অনুসন্ধানী সংবাদ

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের প্যাকিং হাউজ প্রকল্পে জগৎ চাঁদ মালাকারের লুটপাট!

main 1719730846
print news

*লুটের স্বর্গরাজ্য কেন্দ্রীয় প্যাকিং হাউজ প্রকল্প

*৬৯ কোটি টাকার যন্ত্রপাতি ১১১ কোটি টাকা দেখিয়ে ৪২ কোটি টাকা লুটের মহাপরিকল্পনা

*একাধিক লটে একই ধরনের আইটেম ক্রয়

*ভুয়া বিল ভাউচারের মাধ্যমে অর্থ উত্তোলন করা এবং জিনিসপত্র ক্রয় না করে সেই অর্থ ব্যাংক নিজের হিসাবে জমা

* মালামাল গ্রহণ না করেই ঠিকাদারের নিকট থেকে অর্থ গ্রহণ

*টেন্ডার রেট সম্পর্কিত গোপনীয় তথ্য ফাঁস

*ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে কাজ পাইয়ে দেয়ার আশ্বাসে ঘুষ গ্রহণ

ইত্তেহাদ নিউজ,ঢাকা : কৃষি মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ‘কেন্দ্রীয় প্যাকিং হাউজ প্রকল্প’টি একটি মহাগুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প। ২০২১ সালের অক্টোবরে একনেকে ১৫৬৩৫.৮৯ লক্ষ টাকায় প্রকল্পটি অনুমোদিত হয়। যার মেয়াদ ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত। এই প্রকল্পটি ঘিরে দুর্নীতির স্বর্গরাজ্য তৈরি করেছেন প্রকল্প পরিচালক জগৎ চাঁদ মালাকার।

প্রকল্পটি নিয়ে মন্ত্রণালয়ে বিভিন্ন অভিযোগের ভিত্তিতে মোহাম্মদ এনামুল হক, যুগ্ম সচিব, পরিকল্পনা-২ অধিশাখা, কৃষি মন্ত্রণালয়-কে সভাপতি করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। উক্ত কমিটি ২০২৩ সালের ৩১ জানুয়ারি এ বিষয়ে একটি তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়। আর এ তদন্ত প্রতিবেদনে উঠে আসে প্রকল্পটি ঘিরে জগৎ চাঁদ মালাকারের লুটপাটের মহাপরিকল্পনা ও অনিয়মের সব ফিরিস্তি।

তদন্ত প্রতিবেদন হতে জানা যায়, জগৎ চাঁদ মালাকার ৬৯ কোটি টাকা বাজারমূল্যের যন্ত্রপাতি ১১১ কোটি মূল্যে প্রকল্পের ডিডিপিতে সন্নিবেশিত করেন। অর্থাৎ সেই হিসেবে ৪২ কোটি টাকা আত্মসাতের মহাপরিকল্পনা হাতে নেন তিনি। এই যন্ত্রপাতি ক্রয় সংক্রান্ত বিষয়ে ২০২২ সালের জুলাই মাসে টেন্ডার করার কথা থাকলেও মন্ত্রণালয়ের নিকট অভিযোগের ভিত্তিতে তা বন্ধ হয়ে যায়।

তদন্ত প্রতিবেদন হতে আরও জানা যায়, ল্যাবওয়ার্ক সম্পর্কে অভিজ্ঞতা সম্পন্ন লোকদের মাধ্যমে স্পেসিফিকেশন তৈরি করা হয়েছে। এছাড়াও যন্ত্রপাতির একাধিক লটে প্রায় একই ধরনের আইটেম ধরা হয়েছে। ভিন্ন এলাকায় ভিন্ন ল্যাবে ব্যবহৃত না হয়ে থাকলেও একই ল্যাবের জন্য একাধিক লটে প্রায় একই ধরনের যন্ত্রপাতি ক্রয় করা হয়েছে। যা সম্পূর্ণ অস্বাভাবিক।

প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয়ের প্রায় ৪০ শতাংশ অর্থাৎ ৪ মিলিয়ন ইউএস ডলার ব্যয়ে ১৯ টি মাইক্রোস্কোপ ক্রয়ের জন্য ডিডিপি-তে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। অথচ এই পরিমাণ অর্থ ব্যবহার করে সম্পূর্ণ কার্যকরী কয়েকটি ল্যাব স্থাপন করা সম্ভব। মাত্র ২ ইউএস ডলার ব্যয় করে মাইক্রোবায়োলজি ল্যাবের জন্য শুধুমাত্র একটি ১ মিলি Serological pipette ক্রয়ের অনুস্থান অপ্রতুল। তাছাড়া প্রকল্প পরিচালনার জন্য প্রায় ১০০টির মতো গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রপাতির আইটেম বাদ দেয়া হয়। এসব ছাড়াও প্রকল্প পরিচালনায় জগৎ চাঁদের বিরুদ্ধে বিরুদ্ধে রয়েছে আরও ভয়ংকর সব অভিযোগ। এসব অভিযোগের আদ্যোপান্ত উদ্ধার করেছে বাংলা ইনসাইডার।

২০২১-২২ অর্থবছরে প্রকল্পের ব্যয় বাবদ ৩ কোটি ৩০ লাখ টাকা বরাদ্দ ছিলো। এরমধ্যে ৬টি Request for Quotation (RFQ) কোটেশন করে ৪১ লাখ ৬০ হাজার ৬শ’ চার টাকা বিল করেছেন। উক্ত কোটেশন গুলির অধিকাংশ মালামাল গ্রহণ না করেই ৩০ লাখ টাকা ঠিকাদারের কাছ থেকে নিয়েছেন জগৎ চাঁদ মালাকার। এছাড়াও কোন প্রকার জিনিস ক্রয় না করেই ১১টি ভুয়া বিল ভাউচারের মাধ্যমে আরও ৪ লাখ ১১ হাজার টাকা তিনি প্রকল্পের একাউন্টে ক্যাশ করে নিজের ব্যক্তিগত ব্যাংক হিসাবে (হিসাব নং-জগৎ চাঁদ মালাকার, একাউন্ট নাম্বার- ৩৫৪৭১০১০১০৬৩৯৯৮৬, পূবালী ব্যাংক লিমিটেড, খামার বাড়ি শাখা, ঢাকা-১২১৫) জমা করেন।

সরবরাহের মধ্যে ল্যাবরেটরি কেমিক্যাল কনজিউমেবলসের ২২ লাখ টাকার একটি কার্যাদেশ মাল্টিবীজ ইন্টারন্যাশনালকে প্রদান করা হয়। তবে উক্ত কেমিক্যাল সামান্য পরিমাণও গ্রহণ না করে তিনি পুরো টাকা আত্মসাৎ করেছেন। যা পরবর্তীতে অডিটে ধরা পড়ে। প্রকল্পে ৭টি সরবরাহ টেন্ডারের মোট পরিমাণ ছিলো ১ কোটি ৩৩ লাখ টাকা। এই টেন্ডারগুলোর মধ্যে কম্পিউটার, ল্যাপটপ, ইলেকট্রনিক ইকুইপমেন্টস, ফার্ণিচার, ফটোকপি মেশিন, প্রজেক্টর ইত্যাদি অনেকগুলো মালামাল গ্রহণ না করে ঠিকাদারের নিকট থেকে তিনি প্রায় ৫০ লাখ টাকা গ্রহণ করেন।

মাল্টিবীজ ইন্টারন্যশনালকে ২ কোটি টাকার একটি কাজ দিয়ে জগৎ চাঁদ মালাকার প্রতিষ্ঠানটির সত্ত্বাধিকারী ইকবাল এর কাছে থেকে প্রায় ২০ লাখ টাকা গ্রহণ করেছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। এছাড়াও, ৭ কোটি টাকা মূল্যের একটি টেন্ডার মাল্টিবীজ ইন্টারন্যাশনালকে প্রদান করার জন্য বেশকিছু গোপন তথ্য মাল্টিবিজকে সরবরাহ করেন। এর বাইরেও এসএমজি ইঞ্জিনিয়ারিং নামে একটি প্রতিষ্ঠানকে কাজ দিয়ে জগৎ চাঁদ হাতিয়ে নিয়েছেন প্রায় ৭০ লাখ টাকা।

ইহান এন্টারপ্রাইজ নামের একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেয়ার ক্ষেত্রেও অনিয়ম করেছেন জগৎ মালাকার। এক্ষেত্রে টেন্ডারের চাহিদা মোতাবেক অধিকাংশ কাগজপত্র না থাকা সত্ত্বেও মোটা অংকের টারার বিনিময়ে ইহান এন্টারপ্রাইজকে কার্যাদেশ প্রদান করেছেন। এ কার্যাদেশ প্রদান বাবদ প্রকল্প পরিচালক ইহান এন্টারপ্রাইজের কাছ থেকে নিয়েছেন ২০ লাখ টাকা। এছাড়াও ইহান এন্টারপ্রাইজের সাথে চুক্তি অনুযায়ী উদ্ধৃত দরের ৫% সার্ভিস চার্জ প্রদানের কথা থাকলেও প্রকল্প পরিচালক মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে ১২.৫০% সার্ভিস চার্জ প্রদান করে যা সম্পূর্ণ বেআইনি।

২০২২-২৩ অর্থবছরে ৩০ নভেম্বর ২০২২ সালে Procurement of Generator and central air-condition equipment সংগ্রহের উদ্দেশ্যে একটি দরপত্র প্রকাশিত হয়। উক্ত দরপত্রে প্রকল্প পরিচালক অবৈধভাবে অর্থগ্রহণ করে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ করদাতা Cooltech Corporation কে উদ্ধৃত্ত দর ৫ কোটি ৬২ লাখ টাকায় কার্যাদেশ প্রদান করেন।

এখানেই জগৎ চাঁদ থেমে যাননি, একই অর্থবছরে সিসি ক্যামেরা ক্রয়ের ৭০ লাখ টাকার টেন্ডার হয়। যেখানে দেখা যায়, সর্বোচ্চ দরদাতাকে কার্যাদেশ প্রদান করেন প্রকল্প পরিচালক জগৎ চাঁদ মালাকার।

এভাবেই প্রকল্প পরিচালক জগৎ চাঁদ মালাকার কেন্দ্রীয় প্যাকিং হাউজ প্রকল্পকে বানিয়েছেন লুটের স্বর্গরাজ্য। তার লুটপাটের চিত্রটি এমন যে, তা গিনেজবুকে জায়গা করে নেয়ার মতো। এই প্রকল্পে তিনি দরপত্র আহ্বান করেছেন ২১ কোটি টাকার যার মধ্যে বিভিন্ন ঠিকাদারের নিকট থেকে তিনি ৪ কোটি ১১ লাখ টাকা গ্রহণ করেছেন।

 

* সর্বশেষ  গুরুত্বপূর্ণ  সব  সংবাদ, ছবি ,অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ও লেখা পেতে আমাদের  ফেসবুক পেইজে  লাইক  দিয়ে  অ্যাকটিভ  থাকুন।  ভিজিট করুন : http://www.etihad.news

* অনলাইন  নিউজ পোর্টাল  ইত্তেহাদ নিউজে  লিখতে  পারেন  আপনিও। লেখার বিষয়  ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন  [email protected] ঠিকানায়

সংবাদটি শেয়ার করুন....
ইত্তেহাদ নিউজ ডেস্ক :

ইত্তেহাদ নিউজ ডেস্ক :

About Author

etihad news is one of the famous Bangla news portals published from Abudhabi-UAE. It has begun with a commitment to fearless, investigative, informative, and independent journalism. This online portal has started to provide real-time news updates with maximum use of Smart Technology.

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *