মতামত

বাংলাদেশে নিরপেক্ষ ভূমিকা নিতে বেইজিংকে চাপ

122806 decc
print news

গুঞ্জন সিং : মুক্তিযোদ্ধাদের বংশধরদের জন্য প্রস্তাবিত চাকরির কোটার বিরুদ্ধে বাংলাদেশে ছাত্র বিক্ষোভ শুরু হয়েছিল। যার শেষটা হয় শেখ হাসিনার পতন এবং নির্বাসনের মাধ্যমে । দেশের পরিস্থিতি ক্রমেই অস্থিতিশীল হতে শুরু করে। বর্তমানে নোবেল বিজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে একটি অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়েছে । অন্তর্বর্তী সরকারের প্রাথমিক লক্ষ্য দেশে আইন-শৃঙ্খলা ও শান্তি প্রতিষ্ঠা করা । বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা মোঃ তৌহিদ হোসেন বলেছেন, “আমরা সবার সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখতে চাই। বড় দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্কের ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে।”

বাংলাদেশের অস্থির পরিস্থিতি গোটা দক্ষিণ এশিয়াকে সজাগ করে দিয়েছে । এটি ভারত ও চীনের জন্য একটি বড় কূটনৈতিক চ্যালেঞ্জ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ চীন ও ভারতের চাপ সামলাতে পেরেছিলো। বেইজিংয়ের নিরন্তর চাপের মধ্যে তিস্তা নদী প্রকল্পর সম্প্রসারণ এবং ভারতের সাথে মংলা বন্দর প্রকল্প ছিল হাসিনার অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির প্রতি আকাঙ্ক্ষা এবং ঢাকার স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতির উদাহরণ।

হাসিনা নির্বাসনের পর ‘সেফ প্যাসেজ’ হিসাবে ভারতকে বেছে নিয়েছেন এবং এটি নয়াদিল্লি-ঢাকা সম্পর্কের ওপর প্রভাব ফেলেছে। হাসিনা যত বেশি সময় ভারতে থাকবেন, নয়াদিল্লির জন্য তত বড় কূটনৈতিক চ্যালেঞ্জ। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) সিনিয়র নেতা গয়েশ্বর রায় যেমন বলেছেন,’বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সহযোগিতার সম্পর্ক থাকা উচিত বলে মনে করে বিএনপি। ভারত সরকারকে এই মানসিকতা বুঝতে হবে এবং অনুসরণ করতে হবে। আমাদের প্রতিপক্ষকে সমর্থন করা সেই সহযোগিতার পথকে জটিল করে তুলতে পারে। ‘

বাংলাদেশে চীনের বড় অংশীদারিত্ব থাকায় বিক্ষোভ ও অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি বেইজিংয়ের অবস্থান কী তাও দেখতে হবে।বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভে (বিআরআই) শরিক হবার পর বেইজিংয়ের বিনিয়োগ ধারাবাহিকভাবে বেড়েছে। হাসিনা ভারত ও চীনের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্কের ভারসাম্য বজায় রাখতে পেরেছিলেন, কিন্তু তার মেয়াদে চীনা বিনিয়োগে বড় ধরনের উত্থান ঘটেছে। ভারতে থেকে হাসিনা চীনকে তার নিরপেক্ষতা জাহির করতে এবং নতুন সরকার ও বিএনপির দরজায় পা রাখার জন্য একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ করে দিতে পারেন। অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর এক বিবৃতিতে বেইজিং জোর দিয়ে বলেছে, “চীন কঠোরভাবে অন্য দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করার নীতি অনুসরণ করে।আমরা বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব , আঞ্চলিক অখণ্ডতা এবং বাংলাদেশি জনগণের স্বাধীনভাবে নির্বাচিত উন্নয়নের পথকে সম্মান করি। আমরা বাংলাদেশের সকল জনগণের সাথে প্রতিবেশীসুলভ আচরণ এবং বন্ধুত্বের নীতিতে অটল আছি। ‘

অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করে চীনের দীর্ঘমেয়াদি নীতি হলো ‘দেখা এবং অপেক্ষা করা’। চীনা গণমাধ্যম পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উদ্ধৃতি দিয়ে আশা প্রকাশ করেছে যে, “বাংলাদেশের একটি বন্ধুত্বপূর্ণ প্রতিবেশী এবং কৌশলগত অংশীদার হিসাবে, চীন আন্তরিকভাবে আশা করে যে দেশে শীঘ্রই সামাজিক স্থিতিশীলতা পুনরুদ্ধার করা সম্ভব হবে।”চীনের মিডিয়া নিবন্ধগুলি প্রকাশ্যে যুক্তি দিয়েছে যে বেইজিংয়ের সাথে কাজ করা ঢাকার পক্ষে উপযোগী হবে। ফুদান ইউনিভার্সিটির সেন্টার ফর সাউথ এশিয়ান স্টাডিজের ডেপুটি ডিরেক্টর লিন মিনওয়াংকে উদ্ধৃত করে গ্লোবাল টাইমসের একটি প্রতিবেদনে যুক্তি দেওয়া হয়েছে যে -‘ চীনের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখা, বিশেষ করে যে দেশের অভ্যন্তরীণ এবং পররাষ্ট্র বিষয়ে হস্তক্ষেপ করার কোনো ইচ্ছে নেই , তা বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পরিবর্তে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ এই পরিস্থিতির সঙ্গে ভারতের সম্পৃক্ততার কথা সবাই জানে। ‘

চীনা কোম্পানিগুলো বাংলাদেশে ২৩ বিলিয়ন ডলার মূল্যের নির্মাণ প্রকল্প হাতে নিচ্ছে। এর মধ্যেই বিক্ষোভের জেরে চীনা কোম্পানিগুলো শ্রমিক এবং সরঞ্জামের নিরাপত্তার কথা ভেবে উদ্বিগ্ন। স্পষ্টভাবে বোঝা যাচ্ছে যে বাংলাদেশে শান্তি ও স্থিতিশীলতা চীনের জন্যও কতটা গুরুত্বপূর্ণ।গ্লোবাল টাইমস এমনকি ইঙ্গিত দিয়েছে যে বিক্ষোভের পিছনে সম্ভাব্য পশ্চিমা প্রভাব থাকতে পারে। বেইজিং তার মিডিয়াকে ব্যবহার করে বাংলাদেশ ইস্যুতে পশ্চিমা এবং ভারতীয় সম্পৃক্ততার প্রতিবেদন তুলে ধরে বেইজিংয়ের নিরপেক্ষতা প্রমাণ করতে চাইছে , তাদের দাবি এই কারণে ঢাকার উচিত বেইজিংকে স্বাগত জানানো ।

ভারতে হাসিনার উপস্থিতি ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে অব্যাহত সুসম্পর্কের মধ্যে বড় বাধা হয়ে উঠতে পারে । এটি এমন একটি বিষয় যা চীন তার অবস্থানকে আরও দৃঢ় করতে কাজে লাগাচ্ছে। এটি বেইজিংকে বাংলাদেশে পদচারণার বড় সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে, যেখানে নয়াদিল্লি এখনো নিজের প্রচেষ্টা জারি রেখেছে।

লেখক: গুঞ্জন সিং ওপি জিন্দাল গ্লোবাল ইউনিভার্সিটির সহযোগী অধ্যাপক

সর্বশেষ  গুরুত্বপূর্ণ  সব  সংবাদ, ছবি ,অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ও লেখা পেতে আমাদের  ফেসবুক পেইজে  লাইক  দিয়ে  অ্যাকটিভ  থাকুন।  ভিজিট করুন : http://www.etihad.news

* অনলাইন  নিউজ পোর্টাল  ইত্তেহাদ নিউজে  লিখতে  পারেন  আপনিও। লেখার বিষয়  ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন  [email protected] ঠিকানায়

সংবাদটি শেয়ার করুন....
ইত্তেহাদ নিউজ ডেস্ক :

ইত্তেহাদ নিউজ ডেস্ক :

About Author

etihad news is one of the famous Bangla news portals published from Abudhabi-UAE. It has begun with a commitment to fearless, investigative, informative, and independent journalism. This online portal has started to provide real-time news updates with maximum use of Smart Technology.

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *