দুর্নীতিবাজ মতিউর: বিএনপির আমলে উত্থান, ছাগলকান্ডে পতন


ইত্তেহাদ নিউজ,ঢাকা : জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কাস্টমস এক্সাইজ অ্যান্ড ভ্যাট আপিলেট ট্রাইব্যুনাল, ঢাকা’র প্রেসিডেন্ট ড. মো. মতিউর রহমান খুবই চতুর। তিনি করতেন শিবির। তার উত্থান বিএনপির আমলে। সাবেক দুই অর্থমন্ত্রীর সঙ্গেও তার সখ্যতা ছিল। তবে সব সরকারের আমলেই মধু খেয়ে ধনকুবের হয়েছেন মতিউর। স্বর্ণ চোরাচালান কারবারেও তার সিদ্ধহস্ত ছিল। বিপুল অর্থ সম্পদের মালিক মতিউরের বিরুদ্ধে কানাডা, মালয়েশিয়া, দুবাইসহ বিভিন্ন দেশে তিন হাজার কোটি টাকা পাচারের অভিযোগ উঠেছে।
বিদেশ থেকে একজন বড় ব্যবসায়ী বলেন, আপন মাকে বিপদে ফেলে টাকা আদায় করার মতো খারাপ মানুষ মতিউর। এতো খারাপ লোক কখনোই দেখিনি। তাকে ঘুষ না দিয়ে রক্ষা পায়নি কোন ব্যবসায়ী। কোরবানির জন্য ১৫ লাখ টাকার ছাগল কিনে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচনায় আসা মুশফিকুর রহমান ইফাত হলেন মতিউর রহমানের ছেলে। মতিউর রহমান এনবিআর সদস্যর পাশাপাশি সোনালী ব্যাংকেরও পরিচালক। তিনি ২০২২ সালের ১ ফেব্রুয়ারি থেকে পরবর্তী তিন বছরের জন্য সোনালী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে পরিচালক হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন। ব্যাংক সেক্টরের একজন শক্তিশালী সচিব কয়েকশ’ কোটি টাকার বিনিময়ে তাকে পরিচালক বানিয়েছেন। এই বিষয়টি ব্যাংকপাড়া সবার মুখে আলোচনা। দুর্নীতিবাজ মতিউর কিভাবে হলো পরিচালক। মতিউর রহমানের প্রথম স্ত্রী লায়লা কানিজ লাকীও নরসিংদীতে গড়েছেন সম্পদের পাহাড়। নামে-বেনামে রয়েছে অঢেল সম্পদ। সরকারি কলেজের একজন অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক হয়ে কীভাবে তিনি এত সম্পদের মালিক বনে গেলেন- এ নিয়ে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
ব্যবসায়ীরা বলেন, মতিউর রহমান দুর্নীতি করতে আন্ডারগ্রাউন্ডের গণমাধ্যমকে বেঁছে নিতেন। তাদের দিয়ে বিভিন্ন ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে রিপোর্ট করাতেন। আর ব্যবসায়ীদের ডেকে নিয়ে বলতেন, এটা কিন্তু কাস্টমসের চেয়ারম্যান করাচ্ছেন। রক্ষা পেতে হলে টাকা লাগবে। চেয়ারম্যানকে ভাগ দিতে হবে। এরকম স্টাইলে কয়েক শ ব্যবসায়ীর কাছ থেকে শত শত কোটি টাকা নিয়েছেন মতিউর। এটা হলো তার টাকা ইনকামের এক ধরনের পদ্ধতি। ঢাকা এয়ারপোর্ট, যশোর এয়ারপোর্ট, বেনাপল স্থলবন্দর ও চট্টগ্রাম এয়ারপোর্টে দায়িত্ব পালন করেছেন। এয়ারপোর্ট থেকে স্বর্ণ চোরাচালানে তার সম্পৃক্ততা ছিল। স্বর্ণ ধরবি ৫ কেজি, পাচার করবি ৫০ কেজি। এটা তার ডায়ালগ ছিল। এটাও বিমানবন্দরের এক শ্রেণীর কর্মকর্তাদের মুখে মুখে ছিল। এয়ারপোর্টে ক্লিয়ারিং ও ফরওয়ার্ডিং এজেন্টদের নিয়েও তার ব্যবসা ছিল। শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারিরও মূল হোতা মতিউর। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা বলেন, এয়ারপোর্টে দায়িত্ব পালনকালে মতিউর কমপক্ষে ৩ হাজার কোটি টাকা নিয়েছেন। সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি হবে টাকা মতিউরের। সে হলো এই যুগের টাকার কুমির। ইতিমধ্যে আমাদের নরসিংদী সংবাদদাতা নিবারণ রায়ের অনুসন্ধানে সেখানে মতিউরের স্ত্রীর পাহাড় সমান অর্থের তথ্য পেয়েছেন। এয়ারপোর্ট ১৮টি সংস্থা কাজ করে, তারপরও স্বর্ণ পাচার করে এসেছেন মতিউর। অর্থাৎ নিজে হাজার হাজার কোটি টাকা কামিয়েছেন, অন্যদিকে অন্যান্য সংস্থার এক শ্রেণীর কর্মকর্তাদের কোটিপতি বানিয়েছেন। তিনি হলেন কোটি টাকা বানানোর কারিগর। টাকা কামানোর সব রাস্তা তারা জানা। দুর্নীতি করে নিখুঁতভাবে। সব সরকারের আমলেই একটি শক্তিশালী গ্রুপ তার পেছনে থাকতো। এক শ্রেণীর এমপি, আমলা এমনকি কতিপয় মন্ত্রীদের কোটি কোটি টাকা বানিয়ে দিয়েছেন। তার ভয়ে সবাই টটস্থ থাকতো। এমনকি এনবিআরের কোন কোন শীর্ষ কর্মকর্তা মতিউরকে দেখে দাঁড়িয়ে যেতেন। মন্ত্রণালয়ের সচিব ও মন্ত্রীর রুমে যেত কোন অনুমতি লাগতো না। আওয়ামী লীগের এক শ্রেণীর নেতারাও মতিউরের কাছ থেকে অর্থ পেতেন। ব্যবসায়ীরা বলেন, দুর্নীতিবাজ মতিউর রহমানরা দেশের অর্থনীতির মেরুদন্ড ভেঙ্গে দিচ্ছে। তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে অনুরোধ জানিয়ে ব্যবসায়ীরা বলেন, প্রয়োজনে প্রকাশ্যে সর্বোচ্চ শাস্তির ব্যবস্থা নিশ্চিত করুন। যাতে এই ধরনের মতিউররা দুর্নীতি করার সাহস না পায়। অর্থনীতিবিদরা বলেন, এখনো সময় আছে, দেশের অর্থনীতি বাঁচাতে ঘুষখোর দুর্নীতিবাজ মতিউর রহমানদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।
আরও পড়ুন:
শাশুড়িকে ‘ডুপ্লেক্স বাড়ি’ উপহার দেন এনবিআরের মতিউর
এনবিআর কর্মকর্তা মতিউরের স্ত্রী লাকীরও অঢেল সম্পদ
বরিশালের মুলাদীতে এনবিআর কর্মকর্তা মতিউরের বিপুল সম্পদ
এনবিআর কর্মকর্তা মতিউরের ৩০০ বিঘা জমির হদিস মিলেছে ভালুকায়
ছাগলকাণ্ড: দেশ ছেড়েছেন ইফাত,গা-ঢাকা দিয়েছেন মতিউর
এদিকে ড. মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে পূর্বের চার দফা দুদকের অনুসন্ধানের যাবতীয় ফাইল তলব করেছে কমিশন। একই সাথে ২০০৪, ২০০৮, ২০১৩ ও ২০২১ সালে পরিসমাপ্তকৃত ৪টি দুদকের অনুসন্ধান প্রতিবেদনে কোনো অসংগতি আছে কি না, থাকলে দুদকের কোন কোন কর্মকর্তা জড়িত সেটা তদন্ত করতে বলা হয়েছে। মতিউরের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান নথি খুঁজে না পাওয়া গেলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে দায়িত্বে অবহেলার দায়ে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বলা হয়েছে।
* সর্বশেষ গুরুত্বপূর্ণ সব সংবাদ, ছবি ,অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ও লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন। ভিজিট করুন : http://www.etihad.news
* অনলাইন নিউজ পোর্টাল ইত্তেহাদ নিউজে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়