পাথরঘাটায় পানিবাহিত রোগ ছড়ানোর আশঙ্কা


ইত্তেহাদ নিউজ,বরগুনা : ঘূর্ণিঝড় রেমাল চলে গেলেও তার ক্ষত রেখে গেছে উপকূলীয় এলাকা জুড়ে। উপকূলের মানুষের জীবন যাত্রা সবকিছু তছনছ করে দিয়ে গেছে ঘূর্ণিঝড় রেমাল। জীবনের ক্ষতি না হলেও পাথরঘাটা উপকূলে ব্যাপক মালের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
এরমধ্যে পাথরঘাটায় দেখা দিয়েছে লবণাক্ত এবং পানিবাহিত নানা রোগ। সরকারিভাবে ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণে দিনরাত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন উপজেলা প্রশাসন। পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত এবং পরিবেশের ক্ষতি নিয়ে চিন্তিত তারা।
ঘূর্ণিঝড় রেমালের তাণ্ডবে প্রতিটি বসতবাড়িতেই যেন ধ্বংসস্তূপ। কোথায়ও গাছ ভেঙে বসতঘরে পড়ে ঘর বিধ্বস্ত হয়েছে, কোথাও পুকুরে গাছের ডালপালা-পাতা পরে পানি নষ্ট হয়েছে। অপরদিকে পানিতে মাছ, হাস মুরগি, কোথাও কোথাও গরু ছাগল পচে দুর্গন্ধ সৃষ্টি হয়েছে। একে তো পরিবেশ দূষিত হয়েছে অন্যদিকে পানি পচে পানাবাহিত নানা রোগেও সংক্রমণ তৈরি হয়েছে।
পাথরঘাটা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মাসুদ রানা জানান, একে তো লবণাক্ত পানি ঢুকেছে, অন্যদিকে গাছের পাতায় পানি পচে যাওয়ায় নষ্ট হয়ে গেছে। এই পানি ব্যবহার না করাই উত্তম। যদি করতেই হয় তাহলে পানি ব্যবহারযোগ্য করে ব্যবহার করতে হবে। এছাড়াও দ্রুত পানি নিষ্কাশন করা জরুরি। তা না করলে ডেঙ্গু আক্রান্ত হতে পারে। দ্রুত পানি নিষ্কাশন না করলে ভয়াবহ অবস্থা হবে।
পাথরঘাটা উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. রোকনুজ্জামান খান বলেন, রেমালে ঘরবাড়ি গাছপালার ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। যে ক্ষতি হয়েছে তা পূরণ হওয়ার নয়, তারপরও ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা। তবে এ মুহূর্তে সবচেয়ে সংকটে পড়েছে সুপেয় পানি।
ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় রেমালে উপকূলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। কৃষি, মৎস্য, গাছপালার ক্ষতির পাশাপাশি মাছ ধরা ট্রলারের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এ পর্যন্ত দুই শতাধিক ট্রলার বিধ্বস্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এতে ক্ষতি হয়েছে দুই শতাধিক জেলে পরিবারের হাজারো সদস্যর।
২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর সিডরে ব্যাপক প্রাণহানি ও জানমালের ক্ষতি হলেও তুলনামূলক রেমালে ক্ষতি বেশি হয়েছে। তবে ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা না থাকলে গভীর বঙ্গোপসাগরের প্রচুর পরিমাণে ট্রলার যেমন ক্ষতি হতো তেমনি প্রাণহানিও হতো বলে মনে করেন মত্স্যজীবী সহ সুশীল সমাজ।
পাথরঘাটা উপজেলা ঘূর্ণিঝড় রেমালে কৃষি, মৎস্য, ঘরবাড়ি ও গাছপালার ক্ষতির পাশাপাশি মাছ ধরা ট্রলারের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। সবশেষ তথ্যানুযায়ী ঘূর্ণিঝড় রেমালে বিষখালী ও বলেশ্বর নদে নোঙর করে রাখা ছোট ছোট মাছ ধরা টলার দুমরে মুচড়ে যায়। এতে দুই শতাধিক ট্রলার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন বরগুনা জেলা মৎস্যজীবী ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী।
সরেজমিন দেখা গেছে, বিষখালী নদীর কালমেঘা ইউনিয়নের ছোনবুনিয়া এলাকায় নোঙর করে রাখা ২৫ টি ছোট ছোট মাছ ধরা ট্রলার পানির চাপে দুমরে মুচড়ে যায়। প্রতি ট্রলারেই জাল দড়ি ছিল। বিষখালী নদী সংলগ্ন কাকচিড়া, মাঝের চর, ছোনবুনিয়া, কালমেঘা, কুপধন, বলেশ্বর নদ সংলগ্ন গাববাড়িয়া, দক্ষিণ চরদুয়ানী, টেংরা, তাফালবাড়িয়াসহ বিভিন্ন জায়গায় নোঙর করা ট্রলার বিধ্বস্ত হয়। এছাড়াও গভীর বঙ্গোপসাগরের মাছ ধরা বড় ট্রলার খলিলুর রহমানের মালিকানা এফবি লিমা ট্রলারটিও সম্পূর্ণ দুমরে মুচড়ে যায়।
জেলে জামাল হোসেন, বাবুল হোসেন, মনির হাওলাদার, ফারুক হোসেন বলেন, বন্যার আগের দিনই ঘাটে ট্রলার নোঙর করে রেখেছি। রাতে বন্যায় আমাদের ট্রলার দুমরে মুচড়ে যায়। অনেক ট্রলার সম্পূর্ণ ক্ষতি হয়ে গেছে। একমাত্র উপার্জনের পথ ট্রলার বিধ্বস্ত হওয়ায় আমরা নিঃস্ব হয়ে গেলাম।
বরগুনা জেলা মৎস্যজীবী ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী বলেন, বিষখালী ও বলেশ্বর নদে থাকা দুই শতাধিক ছোট মাছ ধরা ট্রলার দুমরে মুচড়ে যায়। প্রতি জেলে পরিবার একমাত্র উপার্জনক্ষম ট্রলারটি বিধ্বস্ত হওয়ায় নিঃসঙ্গ হয়ে পড়েছে ট্রলার মালিকসহ জেলেরা।
তিনি আরও বলেন, ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা না থাকলে গভীর বঙ্গোপসাগরের প্রচুর পরিমাণে ট্রলার যেমন ক্ষতি হতো তেমনি প্রাণহানিও হতো। উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা জয়ন্ত কুমার অপু বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, উপকূলীয় এলাকায় ঘূর্ণিঝড় রেমালে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত জেলেদের তালিকা করা হচ্ছে। সরকারের পক্ষ থেকে তাদের সহযোগিতা করা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
* সর্বশেষ গুরুত্বপূর্ণ সব সংবাদ, ছবি ,অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ও লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন। ভিজিট করুন : http://www.etihad.news
* অনলাইন নিউজ পোর্টাল ইত্তেহাদ নিউজে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়