পটুয়াখালীর বাউফলে দূর্যোগ থেকে বাঁচতে টেকসই বাঁধ চান বাসিন্দারা


ইত্তেহাদ নিউজ,ঢাকা : পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলায় তেঁতুলিয়া নদীর বুকে ১১টি চর নিয়ে চন্দ্রদ্বীপ ইউনিয়ন। দূর্যোগ থেকে বাঁচতে টেকসই বাঁধ চান এখানকার বাসিন্দারা।
উপকূলীয় জেলা পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলায় চরাঞ্চলে ও নদী পাড়ের গ্রামগুলোতে লক্ষাধিক মানুষ বসবাস করেন। প্রতিনিয়ত বন্যা ও ঘূর্ণিঝড়ের সঙ্গে লড়াই করে বেঁচে আছেন তারা। এক দুর্যোগের ক্ষত শুকাতে না শুকাতেই আরেকটা এসে আঘাত হানে। একের পর এক প্রাকৃতিক দুর্যোগের শিকার চরাঞ্চলের লক্ষাধিক মানুষ। অব্যাহত নদী ভাঙন, বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাসের সঙ্গে সংগ্রাম করে বেঁচে থাকাই তাদের নিয়তি। এসব মানুষের প্রাণের দাবি টেকসই বেড়িবাঁধ। সম্প্রতি ঘটে যাওয়া ঘূর্ণিঝড় রেমালের পর ত্রাণ চায় না, টেকসই বেড়িবাঁধ চায়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার তেঁতুলিয়া ও লোহালিয়া নদীতে ১৮টি চর এবং নদীর তীরবর্তী কালাইয়া, নাজিরপুর, কেশবপুর, ধুলিয়া ও কাছিপাড়া ইউনিয়নের ২২টি গ্রামে লক্ষাধিক মানুষ বসবাস করে। এসব চরাঞ্চল ও নদীতীরের গ্রামে টেকসই বেড়িবাঁধ নেই। যার কারণে নদীর পানি স্বাভাবিকের চেয়ে ৪/৫ ফুট উচ্চতায় প্রবাহিত হলেই লোকালয় প্লাবিত হয়। পানি ঢুকে পড়ে বসতবাড়িতে। ভেসে যায় ফসল, পুকুর ও ঘেরের মাছ। পানির চাপে ভেঙে যায় গ্রামীণ সড়ক, ক্ষতিগ্রস্ত হয় কাঁচা ঘরবাড়ি।
তথ্য মতে, ১৯৭০ সালের বন্যা ও ২০০৭ সালের সিডরে প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। সিডরের তাণ্ডবে উপজেলার চন্দ্রদ্বীপ, চরফেরারেশন ও মমিনপুরের চরে ৫৭ জন প্রাণ হারায়। ঘূর্ণিঝড় আয়লা, আম্পান, মোরা, মোখা, রেমালসহ প্রতি বছর প্রাকৃতিক দুর্যোগে বসতঘর, ফসল, মাছ, রাস্তাঘাট, গাছপালা ও বিদ্যুৎ লাইনের ব্যাপক ক্ষতি হয় এসব চরাঞ্চলে। যার ক্ষত বছরের পর বছর বয়ে বেড়াচ্ছে নদী পাড়ের বাসিন্দারা। সরকার দেশের উন্নয়নে মেগা মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করলেও উপকূল রক্ষায় স্থায়ী (টেকসই) বেড়িবাঁধ নির্মাণ না করায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়ে আসছেন তারা।
উপজেলা প্রশাসনের তথ্য মতে, রেমালের তাণ্ডবে উপজেলায় প্রায় কৃষি, মৎস্য, সড়ক ও বিদ্যুৎ বিভাগের প্রায় ১২০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়। যার মধ্যে চন্দ্রদ্বীপ, নাজিরপুর, কেশবপুর ও ধুলিয়া ইউনিয়নে ১৫৪ কিলোমিটার সড়ক ভেঙে গেছে। এতে ক্ষতি হয়েছে প্রায় ১০৭ কোটি টাকা। কৃষি ও মৎস্য খাতে ক্ষতি হয়েছে ৬ কোটি টাকা। এ ছাড়াও বিদ্যুৎ, ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত ও গাছপালা নিয়ে প্রায় ১২০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। বেড়িবাঁধ না থাকায় নদীর পানি ঢুকে কৃষি, মৎস্য ও সড়ক পথের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন উপজেলা প্রশাসন।
সম্প্রতি ত্রাণ ও দুর্যোগ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি আ.স.ম ফিরোজ এমপি রেমালে ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করতে যান। এ সময় ত্রাণসামগ্রী নিতে অনাগ্রহ জানিয়ে টেকসই বেড়িবাঁধের দাবি জানান চন্দ্রদ্বীপ, ধুলিয়া, কেশবপুর ও নাজিরপুর ইউনিয়নের নদী পাড়ের বাসিন্দারা।
চন্দ্রদ্বীপ ইউনিয়নের বাসিন্দা মো. আনোয়ার গাজী বলেন, নদীর মাঝে বসবাস করছি। চারপাশে বেড়িবাঁধ না থাকায় ঝড়, বন্যা ও জোয়ারের পানি ঢুকে ঘরবাড়ি ও ফসল তলিয়ে যায়। পরিবার নিয়ে বেঁচে থাকার জন্য টেকসই বেড়িবাঁধ প্রয়োজন, ত্রাণের প্রয়োজন নেই।
ইউনিয়ন রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির টিম লিডার মো. সিদ্দিকুর রহমান বলেন, এখানে ২২ হাজার মানুষ বসবাস করে। তাদের জীবনের নিরাপত্তায় সরকার উদাসীন। বছরের পর বছর দুর্যোগে জানমালের ক্ষতি হওয়ার পরেও বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা হচ্ছে না। নেই নিরাপদ আশ্রয়কেন্দ্রও। যাও আছে তাও নড়বড়ে। মানুষ তাতে আশ্রয় নিতে শঙ্কিত। যেকোনো সময় ভেঙে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। মানুষকে বাঁচাতে টেকসই বেড়িবাঁধ ও আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ করা হোক।
ইউপি চেয়ারম্যান এনামুল হক জানান, ‘তেঁতুলিয়া নদীর বুকে ১১টি চর নিয়ে চন্দ্রদ্বীপ ইউনিয়ন। এ ইউনিয়নের চারপাশে প্রায় ৩০ কিলোমিটার এলাকা নদীবেষ্টিত। মানুষের জীবন ও ফসলের রক্ষাকবচ ‘টেকসই বেড়িবাঁধ’ না থাকায় বন্যায় ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। বেড়িবাঁধের জন্য বিভিন্ন দপ্তরে আবেদন করেছি। তবে বেড়িবাঁধ নির্মাণে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।
ধুলিয়া ইউপি চেয়ারম্যান মু. হুমায়ন কবির বলেন, ‘বছরের পর বছর ধরে ধুলিয়া নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। বেড়িবাঁধ না থাকায় জলোচ্ছ্বাসে গ্রামের পর গ্রাম প্লাবিত হচ্ছে। টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ না হলে ধুলিয়াকে রক্ষা করা যাবে না।’
উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ও কাছিপাড়া ইউনিয়নের বাসিন্দা মরিয়ম বেগম বলেন, ‘কাছিপাড়ার কারখানা, গোপালিয়া, আমারখালী ও বাহেরচর লোহালিয়া নদীর তীরে অবস্থিত। এখানে টেকসই বেড়িবাঁধ না থাকায় নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে ঘরবাড়ি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও ফসলি জমি। অপরদিকে বন্যা, জলোচ্ছ্বাসে পানি ঢুকে মানুষের জানমালের ক্ষতি হচ্ছে।’
জানতে চাইলে পটুয়াখালী-২ (বাউফল) আসনের সংসদ সদস্য ত্রাণ ও দুর্যোগ মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় কমিটির সভাপতি আ স ম ফিরোজ বলেন, ‘চরাঞ্চলের মানুষের জন্য এ বছরের মধ্যে আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ করা হবে। আর বেড়িবাঁধের জন্য পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়কে আবগত করা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে আবারও কথা বলব। যাতে দ্রুত বেড়িবাঁধ নির্মাণ কাজ শুরু করা হয়।
* সর্বশেষ গুরুত্বপূর্ণ সব সংবাদ, ছবি ,অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ও লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন। ভিজিট করুন : http://www.etihad.news
* অনলাইন নিউজ পোর্টাল ইত্তেহাদ নিউজে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়