ইত্তেহাদ এক্সক্লুসিভ

সম্পদের পাহাড় : পরিবারসহ ফাঁসছেন এনবিআর সচিব ফয়সাল

আবু মাহমুদ ফয়সাল।
print news

* সম্পত্তি জব্দ,৮৭টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধের নির্দেশ

ইত্তেহাদ নিউজ,ঢাকা : ছাগলকাণ্ডে আলোচিত জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) কর্মকর্তা মতিউর রহমানের ভয়াবহ দুর্নীতির ঘটনার মধ্যেই এবার আলোচনায় এসেছেন এনবিআরের আরেক কর্মকর্তা। দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত নিজের ও পরিবারের নামে বিপুল পরিমাণ সম্পদ নিয়ে এবার ফেঁসে যাচ্ছেন এনবিআরের প্রথম সচিব (কর) কাজী আবু মাহমুদ ফয়সাল। তার এবং পরিবারের নামে থাকা ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ এবং সব স্থাবর সম্পত্তি জব্দ করার নির্দেশ দিয়েছে আদালত।বৃহস্পতিবার দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এর আবেদনের প্রেক্ষিতে ঢাকা মেট্রোপলিটন সিনিয়র স্পেশাল জজ মোহাম্মদ আসসামছ জগলুল হোসেনের আদালত এ আদেশ দেন। আদেশে তিনিসহ ১৪ জনের ৮৭টি ব্যাংক হিসাবে থাকা ছয় কোটি ৯৬ লাখ টাকা অবরুদ্ধ করেছেন আদালত। পাশাপাশি ফয়সালসহ সাতজনের নামে থাকা ১৫টি সঞ্চয়পত্রের দুই কোটি ৫৫ লাখ টাকা অবরুদ্ধ করা হয়েছে।

অস্থাবর সম্পদের মধ্যে কাজী আবু মাহমুদ ফয়সালের নামে ডাচ বাংলা ব্যাংকে ৫০ লাখ টাকার দুটি সঞ্চয়পত্র, তার স্ত্রী আফসানা জেসমিনের নামে ৪টি সঞ্চয়পত্রে ৫০ লাখ টাকা, আফতাব আলীর নামে দুটি সঞ্চয়পত্রে ৩০ লাখ টাকা, কাজী খালিদ হাসানের নামে একটি সঞ্চয়পত্রে ৩০ লাখ টাকা, খন্দকার হাফিজুর রহমানের নামে দুটি সঞ্চয়পত্রে ৪০ লাখ টাকা, আহম্মেদ আলীর নামে ৩টি সঞ্চয়পত্রে ৫০ টাকা ও মাহমুদা হাসানের একটি সঞ্চয়পত্রে পাঁচ লাখ টাকা রয়েছে।

ফয়সালের ব্যাংক হিসাব ছাড়াও যাদের হিসাব অবরুদ্ধ হয়েছে তারা হলেন- শেখ নাসির উদ্দিন, মমতাজ বেগম, রওশন আরা খাতুন, আহম্মেদ আলী, খন্দকার হাফিজুর রহমান, ফারহানা আফরোজ, আশরাফ আলী মুনির, আফতাব আলী তানির, মাহফুজা আক্তার, মাইনুল হাসান, আফসানা জেসমিন, মাহমুদা হাসান ও কাজী খালিদ হাসান। এ ছাড়া স্থাবর সম্পদের মধ্যে আফসানা জেসমিনের নামে ১০ কাঠা জমি, ২০০ বর্গমিটারের প্লট, আবু মাহমুদ ফয়সাল নামে ভাটারা, খিলগাঁও ও রূপগঞ্জে থাকা স্থাবর সম্পদ, আহমেদ আলীর নামে থাকা ফ্ল্যাট ও কার পার্কিংয়ের ৩২২৮ বর্গফুট স্থাবর সম্পদ ও মমতাজ বেগমের নামে থাকা ১০ কাঠা জমি জব্দ করা হয়েছে।

এদিন দুদকের সহকারী পরিচালক ও অনুসন্ধানকারী টিমের সদস্য মোস্তাফিজ রাজস্বের কাজী আবু মাহমুদ ফয়সাল, তার স্ত্রী আফসানা জেসমিন এবং তাদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট অন্যান্য ব্যক্তিগণের নামে স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি হস্তান্তর, বিক্রয় বা মালিকানাস্বত্ব বদল রোধের জন্য ব্যাংক হিসাব, ব্যাংকে রক্ষিত সঞ্চয়পত্র ও নন ব্যাংকিং ফাইন্যান্সিয়াল প্রতিষ্ঠানের আমানতসমূহ থেকে অর্থ উত্তোলন অবরুদ্ধ এবং স্থাবর সম্পদ জব্দের আবেদন করেন। পরে দুদকের পাবলিক প্রসিকিউটর মোশাররফ হোসেন কাজল শুনানি করেন। শুনানি শেষে আদালত ব্যাংক হিসাব, সঞ্চয়পত্র অবরুদ্ধ ও স্থাবর সম্পদ জব্দের আদেশ দেন।

আবেদনে বলা হয়েছে, কাজী আবু মাহমুদ ফয়সাল তার নিজ নামে ও তার স্ত্রী আফসানা জেসমিন এর নামে জলসিঁড়ি আবাসন প্রকল্পে মোট দুই কোটি ৩৫ লাখ ৬৫ হাজার টাকা পরিশোধ করে ৫ কাঠার প্লট ক্রয় করেছিলেন। অনুসন্ধান চলাকালীন জলসিঁড়ি আবাসন প্রকল্পের প্লট বিক্রয় করেছেন। দুর্নীতি দমন কমিশন হতে অনুসন্ধান শুরুর পর থেকে অভিযোগ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও তার স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা অপরাধলব্ধ সম্পদ বিক্রি করার চেষ্টা করছেন মর্মে বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায়। অপরাধসহ আয়ের মাধ্যমে অর্জিত বর্ণিত সম্পদ/সম্পত্তির বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে তা বেহাত হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বিধায় রাষ্ট্র ক্ষতিগ্রস্ত হবে। অপরাধলব্ধ আয়ের মাধ্যমে অর্জিত সম্পদ মানিলন্ডারিং আইনের ১৪ ধারা মতে অভিযোগ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি কাজী আবু মাহমুদ ফয়সাল তার স্ত্রী আফসানা জেসমিন এবং তাদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট অন্যান্য ব্যক্তিপণ্যের নামে  স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি হস্তান্তর, বিক্রয় বা মালিকানাস্বত্ব বদল রোধের নিমিত্ত ব্যাংক হিসাব, ব্যাংকে রক্ষিত সঞ্চয়পত্র ও নন ব্যাংকিং ফাইন্যান্সিয়াল প্রতিষ্ঠানের আমানতসমূহ থেকে অর্থ উত্তোলন অবরুদ্ধ এবং স্থাবর সম্পদ জব্দ করা একান্ত প্রয়োজন।

সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, অভিযোগ সংশ্লিষ্ট আবু মাহমুদ ফয়সাল সরকারি ক্ষমতার অপব্যবহার করে ঘুষ লেনদেন, দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত আয়ের উৎস গোপনের উদ্দেশ্যে শাহজালাল ব্যাংক কাওরান বাজার শাখায় তার নিজ নামে বিভিন্ন এফডিআর হিসাব খোলেন। মেয়াদপূর্তির পর এফডিআর ভাঙানো টাকা ও নতুন করে নগদ আনয়ন করে ফারহানা আক্তার, মমতাজ বেগম, মাহমুদা হাসান, খন্দ্যকার হাফিজুর রহমান, কারিমা খাতুনের নামে বিভিন্ন এফডিআর স্কিম খোলেন। পরে এসব অর্থ এবি ব্যাংক, মার্কেন্টাইল ব্যাংক, ওয়ান ব্যাংক, ঢাকা ব্যাংক, লংকা বাংলা ফাইন্যান্স, হজ ফাইন্যান্স এবং সর্বশেষে গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের শাখায় আহম্মেদ আলী, আফতাব আলী ও শেখ নাসির উদ্দিনসহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য ব্যক্তিদের নামে ৭০০ এর অধিক হিসাব খুলে অপরাধলব্ধ আয়ের অবৈধ প্রকৃতি, উৎস, অবস্থান, মালিকানা ও নিয়ন্ত্রণ গোপনের উদ্দেশ্যে স্থানান্তর বা রূপান্তর বা হস্তান্তর করে মানিলন্ডারিং অপরাধ সংঘটিত করেছেন।

দুদকের অনুসন্ধানকালে সংশ্লিষ্ট রেকর্ডপত্র পর্যালোচনায় উঠে এসেছে, কাজী আবু মাহমুদ ফয়সাল ২৪তম বিসিএস পরীক্ষার মাধ্যমে বিসিএস (কর) ক্যাডারে সহকারী কর কমিশনার হিসাবে ২০০৫ সালের ২ জুলাই চাকরিতে যোগদান করেন। বর্তমানে তিনি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের প্রথম সচিব (কর) কর্মরত আছেন। তিনি চাকরিতে যোগদান থেকে এ পর্যন্ত চাকরিরত অবস্থায় ঘুষ লেনদেন, ক্ষমতার অপব্যবহার ও দুর্নীতির মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অবৈধ অর্থ উপার্জন করেন। তিনি ঘুষ ও দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত অর্থ হস্তান্তর/রূপান্তর করে নিজ নামে ও তার স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিগণের নামে ১৬ কোটি ৪১ লাখ ২৫ হাজার ৯০২ টাকা মূল্যের অধিক স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ অর্জন করেন। ফয়সাল তার স্ত্রী আফসানা জেসমিনের নামে ইস্ট ওয়েস্ট প্রোপার্টি ডেভেলপমেন্ট (প্রা.) লিমিটেড থেকে পাঁচ কাঠার প্লট ক্রয় করেছেন। এ প্লটের ৭৫ লাখ টাকা পরিশোধ করা হয়েছে মাহমুনা হাসানের ওয়ান ব্যাংক হিসাব থেকে। আদিবা ট্রেডিং (প্রো. কাজী আবু মাহমুদ ফয়সাল)-এর শাহজালাল ব্যাংক, কাওরান বাজার শাখায় ২০১৯ সালের ৩০ জানুয়ারি চেকের মাধ্যমে রূপায়ণ হাউজিং এস্টেট লিমিটেড এক কোটি ইস্যু করা হয়। তবে এ টাকা ফয়সালের হিসাব থেকে গেলেও সম্পদ অর্জন করেছেন শ্বশুর আফতাব আলীর নামে।

 

* সর্বশেষ  গুরুত্বপূর্ণ  সব  সংবাদ, ছবি ,অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ও লেখা পেতে আমাদের  ফেসবুক পেইজে  লাইক  দিয়ে  অ্যাকটিভ  থাকুন।  ভিজিট করুন : http://www.etihad.news

* অনলাইন  নিউজ পোর্টাল  ইত্তেহাদ নিউজে  লিখতে  পারেন  আপনিও। লেখার বিষয়  ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন  [email protected] ঠিকানায়

সংবাদটি শেয়ার করুন....
ইত্তেহাদ নিউজ ডেস্ক :

ইত্তেহাদ নিউজ ডেস্ক :

About Author

etihad news is one of the famous Bangla news portals published from Abudhabi-UAE. It has begun with a commitment to fearless, investigative, informative, and independent journalism. This online portal has started to provide real-time news updates with maximum use of Smart Technology.

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *