ফিচার

রাতে খুব যন্ত্রণা হয়, ব্যথায় ঘুমাতে পারি না:খোঁজ নেয়নি কেউ

b39bd308db5db8dec0ee868b2d688dda 66be2d72911fc
print news

ইত্তেহাদ নিউজ,সিলেট : সরকারি চাকরিতে কোটাব্যবস্থা সংস্কারের স্বপ্ন নিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যুক্ত হয়েছিলেন কলেজ পড়ুয়া ইয়াসীন মিয়া। পিতৃহীন ইয়াসীন সিলেট বর্ডার গার্ড পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী। বছর চারেক আগে তার বাবা ফারুক মিয়া সন্ত্রাসীদের হাতে নির্মমভাবে নিহত হন। পরিবারের বড় ছেলে হিসেবে পড়াশোনা করে সংসারের হাল ধরবেন। কিন্তু কোটা সংস্কার আন্দোলন শুরু হলে সিলেটের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে তিনিও যুক্ত হন। গত ৩ আগস্ট পুলিশের ছররা গুলিতে মারাত্মক আহত হন ইয়াসীন।

একাদশ শ্রেণি পড়ুয়া ইয়াসীনের শরীরে ৬০ টি ছররা গুলি লেগেছে, ইতোমধ্যে ৪৫ টি গুলি বের করা গেলেও রয়ে গেছে ১৫টি। গুলিতে তার পিঠে তৈরী হয়েছে অসংখ্য ক্ষত। হাসপাতালের বিছানায় ক্ষতস্থানের যন্ত্রণার পাশাপাশি ভবিষ্যৎ নিয়ে অজানা আতঙ্কও ভর করেছে তার মাঝে। সুস্থ হয়ে শুধু ঘুরে দাঁড়ানোর আকুতি তাদের।

 বৃহস্পতিবার  ইয়াসীন বলেন, অধিকার আদায়ের জন্য জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রাজপথে নেমেছিলাম। আমাদের অধিকার আদায় হয়েছে, স্বৈরাচার সরকারের পতন হয়েছে। ছাত্র জনতার সরকার গঠন হয়েছে। তবে আমাদের রক্তের বিনিময়ে নতুন সরকার ক্ষমতায় আসলেও সবাই আমার মতো গুলিবিদ্ধদের ভুলে গেছে। হাসপাতালের বিছানায় যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছি অথচ একদিনের জন্য কেউ খবর নিতে আসে নাই। কীভাবে চিকিৎসা হচ্ছে আদৌ চিকিৎসা পাচ্ছি কী না কেউ জানতে চায় না। এমন তো হওয়ার কথা ছিল না।

তিনি কাঁদতে কাঁদতে বলেন, রাতে খুব যন্ত্রণা হয় ভাই, ব্যথায় ঘুমাতে পারি না। আমার আব্বা নেই, আম্মা আর দুই বোন। আমার কষ্ট দেখে তারাও কাঁদে। আমার কিছু হলে তাদের কী হবে সেই চিন্তা না করেই রাষ্ট্র সংস্কার করতে মাঠে নামছিলাম। অথচ দাবি আদায়ের পর সবাই আমাদের ভুলে গেল। কেবল আমিই নয় আমার মতো আরও অনেকেই সিলেটে আহত হয়েছে, কেউ তাদের চিকিৎসার খরচ দেয় নি। খরচ না দেক আমাদের খবর তো নিতে পারতো।

তিনি আক্ষেপ করে বলেন, টেলিভিশন দেখলে মনে হয় সব আন্দোলন ঢাকায় হয়েছে। সবাই তাদের নিয়ে ব্যস্ত, ছাত্র নেতারাও এখন আমাদের খবর নেওয়ার সময় পান না। অথচ প্রথম শহীদ কিন্তু ঢাকায় হয়নি এখন তা কেউ মনে রাখেনি। কয়েকদিন পর সবাই ভুলে যাবে। অনুরোধ থাকবে কেন্দ্রীয় সমন্বয়কদের। তারা যেনো আমাদের খবর নেন একবার।

গত ৩ আগস্ট ইয়াসীন যে মিছিলে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হন সেই মিছিলের শুরু হয়েছিল নগরীর চৌহাট্রা পয়েন্ট থেকে। মিছিলে একটা অংশ এসে যুক্ত হয় শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। আরেকটা অংশ যুক্ত হয় মদীনা মার্কেট এলাকার স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীদের নিয়ে। এই মিছিলে অংশ নিয়ে চৌহাট্রার জমায়েতে যুক্ত হন ইয়াসীন। মিছিলটি বন্দর বাজার এলাকায় পুলিশের হামলার শিকার হয়। পুলিশের গুলি ও সন্ত্রাসীদের হামলায় মিছিলটি ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। এরপর আবার সংগঠিত হয়ে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে তারা নগরীর নয়া সড়ক পয়েন্টে অবস্থান নেয়। তাদের লক্ষ্য করে পুলিশ ব্যাপক টিয়ার সেল ও গুলি ছোড়ে। এক পর্যায়ে পুলিশের ছোড়া গুলি এসে তার গায়ে লাগে।

ইয়াসীন বলেন, পুলিশের টিয়ার শেলের ধোয়ায় মনে হচ্ছিল জ্ঞান হারিয়ে ফেলছি। নিরাপদ কোথায় আশ্রয় নেব তাও খুঁজে পাচ্ছিলাম না। এর মধ্যে এসে এতগুলো গুলি লাগলো। আমি সেখানেই পড়ে যাই। আমাকে উদ্ধার করে সুবহানিঘাট এলাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই আমার চিকিৎসা চলে। মাঝখানে একবার বাসায় ফিরে আসি আবার ভর্তি হয়েছি। চিকিৎসা করাতে টাকার দরকার। আম্মা টাকা জোগাড় করার চেষ্টা করছেন।

অধিকার আদায়ের এ আন্দোলনে শিক্ষার্থীসহ কয়েকশ মানুষকে জীবন দিতে হয়, এ ছাড়া গুলিবিদ্ধ ও সংঘর্ষে মারাত্মক আহত হয়ে হাসপাতালের বিছানায় কাতরাচ্ছেন অসংখ্য মানুষ। গণআন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা সরকারের পতন হয়েছে, দায়িত্ব নিয়েছে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার, তবে এখনো যন্ত্রণার দিন শেষ হয়নি হাসপাতালে চিকিৎসাধীনদের। গুলিবিদ্ধ ও সংঘর্ষে যারা আহত হয়েছেন, তাদের শারীরিক ও মানসিক যন্ত্রণায় কাটছে একেকটা দিন, যে তালিকায় রয়েছে ইয়াসীনের নামও।

 

সর্বশেষ  গুরুত্বপূর্ণ  সব  সংবাদ, ছবি ,অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ও লেখা পেতে আমাদের  ফেসবুক পেইজে  লাইক  দিয়ে  অ্যাকটিভ  থাকুন।  ভিজিট করুন : http://www.etihad.news

* অনলাইন  নিউজ পোর্টাল  ইত্তেহাদ নিউজে  লিখতে  পারেন  আপনিও। লেখার বিষয়  ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন  [email protected] ঠিকানায়

সংবাদটি শেয়ার করুন....
ইত্তেহাদ নিউজ ডেস্ক :

ইত্তেহাদ নিউজ ডেস্ক :

About Author

etihad news is one of the famous Bangla news portals published from Abudhabi-UAE. It has begun with a commitment to fearless, investigative, informative, and independent journalism. This online portal has started to provide real-time news updates with maximum use of Smart Technology.

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *