিস সুত্রে জানা গেছে।২০২১ সালের ইজারা মুল্যের সাথে শতকরা সাত ভাগ যোগ হলেও সরকার রাজস্ব হারাবে প্রায় অর্ধ শত কোটি টাকা। কারন হিসেবে জানা গেছে, ২০২২ সালের ২৬ জুন স্বপ্নের পদ্মা সেতু চালুর পরই টোল আদায়ের হার বেড়ে গেছে দ্বিগুন। বর্তমানে গড়ে প্রতিদিন ৯ লাখ টাকা টোল আদায় হয়।সে হিসেবে তিন বছরে ইজারাদার আদায় করবে ৯৮ কোটি ৬৪ লাখ টাকা।
এছাড়া কুয়াকাটায় দেশ বিদেশের পর্যটক, চরমোনাই পীরের দুটি মাহফিল, বাংলাদেশ সেনা বাহিনী, বরিশাল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ,মেরিন একাডেমী,পায়রা বন্দরের মালামাল-গাড়ি,পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র,তালতলী তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মালামাল -গাড়ি ,ভোলার যানবাহন,কোস্টগার্ড,টুরিষ্ট পুলিশ,ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহা,রাস উৎসব,দুর্গাপুজার দিনগুলোতে টোল আদায়ের হার কয়েকগুন বেড়ে যায়।
আরও পড়ুন:
সওজে সনদ জালিয়াতির অভিযোগে অভিযুক্ত অর্ধশত ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ঠিকাদার জানান, পছন্দের ইজারাদারকে ইজারা পাইয়ে দিতেই বিজ্ঞপ্তি প্রকাশে কাগজপত্রে ৪র্থ বার দেখানো হলেও কোনোবারই কাউকে জানানো হয়নি। নোটিস বোর্ডে টাঙানো হয়নি প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তি। পূর্বের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ব্যতীত সংশ্লিষ্ট স্থানীয় কোনো ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তিকেও বিষয়টি জানানো হয়নি। সুত্র জানায়, কোন পত্রিকায় কত তারিখে বিজ্ঞপ্তিটি প্রকাশ করা হয়েছে কর্তৃপক্ষ তাও বলেনি। অথচ গোপনে সিএস পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে বলেও জানায় সুত্রটি। সুত্রটি বরিশাল সওজের অনিয়ম-দুর্নীতি বন্ধে দুদকের হস্তক্ষেপ দাবি করেন।
বরিশাল সড়কের এক প্রকৌশলী জানান, টেন্ডার প্রক্রিয়াধীন। সরকারি নিয়মে অতিদ্রুত আমরা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাছে সেতু বুঝিয়ে দেব।সিএস পাশ হলেই।
এ ব্যাপারে বরিশাল সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী মাসুদ মাহমুদ সুমনের মোবাইলে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেন নি। অফিসে সরাসরি গেলেও তাকে পাওয়া যায়নি। তিনি অফিসের চেয়ে আড়ালে থাকেন বিধায় অফিসের কেউ তাকে খুজে পাননা তাই তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
উল্লেখ্য, মাসুদ হাসান সুমন (পরিচিতি নং ৬০২১৬৫) বরিশাল সড়ক বিভাগে ২০২১ সালের জানুয়ারী মাসে যোগদান করেন। মাসুদ মাহমুদ সুমনকে ২০২১ সালের ২ ফেব্রুয়ারী উপ -বিভাগীয় প্রকৌশলী (সিভিল) পদ থেকে নির্বাহী প্রকৌশলী পদে পদোন্নতি প্রদান করা হয়।
(বরিশাল সড়ক বিভাগের দুর্নীতির অনুসন্ধানী সংবাদ জানতে ইত্তেহাদ নিউজে চোখ রাখুন আগামী পর্বে …..)
* সর্বশেষ গুরুত্বপূর্ণ সব সংবাদ, ছবি ,অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ও লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন। ভিজিট করুন : http://www.etihad.news
* অনলাইন নিউজ পোর্টাল ইত্তেহাদ নিউজে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়