অনুসন্ধানী সংবাদ

এডিসি কামরুল টাকার কুমির,স্ত্রীকে কিনে দেন ৫ জাহাজ

12 2407110428
print news

ইত্তেহাদ নিউজ,ঢাকা : মোহাম্মদ কামরুল হাসান। ১৯৮৯ সালের ১০ জানুয়ারি এসআই হিসেবে যোগ দেন পুলিশে। বর্তমানে তিনি চট্টগ্রাম নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি)। ৩৫ বছরের চাকরিজীবনে বিপুল সম্পদের মালিক হয়েছেন এডিসি কামরুল হাসান। শুধু নিজের নয়, স্ত্রীর নামেও গড়েছেন অঢেল সম্পদ। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অনুসন্ধানে বেরিয়ে কামরুল হাসান দম্পতির অবৈধ সম্পদের ফিরিস্তি। যেখানে মিলেছে স্ত্রীকে পাঁচটি জাহাজ (বার্জ) কিনে দেওয়ার তথ্যও। দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল মঙ্গলবার দুজনের সম্পদ ক্রোকের আদেশ দিয়েছেন আদালত। জানা যায়, কামরুল হাসানের বাড়ি নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলায়। পুলিশে উপ-পরিদর্শক থেকে পরিদর্শক পদে পদোন্নতি পেয়ে চট্টগ্রামের কয়েকটি থানায় ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্বপালন করেন তিনি। মূলত ঐ সময়েই ‘টাকার কুমির’ হয়ে ওঠেন কামরুল হাসান। তার ১২ কোটি ৭২ লাখ ৯২ হাজার ৬৯৫ টাকার স্থাবর ও এক কোটি ২৩ লাখ ৩৯ হাজার ২১৬ টাকার অস্থাবর সম্পদের তথ্য উঠে এসেছে দুদকের অনুসন্ধানে। এছাড়া একই সময়ে তার মোট ৭০ লাখ ২৮ হাজার ২৪১ টাকা পারিবারিক ও অন্যান্য ব্যয়ের তথ্য পাওয়া যায়। অর্থাৎ পারিবারিক ও অন্যান্য ব্যয়সহ কামরুল হাসানের মোট অর্জিত সম্পদের পরিমাণ ১৪ কোটি ৬৬ লাখ ৬০ হাজার ১৫২ টাকার। এসব সম্পদ অর্জনের বিপরীতে তার গ্রহণযোগ্য আয়ের উৎস পাওয়া গেছে চার কোটি ৮০ লাখ ৩২ হাজার ৮৭ টাকার। সে হিসেবে অর্জিত সম্পদের চেয়ে বৈধ আয়ের উৎস নয় কোটি ৮৬ লাখ ২৮ হাজার ৬৫ টাকা কম। অপরদিকে, দৃশ্যত কোনো আয় না থাকলেও দুই কোটি ৫৩ হাজার ২৪০ টাকার সম্পদের মালিক হয়েছেন কামরুল হাসানের স্ত্রী সায়মা বেগম। এরমধ্যে এক কোটি ২৫ লাখ টাকার স্থাবর সম্পদ ও এক কোটি ৯৯ লাখ ২৮ হাজার টাকার অস্থাবর সম্পদ রয়েছে। একই সময়ে সায়মা বেগমের মোট ৩১ লাখ ৩৬ হাজার ৬৫৫ টাকা পারিবারিক ও অন্যান্য ব্যয়ের তথ্য পাওয়া যায়। অর্থাৎ পারিবারিক ও অন্যান্য ব্যয়সহ তার মোট অর্জিত সম্পদের পরিমাণ দুই কোটি দুই লাখ ৯৯ হাজার ৬২১ টাকা। এসব সম্পদ অর্জনের বিপরীতে তার বৈধ ও গ্রহণযোগ্য আয়ের উৎস পাওয়া যায় ৪০ লাখ ১৪ হাজার ৪৩৩ টাকার। অর্থাৎ তার নামে এক কোটি ৬২ লাখ ৮৫ হাজার ১৮৮ টাকার জ্ঞাত আয়ের উৎস বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের তথ্য পাওয়া যায়। দুদক সূত্রে জানা যায়, নগরের অভিজাত খুলশী আবাসিক এলাকায় ‘ফয়জুন ভিস্তা’ অ্যাপার্টমেন্টের অষ্টম তলায় দুই হাজার ৫৭০ বর্গফুটের একটি ফ্ল্যাট ও ১৩৬ বর্গফুটের গাড়ি পার্কিং রয়েছে কামরুল হাসানের। সোয়া সাত লাখ টাকায় ফ্ল্যাট ও ২৫ হাজার টাকায় পার্কিং স্পেস কিনেছেন বলে আয়কর নথিতে কামরুল হাসান দাবি করলেও ঐ এলাকায় আড়াই হাজার বর্গফুটের ফ্ল্যাটের বর্তমান বাজারমূল্য তিন কোটি টাকারও বেশি। এছাড়া নগরের পশ্চিম নাসিরাবাদ এলাকায় সাত শতক জমির ওপর চারতলা বাড়ি করেছেন কামরুল হাসান। জমিসহ ঐ বাড়ি নির্মাণে এক কোটি ৬৫ লাখ টাকা খরচ দেখানো হলেও নাসিরাবাদ এলাকায় এক শতক জমির মূল্যই এক কোটি টাকার বেশি। সে হিসেবে কামরুল হাসানের সেই ভূমি ও ভবনের মূল্য কমপক্ষে আট কোটি টাকা। চট্টগ্রামের বাইরে ঢাকায়ও সম্পদ গড়ে তুলেছেন কামরুল হাসান। ঢাকার সাভারে ১০৭ শতক জমির ওপর ‘সাভার সিটি সেন্টার’ নামে ১২ তলা ভবনের চারজন অংশীদারের একজন তিনি। সেখানে কাগজ-কলমে সাত কোটি ৫২ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেছেন কামরুল হাসান। ভবনটির বেজমেন্টে ৯০টি, প্রথম তলায় ১৪০টি, দ্বিতীয় তলায় ১৪৬টি, তৃতীয় তলায় ৮৯টি ও চতুর্থ তলায় ১০৩টি দোকান এবং পাঁচ হাজার বর্গফুটের ফুডকোর্ট, পঞ্চম তলায় অফিস ও ষষ্ঠ তলায় ৬৭টি ফ্ল্যাট রয়েছে। বাজারমূল্যে এ সম্পদের মূল্য শতকোটি টাকারও বেশি। সেটি ছাড়াও সাভার সিটি টাওয়ার নামে একটি ১০ তলা আবাসিক ভবনেরও অংশীদার কামরুল হাসান। সেখানে ৫৪টি ফ্ল্যাট রয়েছে। এছাড়া চট্টগ্রাম নগরের উত্তর হালিশহর, নাসিরাবাদ ও চান্দগাঁও এলাকায় শতাধিক ফ্ল্যাট এবং দোকান রয়েছে কামরুল হাসানের। চট্টগ্রাম ও ঢাকার সাভারে রয়েছে ১৫৪ শতক জমি এবং দুটি বাড়ি। পাশাপাশি ব্যাংকে এক কোটি ১০ লাখ ৫০ হাজার টাকার বন্ড ও এফডিআর থাকার তথ্য উঠে এসেছে দুদকের অনুসন্ধানে। জানা যায়, এসব সম্পদ ছাড়াও স্ত্রী সায়মা বেগমের নামে ‘সওদাগর নেভিগেশন’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে দিয়েছেন কামরুল হাসান। চট্টগ্রাম নগরের আগ্রাবাদের পোর্টল্যান্ড সাত্তার টাওয়ারের চতুর্থ তলায় প্রতিষ্ঠানটির অফিস। পাঁচ ছোট জাহাজের এক তৃতীয়াংশের মালিক সওদাগর নেভিগেশন। পাঁচ জাহাজের মধ্যে চারটি হলো- এমভি প্যাসিফিক রাইডার, এমভি পানামা ফরেস্ট-০১, এমভি রাইসা তারাননুম, বার্জ আল বাইয়েত। কাগজে-কলমে জাহাজগুলোতে দেড় কোটি টাকার বিনিয়োগ দেখানো হয়েছে সায়মা বেগমের। বাস্তবে যেটি তিন থেকে চারগুণ বেশি বলে জানা গেছে। এর বাইরে নগরের নগরের হালিশহরে ৪০ শতক নাল জমি রয়েছে সায়মা বেগমের। যেগুলোর ক্রয়মূল্য এক লাখ ২৫ হাজার টাকা দেখানো হলেও বর্তমান বাজারমূল্য ১২ থেকে ১৫ কোটি টাকা। এছাড়াও বাংলাদেশ ব্যাংকে ৪৫ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র রয়েছে তার। অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগের বিষয়ে জানতে কামরুল হাসানের মুঠোফোনে কল করা হলেও সংযোগ না পাওয়ায় তা সম্ভব হয়নি। দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল সোমবার কামরুল হাসান ও স্ত্রী সায়মা বেগমের স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি ক্রোক করার আদেশ দিয়েছেন চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ জেবুননেছার আদালত। এ বিষয়ে দুদকের আইনজীবী কাজী সানোয়ার আহমেদ লাভলু বলেন, পুলিশ কর্মকর্তা কামরুল হাসানের নয় কোটি ৭৩ লাখ ২২ হাজার ৪৪ টাকার এবং তার স্ত্রী সায়মা বেগমের এক কোটি ৬২ লাখ ৮৫ হাজার ১৮৮ টাকার সম্পদের কোনো বৈধ উৎস পাওয়া যায়নি। গত ১৩ মে এ বিষয়ে কমিশন বরাবর প্রতিবেদন দাখিল করেন দুদকের তদন্তকারী কর্মকর্তা। এর পরিপ্রেক্ষিতে ঐ পুলিশ কর্মকর্তার সম্পদ ক্রোকের জন্য আদালতে আবেদন দাখিলের অনুমতি দেয় কমিশন। এরমধ্যে গত রোববার (৭ জুলাই) দুদক চট্টগ্রাম জেলা সমন্বিত কার্যালয়-১ এর সহকারী পরিচালক ও অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা মোহাম্মদ এমরান হোসেন আদালতের কাছে পুলিশ কর্মকর্তা কামরুল হাসানের সম্পদ ক্রোকের আবেদন করলে আদালত সেই আবেদন মঞ্জুর করেন। কামরুল হাসান ছাড়াও আরো অন্তত ৪০ জন পুলিশ কর্মকর্তার অবৈধ সম্পদের সন্ধান পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছে দুদক সূত্র। তাদের মধ্যে কয়েকজন হলেন- ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) মোহাম্মদ আবুল হাশেম, চট্টগ্রামের আনোয়ারা সার্কেলের সাবেক সহকারী পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মফিজ উদ্দিন, পাহাড়তলী জোনের সহকারী কমিশনার মঈনুর রহমান, চট্টগ্রাম নগর পুলিশের এডিসি (ক্রাইম) কামরুল হাসান, সহকারী পুলিশ কমিশনার এ বি এম শাহাদাত হোসেন মজুমদার, ডিবি পুলিশের পরিদর্শক মোহাম্মদ আব্দুর রহমান, বন্দর থানার সাবেক ওসি মঈনুল হোসেন, কোতোয়ালি থানার সাবেক ওসি ও বর্তমানে চান্দগাঁও থানার ওসি জাহিদুল কবির, চান্দগাঁও থানার সাবেক ওসি খাইরুল ইসলাম, চান্দগাঁও থানার সাবেক ওসি তদন্ত মোহাম্মদ মনিবুর রহমান। আরো রয়েছেন বাঁশখালী থানার ওসি তোফায়েল আহমেদ, পাহাড়তলী থানার সাবেক ওসি রঞ্জিত কুমার বড়ুয়া, সন্দ্বীপ থানার সাবেক ওসি মুহাম্মদ সামছুল ইসলাম, বোয়ালখালী থানার সাবেক ওসি মোহাম্মদ সাইরুল ইসলাম, কর্ণফুলী ও নগরের আকবরশাহ থানার সাবেক ওসি মুহাম্মদ আলমগীর, সাবেক ওসি আনোয়ার হোসেন, আলোচিত ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, পটিয়া থানার সাবেক ওসি মোহাম্মদ রেফায়েত উল্যাহ চৌধুরী, লোহাগাড়া থানার সাবেক ওসি মোহাম্মদ শাহজাহান, ট্রাফিক সার্জেন্ট মোহাম্মদ শেখ রাসেল, সাবেক পুলিশ পরিদর্শক মীর নজরুল ইসলাম, পুলিশ পরিদর্শক মোহাম্মদ শাহ আলম, সাবেক ট্রাফিক পুলিশ পরিদর্শক আবুল কাশেম চৌধুরী, রাঙ্গুনিয়া থানার উপ-পরিদর্শক সুমন কুমার দে। এরমধ্যে মীর নজরুল ইসলাম, শাহ আলম, আবুল কাশেম চৌধুরী, এ বি এম শাহাদাত হোসেন মজুমদার, সুমন কুমার দে, আবুল হাশেম, প্রদীপ কুমার দাশ, রেফায়েত উল্যাহ চৌধুরী, মোহাম্মদ শাহজাহানের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলা করা হয়েছে।

 

সর্বশেষ  গুরুত্বপূর্ণ  সব  সংবাদ, ছবি ,অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ও লেখা পেতে আমাদের  ফেসবুক পেইজে  লাইক  দিয়ে  অ্যাকটিভ  থাকুন।  ভিজিট করুন : http://www.etihad.news

* অনলাইন  নিউজ পোর্টাল  ইত্তেহাদ নিউজে  লিখতে  পারেন  আপনিও। লেখার বিষয়  ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন  [email protected] ঠিকানায়

সংবাদটি শেয়ার করুন....
ইত্তেহাদ নিউজ ডেস্ক :

ইত্তেহাদ নিউজ ডেস্ক :

About Author

etihad news is one of the famous Bangla news portals published from Abudhabi-UAE. It has begun with a commitment to fearless, investigative, informative, and independent journalism. This online portal has started to provide real-time news updates with maximum use of Smart Technology.

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *