অনুসন্ধানী সংবাদ

ছিঁচকে চোর থেকে দুই বছরেই শত কোটি টাকার মালিক শমসের

1720367378.3
print news

ইত্তেহাদ নিউজ,ঢাকা : মাত্র দুই বছর আগে রাজধানীর দক্ষিণখান এলাকার একটি অফিস থেকে চনপাড়া পর্যন্ত অটোরিকশার ভাড়া দিতে পারতেন না। অন্যের কাছ থেকে চেয়ে নিতেন। তবে এখন হাঁকান বিলাসবহুল গাড়ি। হয়েছেন অন্তত শত কোটি টাকার মালিক।

ছিঁচকে চোর থেকে হয়ে উঠেছেন প্রভাবশালী মাদকের ডন। শুধু রাজধানীর অভ্যন্তরীণ রুটে নয়, ঢাকা-কক্সবাজার রুটে নামিয়েছেন অভিজাত যাত্রীবাহী বাস। নারায়ণগঞ্জ এবং মুন্সীগঞ্জে কিনেছেন বিপুল পরিমাণ জমি। তার নাম শমসের।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মাদকের আন্তঃজেলা ডিপো হিসেবে পরিচিতি পাওয়া নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের কায়েতপাড়া ইউনিয়নের চনপাড়ার অপরাধ জগৎ নিয়ন্ত্রণ করে রীতিমতো ফুলে-ফেঁপে উঠেছেন চারদিক থেকে। তার কথাই চনপাড়ায় শেষ কথা। অলিখিত আইন।

জানা গেছে, চনপাড়া এলাকার ৩ নম্বর ব্লকের হাসমত আলী দয়ালের ছেলে তিনি। একসময় ছিলেন টোকাই, ছিঁচকে চোর। এখন অপরাধ জগতের গডফাদার। গত ২০২৩ সালের ১২ জুন অনুষ্ঠিত কায়েতপাড়া ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের উপনির্বাচনে ইউনিয়ন পরিষদ মেম্বার হওয়ার পরই রাতারাতি আঙুল ফুলে কলাগাছ নয়, রীতিমতো বটগাছ বনে গেছেন।

প্রধানমন্ত্রীর সাবেক সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস-২) গাজী হাফিজুর রহমান লিকুসহ দেশের বিভিন্ন প্রভাবশালীর সঙ্গে বিশেষ সম্পর্ক বজায় রাখতেন। বিভিন্ন সময় শমসের তার ফেসবুক অ্যাকাউন্টে ওইসব প্রভাবশালীর সঙ্গে ছবিসহ স্ট্যাটাসও দিয়ে নিজের ক্ষমতার বিষয়টি জানান দিয়েছেন। এর বাইরে তিনি বিভিন্ন মহলে নিজেকে একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেও পরিচয় দিতেন।

গত ১৫ অক্টোবর রাজধানীর পশ্চিম ধোলাইপাড় এলাকায় একটি প্রাইভেট কার থেকে দুটি আগ্নেয়াস্ত্রসহ চক্রের চারজনকে গ্রেপ্তার করার পর শমসের মেম্বারের নাম আসে।

গ্রেপ্তাররা জানান, তারা অস্ত্রগুলো শমসের মেম্বারের কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য যাচ্ছিলেন। পরবর্তীতে শমসের মেম্বারকে গ্রেপ্তার করতে চনপাড়ায়ও অভিযান চালায় পুলিশ। তবে ৭০ লাখ টাকায় রফাদফা করার বিষয়টি এলাকায় চাউর করেন শমসের। পরবর্তীতে এই টাকা চনপাড়ার ৮০টি স্পট থেকে উঠিয়ে নেন।

চনপাড়ার ঐতিহ্যবাহী হাবুর পুকুর ভরাট করে ১০০ প্লট করেছেন শমসের। এরই মধ্যে ৬০টি প্লট ৬-৭ লাখ টাকা করে বিক্রিও করেছেন শমসের। রূপগঞ্জ থানাসহ বিভিন্ন থানায় ৫টি হত্যা মামলাসহ ডাকাতি, চুরি, ধর্ষণসহ অন্তত ২২টি মামলার তথ্য পাওয়া গেছে।

চনপাড়া এলাকায় শমসেরের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে প্রায় ৮০টি মাদকের স্পট। সেখানে প্রকাশ্যে চলে ইয়াবা, হেরোইন, আইস, প্যাথিড্রিন, ফেনসিডিল, গাঁজা ও মদসহ বিভিন্ন ধরনের মাদক বেচাকেনা। প্রতিটি স্পটের জন্য জেলা পুলিশ এবং গোয়েন্দা পুলিশের কথা বলে ১০ হাজার টাকা করে উঠানো হয় প্রতি সপ্তাহে।

শমসেরের হয়ে এ দায়িত্ব পালন করে আসছেন জামাল। এছাড়াও চনপাড়া এলাকায় সরকারি জমি দখল করে প্লট বাণিজ্য, প্রতারণা, জুলুমবাজি আর সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে শূন্য থেকে শত কোটি টাকার সম্পদের মালিক বনে গেছেন শমসের।

দেড় মাস আগেও কায়েতপাড়া ইউনিয়নের পশ্চিমগাঁও মৌজায় ১০ বিঘা জমি কিনেছেন দেড় কোটি টাকায়। এর কিছুদিন আগে মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগরে ২০ বিঘা জমি কিনেছেন নিজের এবং দুই স্ত্রীর নামে। এ ছাড়া কক্সবাজার রুটে শমসেরের রয়েছে চারটা এসি গাড়ি।

রাজধানীর ডেমরা রোডে অছিম পরিবহনের নামে শমসেরের প্রায় ৫টি গাড়ি চলছে। মাদককারবারি সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করে প্রতি সপ্তাহে প্রায় ২০ লাখ টাকা চাঁদা উঠান তিনি। যা প্রতি মাসে ৮০ লাখ টাকা দাঁড়ায়। এছাড়া তার নিজের মাদক ও অস্ত্র কারবার থেকে প্রতি মাসে গড়ে প্রায় ১ কোটি টাকা আয় হচ্ছে।

চনপাড়া এলাকার সবচেয়ে বড় হেরোইনের ডিলার শমসেরের দ্বিতীয় স্ত্রী খাদিজা বেগম এবং রোজিনার বড় বোনের স্বামী নাজমুল। আরেক স্ত্রী রোজিনাও মাদকের পাইকারি ডিলার। তবে দীর্ঘদিন ধরে চনপাড়ায় মাদকের একচ্ছত্র ব্যবসা করে আসছেন শাহাবুদ্দীন। তিনি সরাসরি মিয়ানমার এবং ভারত থেকে চনপাড়ায় মাদক সরবরাহ করছেন। পরবর্তীতে তাদের সার্বিক নিরাপত্তার বন্দোবস্ত করে আসছেন শমসের। আধিপত্য ধরে রাখতে অন্তত ২০০ জন অস্ত্রধারী ক্যাডার রয়েছে শমসেরের।

অনুসন্ধানে জানা যায়, নিজের আধিপত্য টিকিয়ে রাখতে শমসের প্রশাসনসহ বিভিন্ন মহলে বড় অঙ্কের ভাগ নিয়মিত দিয়ে আসছেন। ২০২৩ সালের ৩১ মার্চ কারাগারে বজলুর রহমান ওরফে বজলু মেম্বার মারা যাওয়ার পর চনপাড়া পুনর্বাসন কেন্দ্রের নিয়ন্ত্রণ নেন শমসের।

এলাকায় বজলুর ক্যাডার হিসেবে চিহ্নিত শাওন, টাক রবিন, মুজিবর, মোহাম্মদ আলী সেই সময় থেকেই শমসেরের সঙ্গে হাত মেলান। ওই সময় বজলু ঘনিষ্ঠ প্রভাবশালী মাদক ব্যবসায়ী জয়নাল আবেদীন কারাগারে ছিলেন। তবে জামিনে মুক্ত হলেও জয়নালকে এলাকায় ঢুকতে দেননি শমসের। এখন পর্যন্ত চনপাড়ার নিয়ন্ত্রণ নিজের হাতেই রেখেছেন। যদিও জয়নাল এলাকায় ঢুকতে নানা চেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন।

মাঝে মাঝেই জয়নাল তার বাহিনীর অন্যতম সদস্য শাহাবুদ্দীন, সুমন, তাঁতি কাউসার, শাকিল, ইয়াসমিন, রাব্বি, শ্রাবণ, সায়েমের মাধ্যমে চেষ্টা করে আসছেন।

সম্প্রতি বিষয়টি নিয়ে জানতে চাওয়া হয় নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার গোলাম মোস্তাফা রাসেলের কাছে। তিনি বলেন, মাদকের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান চলমান রয়েছে। মাঝেমধ্যেই আমরা চনপাড়ায় অভিযান চালাই। শমসেরের বিষয়ে আমরা খোঁজখবর নিচ্ছি।

সৌজন্যে: বাংলাদেশ প্রতিদিন

 

সর্বশেষ  গুরুত্বপূর্ণ  সব  সংবাদ, ছবি ,অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ও লেখা পেতে আমাদের  ফেসবুক পেইজে  লাইক  দিয়ে  অ্যাকটিভ  থাকুন।  ভিজিট করুন : http://www.etihad.news

* অনলাইন  নিউজ পোর্টাল  ইত্তেহাদ নিউজে  লিখতে  পারেন  আপনিও। লেখার বিষয়  ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন  [email protected] ঠিকানায়

সংবাদটি শেয়ার করুন....
ইত্তেহাদ নিউজ ডেস্ক :

ইত্তেহাদ নিউজ ডেস্ক :

About Author

etihad news is one of the famous Bangla news portals published from Abudhabi-UAE. It has begun with a commitment to fearless, investigative, informative, and independent journalism. This online portal has started to provide real-time news updates with maximum use of Smart Technology.

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *