সক্রিয় হয়ে উঠেছে জাল টাকা চক্র


ইত্তেহাদ নিউজ,বরিশাল : কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে বরিশাল নগরীতে গরুর হাটসহ বিভিন্ন বাজারে জাল টাকা চক্র সক্রিয় হয়ে উঠেছে। চক্রটি নতুন নতুন কৌশল অবলম্বন করে বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে দিচ্ছে জাল টাকা। জানা গেছে, ঈদকে টার্গেট করে জাল টাকার চক্রের সদস্যরা বাজারে সক্রিয় হয়ে উঠেছে। তারা ২০০, ৫০০ ও এক হাজার টাকার নোট ছড়িয়ে দিচ্ছে। তবে এবারে ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোট অনিরাপদ ভেবে বেশিরভাগ ২০ ও ৫০ টাকার জাল নোট ছড়িয়ে দিচ্ছে ঈদবাজারে। সবচেয়ে বেশি এবার ২০০ টাকার জাল নোট হাতে পরছে সাধারনের।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, জাল টাকা বাজারে ছড়িয়ে দেওয়ার কাজে নিয়োজিত চক্রের সদস্যরা টাকা তৈরি চক্রের কাছ থেকে ১ লাখ টাকা মাত্র ৩০ হাজার টাকা দিয়ে কিনে আনে। আর এসব জাল নোট বাজারে ছড়িয়ে দিতে রয়েছে তাদের সিন্ডিকেট। তারা জাল টাকা কেনা থেকে বাজারে ছড়িয়ে দেওয়া পর্যন্ত তাদের নিজেদের সঙ্গে যোগাযোগ হয় বিভিন্ন নামে পেজ ও গ্রুপ খুলে। প্রথম দিকে জাল টাকা তৈরি ও বাজারজাত করার অপরাধে সর্বোচ্চ শাস্তি ছিল মৃত্যুদ-। পরে তা পরিবর্তন করে যাবজ্জীবন কারাদ-ের বিধান করা হয়।
এর পরেও চক্রের সদস্যরা ঈদ পুজা সহ বিভিন্ন ধর্মীয় উৎসব এলেই জালনোট বাজারে ছড়িয়ে দিতে সক্রিয় হয়ে ওঠে প্রতিবছর। গতকাল নগরীর একাধিক হাটে ঘুরে বেপারী ও পাইকারদের সাথে আলাপে তারা বলেন, ঈদের বাজারের সবচাইতে বড় সমস্যা জাল নোট। যেহেতু কোরবানীর পশুর হাটে প্রায় সবই নগদ টাকার লেনদেন তাই এই সময় জাল নোট ছড়ানো সহজ। মোটা অংকের টাকার লেনদের হয়ে থাকে তাই সহজেই নোটগুলো ছড়াতে পারে অপরাধীরা। রুপাতলী হাটের বেপারী এনায়েত ফরাজী জানান, দুই দিন হাট করেছেন এর মধ্যে কমপক্ষে ৫/৬ হাজার টাকার জাল নোট হাতে পরেছে। এবারে ২০০ টাকার নোট বেশি জাল করে ছড়ানো হয়েছে বলে জানান তিনি। ৫০০ কিংবা ১০০০ টাকার নোট গুলো সময় লাগলেও বেশিরভাগ মানুষ পরীক্ষা নিরীক্ষা করে গ্রহন করে। কিন্তু ২০০ টাকার নোট ততটা দেখে নেয়না অনেকেই। তাই এবার চক্রের সদস্যরা প্রচুর পরিমানে ২০০ টাকার জাল নোট বাজারে ছড়িয়েছে। কারা এই জাল নোট দিচ্ছে এই বেপারী জানান, সব ধরনের লোকের কাছেই দেখছেন। তারা সকলেই হাটে গরু কিনতে আসে। এখন কারও কাছে যদি এক লাখ টাকার মধ্যে ২/১ হাজার টাকা জাল পাওয়া যায় তবে তাকে কি করে দোষী বলতে পারেন। তাই কাউকে দোষী না দেখে সকলকে সচেতন হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন এই বেপারী।
বরিশাল জেলা ও মেট্রোপলিটন পুলিশের সূত্র জানায়, ঈদকে সামনে রেখে শুধু জাল টাকাই নয়, সব ধরনের অপরাধীদের নির্মূল করতে প্রস্তুত রয়েছে পুলিশ। নিয়মিত তদারকি সহ সব ধরনের ব্যাবস্থা গ্রহন করা হয়েছে পুলিশের পক্ষ থেকে। এর পরেও ক্রেতা বিক্রেতা সকলকেই যদি সচেতন থাকে তবে অপরাধীরা সুবিধা করতে পারবে নাহ। এর পরেও যে কোন পরিস্থিতিতে পুলিশের জরুরি সেবা সর্বদা প্রস্তুত রয়েছে বলে জানায় সূত্রটি। আর জাল নোট চেনার কিছু উপায় জানানো হয়েছে পুলিশের পক্ষ থেকে।
নিরাপত্তা সুতা : ১০০, ২০০ ও ৫০০ টাকার নোটের বাঁ পাশে ওপর থেকে নিচ পর্যন্ত ৪ মিলিমিটার, ১০০০ টাকার নোটে ৫ মিলিমিটার চওড়া অনেকটা মাথায় বেণির মতো প্যাঁচানো নকশার নিরাপত্তা সুতা আছে। ১০০, ২০০ ও ৫০০ টাকার নোটের সুতার এক অংশ ক্রমে লাল হতে হতে সবুজ রঙে পাল্টে যায়। আর অন্য অংশে ছাপানো থাকে টাকার মান। ১০০০ টাকার নোটের সুতার এক অংশ ক্রমে সোনালি থেকে সবুজ রঙে পরিবর্তন হয়।২০০ ও ১০০০ টাকার নোটের ক্ষেত্রে নিরাপত্তা সুতার অংশে নোটের মান ও বাংলাদেশ ব্যাংকের মনোগ্রাম ছাপানো আছে। নোটগুলো নাড়াচাড়া করলে হলোগ্রাফিক ইমেজের চকচকে ভাব চোখে পড়ে। নকল টাকার ক্ষেত্রে যা সম্ভব হয় না।
লুকানো ছাপার অক্ষর : ১০০, ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোটের যে পিঠে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি আছে, তার নিচের অংশে মাঝখানে বিভিন্ন নকশার আড়ালে ১০০, ৫০০ ও ১০০০ সংখ্যাটি ছাপানো আছে। নোটটি একটু কাত করে ধরলে এসব সংখ্যার উপস্থিতি বোঝা যায়। আর ২০০ টাকার ওই অংশে ইংরেজি অক্ষরে লেখা আছে ঞডঙ ঐটঘউজঊউ ঞঅকঅ’।
খুব সূক্ষ্ম ফন্টে (অক্ষরে) লেখা : ১০০, ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোটের পেছনের পিঠের নিচের দিকে বাঁ পাশে ১০০, ৫০০ ও ১০০০ সংখ্যা মানের সঙ্গে ইঅঘএখঅউঊঝঐ ইঅঘক লেখা আছে।
২০০ টাকার নোটের এক্কেবারে বাঁ পাশের নকশার মাঝে মাঝে অতি ছোট্ট অক্ষরে ২০০ লেখা আছে। তবে এতটাই সূক্ষ্ম সেই অক্ষর যে খালি চোখে দেখা মুশকিল। আতশী কাচ বা উন্নতমানের স্মার্টফোনের ক্যামেরা নোটের ওপর ধরে যথেষ্ট পরিমাণ জুম করলে দেখা সম্ভব। জুম করলেও এই সূক্ষ্ম ফন্ট ফাটবে না, কিন্তু নকল টাকার ক্ষেত্রে ফেটে যাবে।
খসখসে ভাব
সোনালী ব্যাংকের প্রধান শাখার প্রিন্সিপাল অফিসার সাইফুল ইসলাম জানান, খালি চোখে জাল টাকা শনাক্ত করা একটু জটিলই বটে। তবে খুব সহজ একটি উপায় হলো স্পর্শ। হাতে নিয়েই বোঝা যায়! আসল নোট কিছুটা খসখসে হয়। অন্য দিকে ছাপানো জাল টাকা মসৃণ থাকে।
লেখায় রঙের পরিবর্তন
১০০ ও ১০০০ টাকার নোটের এদিক-ওদিক পরপর মেলে ধরলে প্রতি কোনায় থাকা সংখ্যার রং হয় সোনালি থেকে সবুজ এবং ৫০০ টাকার ক্ষেত্রে রং হয় ম্যাজেন্টা থেকে সবুজ। আবার ১০০০ টাকার নোটের পেছনে বাঁ দিকে হালকা নীলচে রঙের ইংরেজি অক্ষরে নিচ থেকে ওপরের দিকে লেখা আছে ইঅঘএখঅউঊঝঐ ইঅঘক লেখাটি। নোটটি এদিক-ওদিক করে নেড়েচেড়ে দেখলে চোখে পড়বে তা।
স্পার্ক বা ঠিকরে পড়া আলো
২০০ টাকার নোটে ওপরে ডান কোনায় সোনালি থেকে সবুজ রং ছড়ানো চৌম্বকীয় কালি ব্যবহার করা হয়। ফলে এদিক-ওদিক কাত করলে এটি জ্বলজ্বল করতে থাকে। একই সঙ্গে একটি উজ্জ্বল আলোর রেখা ওপর-নিচে ওঠানামা করে।
আরো কিছু বিষয়
বরিশাল অগ্রনি ব্যাংকের এক কর্মকর্তা জানান, নকল টাকা সাধারণ কাগজে তৈরি হয় বলে নরম ধরনের হয় নোট। আসল টাকা বিশেষ ধরনের কাগজে তৈরি হয় বলে নোট হয় একটু শক্ত। নকল নোটে জলছাপ হয় অস্পষ্ট ও নি¤œমানের। আসল নোটে স্পষ্ট জলছাপ রয়েছে। আসল নোটের বাঁ পাশে বিশেষ নকশা ছাপানো থাকে। নোটটি ঘুরিয়ে আলতোভাবে মোড়ানো হলে বাঁ পাশের অংশটি ডান পাশের নকশার সঙ্গে মিলে একটি পূর্ণাঙ্গ নকশা তৈরি করবে। নকল নোটে এ রকম মেলানো কঠিন।
আলট্রাভায়োলেট রশ্মির ডিটেক্টর মেশিনের ব্যবহার: জাল টাকা শনাক্তের অন্যতম উপায় হচ্ছে ডিটেক্টর মেশিনের আলট্রাভায়োলেট লাইটের ব্যবহার। এই লাইটের মাধ্যমে জাল টাকা শনাক্ত করা খুবই সহজ। আসল নোটে এই লাইটের আলো ধরলে নোটের ওপর রেডিয়ামের প্রলেপ জ্বলজ্বল করে উঠবে। জাল নোটে এমনটা হয় না।
* সর্বশেষ গুরুত্বপূর্ণ সব সংবাদ, ছবি ,অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ও লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন। ভিজিট করুন : http://www.etihad.news
* অনলাইন নিউজ পোর্টাল ইত্তেহাদ নিউজে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়