বরিশাল সিটি করপোরেশনে ছোট বোন অবসরে গেলেও বড় বোন এখনও কর্মরত:নিয়োগ স্বাস্থ্যে,আছে ট্যাক্স শাখায়


রবিউল ইসলাম রবি,বরিশাল: বড় বোনের পর চাকুরি নেয়া ছোট বোন অফিসিয়াল নিয়মে পেনশন (সেচ্ছায় নয়) যাওয়ায় নিয়ম-অনিয়ম নিয়ে বরিশাল সিটি করপোরেশন (বিসিসি) এর অধিকাংশ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। কেউ বলছেন, অনিয়ম দুর্নীতি পূবর্ক চাকুরী নিয়ে সরকারী বেতন-বোনাসসহ পেনশন নিয়ে পগারপার দিয়েছে। আবার কেউ বলছেন, ওই বড় বোনসহ তার তদবির সুপারিশে একই পরিবারের ৫ সদস্য কূটকৌশলে বরিশাল সিটি করপোরেশনে চাকুরী নিয়েছে। যারমধ্যে এখনও ৪ জন বহাল তবিয়তে রয়েছে। বিষয়টিতে কোনটি নিয়ম, কোনটি অনিয়ম ও দুর্নীতি তা বুঝে উঠা মুসকিল হয়ে উঠলেও সুষ্ঠু তদন্ত হলে ঘটনার মূলরহস্য বেড়িয়ে আসবে বলে মনে করছেন অনেকে।
প্রাথমিক অনুসন্ধানে বেড়িয়ে এসেছে, ১৯৬৬ সালে জন্মগ্রহণ করা মোসা: সাকিলা পারভীন ১৯৯৯ সালের প্রথম সপ্তাহে বরিশাল সিটি করপোরেশন ইপিআই শাখার হেলথ ভিজিটর পদে স্কেল ভুক্ত হয়। বছর কয়েক পরে তার তদবির সুপারিশে বরিশাল সিটি করপোরেশনে চাকুরী হয় বোন মোসা: সাহিনা পারভীন এর। দুই বোনই একত্রে চাকুরী করতে ছিল। কিন্তু রহস্যজনকভাবে বড় বোন এখনও চাকুরীতে কর্মরত থাকলেও ছোট বোন সাহিনা পারভীন হঠাৎ ২০২৩ সালের ডিসেম্বর মাসে হোল্ডিং ট্যাক্স শাখার অফিস সহকারী পদ থেকে পেনশনে যায়। তিনি সেচ্ছায় পেনশনে যায়নি। এরপরই সাহিনা পারভীন কে নিয়ে সমালোচনার ঝড় শুরু হয়। জাতীয় পরিচয়পত্র এবং সনদপত্রে জটিলতা থাকার পরও সে কিভাবে স্কেল ভুক্ত হয়েছিল। সাবেক মেয়রের শাসণামলে মা ও পুত্রের অদৃশ্য দাপটে এনেক্স ভবনের একাধিক কর্মচারী চাকরিচ্যুত হয়েছিল। এখনও ক্ষমতার প্রভাব বিস্তার করে সাকিলা পারভীনের পুত্রবধূ পরিবার পরিকল্পনার নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মী হলেও বর্তমানে হোল্ডিং ট্যাক্স শাখায় কর্মরত রয়েছেন। যা অবৈধ বলে জানান একাধিক কর্মকর্তারা।
এমন হবার কারণ জানতে চাইলে সাকিলা পারভীন বলেন, তার বোনের শিক্ষা সনদপত্রে ও জাতীয় পরিচয়পত্রে ভুলবসতক্রমে বয়স নিয়ে ভুলত্রুটি থাকায় এমন ঘটনা ঘটেছে। তাই অফিসিয়াল নিয়মানুযায়ী তার পেনশন হয়েছে।
অপরদিকে সাহিনা পারভীনের মুঠোফোনে তথ্য জানতে চাইলে তিনি বলেন, তার এসএসি পাশের সনদপত্রে বয়স নিয়ে সমস্যা ছিল। তারমত এমন সমস্যা নিয়ে বিসিসিতে চাকুরী করা লোকের অভাব নেই। এ সব সমস্যা নিয়ে তারা এখনও চাকুরী করছে। তবে কত সালে এসএসসি পাশ করছে সালটা তার মনে নেই। কােন শাখায় পড়েছিলেন তাও বলতে পারেননি।
অফিসের বিশ্বস্ত এক সূত্র নিশ্চিত করে বলেন, লবিং তদবিরের প্রভাব বিস্তার করে জালিয়াতিপূর্বক সনদসহ ভুয়া কাজগপত্র দাখিল করে চাকুরী করে সরকারী অর্থ হাতিয়ে নিয়ে কেটে পড়েছে সাহিনা পারভীন। যা সুষ্ঠু তদন্ত হলেই বেড়িয়ে আসবে। অনিয়ম দুর্নীতির আশ্রয়ে চাকুরী নিয়ে কর্পোরেশনের বেতন-বোনাসসহ পেনশনের ভোগ করা অর্থ সাহিনা পারভীনের ফেরত দিতে হতে পারে।
সূত্রটি নিশ্চিত করে আরো বলেন, সাকিলা পারভীনের ছেলে মো: রেজায় রাহাত হাসান বিসিসি’র সরকারি কনজারভেন্সি শাখায় সুপারভাইজার (পরিচ্ছন্ন) পদে কর্মরত রয়েছে। তার পুত্রবধূ অর্থাৎ রাহাত হাসানের স্ত্রী শাহনাজ পারভীন- পরিবার পরিকল্পনার নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মী হলেও বর্তমানে হোল্ডিং ট্যাক্স শাখায় কর্মরত রয়েছেন। একই শাখায় অফিস সহকারী পদে কর্মরত থাকা মোঃ সাইদ হাসান হলেন, ওই হেলথ ভিজিটর সাকিলা পারভীনের ‘ভগ্নিপতি’।
বড় বোনের পর চাকুরি নেয়া ছোট বোন পেনশনে যাওয়ার বিষয় এবং পরিবার পরিকল্পনা কর্মী হলেও বর্তমানে হোল্ডিং ট্যাক্স শাখায় কর্মরত রয়েছেন শাহনাজ পারভীন এবিষয়ে জানতে চাইলে বিসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ ইসরাইল হোসেন বলেন, বিষয়টি সম্পর্কে জানতে প্রশাসনিক কর্মকর্তা মোঃ আলমগীর হোসেন এর কাছে সঠিক তথ্য জানার পরামর্শ দেন। প্রশাসনিক কর্মকর্তার কাছে সঠিক তথ্য জানতে চাইলে তিনি ব্যস্ততার কথা বলে তাৎক্ষণিক এড়িয়ে যান।
বিষয়টিতে বিসিসির কিছু সংখ্যক কর্মকর্তা-কর্মচারী বর্তমান মেয়র আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ (খোকন সেরনিয়াবাত) এর সুদৃষ্টি কামনা করেছেন।