আলম রায়হান : আমলাতন্ত্র বলতে সাধারণত প্রশাসন ক্যাডার বোঝায়। আর বৃহত্তর পরিসরে পুলিশ, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও অন্যান্য খাতের ক্যাডারদের অন্তর্ভুক্ত করলে আমলাতন্ত্রের লটবহর বিশাল! যাদের হাতে অপরিসীম ক্ষমতা রয়েছে বলে সাধারণভাবে মনে করা হয়। কিন্তু জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার কাঠামোতে ধস নেমেছে। ফলে আমলাতন্ত্র ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পাশাপাশি প্রকৃত ক্ষমতা নিম্নগামী প্রবণতায় নামতে নামতে পৌঁছেছে প্রায় নিচের ধাপে।
অনেকেই বলেন, ক্ষমতা এখন বিভিন্ন সংস্থার ইন্সপেক্টর ও পুলিশের ওসিদের হাতে। এই ক্ষমতায় কোনো কোনো সংস্থাপ্রধানের কিঞ্চিৎ নিয়ন্ত্রণ থাকলেও এজন্য মন্ত্রী-এমপি-সচিবের নাম ভাঙাতে হয়। এক্ষেত্রে রেকর্ড সৃষ্টি করেছেন স্থানীয় সরকার বিভাগের আওতাধীন জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের সদ্য বিদায়ী প্রধান প্রকৌশলী মো. সরোয়ার হোসেন। বদলি ও পোস্টিং বাণিজ্যে তার বেপরোয়া কর্মকাণ্ড নিয়ে গণমাধ্যমে যে পিলে চমকানো খবর প্রকাশিত হয়েছে তাতে বিব্রত হয়েছেন খোদ স্থানীয় সরকারমন্ত্রী। প্রশ্ন হচ্ছে, একটি গুরুত্বপূর্ণ সংস্থার মহা-অঘটনের বিষয়টি সংবাদপত্রের মাধ্যমে মন্ত্রী জানার আগে মন্ত্রণালয়ের লটবহরের আমলারা কী করেন? আমলাদের প্রধান দায়িত্ব তো সুপারভাইজ করা। তারা কী করেছেন? যে যত বড় আমলা সে তত বড় সুপারভাইজার- এটি কেতাবী ধারণা। বাস্তবতা অনেক ক্ষেত্রে হতাশাজনক কেবল নয়, ভয়ংকর।
প্রসঙ্গত বলে রাখা ভালো, বহু বছর ধরে সুপারভাইজারের দায়িত্ব পালন করা হয় কদাচিৎ। যিনি সুপারভাইজ করবেন তিনি যদি অন্য ভাইজে আক্রান্ত হন তাহলে কি সঠিক কাজটি করা যায়? একটি নমুনা উদাহরণ, কক্সবাজার জেলার সাবেক এক এসপি প্রতি রাতে জুয়া খেলতেন এবং মাসিক নজরানার বাইরেও এই জুয়ার খরচ মেটাতে হতো তার নিয়ন্ত্রণাধীন ওসিদের। কখনো গভীর রাতে তিনি টাকা চেয়ে ওসিদের ফোন দিতেন। পুলিশের এই রত্নটি গুরুত্বপূর্ণ একটি রেঞ্জের ডিআইজিও হয়েছিলেন। টাকা নেওয়া ছাড়া ওই পুলিশ কর্মকর্তার হাতে কি কোনো ক্ষমতা থাকার কথা? ফলে এ ধরনের ইউনিটপ্রধানের নিয়ন্ত্রণাধীন ওসিদের ক্ষমতা ও দাপট বোধগম্য কারণেই অসীম। অবশ্য কুখ্যাত ইন্সপেক্টর মো. আলমগীর হোসেন বরিশাল মেট্রোপলিটনে বেশি দিন টিকতে পারেননি বিএমপি কমিশনার জিহাদুল কবিরের সজাগ দৃষ্টির কারণে। ফলে মো. আলমগীর হোসেনকে বিদায় নিতে হয়েছে। কিন্তু তাতে কী? তিনি তো পুলিশেই আছেন। বলা বাহুল্য, মো. আলমগীর হোসেনের মতো ‘জিনিস’ পুলিশে অনেক আছে। এদিকে এস এম রুহুল আমিন ও জিহাদুল কবিরের মতো টিম লিডারের সংখ্যা হয়তো পুলিশে কম নয়। কিন্তু তাদের প্রভাব মাঠে কতটুকু পৌঁছায় তা কিন্তু প্রশ্নবিদ্ধ। এ প্রসঙ্গে বলা হয়, মাঠের পুলিশের এখন অনেক কেবলা। ফলে এদের নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন। বরং নিয়ন্ত্রণকারীর চেয়ার নড়বড়ে হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। এ রকম উদারণও কিন্তু আছে। যেমন চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি পদ থেকে মনিরুজ্জামানের হঠাৎ বিদায়।
বিবেচনায় রাখা প্রয়োজন, সমস্যা কেবল পুলিশে নয়। বলতে গেলে সর্বত্রই। ‘সর্বাঙ্গে ঘা’ প্রবচনের মতো। কিন্তু ‘যত দোষ নন্দ ঘোষ’ তরিকায় পুলিশেরই বদনাম হয়। পুলিশ ও প্রশাসনের অন্যান্য বিভাগে ব্যতিক্রমও কিন্তু আছে। তবে ব্যতিক্রম যেমন বিবেচ্য দৃষ্টান্ত নয়, তেমনই ব্যতিক্রমী ধারার ইউনিট প্রধানরাও আসলে খুব একটা ভূমিকা রাখতে পারেন বলে মনে হয় না। বরং ব্যতিক্রমী ধারার ইউনিট প্রধানরা অনেক ক্ষেত্রে উল্লুক উপদ্রুত অরণ্যে চিত্রাহরিণের দশায় থাকেন বলে রটনা আছে। এটিই অবাঞ্ছিত বাস্তবতা। তা হোক পুলিশে অথবা জনপ্রশাসনের অন্যান্য ক্ষেত্রে। ফলে সরকারের সেবা জনগণের কাছে পৌঁছে দেওয়ার কার্যক্রম ব্যাহত হয় এবং সরকার পরিচালনার জন্য অনিবার্য আমলাতন্ত্রকে ফোকলা করে দেয় ভেতর থেকে!
লেখক: জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক
* সর্বশেষ গুরুত্বপূর্ণ সব সংবাদ, ছবি ,অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ও লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন। ভিজিট করুন : http://www.etihad.news
* অনলাইন নিউজ পোর্টাল ইত্তেহাদ নিউজে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়
ইত্তেহাদ নিউজ, এয়ার পোর্ট রোড, আবুধাবী ,সংযুক্ত আরব আমিরাত, ইমেইল: [email protected], web:www.etihad.news
এম এম রহমান, প্রধান সম্পাদক, ইত্তেহাদ নিউজ, এয়ার পোর্ট রোড, আবুধাবী, সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে প্রকাশিত ও প্রচারিত