ফিচার

বিউটি লাচ্ছির সুখ্যাতি দেশজোড়া

f3164295cbcc5d0c0e0867b1f2dd8718 663e9cde5020a
print news

মোরশেদা ইয়াসমিন পিউ: গরমে সতেজ রেখে চলেছে শতবর্ষী ‘বিউটি লাচ্ছি’। এটি ঠান্ডা মিষ্টি পানীয়। দই, বরফকুঁচি, গোলমরিচ ও বিট লবণের সমন্বয়ে তৈরি হয় এই পানীয়। শত বছর পেরিয়ে গেলেও যার স্বাদ রয়ে গেছে একই রকম। যার নামের সুখ্যাতি দেশজোড়া। এটি পুরান ঢাকার রায় সাহেব বাজারে জনসন সড়কে অবস্থিত।

জানা যায়, মোগলদের হাত ধরেই এই পানীয়র পরিচয় ঘটে এ উপমহাদেশে। মোগলরা তৃষ্ণা মেটাতে বা অতিথি আপ্যায়নে সুস্বাদু এই পানীয় পরিবেশন করতেন। ১৯২২ সালে পুরান ঢাকার রায়সাহেব বাজারে বিউটি লাচ্ছির যাত্রা শুরু। শুরুতে শুধু লাচ্ছি আর লেবুর শরবত পাওয়া গেলেও সময়ের ব্যবধানে সেখানে যুক্ত হয়েছে ফালুদা। যুগ যুগ ধরে পুরান ঢাকার মানুষকে ভিন্ন রকম লেবুর শরবত, লাচ্ছি আর ফালুদা খাইয়ে আসছে ছোট্ট এই দোকানটি। বর্তমানে যার নাম ‘বিউটি লাচ্ছি ও ফালুদা’।

ঐতিহ্যবাহী এই শরবত ও লাচ্ছির সূচনা করেন আবদুল আজিজ, তার হাত ধরেই ব্যবসায় হাল ধরেন আব্দুল আজিজের ছেলে আব্দুল গাফফার মিয়া। পুরান ঢাকার স্থানীয় এই বাসিন্দা নিজের হাতে তৈরি করতেন লেবুর শরবত ও লাচ্ছি। আবদুল গাফফার মারা যাওয়ার পর দোকানের দায়িত্ব পান আবদুল গাফফারের ছেলে মো. জাবেদ হোসেন। কথা হয় বিউটি লাচ্ছির বর্তমান কর্ণধার মো. জাবেদ হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘এই দোকানের লাচ্ছি, লেবুর শরবত সম্পূর্ণ ঘরোয়া পদ্ধতিতে হাতে তৈরি হয়। লাচ্ছি ও শরবতের কারিগররা আমাদের আত্মীয়। দাদার কাছ থেকে শিখেছে বাবা, বর্তমান কারিগররাও শিখেছে বাবার কাছ থেকে।’ জাবেদ হোসেন বলেন, ‘গরমকালে প্রতিদিন ৩০০ থেকে ৫০০ গ্লাস লাচ্ছি বিক্রি হয়। আর অন্য সময় ১০০ থেকে ১৫০ গ্লাস বিক্রি হয়। তিনি বলেন, ২০০০ সালে বাবা মারা যাওয়ার পর জনসন রোডের দোকানের দায়িত্ব আসে আমার হাতে। রোজ সকাল ৯টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত দোকান খোলা থাকে। পাশেই ঢাকার আদালতপাড়া হওয়ায় সব সময় ভিড় লেগে থাকে দোকানে।

জাবেদ হোসেন বলেন, ‘আমাদের এই দোকান সেই ব্রিটিশ আমলের। আমার দাদা আবদুল আজিজ জনসন রোডে (রায়সাহেব বাজার) ফুটপাতে লাচ্ছি ও লেবুর শরবত বিক্রি করতেন। পরে আমার বাবা পাকিস্তান আমলে দোকান নেন। সে সময় থেকেই দোকানটি পরিচিত হয়ে উঠতে শুরু করে।’ তিনি বলেন, ‘পাকিস্তান আমল থেকেই দোকানের পরিচিতি থাকলেও দেশ স্বাধীন হওয়ার পর পরিচিতি আরো বাড়ে। আশির দশকের পর থেকে দোকানের খ্যাতি আরো বেড়ে যায়। তখন আব্বা দোকান চালাতেন। তিনি মারা যাওয়ার পর আমরা তিন ভাই দুইটি দোকানের দেখভাল করছি।’

সরেজমিনে দেখা যায়, দোকানের সামনের অংশে লাচ্ছি বানানো হচ্ছে, আর ভেতরে ক্রেতাদের বসার জন্য আয়রনের টেবিল-চেয়ার পাতা রয়েছে। দোকানের পেছনে বানানো হয় ফালুদা। তিন পুরুষ ধরে এই লাচ্ছি-ফালুদা-শরবত বিক্রি হচ্ছে বলে জানান ক্রেতা আবু তালেব মিয়া। প্রবীণ এই ব্যক্তি বলেন, এই ছোট্ট দোকানটির বয়স ১০০ বছর পেরিয়ে গেলেও, মিষ্টি এই পানীয়র স্বাদে কোনো হেরফের হয়নি। এটা খুব বিখ্যাত দোকান। ৪৫ বছরের বেশি সময় ধরে লাচ্ছি তৈরি করেন কারিগর শহিদুল্লাহ। তিনি জানান, ব্লেন্ড মেশিনের পরিবর্তে তারা হাতেই তৈরি করে থাকেন এই লাচ্ছি। নানা রকম উপাদান একসঙ্গে মেশানোর জন্য ডালঘুঁটনি ব্যবহার করেন। তিনি জানান, পুরান ঢাকার ঘরে ঘরে মেহমানদের আপ্যায়নের জন্য লাচ্ছি, মাঠা পরিবেশনের ঐতিহ্য আছে। এ কারণে বিউটির লাচ্ছি এত খ্যাতি পেয়েছে।

লাচ্ছি ও ফালুদার জন্য সুবিখ্যাত এই দোকানের নাম শোনেননি, এমন ভোজনরসিক হয়তো খুঁজে পাওয়া যাবে না। বর্তমানে এই দোকানের আরো দুইটি শাখা রয়েছে। তবে জনসন রোডের দোকানটিই প্রথম বা আদি শাখা। পরে কাজী আলাউদ্দিন রোড ও নারিন্দায় তাদের আরো দুইটি শাখা চালু হয়েছে। বর্তমানে কাজী আলাউদ্দিন রোডের দোকানটির দায়িত্বে আছেন জাবেদের ছোট ভাই মানিক হোসেন এবং নারিন্দার দোকানটি দেখছেন বড় ভাই ইকবাল হোসেন।

কারিগররা জানান, লাচ্ছি বা ফালুদা তৈরিতে কোনো ধরনের কৃত্রিম উপকরণ ব্যবহার করেন না। ফালুদার প্রধান উপকরণ দুধের মালাই, সেটা আসে মানিকের দোকান থেকে। ফালুদা তৈরিতে নুডলস, সাগুদানা, কলা, দুধের মালাই, খোরমা খেজুর, কিশমিশ, আনার, আপেল, চেরি ফল, চিনির শিরা ও মধু ব্যবহার করা হয় বলে জানান। তবে বাজারের কেনা নুডলস নয়, নিজেদের তৈরি করা নুডলস ব্যবহার করেন ফালুদা তৈরিতে। ফালুদা হয় দুই রকমের। নরমাল ফালুদা আর স্পেশাল ফালুদা। নরমাল ফালুদার দাম ১০০ টাকা, স্পেশালের ১২০ টাকা। লাচ্ছি প্রতি গ্লাস ৫০ টাকা ও লেবুর শরবত ২০ টাকায় বিক্রি করা হয়।

 

* সর্বশেষ  গুরুত্বপূর্ণ  সব  সংবাদ, ছবি ,অনুসন্ধানী প্রতিবেদন লেখা পেতে আমাদের  ফেসবুক পেইজে  লাইক  দিয়ে  অ্যাকটিভ  থাকুন।  ভিজিট করুন : http://www.etihad.news

* অনলাইন  নিউজ পোর্টাল  ইত্তেহাদ নিউজে  লিখতে  পারেন  আপনিও। লেখার বিষয়  ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন  [email protected] ঠিকানায়

সংবাদটি শেয়ার করুন....
ইত্তেহাদ নিউজ ডেস্ক :

ইত্তেহাদ নিউজ ডেস্ক :

About Author

etihad news is one of the famous Bangla news portals published from Abudhabi-UAE. It has begun with a commitment to fearless, investigative, informative, and independent journalism. This online portal has started to provide real-time news updates with maximum use of Smart Technology.

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *