মাদারীপুরে বিদ্যালয়ের টয়লেটে শিক্ষার্থী আটকে থাকার ঘটনায় তদন্ত শুরু


ইত্তেহাদ নিউজ,মাদারীপুর : মাদারীপুরে বিদ্যালয়ের টয়লেটে ৬ ঘণ্টা শিক্ষার্থী আটকে থাকার ঘটনায় তদন্ত শুরু করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অফিস। রোববার (১৯ মে) সকালে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার নির্দেশে ঘটনাস্থলে যান মাদারীপুর সদর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মাসুদ করিম।
পরে ভুক্তভোগী, প্রত্যক্ষদর্শী ও বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মাসুদ করিম। তবে তদন্তের স্বার্থে এখন কোনো মন্তব্য দিতে রাজি নন তিনি।
জানা যায়, ৯ বছরের রাফিন। চোখেমুখে এখনও আতঙ্কের ছাপ। মৃত্যুর খুব কাছাকাছি থেকে আবার ফিরে গেছে বিদ্যালয়ের পাঠদানে। বাবা নুরুল হক মারা যাওয়ার পর রাফিনের ঠাঁই হয় মাদারীপুর সদর উপজেলার পাঁচখোলার হাজী নওয়াব আলী খান শিশু নিবাসে। সেখানে থেকেই পাশের পাঁচখোলা বোর্ড সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হয় সে।
বৃহস্পতিবার (১৬ মে) সকালে সহপাঠীদের সঙ্গে শিশু নিবাস থেকে বিদ্যালয়ে আসে তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী রাফিন। দুপুর সোয়া ১২টার দিকে বিদ্যালয়ের তিনতলার টয়লেটে যায় সে। শ্রেণিকক্ষে পরীক্ষা থাকার কারণে সাড়ে ১২টায় ছুটি হয় বিদ্যালয়। ছুটির ঘণ্টা পড়লে সব শিক্ষার্থী বাড়িতে চলে যায়। পরে বিদ্যালয়ের দপ্তরি খোকন খান টয়টেলের দরজা বন্ধ করে শ্রেণিকক্ষে তালা দিয়ে চলে যান। এতে টয়লেটের ভেতর আটকা পড়ে ওই শিক্ষার্থী।
একপর্যায়ে সন্ধ্যা ৬টার দিকে টয়লেটের দরজার সিটকিনি ভেঙে শ্বাসরুদ্ধ অবস্থা থেকে বের হয় সে। চিৎকার চেঁচামেচি শুনে অসুস্থ অবস্থায় বিদ্যালয়ের পাশে থাকা সাকিব নামে আরেক শিক্ষার্থী তালা খুলে রাফিনকে উদ্ধার করে। পরে দেওয়া হয় প্রাথমিক চিকিৎসা।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী রাফিন বলে, ‘আমি টয়লেট করতে গেলে আমাকে আটকে রেখেই সবাই চলে যায়। পরে অনেকক্ষণ চেষ্টা চালিয়ে সিটকিনি ভেঙে বাইরে বের হই। পরে গেটের তালা খুলে আমাকে উদ্ধার করে। ভেতরে আমি খুব আতঙ্কে ছিলাম।’
প্রত্যক্ষদর্শী সাকিব বলেন, ‘আমি চিৎকার শুনে বিদ্যালয়ের গেটের সামনে গিয়ে দেখি রাফিন কান্নাকাটি করছে। পরে তালা খুলে বের করে নিয়ে আসি।’
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রওশন আরা বেগম বলেন, ‘বৃহস্পতিবার এক বেলা ক্লাস থাকায় সবাই তাড়াতাড়ি বাড়ি চলে যায়। আমি ট্রেনিং ও মিটিংয়ে অন্যত্র ছিলাম। ঘটনাটি শুক্রবার আমার কানে আসে। এরপর আমি দপ্তরির সঙ্গে রাগারাগি করেছি। এই ঘটনায় কঠিন ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এদিকে এ ঘটনাকে ‘ছুটির ঘণ্টা’ চলচ্চিত্রের সঙ্গে উল্লেখ করে দোষীদের বিচার দাবি করেছেন মানবধিকার-কর্মী অ্যাডভোকেট মশিউর রহমান পারভেজ বলেন, ‘প্রচণ্ড গরমে একটি শিশু টয়লেটের মধ্যে ৬ ঘণ্টা আটকা থাকা মানবধিকার লঙ্ঘন। এর দায় প্রধান শিক্ষক, বিদ্যালয়ের সভাপতি ও দপ্তরি কেউ-ই এড়াতে পারে না। তাদের সবার বিরুদ্ধেই মামলা হওয়া উচিৎ। কঠিন বিচারও হওয়া উচিৎ।’
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা তাপস কুমার পাল বলেন, ‘একটি শিশু টয়লেটের ভেতর আটকে ছিল, বিষয়টি দুঃখজনক। এর দায়ভার বিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্ট কেউ-ই এড়াতে পারেন না।
* সর্বশেষ গুরুত্বপূর্ণ সব সংবাদ, ছবি ,অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ও লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন। ভিজিট করুন : http://www.etihad.news
* অনলাইন নিউজ পোর্টাল ইত্তেহাদ নিউজে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়