অনুসন্ধানী সংবাদ

৩০০ কোটি টাকার চেক লিখে নেন মতিউর রহমানের স্ত্রী শাম্মী

image 819244 1719077658
print news

ইত্তেহাদ নিউজ ডেস্কজাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সদস্য মো. মতিউর রহমানের চাকরি ও পারিবারিক জীবন অনেকটা সিনেমার কাহিনির মতো। নির্দিষ্ট বেতনের চাকরি করলেও আয় করেছেন হাজার হাজার কোটি টাকা। নিজের নামে তেমন সম্পদ না করলেও দুই স্ত্রী, ৫ সন্তান, দুই ভাই, শ্যালক-শ্যালিকাদের দিয়েছেন দুহাত ভরে।  স্ত্রী লায়লা কানিজের জন্য নরসিংদীতে করেছেন নজরকাড়া বাড়ি।  স্ত্রী শাম্মী আখতার শিভলীর গ্রামের বাড়ি ফেনীতে তৈরি করে দিয়েছেন বিলাসবহুল ডুপ্লেক্স। দুই পরিবারের ব্যবহারের জন্য মার্সিডিস, বিএমডব্লিউ, প্রাডো, মিতসুবিশিসহ বিলাসবহুল ব্র্যান্ডের নয়টি গাড়ি কিনেছেন।

এরপরও করোনাক্রান্ত হয়ে মতিউর যখন জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে তখন অভাবী চেহারায় স্বামীর শয্যা পাশে হাজির হন  স্ত্রী। স্বামীর অবর্তমানে তিন সন্তান নিয়ে শিভলীর কি হবে এই আকুতিতে একাধিক ব্ল্যাঙ্ক (ফাঁকা) চেকে সই করে দেন মতিউর। এসব চেক ব্যবহার করে প্রায় ৩০০ কোটি টাকা নগদায়ন করে নেন শাম্মী।

৫০ কোটি টাকার একটি চেক নগদায়ন করে দেওয়ার প্রত্যক্ষদর্শী শাম্মীর এক ঘনিষ্ঠ ব্যক্তি এই তথ্য  নিশ্চিত করেছেন। স্বামীর কাছ থেকে ৩০০ কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার খবর জানার পর  স্ত্রী লায়লা কানিজ চরম ক্ষুব্ধ হন। পারিবারিক একাধিক ঘনিষ্ঠ সূত্রে চাঞ্চল্যকর এসব তথ্য জানা গেছে।

আরও পড়ুন:

৫২ লাখ টাকার কোরবানি দিয়ে ভাইরাল এনবিআর কর্মকর্তার ছেলে

মতিউর রহমানের শত কোটি টাকার সম্পদের খোঁজ!

এনবিআর কর্মকর্তা ড.মতিউর কীভাবে এত সম্পদের মালিক!

এনবিআরের মতিউরের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ ও অর্থ পাচারের অভিযোগ

কানাডার শৌখিন শহরে প্রাসাদ রয়েছে মতিউর কন্যা ইপসিতার

ইফাতের বিলাসী জীবন,৩৬০০ বর্গফুটের আলিশান বাসা

এসব বিষয়ে বক্তব্য জানতে মতিউর রহমান, তার দুই স্ত্রী ও সন্তানের সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। মতিউর ও তার দুই স্ত্রীর মোবাইলে কল করলে তারা কেউই রিসিভ করেননি। মতিউর ও তার  স্ত্রীর মোবাইল নম্বরের হোয়াটসঅ্যাপে বক্তব্য জানতে চেয়ে খুদে বার্তা পাঠালেও তারা জবাব দেননি।অনুসন্ধানে জানা গেছে, চাকরি জীবনে বিপুল টাকা আয় করতে ঘুসের পাশাপাশি ক্ষমতার অপব্যবহার করে পরিবারের সদস্যদের নামে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, শিল্পকারখানা তৈরি করতে থাকেন।

এরপর শুল্কমুক্ত সুবিধায় বিদেশ থেকে বিভিন্ন পণ্য আমদানি করে তা খোলাবাজারে বিক্রি করে বিপুল সম্পদের মালিক হন। এছাড়া শেয়ারবাজার কারসাজিতে জড়িয়েও তিনি কয়েক হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নেন। এই টাকায় তিনি স্থাবর-অস্থাবর বিপুল সম্পদ গড়েছেন।

টাকার জোরে মতিউরের  স্ত্রী লায়লা কানিজকে তিতুমীর কলেজের শিক্ষক থেকে বানিয়েছেন নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলা চেয়ারম্যান। এরপর রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে সেখানে তিনি জায়গা-জমি দখল করেছেন বলেও অভিযোগ আছে। সেখানে লায়লা কানিজের জন্য বিশাল বিলাসবহুল ডুপ্লেক্স বাড়ি বানিয়ে দিয়েছেন। লায়লা কানিজ একেক সময় একেক ব্র্যান্ডের বিলাসবহুল গাড়ি নিয়ে চলাচল করেন। কম যান না  স্ত্রী শাম্মী আখতারও।

জানা গেছে, লায়লা কানিজের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে স্বামীর কাছ থেকে সম্পদ বাগিয়ে নিয়েছেন শাম্মী। নিজের বাবার বাড়ি ফেনীতে তৈরি করে নিয়েছেন বিলাসবহুল ডুপ্লেক্স।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মতিউরের শ্বশুরবাড়ি ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার আমিরাবাদ ইউনিয়নের সোনাপুরে।

এলাকাবাসী মতিউরের শ্বশুরবাড়িকে মিয়া বাড়ি হিসাবেই চেনেন। বিলাসবহুল বাড়িটি জসিম উদ্দিন নামে এক ব্যক্তি দেখাশোনা করেন। জসিম জানান, দীর্ঘ ১০-১২ বছর ধরে বাড়ির দেখাশোনার দায়িত্বে আছেন।

সবশেষ দুই মাস আগেও এনবিআর কর্মকর্তা মতিউর রহমান, স্ত্রী শাম্মী আখতার, ছেলে মুশফিকুর রহমান ইফাত ও শাশুড়ি বাড়িতে এসেছিলেন। দু-একদিন থাকার পর আবার ঢাকায় ফিরে যান। মতিউর রহমানের শাশুড়ি বর্তমানে ঢাকায় মেয়েদের বাসায় ও বাড়িতে আসা-যাওয়ার ওপর থাকেন। তিনি এর বেশি কিছু বলতে রাজি হননি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক বাসিন্দা জানান, ‘গত বছর কুরবানির ঈদে মতিউরের ছেলে ইফাত কোটি টাকা ব্যয় করে ১৪টি গরু-ছাগল কিনেছিলেন। এর মধ্যে আটটি গরু ও দুটি ছাগল ঢাকায় কুরবানি দিয়েছেন। বাকি চারটি গরু নানার বাড়িতে নিজে এসে জবাই করে আত্মীয়স্বজন ও গরিবদের মধ্যে বিতরণ করেন।’

স্থানীয়রা জানান, মতিউর রহমান ও তার শ্যালক নকিবের নামে ফেনী ও সোনাগাজীতেও অনেক জমিজমা রয়েছে। যা মতিউরের স্ত্রী শাম্মী আখতারের চাচাতো ভাই মো. আরিফুর রহমান তাদের কিনে দিয়েছেন। তিনি এই সম্পত্তির দেখাশোনা করেন। এছাড়া চাঁদপুরে ১০০ বিঘার একটি খামারও রয়েছে।

জানতে চাইলে আরিফুর রহমান বলেন, ‘এনবিআর কর্মকর্তা মতিউর রহমান আমার চাচাতো বোনের স্বামী। ইফাত তার সন্তান। শাম্মী আখতারের এক বোন ও এক ভাই আছে। ২৫ বছর আগে মতিউরের সঙ্গে শাম্মী আখতারের বিয়ে হয়। বিয়ের এক বছর পর তার বাবা অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংক কর্মকর্তা মিল্লাত মিয়া মারা যান। এরপর শাম্মীর অনুরোধে মতিউর শাশুড়ি, শ্যালিকা বুবলী ও শ্যালক মো. নকিবকে ঢাকায় নিয়ে যান। বুবলী এখন চট্টগ্রামে থাকেন। তার স্বামী থাকেন আমেরিকা। শ্যালক নকিব সম্প্রতি চীন থেকে ফ্যাশন ডিজাইনের ওপর লেখাপড়া শেষ করে দেশে ফিরে ব্যবসা ও চাকরি শুরু করেছেন। বর্তমানে তারা রাজধানীর ধানমন্ডি এলাকায় নিজস্ব বাসায় থাকেন।

তিনি বলেন, মতিউর হঠাৎ করে একটি ঝামেলায় জড়িয়ে পড়ায় নিজেকে নির্দোষ ও আড়াল করতে স্ত্রী-সন্তানদের অস্বীকার করছেন। তবে এটা অচিরেই সমাধান হয়ে যাবে। শাম্মী আখতারের ঘনিষ্ঠ সূত্র জানায়, নকিব ঢাকা, চীন ও দুবাইতে মতিউরের ব্যবসা-বাণিজ্যসহ আনুষঙ্গিক কাজকর্ম দেখাশোনা করেন। আত্মীয় সোহাগের কাছেও বিপুল অঙ্কের টাকা ছিল মতিউরের। প্রায় এক বছর আগে তার কাছ থেকে টাকা নিয়ে দুবাইতে বিনিয়োগ করা হয়েছে। সেখানে বিশাল একটি মার্কেট কেনা হয়েছে। করোনার শেষের দিকে ওই মার্কেট চালু করা হয়।

 

* সর্বশেষ  গুরুত্বপূর্ণ  সব  সংবাদ, ছবি ,অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ও লেখা পেতে আমাদের  ফেসবুক পেইজে  লাইক  দিয়ে  অ্যাকটিভ  থাকুন।  ভিজিট করুন : http://www.etihad.news

* অনলাইন  নিউজ পোর্টাল  ইত্তেহাদ নিউজে  লিখতে  পারেন  আপনিও। লেখার বিষয়  ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন  [email protected] ঠিকানায়

সংবাদটি শেয়ার করুন....
ইত্তেহাদ নিউজ ডেস্ক :

ইত্তেহাদ নিউজ ডেস্ক :

About Author

etihad news is one of the famous Bangla news portals published from Abudhabi-UAE. It has begun with a commitment to fearless, investigative, informative, and independent journalism. This online portal has started to provide real-time news updates with maximum use of Smart Technology.

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *