বাংলাদেশ খুলনা

আশ্রয়ণ প্রকল্পের ৪৯ ঘর নির্মাণে অনিয়ম

২ প্রকল্প
print news

ইত্তেহাদ নিউজ,খুলনা: খুলনার কয়রা উপজেলায় আশ্রয়ন-২ প্রকল্পের আওতায় ৪৯টি ঘর নির্মাণে অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এর আগে ওই প্রকল্পের ঘর নির্মাণে অনিয়মের অভিযোগে কাজ বন্ধ হয়ে যায়। বর্তমানে আবারও নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির অন্য সদস্যদের অবহিত না করে সভাপতি নিজের পছন্দের ঠিকাদার দিয়ে কাজ করাচ্ছেন। একই সাথে প্রকল্পের নির্মাণ সামগ্রীও তিনি নিজের ইচ্ছামত ক্রয় করছেন। কামরুল ইসলাম নামে যে ঠিকাদারকে দিয়ে ঘর নির্মাণ কাজ করা হচ্ছে তার বিরুদ্ধে এর আগে বীর নিবাস প্রকল্পের কাজে অনিয়মের অভিযোগ করেন একজন মুক্তিযোদ্ধা। ওই অভিযোগের ভিত্তিতে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে কারণ দর্শানোর নোটিশ করা হয়।

জানা গেছে, আশ্রয়ন-২ প্রকল্পের আওতায় ভূমিহীন ও গৃহহীনদের গৃহ প্রদানের জন্য উপজেলা সদরের দক্ষিণ মদিনাবাদ গ্রামে সাড়ে ৪ একর জমি কিনে সেখানে ৪৯টি সেমি পাকা ঘর নির্মাণ করা হচ্ছে। প্রতিটি ঘর নির্মাণের জন্য ৩ লাখ ৫ হাজার টাকা বরাদ্দে দুটি কক্ষ, একটি রান্নাঘর ও একটি বাথরুম থাকবে।
আশ্রয়ণ প্রকল্পের কাজ পরিদর্শনে গিয়ে দেখা গেছে, বন্যার পানির লেবেলের নীচে ঘরগুলো নির্মাণ করা হচ্ছে। ঘরের মেঝে তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এছাড়া নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার করা হচ্ছে। আগের নির্মাণকৃত ঘরের ভিত ভেঙে নতুন করে ভিত করার কথা থাকলেও তা করা হচ্ছে না। পুরাতন ভিতের উপরেই ইটের গাঁথুনির কাজ চলছে। ইট, বালু ও খোয়ার মান খারাপ হওয়ায় ঘরের স্থায়িত্ব নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

স্থানীয় বাসিন্দা আল আমীন, মামুন, ছালামসহ একাধিক ব্যক্তি বলেন, বালু ভরাটের জন্য আলাদা ৩৮ মে টন চাল বরাদ্দ করা হয়। তবে কপোতাক্ষ নদ থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে প্রকল্পের স্থান ভরাট করা হয়। অবৈধ বালু ব্যবহারে বরাদ্দের অর্ধেক লোপাট হয়েছে। অন্যদিকে ঘরগুলো নিচু জায়গায় স্থাপন করায় সামান্য বৃষ্টিতে তলিয়ে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে।

আরো জানা গেছে, ২০২৩ সালে তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোমিনুর রহমান আশ্রয় প্রকল্পের জমিটি রেজিঃ করেন। তিনি বদলি হওয়ার পর একজন জুনিয়র ইউএনও কামাল হোসেনকে কয়রায় পোস্টিং দেওয়ায় সহকারী কমিশনার (ভূমি) উক্ত কর্মকর্তাকে মেনে নিতে পারেননি। সে কারণে সহকারী কমিশনার (ভূমি) বিভিন্ন অপবাদ ও অজুহাত দেখিয়ে উক্ত কামাল হোসেনকে বদলি করার অলৌকিক ভূমিকা রাখেন এবং ভারপ্রাপ্ত ইউএনও হিসেবে জেগে বসেন। বর্তমান ইউএনও (ভারপ্রাপ্ত) ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) দু’টো চেয়ার দখল করে নিজের ইচ্ছামত প্রকল্পের কাজ করছেন। এমনকি প্রধানমন্ত্রীর উপহার ৪৯টি আশ্রয় কেন্দ্রের সদস্য সচিব ও সদস্যদের অজান্তে নিজের খেয়াল খুশি মত বিল ভাউচার তৈরি করছেন।

বিষয়টি নিয়ে কথা হয় প্রকল্পের সদস্য সচিব পিআইও মামুনার রশিদ, সদস্য- উপজেলা প্রকৌশলী মো. দারুল হুদা, কয়রা সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এস, এম, বাহারুল ইসলামদের সাথে। তারা তিন জনই এ বিষয়ে কিছুই জানেন না বলে মত প্রকাশ করেন। ৫ সদস্য বিশিষ্ট কমিটির সদস্যবৃন্দরা আরো বলেন, শুনেছি মন্ত্রণালয় থেকে ৫ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি হয়েছে, কিন্তু দুই বছর কাজ চললেও আমরা কিছুই জানি না।

এ ব্যাপারে কয়রা উপজেলা সুজনের সভাপতি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর দেয়া ৪৯টি ঘর নির্মাণের জন্য ৫ সদস্য বিশিষ্ট কমিটির মাধ্যমে ঘরগুলো হওয়ার কথা। কিন্তু ঘর নির্মাণের বিষয়ে সাধারণ সদস্যরা কিছুই না জানার বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক। তিনি আরো বলেন, পূর্বের মরিচা ধরা রড, মেয়াদ উত্তীর্ণ সিমেন্ট, লোনা পানি মিশ্রিত বালি ও নিম্নমানের ইট ব্যবহার করে নামমাত্র কয়েকটি ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। পূর্বে ব্যাপক অনিয়মে তৈরিকৃত ১৬টি ঘর ভেঙ্গে নতুন করে তৈরি করার কথা থাকলে তা এখনও বহাল আছে। এছাড়া মাটি ছাড়া ৩ ফুট বালু দিয়ে ঘরের ভিত উঁচু করার কথা থাকলেও মাত্র দেড় ফুট বালির উপরে ঘর তৈরি করা হয়েছে যা হুমকির মুখে।

জানতে চাইলে নির্মাণ কাজের ঠিকাদার কামরুল ইসলাম বলেন, প্রতিটি ঘর নির্মাণ কাজের জন্য মালামাল বাদে আমাকে ৩৯ হাজার টাকায় চুক্তি করে দেয়া হয়েছে। ঘরের নির্মাণ সামগ্রী প্রকল্পের সভাপতি ইউএনও কিনে দিচ্ছেন এবং নিজেই কাজের তদারকি করছেন। তাছাড়া ঘর নির্মাণে প্রকল্পের নক্সা ও প্রাক্কলন অনুসরণ করা হচ্ছে। ফলে কাজের মান খারাপ হওয়ায় কিছু নেই। এ বিষয়ে সদ্য বিদায়ী প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ও কয়রা উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) এবিএম তারিক উজ-জামান বলেন, আমি প্রকল্পের দায়িত্ব গ্রহণের আগে কিছু অনিয়ম হয়েছিল। প্রথমে একটি ভাটার মালিক নিম্নমানের ইট দেয়ায় তা পরিবর্তন করা হয়েছে। এর আগে ঘরের কাজ শুরুর দিকে বালু ভরাট নিয়ে স্থানীয় মানুষের অভিযোগের প্রেক্ষিতে বন্ধ হয়ে যায়।

নবাগত কয়রা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুলী বিশ্বাস বলেন, আমি নতুন এসেছি। বিষয়টি আপনাদের মাধ্যমে জানতে পারলাম। খোঁজ খবর নিয়ে উর্ধ্বতনদের জানিয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

 

* সর্বশেষ  গুরুত্বপূর্ণ  সব  সংবাদ, ছবি ,অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ও লেখা পেতে আমাদের  ফেসবুক পেইজে  লাইক  দিয়ে  অ্যাকটিভ  থাকুন।  ভিজিট করুন : http://www.etihad.news

* অনলাইন  নিউজ পোর্টাল  ইত্তেহাদ নিউজে  লিখতে  পারেন  আপনিও। লেখার বিষয়  ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন  [email protected] ঠিকানায়

সংবাদটি শেয়ার করুন....
ইত্তেহাদ নিউজ ডেস্ক :

ইত্তেহাদ নিউজ ডেস্ক :

About Author

etihad news is one of the famous Bangla news portals published from Abudhabi-UAE. It has begun with a commitment to fearless, investigative, informative, and independent journalism. This online portal has started to provide real-time news updates with maximum use of Smart Technology.

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *