বরিশাল অফিস : বরিশালের জমজম আইএইচটি ম্যাটস এন্ড নার্সিং কলেজের পরিচালক মাসুদ হাসান এর বিরুদ্ধে অসহায় ছাত্রীদের জিম্মি করে অনৈতিক কাজে বাধ্য করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। দীর্ঘদিন ধরে মাসুদুল হক এনাম এমন ঘৃন্য কাজ করে আসছে বলে জানায় অভিযোগকারীরা। শনিবার গভীর রাতে কারিশমা নামের এক ছাত্রী রুপাতলী এলাকায় বেসরকারি নাসিং কলেজটির ছাত্রী নিবাসে আত্মহত্যার চেষ্টা করলে বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে। ওই ছাত্রীকে শেরেবাংলা মেডিকেলে ভর্তি করা হলে শনিবার কলেজের সকল শিক্ষার্থীরা এই ঘটনার বিচার, পরিচালক মাসুদুল হক এনামের অপসারন, হোস্টেল ম্যানেজমেন্টে পরিবর্তন আনা সহ নানা দাবি নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করে। এসময় তারা বরিশাল পটুয়াখালী মহাসড়কের রুপাতলী এলাকায় কলেজ ভবনের গেটে তালা মেরে অবরুদ্ধ করে রাখে। বিপদের অশংকায় পরিচালক মাসুদুল হক এনাম এসময় গাঁ ঢাকা দেয়। তবে বিক্ষুব্ধ ছাত্র-ছাত্রীদের অন্য দাবীগুলো মেনে নেয়ার আশ্বাসে পরিচালক মাসুদুল হক এনামের অসহায় ছাত্রীদের সাথে অনৈতিক কাজের বিষয়টি চাপা দেয়ার চেষ্টা করতে দেখা যায় নাসিং কলেজের কর্মরত সকলকে। বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের ছাত্রীদের যৌন হয়রানির বিষয়টি গোপন রাখার শর্তে অন্য দাবীগুলো মেনে নেয়ার আশ্বাস দেয় নাসিং কলেজ কর্তপক্ষ। এর পরেও না মেনে নিলে তাদের পড়াশুনা শেষ করে দেয়া সহ কর্মজীবনে বাধা সৃষ্টির হুমকি দেয়া হয়েছে বলে জানায় নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি সূত্র।
গোয়েন্দা সূত্র মতে, জমজম আইএইচটি ম্যাটস এন্ড নার্সিং কলেজের পরিচালকদের একজন মাসুদুল হক এনাম। তিনি প্রতিষ্ঠানটি শুরুর পর থেকেই তার অনৈতিক উদ্দেশ্য পূরন করতে অসহায়, দরিদ্র, বিধবা, সমাজের সুবিধাবঞ্চিত যুবতিদের টার্গেট করে। সল্প শিক্ষিত এমন মেয়েদের খুজে বের করার জন্য দেশের বিভিন্ন যায়গায় মাসুদুল হক এনামের লোক ঠিক করা রয়েছে। এরা এমন কাউকে পেলে মাসুদকে খবর দেয়। মাসুদুল হক এনাম ওই মেয়েদের সাথে যোগাযোগ করে অবস্থার সুজোগ নিয়ে সল্প ব্যায়ে, আবার অনেক সময় ফ্রিতে নাসিং পড়ার প্রলোভন দেখায়। উন্নত একটি ভবিষ্যতের আশায় এনামের কথায় জমজম আইএইচটি ম্যাটস এন্ড নার্সিং কলেজের শিক্ষার্থী হিসেবে ভর্তি হওয়ার পর তাদের রাখা হয় রুপাতলীর ছাত্রি নিবাসে। এর পর কারো কারো সম্মতিতে আবার কাউকে বাধ্য করেই রাজী করানো হয় অনৈতিক কাজের জন্য। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এমন মেয়েদের এই ফাঁদে আটকানো হয় যাদের মূলত প্রতিবাদ করার মত সুযোগ নেই। আর প্রতিবাদ করলেও নানা ধরনের ঝামেলায় ফেলা সহ উন্নত একটি জীবনের স্বপ্ন ভেঙ্গে যাওয়ার ভয়ে কেউই মুখ খোলেনি। কারিশমা নামের ছাত্রিটিও মাসুদুলর হক এনাম এমন অপকর্মের শিকার হয়ে আসছিল বলে জানায় গোয়েন্দারা। কাউকে কিছু না বলতে পেরে শুক্রবার দিনগত গভীর রাতে ছাত্রী নিবাসের একটি কক্ষে গলায় ফাস দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করে সে। সহপাঠিরা টের পেয়ে তাকে মুমুর্ষ অবস্থায় উদ্ধার করে শেরেবাংলা মেডিকেলে নেয়। এর পর থেকেই আন্দোলন শুরু করে সকল শিক্ষার্থীরা। গোয়েন্দা তথ্যে নিশ্চত করা হয় এপর্যন্ত এনামের এমন লালসার শিকার হওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা অনেক। যারা নিজেদের সম্মান আর মাসুদুল হক এনামের ভয়ে সব গোপন করে আছে।
শনিবার সকালে জমজম আইএইচটি ম্যাটস এন্ড নার্সিং কলেজের রুপাতলী কার্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, ৩০/৪০ জন ছাত্র কলেজের গেট ভেতর থেকে তালা মেরে অবস্থান করছে। এসময় তারা সাংবাদিকদের তথ্য সংগ্রহ করতে বাধা প্রদান করে। তাদের মধ্যে থেকে কয়েকজন দাবী করে জমজম আইএইচটি ম্যাটস এন্ড নার্সিং কলেজ এখন তাদের নিয়ন্ত্রনে। দাবী আদায়ের জন্য বিক্ষোভ করছেন বলে জানালেও কি দাবি নিয়ে তাদের এই বিক্ষোভ তা কলেজ কর্তৃপক্ষের ইশারায় এসময় তারা স্বিকার করেনি। ছাত্রী আত্মহত্যার চেষ্টার বিষয়টি এসময় তারা গোপন করার চেষ্টা করে। তারা বলে শ্বাস কস্টের কারনে ছাত্রী নিবাসের এক সহপাটিকে গভীর রাতে শেরেবাংলা মেডিকেলে নেয়া হয়েছে।
অভিযোগের বিষয়ে আলাপের জন্য জমজম আইএইচটি ম্যাটস এন্ড নার্সিং কলেজের একজন কেয়াটেকার ও একজন সহকারী এডমিন অফিসার ছাড়া কাউকে দেখা যায়নি তখন। সহকারী এডমিন অফিসার মো. মিরাজ বলেন, ছাত্ররা বিভিন্ন দাবি, কলেজের পরিচালক ও এক পিয়নকে অপসারনের দাবি নিয়ে বিক্ষোভ করছে শনিবার সকাল থেকে। ছাত্রদের সাথে কর্তৃপক্ষের যোগাযোগ চলছে। মিমাংসা হয়ে যাবে। পরিচালকের অনৈতিক কাজের অভিযোগের বিষয়ে প্রশ্ন করলে কোন উত্তর দিতে পারেনি সহকারী এডমিন অফিসার মো. মিরাজ। কিছুক্ষন পর কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করে সাংবাদিকদের বিষয়টি নিয়ে সংবাদ প্রকাশ না করার অনুরোধ করে। এসময় উপস্থিত সাংবাদিকদের ঘুষ দেয়ার চেষ্টাও করা হয় পরিচালক মাসুদুল হক এনামের পক্ষে।
অভিযোগের বিষয়ে ফোনে যোগাযোগ করা হয় জমজম আইএইচটি ম্যাটস এন্ড নার্সিং কলেজের অভিযুক্ত পরিচালক মাসুদুল হক এনামের সাথে। তিনি বলেন, অভিযোগ গুলো মিথ্যা। অন্যান্য বেসরকারী নার্সিং ইনস্টিটিউটের দ্বারা তিনি বার বার ষড়যন্ত্রের শিকার হচ্ছেন। ছাত্রীকে অনৈতিক কাজে বাধ্য করার অভিযোগের বিষয়ে প্রশ্ন করলে মাসুদুল হক এনাম মিথ্যা মিথ্যা বলে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। আর বলেন, এগুলো ষড়যন্ত্র। এর আগেও একবার জমজম আইএইচটি ম্যাটস এন্ড নার্সিং কলেজে জ্বীনের উপদ্রপ এমন মিথ্যা খবর ছড়ানো হয়েছিল বলে দাবি করেন। তিনি বর্তমানে দুরে আছেন বলে জানান।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ২০২১ সালের ১২ ফেব্রুয়ারী অজানা আতঙ্কে ভুগে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন বরিশালের জমজম নার্সিং ইনস্টিটিউটের চার শিক্ষার্থী। ২০২১ সালের ১২ ফেব্রুয়ারী ৮টার দিকে ইনস্টিটিউটের মোট ২০ শিক্ষার্থীকে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে হাসপাতাল ছাড়েন ১৬ জন।
বরিশাল নগরীর রুপাতলীর জমজম নার্সিং ইন্সটিটিউট কর্তৃপক্ষ তখন জানিয়েছিলেন, হাসপাতালে চিকিৎসাধীন শিক্ষার্থীরা হলেন- নার্সিং অনুষদের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী জামিলা আক্তার, সেতু দাস এবং প্রথম বর্ষের তামান্না ও বৈশাখী। ভয়-আতঙ্কে নগরীর সিঅ্যান্ডবি এলাকার ওই প্রতিষ্ঠানের ছয়তলা বিশিষ্ট হোস্টেলের সব শিক্ষার্থী হোস্টেল ছাড়লে কর্তৃপক্ষ ইনস্টিটিউট বন্ধ ঘোষণা করে।
ইনস্টিটিউটের কো-অর্ডিনেটর বলেন,সমস্যা। হোস্টেলের ছাত্রীরা রাতে ভূতের ভয় পেয়েছে বলে আমাদের জানায়। তারা মিলাদ পড়াতে চাইলে আমরা ব্যবস্থা করি, পরে হুজুর আনানো হয়। আরও দুই ছাত্রী ভয় পাওয়ার কথা জানালে হোস্টেলে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। রাতে বেশ কয়েকজন অসুস্থ হয়ে পড়লে তাদের হাসপাতালে নেওয়া হয়, বর্তমানে চার জন হাসপাতালে ভর্তি আছেন।ইনস্টিটিউট কর্তৃপক্ষ জানায়, গত ৩ ফেব্রুয়ারি ২০২১ থেকে ৪৫ জন শিক্ষার্থীর পরীক্ষা চলছিল । এর মধ্যেই এই ঘটনা ঘটেছে।হোস্টেলের বাবুর্চি খালেদা বলেন, ‘ভূত আতঙ্কে একে একে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন ছাত্রীরা। তাদের হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।
* সর্বশেষ গুরুত্বপূর্ণ সব সংবাদ, ছবি ,অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ও লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন। ভিজিট করুন : http://www.etihad.news
* অনলাইন নিউজ পোর্টাল ইত্তেহাদ নিউজে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়
ইত্তেহাদ নিউজ, এয়ার পোর্ট রোড, আবুধাবী ,সংযুক্ত আরব আমিরাত, ইমেইল: [email protected], web:www.etihad.news
এম এম রহমান, প্রধান সম্পাদক, ইত্তেহাদ নিউজ, এয়ার পোর্ট রোড, আবুধাবী, সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে প্রকাশিত ও প্রচারিত