সংবাদ আন্তর্জাতিক

সপ্তাহজুড়ে সংঘর্ষের পর স্বাভাবিক হচ্ছে বাংলাদেশ : এপি

850696 124
print news

ইত্তেহাদ নিউজ ডেস্কসরকারি চাকরিতে কোটা নিয়ে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভকে কেন্দ্র করে এক সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে চলা বিশৃঙ্খলার পর স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে বাংলাদেশের পরিস্থিতি।বুধবার সীমিত পরিসরে ইন্টারনেট সেবা ও অফিস চালু হয়েছে। এক সপ্তাহজুড়ে চলা এ সহিংসতায় প্রায় ২০০ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।

এ অবস্থায় দেশের বেশিরভাগ অংশে ইন্টারনেট বিচ্ছিন্ন রয়েছে। তবে কর্তৃপক্ষ সাত ঘণ্টার জন্য কারফিউ শিথিল করার পরে হাজার হাজার গাড়ি রাজধানীর রাস্তায় দেখা গেছে।বুধবার (২৪ জুলাই) ঢাকা ও চট্টগ্রামের কিছু এলাকায় ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট চালুর পর কয়েক ঘণ্টার জন্য অফিস ও ব্যাংকের কার্যক্রম চালানো হয়।

পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়া পর্যন্ত ঢাকাসহ অন্যান্য এলাকায় কারফিউ অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
গত ১৬ জুলাই থেকে এ পর্যন্ত সহিংসতায় অন্তত ১৯৭ জন নিহত হয়েছেন বলে বুধবার (২৩ জুলাই) শীর্ষস্থানীয় দৈনিক’র খবরে উল্লেখ করা হয়েছে। অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস কোনো সরকারি সূত্র থেকে মৃতের সংখ্যা নিশ্চিত করতে পারেনি।পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত স্কুল-কলেজ ও অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে।মুক্তিযোদ্ধাদের আত্মীয়দের জন্য সরকারি চাকরির ৩০ শতাংশ সংরক্ষিত কোটা বাতিলের দাবিতে ১৫ জুলাই থেকে সপ্তাহজুড়ে পুলিশ ও ছাত্রদের মধ্যে সংঘর্ষ চলে।রোববার সুপ্রিম কোর্ট মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য সংরক্ষিত কোটা ৫ শতাংশে নামিয়ে আনার নির্দেশ দিয়েছেন। এর ফলে সিভিল সার্ভিসের ৯৩ শতাংশ চাকরি মেধাভিত্তিক হবে এবং অবশিষ্ট ২ শতাংশ জাতিগত সংখ্যালঘুদের পাশাপাশি তৃতীয় লিঙ্গ ও প্রতিবন্ধীদের জন্য সংরক্ষিত থাকবে।সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি সংস্কার করে সুপ্রিম কোর্টের দেয়া রায় কার্যকর করতে মঙ্গলবার পরিপত্র জারি করে সরকার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার এই রায়কে স্বাগত জানিয়ে বলেছে, এই রায় বাস্তবায়নে তারা প্রস্তুত।

তবে রোববারের রায়ের প্রতিক্রিয়া জানাতে সময় নেয় বিক্ষোভকারীরা। মঙ্গলবার তারা জানায়, সুপ্রিম কোর্টের রায় এবং পরবর্তী সরকারি বিজ্ঞপ্তি বিক্ষোভকারীদের পক্ষে রয়েছে।তবে বিক্ষোভের সময় রক্তপাত ও মৃত্যুর জন্য সরকারকে জবাবদিহি করতে হবে।গত জানুয়ারির নির্বাচনে শেখ হাসিনা টানা চতুর্থবারের মতো জয়ী হওয়ার পর প্রধান বিরোধী দলগুলো তাদের বর্জন করার পর এই বিক্ষোভ বাংলাদেশ সরকারের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বন্ধের পাশাপাশি ইন্টারনেট সেবাও বন্ধ করে দেয়া হয়। এরপর সরকার জনগণকে ঘরে থাকার নির্দেশ দেয়।

বিক্ষোভকারীরা যুক্তি দিয়েছিলেন, কোটা পদ্ধতি বৈষম্যমূলক এবং স্বাধীনতা আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী শেখ হাসিনার দল আওয়ামী লীগ সমর্থকদের উপকৃত করছে। এর পরিবর্তে তারা যোগ্যতার ভিত্তিতে চাকরির ব্যবস্থা চেয়েছিল।কোটা সংস্কারের পক্ষে যুক্তি দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৭১ সালে যুদ্ধ করা মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ এবং ধর্ষণ ও নির্যাতনের শিকার নারীরা দলমত নির্বিশেষে সর্বোচ্চ সম্মান পাওয়ার যোগ্য।

আওয়ামী লীগ ও বিএনপি প্রায়ই রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলা ও সহিংসতায় ইন্ধন যোগানোর জন্য একে অপরকে দোষারোপ করে। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত দেশের জাতীয় নির্বাচনের আগে বেশ কয়েকজন বিরোধী দলীয় নেতার ওপর দমনপীড়ন চালানো হয়।

বুধবার (২৪ জুলাই) সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত কারফিউ শিথিল করেছে সরকার। এরপর বেলা ১১টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত অফিস ও ব্যাংকের কার্যক্রম চালু ছিল। একই সাথে ঢাকার কয়েকটি প্রধান সড়কে যানজট ছিল চোখে পড়ার মতো।

আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বার বার বলেছেন, বিরোধী দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল এবং ডানপন্থী জামায়াতে ইসলামীর সশস্ত্র ক্যাডাররা বিক্ষোভে যোগ দিয়েছিল। রাষ্ট্র পরিচালিত বাংলাদেশ টেলিভিশনের সদর দফতর, একটি ফ্লাইওভারের দুটি টোল প্লাজা এবং একটি এক্সপ্রেসওয়ে, ঢাকায় মেট্রোরেলের দুটি স্টেশনসহ অনেক সরকারি স্থাপনায় হামলা চালায় তারা। এছাড়া শত শত সরকারি গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়।

প্রধান বিরোধী দলের সদর দফতরে অভিযান চালিয়ে সিলগালা করে দেয়া হয়। পুলিশ জানিয়েছে, ঢাকায় বিরোধী দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে লাঠি, লোহার রড এবং দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে।

প্রধান বিরোধী দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে বিপুল সংখ্যক প্রাণহানির জন্য সরকারকে দায়ী করেন।

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, ছয় দিন পর মঙ্গলবার রাতে ঢাকা ও চট্টগ্রামে আংশিকভাবে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবা চালু করা হয়েছে।প্রধান ডাটা সেন্টারে আগুন ধরিয়ে দেয়া এবং ফাইবার অপটিক সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে ইন্টারনেট বন্ধ থাকার জন্য তিনি বিক্ষোভকারীদের দায়ী করেন। তাদের দুর্বৃত্ত আখ্যা দেন তিনি।

তিনি বলেন, ধীরে ধীরে সারা দেশে ইন্টারনেট সচল করা হবে। তবে আপাতত করপোরেট ব্যবসা, ব্যাংক, কূটনৈতিক অঞ্চল এবং অন্যান্য কিছু অঞ্চলে ইন্টারনেট সেবা দেয়া হবে।কয়েকদিন আগে কারফিউ জারিসহ দেখামাত্র গুলি (শুট অন সাইট অর্ডার) করার বিধিনিষেধ জারি করা হয়েছিল। এ সময় সামরিক সদস্যদের রাজধানী ও অন্যান্য অঞ্চলে টহল দিতে দেখা গেছে।কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তার জন্য সারা দেশে ২৭ হাজার সেনা মোতায়েন করা হয়।সামরিক বাহিনীর তিন বিভাগের প্রধান, শীর্ষ ব্যবসায়ী নেতা ও রাজনৈতিক অংশীদারদের সাথে একাধিক বৈঠক করছেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে কারফিউ জারি করা হয়েছে। তিনি সহিংসতার জন্য বিরোধীদের দোষারোপ করেছেন এবং অপরাধীদের ছাড় দেয়া হবে না বলেও হুঁশিয়ার করেছেন।

মার্কিন দূতাবাস রোববারের পরিস্থিতিকে অস্থিতিশীল ও অপ্রত্যাশিত বলে বর্ণনা করে বলেছে, দূতাবাসের আশেপাশে বন্দুক, টিয়ার গ্যাস ও অন্যান্য অস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে। তারা আমেরিকানদের সতর্ক হতে, বড় ভিড় এড়িয়ে চলতে এবং ভ্রমণ পরিকল্পনা পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানিয়েছে।

 

সর্বশেষ  গুরুত্বপূর্ণ  সব  সংবাদ, ছবি ,অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ও লেখা পেতে আমাদের  ফেসবুক পেইজে  লাইক  দিয়ে  অ্যাকটিভ  থাকুন।  ভিজিট করুন : http://www.etihad.news

* অনলাইন  নিউজ পোর্টাল  ইত্তেহাদ নিউজে  লিখতে  পারেন  আপনিও। লেখার বিষয়  ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন  [email protected] ঠিকানায়

সংবাদটি শেয়ার করুন....
ইত্তেহাদ নিউজ ডেস্ক :

ইত্তেহাদ নিউজ ডেস্ক :

About Author

etihad news is one of the famous Bangla news portals published from Abudhabi-UAE. It has begun with a commitment to fearless, investigative, informative, and independent journalism. This online portal has started to provide real-time news updates with maximum use of Smart Technology.

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *