রাজনীতি

পালিয়ে যাবার আগে বাংলাদেশে শেখ হাসিনার শেষ কয়েক ঘণ্টা কেমন ছিল?

d4680550 53ce 11ef be9b d54e3fb5beaa.jpg
print news

বিবিসি: শেখ হাসিনাকে অনেকে গত এক যুগ ধরে ‘আয়রন লেডি’ বলে বর্ণনা করেছিলেন। সাড়ে ১৫ বছর যাবৎ দোর্দণ্ড প্রতাপে ক্ষমতায় টিকে থাকা একজন প্রধানমন্ত্রী এভাবে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাবেন সেটি অনেক ধারণাই করতে পারেননি। বাংলাদেশের ইতিহাসে ক্ষমতাচ্যুত হবার পর কোনো ব্যক্তি এভাবে দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হননি।

সোমবার বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের ডাকে ‘লং মার্চ টু’ ঢাকা কর্মসূচির সময়ে শেখ হাসিনা ও তার বোন শেখ রেহানা পলিয়ে যেতে বাধ্য হন। এই ঘটনা ঘটার আগে রবিবার রাত এবং সোমবার সকাল থেকে নানা নাটকীয়তা হয়েছে।

রোববার সারাদেশে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের সাথে বিক্ষোভকারীদের সংঘাতে প্রায় ১০০ মানুষ নিহত হয়। বেশ কিছু পুলিশ সদস্যও নিহত হয়েছিলেন।

সেদিন বিকেলে আওয়ামী লীগের কয়েকজন সিনিয়র নেতা ও উপদেষ্টা শেখ হাসিনাকে জানান যে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে গেছে। বিক্ষোভারীদের প্রতিরোধের মুখে বিভিন্ন জায়গায় আওয়ামী লীগের নেতারা পিছু হটেছে।

কিন্তু শেখ হাসিনা পরিস্থিতি মানতে নারাজ ছিলেন। তিনি ধারণা করেছিলেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা যাবে শক্তি প্রয়োগ করে। কিন্তু নিরাপত্তা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা তাকে ধারণা দিয়েছেন যে এটি আর সামাল দেয়া যাবে না।

তারপরেই তিনি পদত্যাগ করার মানসিক প্রস্তুতি নিয়ে নেন। শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় বিবিসিকে বলেন, রবিবার থেকে তার মা পদত্যাগের কথা চিন্তা করছিলেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সামরিক বাহিনীর একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বিবিসি বাংলাকে বলেন, শেখ হাসিনা কখন পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর করেছেন এবং কখন হেলিকপ্টারে উঠেছেন সেটি কেবলমাত্র জানতেন স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্স, প্রেসিডেন্ট গার্ড রেজিমেন্ট এবং সেনা সদরের কিছু ঊর্ধ্বতন সামরিক কর্মকর্তা। পুরো বিষয়টি করা হয়েছিল বেশ গোপনে।

সেনাবাহিনী সূত্রে বিবিসি জানতে পেরেছে, সোমবার বেলা ১১টার মধ্যেই শেখ হাসিনা গণভবন ছেড়ে গেছেন। সেখান থেকে বাংলাদেশের হেলিকপ্টারে করে ত্রিপুরার আগরতলা পৌঁছেন। এরপর ভারতের বিমান বাহিনীর একটি বিশেষ বিমানে চেপে শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা দিল্লি পৌঁছান।

কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে বিবিসি বাংলা বুঝতে পেরেছে, শেখ হাসিনা তার হাতে ‘দুটো অপশন’ খোলা রাখতে চেয়েছেন। দেশ ছেড়ে যাবার ব্যাপারে প্রস্তুতিও ছিল এবং শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত বল প্রয়োগ করে ক্ষমতায় টিকে থাকতে চেয়েছিলেন।

কিন্তু সেনাবাহিনীর কর্মকর্তা আর বেশি হতাহত হোক সেটা চাননি। রবিবার দেশের বিভিন্ন জায়গায় সাধারণ মানুষ এবং বিক্ষোভকারীরা সেনাবাহিনীর মাঠ পর্যায়ের সৈনিক ও কর্মকর্তাদের সাথে মিশে গিয়েছিল। সে পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে সেনাবাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বুঝতে পারেন যে পরিস্থিতি ক্ষমতাসীনদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে।

সোমবার সকাল থেকে গণভবনমুখী সবগুলো রাস্তায় অনেক দূর থেকে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর অবস্থান ছিল। সেনাবাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সূত্রে জানা গেছে, শেখ হাসিনা যাতে নিরাপদে তেজগাঁও বিমান বন্দরে ঢুকতে পারেন সেজন্য এ ব্যবস্থা রাখা হয়েছিল।

অন্যদিকে, সকাল নয়টার দিকে দেশে ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ করে দেয়া হয় দেড় ঘণ্টার মতো। শেখ হাসিনার গতিবিধি সম্পর্কে যাতে কোনো খবরা-খবর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে না পড়ে সেজন্য এই ব্যবস্থা করা হয়েছিল।

শেখ হাসিনা হেলিকপ্টারে ওঠার পর থেকে ইন্টারনেট সংযোগ সচল করা হয়। দৈনিক প্রথম আলো বলছে, শেখ হাসিনা সকালে তিন বাহিনীর প্রধান ও পুলিশ প্রধানের সাথে একসাথে বৈঠক করেন গণভবনে।

প্রথম আলো এক প্রতিবেদনে লিখেছে, নিরাপত্তা বাহিনী কেন পরিস্থিতি সামাল দিতে পারছে না, সেটার জন্য ক্ষোভ প্রকাশ করেন শেখ হাসিনা।

“একপর্যায়ে শেখ হাসিনা আইজিপিকে দেখিয়ে বলেন, তারা (পুলিশ) তো ভালো করছে। তখন আইজিপি জানান, পরিস্থিতি যে পর্যায়ে গেছে, তাতে পুলিশের পক্ষেও আর বেশি সময় এ রকম কঠোর অবস্থান ধরে রাখা সম্ভব নয়,” লিখেছে দৈনিক প্রথম আলো।

ততক্ষণে লাখো বিক্ষোভকারী রাস্তায় জড়ো হয়ে গেছে। সামরিক বাহিনীর একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বিবিসি বাংলাকে জানান, শেখ হাসিনাকে জানানো হয়েছিল যে মানুষজনকে বেশি সময় আটকে রাখা যাবে না এবং তারা গণভবনের দিকে রওনা হবেন। সেক্ষেত্রে শেখ হাসিনার জীবন বিপন্ন হতে পারে।

শেখ হাসিনা ভেবেছিলেন, ‘লং মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচি যদি বল প্রয়োগ করে ঠেকিয়ে রাখা যায়, তাহলে তিনি পদত্যাগ করবেন না। একইসাথে যদি তিনি ব্যর্থ হন তাহলে দেশ ছাড়ার প্রস্তুতিও রেখেছিলেন। কর্মকর্তারা বলেন, দেশ ছাড়ার ব্যাপারে ভারতের সাথে আগেই যোগাযোগ করা হয়েছিল।

ভারতের তরফ থেকে জানানো হয়েছিল যে বাংলাদেশের হেলিকপ্টারে করে তিনি যদি ভারতের আগরতলায় পৌঁছাতে পারেন, তাহলে সেখান থেকে তাকে দিল্লি নিয়ে যাওয়া হবে।

বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর একটি পরিবহন বিমানে করে শেখ হাসিনাকে সোমবার দিল্লি হিন্ডোন বিমানবন্দরে নিয়ে যাওয়া হয়।

শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় বিবিসিকে বলেন, তার মা দেশ ছাড়তে চাননি। কিন্তু পরিবারের সদস্যরা তার নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিলেন। সেজন্য তাকে নিরাপদ আশ্রয়ে যাবার কথা জোর দিয়ে বলেন পরিবারের সদস্যরা।

দৈনিক প্রথম আলো লিখেছে, সোমবার সকালে পুলিশ ও সামরিক বাহিনীর প্রধানরা শেখ হাসিনাকে ক্ষমতা ছাড়তে রাজি করানোর জন্য তার বোন শেখ রেহানার সাথে আলোচনা করেন।

“তখন কর্মকর্তারা শেখ রেহানার সঙ্গে আরেক কক্ষে আলোচনা করেন। তাকে পরিস্থিতি জানিয়ে শেখ হাসিনাকে বোঝাতে অনুরোধ করেন। শেখ রেহানা এরপর বড় বোন শেখ হাসিনার সঙ্গে আলোচনা করেন। কিন্তু তিনি ক্ষমতা ধরে রাখতে অনড় থাকেন। একপর্যায়ে বিদেশে থাকা সজীব ওয়াজেদ জয়ের সঙ্গেও ফোনে কথা বলেন একজন শীর্ষ কর্মকর্তা। এরপর জয় তার মায়ের সঙ্গে কথা বলেন। তারপর শেখ হাসিনা পদত্যাগে রাজি হন,” লিখেছে দৈনিক প্রথম আলো।

 

সর্বশেষ  গুরুত্বপূর্ণ  সব  সংবাদ, ছবি ,অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ও লেখা পেতে আমাদের  ফেসবুক পেইজে  লাইক  দিয়ে  অ্যাকটিভ  থাকুন।  ভিজিট করুন : http://www.etihad.news

* অনলাইন  নিউজ পোর্টাল  ইত্তেহাদ নিউজে  লিখতে  পারেন  আপনিও। লেখার বিষয়  ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন  [email protected] ঠিকানায়

সংবাদটি শেয়ার করুন....
ইত্তেহাদ নিউজ ডেস্ক :

ইত্তেহাদ নিউজ ডেস্ক :

About Author

etihad news is one of the famous Bangla news portals published from Abudhabi-UAE. It has begun with a commitment to fearless, investigative, informative, and independent journalism. This online portal has started to provide real-time news updates with maximum use of Smart Technology.

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *