অনুসন্ধানী সংবাদ

এনবিআর কর্মকর্তা মতিউর রহমানের শত কোটি টাকার সম্পদের খোঁজ!

Motiur
print news

ইত্তেহাদ নিউজ,ঢাকা : রাজনৈতিক অবস্থার চাকা সচল রাখতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের ভূমিকা অপরিসীম। যাদের প্রধান দায়িত্ব হলো কাস্টমস, আয়কর ও মূল্য সংযোজন কর সংক্রান্ত্ বিধি-বিধান তৈরি এবং তার আলোকে যথাযথ কর-রাজস্ব আদায় করা। এ ছাড়াও চোরাচালান প্রতিরোধ, শুল্ক-কর সংক্রান্ত আর্ন্তজাতিক চুক্তি সম্পাদন ও সরকারের রাজস্ব নীতি সংক্রান্ত যেকোনো বিষয়ে প্রতিনিধিত্ব করা। রাষ্ট্রীয় এই প্রতিষ্ঠানের অসংখ্য কর্মকর্তাগণ তাদের একনিষ্ঠ প্রজ্ঞা ও মনন দিয়ে যেমন দেশের অর্থনীতিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে তেমনি অন্যদিকে একশ্রেণীর দুর্নীতিবাজ ও অসাধু কর্মকর্তাদের আকাশসম অনিয়ম দুর্নীতি ও চুরির কারণে রাষ্ট্র হারাচ্ছে বিপুল পরিমাণের রাজস্ব।

এসব দুর্নীতিবাজদের একজন ড. মো. মতিউর রহমান, তিনি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের আগারগাও কার্যালয়ে সদস্য (কমিশনার অব কাস্টমস) পদে কর্মরত আছেন। সম্প্রতি তার বিরুদ্ধে অস্বাভাবিক সম্পদ অর্জনের বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন দুদুকে একটি অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। সেখানে শত শত কোটি টাকার সম্পদের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। তবে এই বিষয়ে সংবাদ মাধ্যমের কাছে সবকিছুই অস্বীকার করেন ড. মতিউর রহমান।

n1

দুদকে জমা পরা অভিযোগ এবং একাধিক বিশ্বস্ত সুত্র পাওয়া অনিয়মের তথ্য হতে খতিয়ে দেখতে সরজমিনে অনুসন্ধানে নামে সংবাদ মাধ্যম অনুসন্ধানে আরো নতুন চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে আসার পাশাপাশি অধিকাংশ সম্পদের সত্যতা পাওয়া গেছে। প্রশ্ন হলো কি ধরনের অনিয়ম করে এই পরিমাণ সম্পদ অর্জন করা সম্ভব করেছেন ভ্যাট কমিশনার ড. মতিউর রহমান।

কাস্টমসের চাকরিতে যেন তার আলাদিনের চেরাগ। এই চেরাগ ঘষলেই বের হয়ে আসে টাকা। তার সম্পদের বাস্তবতা দেখে এমনটাই মনে হবে যে কারো। চাকরি স্থায়ী হওয়ার পর শুরু হয় তার অবৈধ ইনকাম। কয়েক বছরেই কয়েকটি ব্যাংকে কিনেছেন কোটি কোটি টাকার এফডিআর ও সঞ্চয়পত্র। মোটা অঙ্কের টাকায় বসুন্ধরায় কিনলেন ফ্লাট ও জমি। মাসে ব্যবহার করেন লাখ টাকার পারফিউম। প্রতি মাসে পরিবর্তন করেন আইফোন। কাস্টমস কর্মকর্তা মোঃ মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে দুর্নীতির টাকায় আঙ্গুল ফুলে কলা গাছ হওয়ার এমন অভিযোগ উঠেছে। মূলত ব্যবসায়ীদের হয়রানি আর দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের ‘ম্যানেজম্যান’ হিসেবে কাজ করেই তিনি এই কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা আর সম্পদের মালিক হয়েছেন। অভিযোগে বলা হয়েছে, কাস্টম হাউস দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে। এখানে চাকরি মানেই হাতে আলাদিনের চেরাগ হাতে পাওয়ার মতো। ঘষা দিলেই দৈত্য নয়, যেন টাকা আর টাকা বের হয়। কাস্টমস এ চাকুরি হওয়ার আগেও যে ব্যক্তি পরিবার নিয়ে মোটামুটি ভাবে চলতেন। কাস্টম হাউসে চাকরি হওয়ার কয়েক বছরের মাথায় সে শত কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন।

আরও পড়ুন :  ৫২ লাখ টাকার কোরবানি দিয়ে ভাইরাল এনবিআর কর্মকর্তার ছেলে

মতিউর রহমানের বড় গুণ হলো সুন্দর ভাবে কথা বলে কর্মকর্তা কর্মচারীদের মন জয় করে তাদের দিয়ে ফাকিবাজ ব্যাবসায়িদের খুজে বের করাতেন। অর্থাৎ রাজস্ব ফাঁকিবাজ ব্যবসায়ী, সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টরাই তার শাগরেদ ছিলেন। টাকার বিনিময়ে রাজস্ব ফাঁকিতে সহায়তার জন্য চুক্তি করতেন তার শাগরেদরা। পরে চুক্তি অনুযায়ী টাকা নিয়ে দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের একটা অংশ দিতেন। বাকি অংশ তিনি রেখে দিতেন।

মতিউর রহমান তার অধিনস্তদের দিয়ে সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট নিয়ে গড়ে তোলেন সিন্ডিকেট। কোন ফাইলে কীভাবে কত টাকা রাজস্ব ফাঁকি দেয়া যায়, কীভাবে কাদের ম্যানেজ করতে হয়-সব কিছুই তারা সুন্দর ভাবে জানেন। এতে দুর্নীতিবাজ কর্মচারীদের আস্থাভাজন হয়ে ওঠেন মতিউর। তার কর্মচারীরা ফাইল আটকে রাখতেন। আর শাগরেদরা তার হয়ে ঘুষ নিতেন। টাকা না পেলেই করতেন হয়রানি।
অভিযোগের সূত্র ধরে দীর্ঘ অনুসন্ধানে জানা যায়, ২৭, ফেব্রুয়ারি ২০১২ চট্টগ্রাম বন্দরে আসা আমদানি পণ্যের সাতটি চালানে বড় ধরনের শুল্ক ফাঁকির ঘটনা ধরা পড়েছে বলে গুঞ্জন ওঠে। এতে প্রায় দেড় কোটি টাকা শুল্ক ফাঁকির চেষ্টা করেছে বিভিন্ন আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান ও তাদের নিয়োগ করা সিএন্ডএফ প্রতিনিধি। ওই সময়ে চট্টগ্রাম কাস্টমসের অতিরিক্ত কমিশনার ছিলেন ড. মতিউর রহমান ‘সেদিন সাতটি চালানে প্রায় দেড় কোটি টাকা শুল্ক ফাঁকির চেষ্টা করা হয়েছে বলে তদন্ত শুরু করেন মতিউর রহমানের একটি দল। এবং তিনি বলেন এখন তাদের কাছ থেকে শুল্ক কর ও জরিমানাসহ প্রায় সাড়ে চার কোটি টাকা আদায় করা হবে।

নিয়ম অনুসারে সাড়ে চার কোটি টাকা আদায় করা হলেও সরকারি কোষাগারে জমা পড়ে মাত্র দেড় কোটি টাকা। বাকি টাকা হাতিয়ে নেয় মতিউর রহমানের সিন্ডিকেট। এভাবে কয়েকটি অভিযান করে মতিউর রহমান কাস্টমসের হিরো বনে যান। কিন্তু তলে তলে তার বানানো সিন্ডিকেট এর কর্মকাণ্ড চলমান থাকে। এভাবেই মতিউর রহমান হয়ে যান শত কোটি টাকার মালিক।

বানিয়েছেন বিলাশ বহুল বাড়ি, কিনেছেন ফ্লাট, রয়েছে দামি দামি গাড়ি, পরিবারের নামে রয়েছে শত কোটি টাকার সম্পদ। ঢাকা জেলাধীন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের আগারগাও কার্যালয়ে জনাব ড. মোঃ মতিউর রহমান, সদস্য (কমিশনার অব কাস্টমস) পদে কর্মরত আছেন। তার পিতার নাম মো. আঃ হাকিম হাওলাদার। তিনি রাজস্ব বোর্ডের যে পদবিতে কর্মরত রয়েছেন, সেই পদবিতে মোঃ মতিউর রাহমান সর্ব সাকুল্লে যে বেতন পান সে বেতন দিয়ে তার পরিবার বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় বিলাস বহুল জীবন জাপন করে আসছেন। তার সম্পদের হিসাব দেখলে যে কেউই অবাক হয়ে যাবে। রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন স্থানে বিলাস বহুল বাড়ি এবং ফ্লাট, প্লট সহ রয়েছে দামি দামি গাড়ি।

Motiur news

ড. মতিউর রহমানের পাহাড়সম সম্পদের ফিরিস্তি:

(১) বাসাঃ ৩৮৪, রাস্তাঃ ৭/এ, ব্লকঃ ডি, ফ্লাটঃ ৫০১, বসুন্ধরায় দুই কোটি টাকার একটি ফ্লাটটি তার স্ত্রীর নামে রয়েছে বলে জানিয়েছেন বাড়ির ম্যানেজার। (২) বাসাঃ ৫১৯, রাস্তাঃ০১, ব্লকঃ ডি, বসুন্ধরা ৫ কাঠায় আলিশান ৭ তলা বাড়ি যার মূল্য ৪০ কোটি টাকা। বাড়ির সকল ইউনিট ভাড়া দেয়া, দোতলায় তিনি নিজের পরিবার নিয়ে বসবাস করেন। রাজস্ব কর্মকর্তা মতিউর রহমানের বিলাসবহুল এই বাড়ি দেখে যে কেউই আতকে উঠবেন, একজন সরকারী কর্তার এত টাকা কোথা থেকে আসে! জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনার উন্নয়ন ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতির পরিপন্থী কর্মকান্ড করে এমন অসাধু কর্মকর্তারা কি করে টিকে থাকে সেটাই প্রশ্ন।

ভালুকার সিডস্টোর এলাকার পাশেই প্রায় ৩০০ বিঘা জমির উপর গ্লোবাল জুতার ফ্যাক্টরি যেখানে দেশ-বিদেশি প্রায় ৪০০শ’ কর্মকর্তা কর্মচারী শ্রমিক রয়েছে। এ ফ্যাক্টরিতে উৎপাদিত জুতা সারা পৃথিবীরজুড়ে সরবরাহ হয় বলে জানিয়েছে সেখানকার দায়িত্বশীলরা। এছাড়াও রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় মতিউর রহমানের রয়েছে অসংখ্য জমি, প্লট, বাগান বাড়ি। যার প্রায় প্রত্যেকটি তার স্ত্রীর নামে রয়েছে।

ড. মতিউর রহমানের রয়েছে জেসিক্স নামে একটি যৌথ ডেভলপার কোম্পানি। নিজের নতুন প্রজেক্ট বসুন্ধরার আই ব্লক, সুবহান এবি নিউ প্লট নাম্বার ৬৫৭ এ ৬৫৭ বি এবং ৭১৬ রোড নাম্বার ৯-১০, যেখানে চলমান ১৪ তলা বাণিজ্যিক ভবনের নিখুঁত কাজ চলছে তার নিজস্ব ডেভলপার কোম্পানির তত্ত্বাবধানে।

এছাড়াও << গাজীপুর সদর, খিলগাঁও মৌজায় এস এ দাগঃ ১৭১ আর এস দাগঃ- ২৮০ এ ১০,৫০ শতক।
<< এস এ দাগঃ ১৭২ আর এস দাগঃ- ২০১ এ ৩.৯০ শতক।
<< এস এ দাগঃ ১৬৩ আর এস দাগঃ- ২৭৫ এ ৭.৫০ শতক। <<এস এ দাগঃ ১৬৩ আর এস দাগঃ- ২৭৬ এ ৬ শতক। << এস এ দাগঃ ১৭০ আর এস দাগঃ- ২৭৯ এ ৬ শতক।
<< এস এ দাগঃ ১৬৩ আর এস দাগঃ- ২৭৬ এ ৭ শতক। <<এস এ দাগঃ ১৭০ আর এস দাগঃ- ২৭৯ এ ৬ শতক। <<সাভার থানার বিলামালিয়া মৌজায় খতিয়ানঃ ১৩০৩৫ দাগঃ ১৭৬৩ ও ১৭৬২ তে ১২.৫৮ শতক। এই সর্বমোট ৮ টি খতিয়ানে ৬০ শতাংশ জমি রয়েছে। যার মূল্য প্রায় ৪০ কোটি টাকা। এছাড়াও তার স্ত্রী লায়লা কানিজের নামে সাভার থানার বিলামালিয়া মৌজায় খতিয়ান:১৩৬৯৬ এ ১৪.০৩ শতাংশ, গাজীপুর থানার খিলগাঁও মৌজায় ৩৫৫৭ জোত:-এ ৪৮.১৬ শতাংশ, জোত: ৩৪৫০ তে ১৪.৫০ শতাংশ, জোত: ৩৬৫২ তে ছেলে আহমেদ তৌফিকুর রহমান অর্ণব, লায়লা কানিজের নামে .৪৫১৬২৫ একর। এছারাও গ্লোবাল সুজ লিমিটেড একটি কোম্পানির নামে একই মৌজায় জোত: ১২৫ তে ,৩৪৩৪৫ শতক, ( গ্লোবাল সুজ ) জোতঃ ৭০ তে ,২৮০০ শতক, জোতঃ ৯০ তে .০৩৩০ শতক। এই সর্বমোট ৭ টি খতিয়ানে ৬০ শতাংশ জমি রয়েছে। যার মূল্য প্রায় ৯০ কোটি টাকা। এছাড়াও স্ত্রি ও নিজের নামে রয়েছে দামি দামি গাড়ি, উক্ত গাড়িটির নাম্বার- ঢাকা মেট্রো-গ যার বাজার মূল্য প্রায় ৪০ লক্ষ টাকা। । এবং তার নিজের নামে রয়েছে ঢাকা মেট্রো মডেলের গাড়ি। যার মূল্য ৩৫ লক্ষ টাকা।

ব্যাক্তিগত ও পারিবারিকজীবন:
ঢাকা বিশ্ববিসদ্যালয় থেকে ফিন্যান্সে অনার্স-মাস্টার্স আর এমবিএ করা মতিউর রহমানের কর্মজীবন শুরু হয় পল্লী কর্ম সংস্থান ফাউন্ডেশনে(পিকেএসএফ)। ১৯৯০ থেকে ১৯৯৩ পর্যন্ত কাজ করেন সেখানে। সর্বশেষ উপ-ব্যবস্থাপক পদ থেকেই ১৯৯৩ সালের ১ এপ্রিল যোগ দেন কাস্টমস বিভাগে।
২০১৫ সালে পদোন্নতি পেয়ে কমিশনার হিসেবে যোগ দেন বরিশালের ছেলে মতিউর রহমান।
বাবা আলহাজ আব্দুল হাকিম হাওলাদার। বরিশালের মুলাদী উপজেলার বাহাদুরপুর গ্রামে জন্ম নেওয়া মতিউর রহমান দুই ভাই তিন বোনের মধ্যে দ্বিতীয়। ব্যক্তিগত জীবনে দুই সন্তানের জনক মতিউর রহমান। স্ত্রী লায়লা কানিজ ছিলেন সহযোগী অধ্যাপক। মেয়ে ফারহানা রহমান বিবিএ শেষ করে এখন যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করেন। আর ছেলে আহমেদ তৌফিকুর রহমান অর্থনীতিতে অর্নাস পড়ছেন যুক্তরাষ্ট্রে।
এছারাও তার পরিবারের নামে বেনামে ঢাকা, গাজীপুর, সাভার, নরসিংদী ও বরিশাল সহ বিভিন্ন জায়গায় বাড়ি, জমি, ফ্ল্যাট ও প্লট রয়েছে। তার মেয়ে ফারজানা রহমান ইস্পিতা ও ছেলে আহমেদ তউফিকুর রহঃ অর্ণব এর নামে বিভিন্ন ব্যাংকে কোটি কোটি টাকা জমা রয়েছে। যা তদন্ত সাপেক্ষে প্রমাণ পাওয়া যাবে।
রাজস্ব বোর্ডে কর্মরত কয়েকজন কর্মকর্তা জানান, মতিউর রহমান উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে ম্যানেজ করে, এবং চেয়ারম্যান, সচিব, রাজনৈতিক ব্যক্তিদের নাম ভাঙ্গিয়ে অনিয়ম-দুর্নীতি করে আসছেন। তার নামে বেনামে ঢাকার বিভিন্ন ব্যাংকে এফডিআর করা আছে। উক্ত এফডিআর এর পরিমাণ ৪০ কোটি টাকার মত। মোঃ মতিউর রহমান শত কোটি টাকা সম্পদের মালিক। আইনগত ঝামেলা এড়ানোর জন্যে নিজের স্ত্রী ও আত্মীয় স্বজনের নামে সম্পদ গড়েছেন। তিনি অবৈধ উপায়ে মানুষের কাছ থেকে এবং সরকারি রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে এসব সম্পদ লোপাট করেছেন বলে বিভিন্ন ব্যাবসায়ি ও রাজস্ব বোর্ডে কর্মরত অনেকের কাছে প্রতীয়মান।

এমন পাহাড় সম দুর্নীতি অনিয়ম ও অস্বাভাবিক সম্পদের বিষয়ে মন্তব্য জানতে ডঃ মতিউর রহমানের মঠোফোন নাম্বারে ফোন করা হলে তিনি বলেন বসুন্ধরার বাড়িটি আমার মেয়ের নামে আমি কোন ব্যাংকের ঋণ খেলাপি নই, এসবের পাশাপাশি রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা বাহিনী এবং বেশ কয়েকজন সিনিয়র সাংবাদিকের নাম দিয়ে প্রতিবেদককে সুমিষ্ট ভাষায় শাসানোর চেষ্টা করেন।

নোট: দুর্নীতি দমন কমিশন দুদুকে জমা করা বিস্তর অভিযোগ এবং একাধিক বিশ্বস্ত সূত্রের পাওয়া তথ্য খতিয়ে দেখেছে সংবাদ মাধ্যম। যার মধ্যে বসুন্ধরা এলাকার প্রতিটি প্লট বাড়ি ও স্থাপনার সত্যতা পাওয়া গেছে। এসব অভিযোগের বাইরে সংবাদমাধ্যমের অনুসন্ধানে নতুন করে খোঁজ পাওয়া গেছে যৌথভাবে থাকা তার জেসিক্স ডেভলপার কোম্পানি এবং সেই কোম্পানির তত্ত্বাবধানে থাকা ১৪ বাণিজ্যিক ভবনের।
সংবাদে উল্লেখিত প্রতিটি তথ্য দুদুকে জামা পড়া অভিযোগের সূত্র থেকে নেয়া। যার অধিকাংশ তথ্য সঠিক। তবে অভিযোগে উল্লিখিত ব্লগ ডি এর দশ নম্বর রোডে ৩৮৪ নাম্বার বাসার ফ্লাটটি ৭ নম্বর রোডে খুঁজে পাওয়া গিয়েছে। যার ঠিকানা ভুল ছিল।

n2

মতিউর রহমানের সম্পদের উৎস কি?

সম্প্রতি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে কর্মরত ড. মো. মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে অস্বাভাবিক সম্পদ অর্জন এবং গোপন রাখার বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) একটি অভিযোগ জমা পড়েছে। সেখানে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে শত শত কোটি টাকার সম্পদের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। বিপুল এই সম্পত্তির মালিকানায় স্ত্রী সন্তান ছাড়াও বিভিন্ন উচ্চপর্যায়ের ব্যক্তিদের অংশীদার করেছেন।

দুদকের জমা হওয়া অভিযোগ পত্রে  উল্লেখ করা হয়েছে, বসুন্ধরায় ফ্লাট বাড়ি কর্পোরেট অফিসসহ জেলায় জেলায় শতশতকোটি টাকার সম্পদ।

বিষয়টি আমলে নিয়ে সকাল থেকেই বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় খোঁজখবর নিতে বেরিয়ে পড়ি। দুদকের অভিযোগ পত্রের সূত্র ধরেই আমরা প্রতিটি বাড়ির হোল্ডিং নম্বর খুঁজে বের করার চেষ্টা করি।

বসুন্ধরায় ড. মতিউর রহমানের বাড়ি ফ্লাটের যে হোল্ডিং নম্বর দেয়া হয়েছে তা আংশিক সত্যি। তবে অভিযোগ পত্রের বাহিরেও আমরা কিছু ভবন খুঁজে পেয়েছি। যাঁর মালিকানায় যৌথ এবং সতন্ত্রভাবে মতিয়ার রহমান এবং পরিবারের অন্য সদস্যরা রয়েছেন।

কেয়ারটেকার আউয়াল জানান, বসুন্ধরা ডি ব্লকের ৭/এ সড়কের ৫ম তলার ৫০১ নম্বর ফ্লাটের মালিক মতিউর রহমানের প্রথম স্ত্রী। তবে এই ফ্লাটটিতে ২৫ হাজার টাকা ভাড়ায় অন্য পরিবার বসবাস করেন।

দুদকের অভিযোগ পত্রে উক্ত ফ্লাটের অবস্থান ১০ নম্বর সড়কে বলা হয়েছে। অভিযোগ পত্র অনুযায়ী এটি ভুল তথ্য।

দুদকের অভিযোগ পত্রে একই ব্লকের এক নম্বর সড়কে মতিউর রহমানের একটি ৭ তলা আলিশান বাড়ির কথা উল্লেখ করা হয়েছে। যেটির সত্যতা মিলেছে আমাদের সরেজমিন অনুসন্ধানে। আধুনিক স্থাপনা বলতে যা বুঝায় তার কোন কমতি নেই ৩১৯ বাড়িটিতে।

তবে বাড়িটি দেখবালের দায়িত্বে থাকা সগির হোসেন জানান, বাড়িটির মালিক ড.মতিউর রহমান নয়। মতিউর রহমান নিজেও তথ্যটি নিশ্চিত করেছেন। তাহলে বাড়ির মালিক কে? সহজ উত্তর ; মালিক ড. মতিউর রহমানের মেয়ে। তবে দুদকে জমা হওয়া অভিযোগ পত্রে বলা হয়েছে ভবনটির মালিক ড.মো.মতিউর রহমান।

এসময় কেয়ারটেকার সগির নির্মাণাধীন একটি ভবন দেখিয়ে বলেন, ঐ ১২ তলা ভবনটিও আমাদের স্যারের।

সূত্র বলছে, বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার আই ব্লকের (৪র্থ এভিনিউ এর প্লট নং ৬৫৭ এ/বি/সি এবং ৭১৬) ৯ ও ১০ সড়কে যৌথ মালিকানায় আধুনিক ভবনটি নির্মাণ করছেন মতিয়ার রহমানের অংশীদার প্রতিষ্ঠান জেসিএক্স ডেভেলপমেন্ট। তবে দূর্নীতি দমন কমিশনে জমা হওয়া অভিযোগ পত্রে নির্মাণাধীন ভবনটির কথা উল্লেখ করা হয়নি।

জেসিএক্স বিজনেস টাওয়ার যেটি বসুন্ধরা আই ব্লকের জাপান স্ট্রিটের ১১৩৫/এ প্লটে অবস্থিত। আধুনিক এই ভবনটিতে জেসিএক্স ডেভেলপমেন্ট এবং গ্লোবাল সুজ লিমিটেডের কর্পোরেট অফিস রয়েছে ।

জেসিএক্সের মালিক তোফাজ্জল হোসেন ফরহাদ বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, গ্লোবাল সুজ এবং ডেভেলপমেন্ট ব্যবসার অংশীদার মতিয়ার রহমান।

তিনি বলেন,গ্লোবাল সুজ লিমিটেড একটি জুতা প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান। উন্নত বিশ্বে প্রতিষ্ঠানটি জুতা, তাবু, ব্যাগ এবং বেল্ট রপ্তানি করে থাকে।

ময়মনসিংহের ভালুক উপজেলার চেচুয়ার মোড়ে অবস্থিত গ্লোবাল সুজ লিমিটেডের ফ্যাক্টরি ইনচার্জ কাইয়ুম জানান, ড.মো.মতিউর রহমান স্যার আমাকে এই প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ দিয়েছেন। আমি স্যারের ইউনিয়নের ছেলে।

তিনি আরও বলেন, ফ্যাক্টরিতে শ্রমিক সংখ্যা ২৫০/৩০০ জনের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে। মাসে ৩/৪ বার ড.মতিউর রহমান বিদেশি প্রতিনিধিদের নিয়ে আসেন। এছাড়া আমিই সবকিছুর দায়িত্ব আছি।

তিনি বলেন, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (ADB) এর অর্থায়নে ‘স্কিলস ফর এমপ্লয়মেন্ট ইনভেস্টমেন্ট প্রোগ্রাম’ এ (SEIP) প্রতি বছর ৬’শ প্রশিক্ষণার্থীকে ‘লেদার গুডস ও ফুটওয়্যার শিল্প’র বিভিন্ন কারিগরি কোর্সে ট্রেনিং দিয়ে থাকে গ্লোবাল সুজ লিমিটেড।

সূত্র বলছে, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের অর্থে নিজের শ্রমিকদেরই ট্রেনিং দিয়ে থাকে গ্লোবাল সুজ লিমিটেড।

স্থানীয়দের সাথে আলাপ করে জানাজায় , হাবিরবাড়ীতে ওরিয়ন গ্রুপের মালিকানায় থাকা প্রায় ৪’শ একর জমি ভাড়া নিয়ে গ্লোবাল সুজ লিমিটেড কারখানা পরিচালনা করে আসছেন।

তারা বলেন, কারখানায় নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য পাশেই ময়মনসিংহ পল্লিবিদ্যুৎ সমিতি -২ এর একটি উপকেন্দ্র রয়েছে।

নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা কর্মীরা জানান, ওরিয়ন গ্রুপ এবং গ্লোবাল সুজ যৌথ ভাবে ফ্যাক্টরি এবং জমি দেখাশোনার জন্য তাদের নিয়োগ দিয়েছেন।

অনুসন্ধানের এই পর্যায়ে ড.মো.মতিউর রহমান নানাভাবে বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করায় আপাতত নিজের এবং পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে অনুসন্ধানের সমাপ্তি টানতে হয়েছে। তবে অভিযোগ পত্রের প্রতিটি বিষয় আমরা খোঁজ খবর নিয়ে আরেকটি প্রতিবেদন প্রকাশ করছি শীগ্রই।

সাইবার সন্ত্রাসী রাজস্ববোর্ড কর্মকর্তা

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে গণমাধ্যম কর্মীদের নিয়ে নানা প্রোপাগান্ডা ছাড়ানোর অভিযোগ উঠেছে জাতীয় রাজস্ববোর্ডের এক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে।

বিসিএস (শুল্ক ও আবগারি) ১১তম ব্যাচের কর্মকর্তা ড.মো.মতিউর রহমানের অস্বাভাবিক সম্পদের বিষয়ে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশের পর থেকেই সংশ্লিষ্ট সংবাদকর্মী এবং গণমাধ্যমের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে।

অনলাইন নিউজ পোর্টাল; ‘সকালের সংবাদ’ প্রতিবেদক হাফিজুর রহমান শফিক অভিযোগ করে জানান, জাতীয় নির্বাচন কমিশনের সার্ভার থেকে বিধিবহির্ভূত ভাবে; জাতীয় রাজস্ববোর্ডের সদস্য (শুল্ক ও আবগারী) ড.মো.মতিউর রহমান, ‘গনমধ্যম কর্মীদের জাতীয় পরিচয় পত্রের তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কুরুচিপূর্ণ তথ্য সংযুক্ত করে ছড়িয়ে দিচ্ছেন’। যেটি অন্যায় এবং আইনের ভাষায় এটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

তিনি আরও বলেন, ফেব্রুয়ারী মাসের ২৪ তারিখে দূর্নীতি দমন কমিশন’র (দুদক) কাছে একটি লিখিত অভিযোগ জমা হয়। যেখানে সারাদেশে তার বিপুল সম্পত্তির কথা উল্লেখ রয়েছে, এই বিষয়ে তার মন্তব্য জানতে চাইলে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়াচ্ছেন।

অন্য একটি সাপ্তাহিক পত্রিকার সাংবাদিক মো.আহসানউল্লাহ হাসান দাবি করেন, দূর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ড.মতিউরের বিরুদ্ধে যথাযথ প্রকৃয়া অবলম্বন করে তদন্তকার্য পরিচালনা করলে আরও চমকপ্রদ তথ্য বের হয়ে আসবে।

আব্দুল্লাহ শেখ পেশায় একজন সংবাদকর্মী; কাজ করেন ঢাকার বহুপরিচিত একটি পত্রিকায়। তিনি ড.মো.মতিউর রহমানের সম্পদের বিষয়ে খোঁজখবর নিয়ে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশের অপেক্ষায় ছিলেন। এরমধ্যেই গ্রামের বাড়ি থেকে আব্দুল্লাহকে জানান হয়, সামাজিক মাধ্যমে স্ত্রী বোনকে নিয়ে কুরুচিপূর্ণ তথ্য ছড়িয়ে দিচ্ছে একটি পেইজ থেকে। এমনটাই বলছিলেন পেশায় সাংবাদিক আবদুল্লাহ। তার অভিযোগ, জাতীয় পরিচয় পত্রের ছবি সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে দিচ্ছে ‘এনবিআর’ সদস্য মতিউর।

তিনি দাবি করেন, ড.মো.মতিউর রহমান কত-শত কোটি টাকার মালিক তা তিনি নিজেই জানেনা। আর এই বিপুল সম্পদের বিষয়ে যাঁরাই কলম ধরবে তাদেরকেই নানা ভাবে হয়রানি করার জন্য একটি বিশেষ সিন্ডিকেট কাজ করছে।

এই বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ইব্রাহিম খলিলের মতামত জানতে চাইলে তিনি বলেন, কোন ব্যক্তি যদি আয়বহির্ভূত সম্পদের মালিক হয়ে থাকেন তাহলে সঠিক তথ্য দিয়ে তার বিরুদ্ধে প্রতিবেদন প্রকাশ সংবাদকর্মীর দায়িত্ব। তবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে মিথ্যা বা ভূয়া তথ্য প্রকাশ ‘সাইবার নিরাপত্তা আইন-২০২৩’ অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

 

* সর্বশেষ  গুরুত্বপূর্ণ  সব  সংবাদ, ছবি ,অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ও লেখা পেতে আমাদের  ফেসবুক পেইজে  লাইক  দিয়ে  অ্যাকটিভ  থাকুন।  ভিজিট করুন : http://www.etihad.news

* অনলাইন  নিউজ পোর্টাল  ইত্তেহাদ নিউজে  লিখতে  পারেন  আপনিও। লেখার বিষয়  ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন  [email protected] ঠিকানায়

সংবাদটি শেয়ার করুন....
ইত্তেহাদ নিউজ ডেস্ক :

ইত্তেহাদ নিউজ ডেস্ক :

About Author

etihad news is one of the famous Bangla news portals published from Abudhabi-UAE. It has begun with a commitment to fearless, investigative, informative, and independent journalism. This online portal has started to provide real-time news updates with maximum use of Smart Technology.

৮ Comments

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *