ময়মনসিংহ বাংলাদেশ

মুক্তাগাছার মণ্ডার সুখ্যাতি,জি আই পণ্য হিসাবে স্বীকৃতি

image 97041 1718549424
print news

ইত্তেহাদ নিউজ,ময়মনসিংহ : ময়মনসিংহের মুক্তাগাছার নাম নিলেই চলে আসে মণ্ডার নাম। এখানকার মণ্ডার সুখ্যাতি শোনেননি, এমন মানুষ বোধ হয় কম পাওয়া যাবে। আর এই মানুষেরা মণ্ডার নাম শুনে দেরি করেন না। কিনে নেন সুস্বাদু এই মিষ্টি। চলতি বছরের ১২ ফেব্রুয়ারি মুক্তাগাছার মন্ডা ২৬তম জি আই পণ্য হিসাবে স্বীকৃতি পেয়েছে।

জমিদারদের প্রধান এলাকা ছিল মুক্তাগাছা। বিভিন্ন পূজাপার্বণ, অনুষ্ঠানাদি ও পারিবারিক প্রয়োজনেও জমিদার বাড়িতে প্রচুর মিষ্টান্নের প্রয়োজন হতো। সেই প্রয়োজনের সূত্র ধরেই মণ্ডার সৃষ্টি। ১৮২৪ খ্রিস্টাব্দে এই মণ্ডা প্রস্তুত করেন মুক্তাগাছা থানার তারাটী গ্রাম নিবাসী গোপাল পাল। তিনি এই মিষ্টি তৈরি করে মুক্তাগাছার জমিদারদের একজন মহারাজা সূর্যকান্ত আচার্য চৌধুরীর কাছে পেশ করেন।

বর্তমানে গোপাল পাল পরিবারের পঞ্চম বংশধর শ্রী রামেন্দ্রনাথ পাল ভ্রাতৃদ্বয় এই মিষ্টির ব্যবসা পরিচালনা করেন। ছানার সন্দেশাকৃতির এই মিষ্টির প্রধান উপকরণ দুধের ছানা ও চিনি। বর্তমানে পাল বংশীয় পঞ্চম পুরুষ ব্যবসায় জড়িত। এখনো দেশের বিভিন্ন স্থানে এই মিষ্টির যথেষ্ট চাহিদা রয়েছে। মিষ্টির নাম বলতেই ২০০ বছরের ইতিহাস ঐতিহ্যের সেই মুক্তাগাছার মণ্ডার নাম চলে আসে। মণ্ডার খ্যাতি ছড়িয়ে আছে সারাদেশে। এমনকী দেশের বাইরেও রয়েছে এর খ্যাতি। দুধের ছানা আর চিনি দিয়ে তৈরি এই মণ্ডা খেতে প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ ছুটে আসেন মুক্তাগাছায়। আর এই মুক্তাগাছার মণ্ডা সম্প্রতি জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। ফলে যারপরনাই উচ্ছ্বসিত মুক্তাগাছাবাসী।

ময়মনসিংহ নগরী থেকে ১৬ কিলোমিটার দূরে জমিদারদের রেখে যাওয়া স্মৃতি বিজড়িত শহর মুক্তাগাছা। দেড়শ বছরের প্রাচীনতম হিন্দু অধ্যুষিত মুক্তাগাছার চৌরঙ্গি মোড় এলাকায় এই মণ্ডার দোকান। প্রতি কেজি মণ্ডা বিক্রি হয় ৭০০ টাকায়। দেশের কোথাও কোনো শাখা না থাকায় এই মণ্ডা খেতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে আসেন এই দোকানে। মণ্ডার জন্য মুক্তাগাছা সুপ্রসিদ্ধ।

শুধু বাংলাদেশ নয়, সারা পৃথিবীজুড়ে এই মিষ্টির খ্যাতি। দুধ আর চিনি দিয়ে মণ্ডা বানানো হয়। তবে শীতকালে আরও এক ধরনের মণ্ডা পাওয়া যায় মুক্তাগাছায়, যেগুলো চিনির বদলে গুড় দিয়ে তৈরি। বাংলাদেশের আর কোথাও এমন সুস্বাদু মণ্ডা পাওয়া যায় না।

জানা যায়, ২০০ বছর আগে ১২৩১ বাংলা, ১৮২৪ ইংরেজি সনে গোপাল পাল সর্বপ্রথম মণ্ডা তৈরি করেন। গোপাল পালের তৈরিকৃত মণ্ডা তৎকালীন মুক্তাগাছার জমিদার সূর্যকান্ত আচার্য চৌধুরী প্রথম স্বাদ গ্রহণ করেন। ইতিহাস ঐতিহ্যের এই মণ্ডার জনকের পুরো নাম হচ্ছে রাম গোপাল পাল। তার জন্ম বাংলা ১২০৬ ও ইংরেজি ১৭৯৯ খ্রিষ্টাব্দে। গোপাল পালের আদি নিবাস ছিল মুর্শিদাবাদে। পরবর্তীতে তিনি মুক্তাগাছায় আশ্রয় নেন। মণ্ডা সৃষ্টির পেছনে কিছু ইতিহাস রয়েছে।

জানা যায়, গোপাল পাল স্বপ্নে প্রায়ই এক সাধুর দেখা পেতেন। স্বপ্নে সাধু তাকে মণ্ডা তৈরির নিয়মাবলি শেখাতেন। সর্বশেষ এক রাতে মণ্ডা পাকের শেষ নিয়মটি শিখিয়ে গোপালকে সাধু বলেছিলেন, ‘তুই এই মণ্ডার জন্য অনেক খ্যাতি অর্জন করবি।’

ওই সময় থেকে এখনো এর খ্যাতি ছড়িয়ে রয়েছে দেশ ও দেশের বাইরে। ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামী নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু, ব্রিটেনের রানি এলিজাবেথ, পশ্চিমবঙ্গের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী বিধানচন্দ্র রায়, পাকিস্তানের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি আইয়ুব খান, ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধি, প্রখ্যাত সংগীতশিল্পী আলাউদ্দিন খাঁ, রাশিয়ার কমরেড জোসেফ স্তালিন, চিনের কমরেড মাও সে তুং অনেকেই মুগ্ধ হয়েছেন মুক্তাগাছার মিষ্টি খেয়ে। তাদেরকে গোপাল পালের মণ্ডা দিয়ে আপ্যায়ন করা হত। এমনকি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও মাওলানা ভাসানিও মণ্ডা খেতে ছুটে এসেছিলেন মুক্তাগাছার এই দোকানে। জমিদারি প্রধা বাতিল হলেও এখনো রয়েছে গেছে তাদের স্মৃতি বিজড়িত ঘরবাড়ি। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে আসা মানুষ জমিদার বাড়ি দেখে বাড়ি ফেরার সময় মুক্তাগাছার মণ্ডা খেয়ে মুগ্ধ হন।

মুক্তাগাছা তারাটি গ্রামের ফজলুল হক বলেন, আমাদের এখানে মণ্ডা প্রধান মিষ্টান্ন বলা যায়। মুক্তাগাছায় কেউ বেড়াতে এলে কিংবা অতিথি আপ্যায়নের জন্য মণ্ডার বিকল্প নেই। সকলের চাহিদা মণ্ডাই।

নরসিংদী জেলার চার বন্ধু ফয়সাল, মাসুদ, রাজিব, রায়হান বলেন, মোটরসাইকেলে দেড়শো কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে মণ্ডা খেতে আসলাম। মূলত ফুলবাড়িয়ায় বন্ধুর বাড়িতে বেড়াতে এসে মুক্তাগাছার মণ্ডা কিনে নিয়ে যাচ্ছি। অনেক দিনের ইচ্ছা ছিল মণ্ডার দোকানে বসে মণ্ডা খাবো সেই ইচ্ছাও পূরণ হলো।

পঞ্চম বংশধরের আরেক ছেলে মিথুন পাল বলেন, পুরোনো ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে সকল ধরনের কলাকৌশল ব্যবহার করে যাচ্ছি। এমনকি পুরাতন কারিগরের কাছ থেকে শিক্ষা নিয়েই মণ্ডা তৈরি করা হয়।

 

* সর্বশেষ  গুরুত্বপূর্ণ  সব  সংবাদ, ছবি ,অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ও লেখা পেতে আমাদের  ফেসবুক পেইজে  লাইক  দিয়ে  অ্যাকটিভ  থাকুন।  ভিজিট করুন : http://www.etihad.news

* অনলাইন  নিউজ পোর্টাল  ইত্তেহাদ নিউজে  লিখতে  পারেন  আপনিও। লেখার বিষয়  ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন  [email protected] ঠিকানায়

সংবাদটি শেয়ার করুন....
ইত্তেহাদ নিউজ ডেস্ক :

ইত্তেহাদ নিউজ ডেস্ক :

About Author

etihad news is one of the famous Bangla news portals published from Abudhabi-UAE. It has begun with a commitment to fearless, investigative, informative, and independent journalism. This online portal has started to provide real-time news updates with maximum use of Smart Technology.

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *