কলাপাড়ায় কমেছে রাখাইন সম্প্রদায়


ইত্তেহাদ নিউজ,ঢাকা : পটুয়াখালীর কলাপাড়ার লতাচাপলী ইউনিয়নে নয়াপাড়া রাখাইন বৌদ্ধবিহার। এটিকে কেন্দ্র করে এখানে ছয়টি রাখাইন পরিবার বসবাস করছে। বিহারের পাশেই রয়েছে সুপেয় পানি পানের জন্য ১২০ বছরের পুরোনো পুকুর, ব্রিটিশ নির্মিত শ্মশান। তবে এসব স্থাপনার জমিতে নজর পড়েছে ভূমিদস্যুদের। অবশ্য রাখাইনদের জমি দখলের চিত্র শুধু নয়াপাড়ায় নয়, পটুয়াখালী ও বরগুনা জেলার সব রাখাইন পল্লিতেই। ইতোমধ্যে ভূমি-সংক্রান্ত ৫৮৩টি মামলা চালাতে গিয়ে দিশেহারা ৪৪ রাখাইন পল্লির বাসিন্দারা।
ক্যাথলিক দাতব্য সংস্থা কারিতাস বাংলাদেশের আইডিপিডিসি প্রকল্পের অধীনে ২০১৪ সালের এক জরিপে পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় ৩১৮ রাখাইন পরিবারে ১ হাজার ১৭৪ এবং বরগুনার তালতলীতে ৩১৫ পরিবারে ১ হাজার ২৫১ সদস্য ছিল বলে জানানো হয়। জরিপ না করলেও গলাচিপায় এ সংখ্যা ছিল অন্তত ৬০। তবে এক দশক পরে চলতি বছর সংস্থার একই জরিপে বলা হয়েছে, কলাপাড়ায় এখন ৩০৬ রাখাইন পরিবারে সদস্য সংখ্যা ১ হাজার ১৬৯, রাঙ্গাবালীতে ৩৬ পরিবারে ১২৫ এবং বরগুনার তালতলী ও সদরে বসবাস ৯৭৭ সদস্যের। সব উপজেলাতেই কমেছে রাখাইন সম্প্রদায়। এর মধ্যে গলাচিপা ও আমতলী থেকে একেবারে বাস্তুচ্যুত হয়েছেন তারা। এখন সেখানে কোনো রাখাইন পরিবার নেই বলে জরিপে উল্লেখ করা হয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক জোবাইদা নাসরীন বলেছেন, ভূমি দখলের জন্য এ দেশে রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে সংখ্যালঘু ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীকে উচ্ছেদ করা হয়। দখল ও সংঘাতের কারণে জীবন বাঁচাতে রাখাইনরা ভিটামাটি ছেড়ে চলে গেছে। এ জন্য তাদের সংখ্যা কমে আসছে। এ অবস্থা অব্যাহত থাকলে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী শূন্যের কোঠায় চলে আসবে।
কারিতাস বাংলাদেশের আইডিপিডিসি প্রকল্পের ল্যান্ড অ্যান্ড কেস মনিটরিং অফিসরা মং মিয়া বলেছেন, ঘূর্ণিঝড়ে বিভিন্ন সময়ে রাখাইনদের জমিজমার কাগজপত্র হারিয়ে যায়। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে স্থানীয় প্রভাবশালীরা ভুয়া দলিল করে তাদের জমিজমা ও ভিটামাটি দখল করতে থাকে। ১৯৯৮ সালে কুয়াকাটা পর্যটন এলাকার স্বীকৃতি পেলে হঠাৎ করে জমির দাম বেড়ে যায়। সেই সময় সবচেয়ে বেশি রাখাইনদের জমি দখল করা হয়েছে।
সরেজমিন দেখা যায়, নয়াপাড়া বৌদ্ধবিহারের পুকুর ও জমিতে বালু ফেলে ভরাট করেছেন স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আবু তাহেরের স্বজনরা। পাশের শ্মশানের জায়গা দখলে নিয়ে বেষ্টনী দিয়েছেন সোহরাব মিয়া।
নয়াপাড়ার মাতবর চিংলামং ও মং ম্যাচিং বলেন, আদালত ২০২২ সালে এসব জমির মালিকানা রাখাইন সম্প্রদায়ের পক্ষে রায় দেন। কিন্তু এ রায় বাস্তবায়ন হয়নি। দখলদাররা বালু ভরাট করে ছয়টির মধ্যে দুটি রাখাইন পরিবারকে চলে যেতে বাধ্য করেছে। নয়াপাড়া রাখাইন বৌদ্ধবিহারের ভিক্ষু উপেঙ্গা চুন্দ্রা মাতেরো জানান, তারা চরম নিরাপত্তাহীনতায় আছেন।
রাঙ্গাবালীর ছাতিয়ারপাড়ার মং টেনসুয়ে বলেন, বিএস রেকর্ডে পূর্বসূরিদের ৮২ একর জমির কাগজপত্র ভূমি অফিসে জমা দিয়েছি। ঘুষ না দেওয়ায় আমাদেরসহ রাখাইন পল্লির জমি খাস হিসেবে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। এখন এসব জমি সরকারের কাছ থেকে লিজ নেওয়ার পাঁয়তারা করছে ভূমিদস্যুরা।
লক্ষ্মীপাড়ার অংচং চেং বলেন, আগের সব রেকর্ডে জমিজমা আমার দাদার নামে। বিএস রেকর্ডে ভূমিদস্যুরা ভুয়া কাগজপত্র করে জমি কেড়ে নিচ্ছে। আমরা কিছুই করতে পারছি না।
কলাপাড়ার ইউএনও রবিউল ইসলাম এবং পটুয়াখালীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) যাদব সরকার জানান, রাখাইনদের সমস্যা তারা গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছেন। আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা হবে।
* সর্বশেষ গুরুত্বপূর্ণ সব সংবাদ, ছবি ,অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ও লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন। ভিজিট করুন : http://www.etihad.news
* অনলাইন নিউজ পোর্টাল ইত্তেহাদ নিউজে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়