মতামত

জলবায়ু ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য প্রয়োজন ক্ষতিপূরণ

image 94618 1717762752
print news

ড. এম মনির উদ্দিন : হচ্ছে আকস্মিক বন্যা, মৌসুমি বন্যা, অতি বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, শিলাবৃষ্টি, অসময়ে বৃষ্টি, খরা, লবণাক্ততা বৃদ্ধি এবং তাপমাত্রা বাড়ার ফলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়ে যাওয়া। দেশের ৬০ শতাংশ ভূমি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৫ মিটার উপরে অবস্থিত এবং আশঙ্কা করা হচ্ছে যে, ২০৮০ সাল নাগাদ সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা ৪০ সেমি. বা ১৫ ইঞ্চি বৃদ্ধি পাবে।

গ্লোবাল ক্লাইমেট চেঞ্জ রিস্ক ইনডেক্স ২০২১ অনুসারে, বাংলাদেশ বিশ্বের মধ্যে জলবায়ুর ঝুঁকির বিবেচনায় ৭ম ঝুঁকিপূর্ণ দেশ। বিভিন্ন গবেষণা থেকে ধারণা করা হচ্ছে যে, ১৯৬১-১৯৯০ সময়ের তুলনায় বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাত ২০৩০, ২০৫০ এবং ২০৭০ সালে যথাক্রমে ৪ শতাংশ, ২.৩ শতাংশ এবং ৬.৭ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে। গড় তাপমাত্রা ২০৩০, ২০৫০ এবং ২০৭০ সালে যথাক্রমে ৪.৭০, ২.৫০ এবং ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়ে যাবে। গবেষণা থেকে আরো উঠে আসে যে, বাংলাদেশে তাপমাত্রা ২.৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়বে এবং বৃষ্টিপাত ৯.৭ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে।

বিশ্বব্যাংকের ২০২২ সালের কান্ট্রি ক্লাইমেট অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট রিপোর্ট (সিসিডিআর) এর ভিত্তিতে, আইএমএফ ইঙ্গিত করেছে যে, শুধুমাত্র ট্রপিক্যাল ঘুর্ণিঝড়ের কারণে বাংলাদেশের বার্ষিক গড় ক্ষতি ইতিমধ্যে ১ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে যা আগামীদিনগুলোতে আরো বাড়বে। ওয়ার্ল্ড মেটেরোলজিক্যাল অর্গানাইজেশন (ডব্লিউএমও) এর তথ্যমতে, জলবায়ুজনিত প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে বাংলাদেশে ২০২১ সালে প্রায় ১১.৩ বিলিয়ন ডলারের ক্ষতি হয়েছে যা ২০২১-২০২২ অর্থবছরে তার জিডিপি’র প্রায় ২.৪৭ শতাংশ।

২০২০ সালের মধ্যে দেশে প্রায় ৫৫ মিলিয়ন মানুষ জলবায়ু পরিবর্তনের দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং ৪.১ মিলিয়ন মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। জলবায়ু অভিবাসনের জন্য বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দেশ। ২০৫০ সালের মধ্যে প্রায় ১৩.৩ মিলিয়ন মানুষ অভ্যন্তরীণ জলবায়ু অভিবাসী হবে যা দক্ষিণ এশিয়ার ভবিষ্যৎ জনসংখ্যার প্রায় ২৭ শতাংশ জলবায়ু অভিবাসী হবে। আইপিসিসি ভবিষ্যদ্বাণী করেছে যে, ২০৫০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ তার ১৭ শতাংশ ভূমি এবং ৩০ শতাংশ খাদ্য উৎপাদন হারাবে।

বিশ্বখাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) এর ২০২১ এর সমীক্ষা অনুসারে, বাংলাদেশে আনুমানিক ২৫ মিলিয়ন মানুষ খাদ্য নিরাপত্তাহীন, তাদের মধ্যে প্রায় ১১ মিলিয়ন মহামারি এবং অন্যান্য পরিস্থিতির কারণে তীব্র ক্ষুধার্ত যার কারণ জলবায়ুর পরিবর্তন। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) ২০২১ এর সমীক্ষা অনুসারে, কোভিড-১৯ মহামারির কারণে পরিবারের আয় ও খাদ্যবাবদ খরচ কমে গেছে। বিশেষ করে, নি¤œ আয়ের পরিবারগুলি মারাত্বকভাবে প্রভাবিত হয়েছে। অপুষ্টি, খাদ্য এবং পানিবাহিত অসুস্থতা, সংক্রামক রোগ, বায়ুদূষণ সবই জলবায়ু পরিবর্তনের ফল।

বিশ্বব্যাংক এর ২০২১ সালের তথ্য অনুসারে, বাংলাদেশের প্রায় ৪৭ শতাংশ শ্রমশক্তি কৃষিখাতের সাথে নিবিড়ভাবে জড়িত যা দেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ১৬ শতাংশ। কৃষি অধিকাংশ গ্রামীণ সম্প্রদায়ের জীবিকার প্রধান উৎস যা জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। ক্রমবর্ধমান তাপমাত্রা, অনিয়মিত বৃষ্টিপাতের ধরন, আকস্মিক বন্যা, মৌসুমি বন্যা, ঘূর্ণিঝড় এবং খরার মত প্রাকৃতিক বিপর্যয় বৃদ্ধির কারণে দেশে খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা একটি জটিল সমস্যা হয়ে দাড়িয়েছে।

জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বৈশ্বিক আচরণের পরিবর্তন না হলে বাংলাদেশ ২০৫০ সাল নাগাদ জিডিপি’র ২ শতাংশের সমান বার্ষিক অর্থনৈতিক ক্ষতির মুখে পড়বে যা ২১০০ সাল নাগাদ বেড়ে ৯.৪ শতাংশে দাঁড়াবে। আর যদি বৈশ্বিক প্রশমনের পদক্ষেপগুলি সফলভাবে বাস্তবায়িত হয়, তাহলে ২১০০ সাল নাগাদ এই ক্ষতি ২ শতাংশের মধ্যে সীমাবদ্ধ হতে পারে। তবে, উন্নত দেশগুলি যেভাবে গ্রীনহাউজ গ্যাস নির্গমন করে চলেছে এবং তাপমাত্রা যেভাবে বেড়ে চলেছে তাতে প্রশমন পদক্ষেপগুলি কোন প্রভাব ফেলবেনা।

এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর প্রথম সারিতে রয়েছে এবং এই শতাব্দীর শেষ নাগাদ তার অর্থনীতির ৯ শতাংশ পর্যন্ত বার্ষিক ক্ষতির সম্মুখীন হবে। বিস্তীর্ণ ফসলের ক্ষয়ক্ষতি, হারিয়ে যাওয়া আবাদি জমি, বাস্তুচ্যুত জনগোষ্ঠী, বিষাক্ত ভূ-গর্ভস্থ পানি-এটি কোন ভয়ংকর গল্প নয়, বর্তমান ধ্বংসাত্মক বৈশ্বিক সম্পদ ব্যবহারের ধরনগুলি পরিবর্তন করা না হলে ভবিষ্যতে এটি একটি খুব বাস্তব সম্ভাবনা, বলেছেন এডিবি’র ভাইস প্রেসিডেন্ট বিন্দু লোহানী। চরম জলবায়ু ইভেন্টগুলির ফ্রিকোয়েন্সি এবং তীব্রতার প্রত্যাশিত বৃদ্ধি দরিদ্রদের মধ্যে যারা সবচেয়ে বেশী ঝুঁকিতে রয়েছে তাদের জন্য সুরক্ষা কর্মসূচি বৃদ্ধিসহ বিস্তৃত পদক্ষেপের প্রয়োজন।

বাংলাদেশ সরকার দেশের ১১টি জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় ১১৩টি প্রধান ইন্টারভেনশন অভিযোজনের জন্য ন্যাশনাল অ্যাডাপটেশন প্ল্যান (২০২৩-২০৫০) প্রণয়ন করে যার আনুমানিক খরচ ২৩০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার যা বাস্তবায়নের জন্য অভ্যন্তরীণ বিনিয়োগের সীমাবদ্ধতা রয়েছে। পাশাপাশি, আন্তর্জাতিক উৎস থেকেও অর্থ প্রাপ্তির ধারা খুবই কম। বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে এশিয়া ও আফ্রিকায় চরম খরার পাশাপাশি বাংলাদেশে তাপপ্রবাহ দেখা দিয়েছে। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত এবং পাকিস্তানের তাপমাত্রা ইতিমধ্যে সকল রেকর্ড ভেঙে ৫২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের উপরে চলে গেছে। উন্নত দেশগুলোর শিল্পায়নের ফলে গ্রীনহাউজ গ্যাস নির্গমনের কারণে বিশ্ব ক্রমান্বয়ে উষ্ণ হয়ে উঠছে যার প্রত্যক্ষ মুখোমুখি হচ্ছে বাংলাদেশ।

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ক্ষতির দিক থেকে বিশ্বে ৫ম স্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। দেশের ৯০ মিলিয়ন মানুষ ’উচ্চ জলবায়ু’ প্রাদুর্ভাবের ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বাস করছে এবং ৫৩ মিলিয়ন মানুষ “খুব উচ্চ” প্রার্দুভাব এর মধ্যে রয়েছে। এক মিটার সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির ফলে স্থায়ীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে দেশের উপকূলীয় অঞ্চল যেখানে তার ভুমিখন্ডের ১৪ শতাংশ পর্যন্ত প্লাবিত হতে পারে এবং এর বিশাল জনসংখ্যা সবচেয়ে বেশী ঝুঁকির সম্মুখীন হবে। সেইসাথে জলাভূমি এবং বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন, সুন্দরবনের ক্ষতি করবে যা লক্ষ লক্ষ মানুষের আয় ও পুষ্টি প্রদান করে এবং গ্রামীণ দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে কাজ করে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়ে যাওয়ায় উপকূলীয় এলাকায় ইতোমধ্যেই আবাদি জমির লবণাক্ততা বৃদ্ধি পেয়েছে। জোয়ারের পানি ক্রমান্বয়ে ভিতরে প্রবেশ করে ব্যাপক পরিমাণ আবাদি জমি চাষের জন্য সম্পূর্ণভাবে অনুপযুক্ত করে তুলেছে। বর্তমানে বাংলাদেশের দক্ষিন-পশ্চিমাঞ্চলীয় জেলা বাগেরহাট, খুলনা ও সাতক্ষীরায় ১৩ শতাংশ এলাকায় লবণাক্ততা রয়েছে যা ২০৫০ সালে ১৬ শতাংশ এবং ২১০০ সালে ১৮ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে।

বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ইতিমধ্যে দেশের তাপমাত্রা চরমভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে যার ফলে মাঠে কৃষকের ফসল পুড়ছে, ফসলের ফলন কমে গেছে, মানুষ অতি তাপমাত্রার কারণে স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। ২০৫০ সালের মধ্যে ধান ও গমের উৎপাদন যথাক্রমে ৮.৮ শতাংশ এবং ৩২ শতাংশ হ্রাস পাবে। ২১০০ সালে ফসল উৎপাদন ৩০ শতাংশ হ্রাস পাবে। এই প্রেক্ষাপটে, পরিবর্তিত আবহাওয়ায় যথাযথ অ্যাডাপটেশন ইনোভেশন উদ্ভাবন এবং ক্লাইমেট সহনশীল ফসল, লাইভস্টক, ফিশারিজ প্রযুক্তি সম্প্রসারণের মাধ্যমে মানুষের খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তার জন্য তাৎক্ষণিক মিটিগেশন ফান্ড জরুরিভাবে প্রয়োজন। সেইসাথে দেশের দীর্ঘস্থায়ী জলবায়ু সহনশীল মেকানিজম, প্রযুক্তি উদ্ভাবন, অবকাঠামো উন্নয়ন, বাস্তুচ্যুত মানুষের পুনর্বাসন ও কর্মসংস্থান এবং অন্যান্য ক্ষতি কাটিয়ে উঠার জন্য বিশেষ অর্থ বরাদ্দ প্রয়োজন যা বাংলাদেশের মতো একটি সদ্য উন্নয়নশীল দেশের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ বিনিয়োগ অসম্ভব। অথচ, বাংলাদেশ এই পরিস্থিতি তৈরির জন্য মোটেই দায়ী নয়। এটি তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণের মাধ্যমে অত্যন্ত পরিষ্কার যে, উন্নত দেশগুলো তাদের বিলাসবহুল জীবন যাপন তথা উন্নয়নের জন্য গ্রীনহাউজ গ্যাস নির্গমন বাড়িয়েই চলছে আর তার ফলে উত্তপ্ত হচ্ছে বিশ্ব যার বিরূপ প্রভাব পড়ছে বাংলাদেশের মানুষের উপর।

বাংলাদেশে ২০২৩ সালে চালের উৎপাদন ছিল ৩৯.১ মিলিয়ন টন। বর্তমানে দেশে প্রতিবছর জনসংখ্যা বাড়ছে দুই মিলিয়ন যা ২০৫০ সাল নাগাদ ২১৫.৪ মিলিয়নে পৌঁছাবে এবং এদের খাওয়ানোর জন্য মোট চালের প্রয়োজন হবে ৪৪.৬ মিলিয়ন টনের। অন্যদিকে সরকারের এক সমীক্ষা অনুসারে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আকস্মিক বন্যা, খরা, তাপপ্রবাহ এবং লবণাক্ততার ফলে কৃষি উৎপাদন ইতিমধ্যে ৭-১০ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। দেশের প্রধান খাদ্য ধানের পোস্ট-হারভেস্ট অপচয় ১৩-১৪ শতাংশ। জলবায়ুর পরিবর্তনজনিত কারণে তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় অবকাঠামোর ক্ষতি হওয়া, আর্দ্রতা বেড়ে যাওয়ায় স্টোরেজ করা ধানে বিভিন্ন পোকামাকড়ের আক্রমণ ও রোগ বেড়ে যাওয়ায় এই ক্ষতি হয়ে থাকে যার পরিমাণ বছরে ৩.৭৭ মিলিয়ন টন।

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে দেশের শীতকালীন সময় কমে গিয়েছে। পক্ষান্তরে, দেশের অধিকাংশ মৌসুমি ফল গ্রীষ্ম মৌসুমে হয়ে থাকে। ফলে, বেশী তাপমাত্রার কারণে এ সব উৎপাদিত ফলের শেলফ লাইফ দ্রুত কমে যায় এবং নষ্ট হয় যার মাধ্যমে বাৎসরিক আর্থিক ক্ষতি হয় ২.৪ বিলিয়ন ডলার। উচ্চ তাপমাত্রা গবাদিপশু এবং পোল্ট্রি শিল্পের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে শরীরের বিপাক ক্রিয়া বেড়ে যাওয়ায় গবাদিপশু ও পোল্ট্রির বৃদ্ধি ব্যাহত হচ্ছে। তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ার ফলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উষ্ণতা বৃদ্ধি এবং পানির তাপমাত্রার পরিবর্তন হওয়ায় মাছের প্রজনন ও উৎপাদনে ব্যাঘাত ঘটছে।

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে জাতিসংঘ কয়েক বছর আগে বিশ্বের ভবিষ্যতের জন্য একটি ”রেড অ্যালার্ট” জারি করেছিল। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে উচ্চ কার্বন নিঃসরণের জন্য দায়ী দেশগুলোকে জলবায়ু পরিবর্তনের হুমকি থেকে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর একটি বাংলাদেশকে রক্ষা করতে প্রয়োজনীয় ক্ষতিপূরণ দেয়ার সুপারিশ করেছিল। অতিরিক্ত জনসংখ্যা, সীমিত প্রাকৃতিক সম্পদের উপর উচ্চ নির্ভরতা এবং ঝুঁকিপূর্ণ উপকূলীয় অঞ্চলের কারণে দেশটি বিশেষ করে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। বাংলাদেশে জলবায়ু ন্যায়বিচারের স্বীকৃতি ও সম্মানকে বণ্টনমূলক ও পদ্ধতিগত ন্যায়বিচারের ভিত্তি হিসেবে দেখা দরকার।

বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সৃষ্ট দুর্বলতা এবং বহুবিধ ঝুঁকি মোকাবেলায় বাংলাদেশ নীতিগতভাবে কাজ করছে। এ জন্য সরকার দেশের আইনি কাঠামোর সাথে সামঞ্জস্য রেখে বিভিন্ন নীতি, পরিকল্পনা এবং কৌশল গ্রহণ করেছে। সরকার জলবায়ু সংক্রান্ত বাজেট বরাদ্দ সীমিত সম্পদের মধ্যেও গত ৮ বছরে ১.৬ গুণ বৃদ্ধি করেছে। ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরে জলবায়ু সংক্রান্ত বাজেট বরাদ্দ ছিল ১.৪৪ বিলিয়ন ডলার যা ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে বেড়ে ৩.৪০ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। জলবায়ু পরিবর্তনের অভিযোজন সংক্রান্ত প্রতিশ্রুতি পুরন করার জন্য বাংলাদেশ সীমিত সম্পদের সাথে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবেলার চ্যালেঞ্জ নিয়েছে। ইতিমধ্যে সরকার ন্যাশনাল অ্যাডাপটেশন প্ল্যান (২০২৩-২০৫০) প্রণয়ন করেছে যার বাস্তবায়নের জন্য ২৩০ বিলিয়ন ডলার প্রয়োজন।

জলবায়ু বাস্তুচ্যুত মানুষের পুনর্বাসন ও কর্মসংস্থান, বিরূপ পরিস্থিতিতে দেশের মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, অভিযোজনের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ, স্বাস্থ্যঝুঁকি মোকাবেলাসহ পরিবর্তিত জলবায়ুতে খাপ খাওয়ানোর জন্য পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন, ন্যাশনাল অ্যাডাপটেশন প্ল্যান ইত্যাদি বাস্তবায়নের জন্য বিশাল বাজেটের প্রয়োজন যা সদ্য উন্নয়নশীল বাংলাদেশের জন্য মোটেই সম্ভব নয়। অথচ, বৈশ্বিক এই পরিবর্তনের জন্য বাংলাদেশ মোটেই দায়ী নয়। তাই বাংলাদেশের মানুষের খাদ্য নিরাপত্তার জন্য, তাদের অস্তিত্বকে টিকিয়ে রাখার স্বার্থে যে সকল দেশ বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য দায়ী তাদেরকে এগিয়ে আসতে হবে। আর, এর জন্য শুধু সাময়িক অনুদান, ঋণ হয়ত তাৎক্ষণিক ঝুঁকি মোকাবেলায় সামান্যই অবদান রাখতে সক্ষম।

তবে, স্থায়িত্বশীল সমাধানের জন্য বাংলাদেশকে অনুদান, সহজশর্তে ঋণ প্রদানের পাশাপাশি ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করা দরকার যার মাধ্যমে সরকার দীর্ঘমেয়াদি অভিযোজন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে দেশের মানুষের জন্য পরিবর্তিত জলবায়ুতে টিকে থাকার ব্যবস্থা নিতে পারে। এ ব্যাপারে, জাতিসংঘ, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরাম ও আন্তর্জাতিক নেতৃবৃন্দকে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা জরুরি। কারণ, বাংলাদেশ পরিবর্তিত জলবায়ুর প্রেক্ষাপটে যে কোনো সময় যে কোনো বড় ধরনের ঝুঁকিতে পড়তে পারে।

কৃষিবিদ ড. এম মনির উদ্দিন: এগ্রোনমিস্ট এ্যান্ড কনসালট্যান্ট, গেইন বাংলাদেশ

 

* সর্বশেষ  গুরুত্বপূর্ণ  সব  সংবাদ, ছবি ,অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ও লেখা পেতে আমাদের  ফেসবুক পেইজে  লাইক  দিয়ে  অ্যাকটিভ  থাকুন।  ভিজিট করুন : http://www.etihad.news

* অনলাইন  নিউজ পোর্টাল  ইত্তেহাদ নিউজে  লিখতে  পারেন  আপনিও। লেখার বিষয়  ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন  [email protected] ঠিকানায়

সংবাদটি শেয়ার করুন....
ইত্তেহাদ নিউজ ডেস্ক :

ইত্তেহাদ নিউজ ডেস্ক :

About Author

etihad news is one of the famous Bangla news portals published from Abudhabi-UAE. It has begun with a commitment to fearless, investigative, informative, and independent journalism. This online portal has started to provide real-time news updates with maximum use of Smart Technology.

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *