ফিচার

গুলি কেড়েছে ছেলের দৃষ্টি, প্রতিবন্ধী সন্তানদের নিয়ে বিপাকে মা

image 112300 1723790180
print news

ইত্তেহাদ নিউজ,শরীয়তপুর: চার মাস আগে হারিয়েছেন স্বামীকে। আবার দুই সন্তানের মধ্যে একজনের দৃষ্টি কেড়ে নিয়েছে গুলি। অন্য সন্তান প্রতিবন্ধী। সবকিছু নিয়ে চরম বিপাকে শরীয়তপুরের নাজমা বেগম।জানা গেছে, স্বামী মোফাজ্জল হোসেন মারা যাওয়ার পর টাকার অভাবে ছোট ছেলে মবিনকে ঢাকার উত্তরায় একটি কম্পিউটারের দোকানে কাজে পাঠান নাজমা। সেখানে গত ১৮ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র জনতার আন্দোলনে মিছিলে যোগ দেন তিনি। মিছিলটি একপর্যায়ে উত্তরা থানার দিকে গেলে শুরু হয় গুলি। এ সময় একটি বুলেট কেড়ে নেয় মবিনের দৃষ্টি শক্তি।

শরীয়তপুরের ডামুড্যা উপজেলার শিধলকুড়া ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের বড় শিধলকুড়া গ্রামের মৃত মোফাজ্জল হোসেন ও নাজমা বেগম দম্পতির তিন ছেলের মধ্যে সবার ছোট ছেলে মবিন (১৭)। বাবার মৃত্যুর পরে মায়ের মুখে হাসি ফোটাতে ও প্রতিবন্ধী ভাইকে সুখে রাখতে উত্তরার রাজলক্ষ্মীর পাশে ৩ নম্বর সেক্টর ২ নম্বর রোডের ২৭ নম্বর প্লটে লতিফ এম্পোরিয়ামের মো. ওয়াসিম তালুকদারের ইজি কম্পিউটার সেন্টারে চাকরি নেন।

গুলিতে আহত হয়ে ধারদেনা করে প্রায় দুই লাখ টাকা খরচ করে চোখের চারটি অপারেশন করিয়ে রীতিমত পথে বসে গেছে তার পরিবার। সামনে তার আরও দুটি অপারেশন করাতে হবে, যার খরচ হবে প্রায় লাখের মতো।

সরেজমিনে দেখা যায়, নাজমা বেগম তার ছোট ছেলে মো. মবিনকে ধরে ঘরের বাইরে বের করছে। বড় ভাই প্রতিবন্ধী জুলহাস একা একা হাসে আর কী যেন বলার চেষ্টা করে। বাড়িটিতে ঢুকতেই হাতের বাম দিক একটি নতুন কবরের দেখা মিলে। এটা মবিনের বাবার কবর।

মবিন কালবেলাকে জানান, প্রতিদিনের মতো ১৮ জুলাই সকালে কাজের জন্য দোকানে যান তিনি। দোকানে ঢোকার কিছু সময় পরেই মিছিল বের হয়। তখন মবিন দোকান বন্ধ করে মিছিলে যোগ দেন। মিছিলটি উত্তরা থানার সামনে গেলে, থানা থেকে মিছিলটি লক্ষ্য করে এলোপাতাড়ি গুলি ছুড়তে থাকে পুলিশ। পুলিশের ছররা গুলিতে তার মাথা ঝাঁঝরা হয়ে যায় এবং একটি বুলেট তার বাম চোখের ওপরের দিক দিয়ে ঢুকে ডান দিক দিয়ে বেরিয়ে যায়। তখন সে মাটিতে পড়ে যায়। কয়েকজন তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়।

মবিনের ভাই নাজমুল হুদা পলাশ বলেন, ঘটনার দিন আমি বাসাতেই ছিলাম। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে আমার মোবাইলে কল আসে। আমাকে বলে, আপনি কি মবিনের ভাই পলাশ। আমি হ্যাঁ বলতেই তিনি বলেন, আপনি দ্রুত সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে চলে আসেন। আপনার ছোট ভাই মবিন পুলিশের গুলিতে আহত হয়ে হাসপাতালে আছে। আমি তখন দ্রুত সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে গিয়ে অনেক খোঁজাখুঁজি করে আমার ভাইকে পাই। তখন ওর সমস্ত মাথা সাদা কাপড়ে মোড়ানো।

এরপর ডাক্তার বললেন, ওকে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে গেলে ভালো চিকিৎসা হবে। তখন অ্যাম্বুলেন্সে করে ঢাকা মেডিকেল নিয়ে যাই। ওখানে বেশ কয়েকদিন চিকিৎসা শেষে চোখের অপারেশন করাতে ভিশন আই হাসপাতালে নিয়ে যাই। ওখানেও ওর বেশ কয়েকটি অপারেশন হয়। ভিশন আই হাসপাতালে আমাদের এক লাখ বিশ হাজার টাকা খরচ হয়ে যায়। এখন আমাদের কাছে ওর চিকিৎসার জন্য কোনো টাকা নেই। শুধু বাবার রেখে যাওয়া টিনের ঘর ও একটু জমি শেষ সম্বল। এটা বিক্রি করে দিলে আমার মা ও তিন ভাই মিলে খোলা আকাশের নিচে থাকা ছাড়া উপায় নেই।

মবিনের মা নাজমা বেগম বলেন, আমার বড় ছেলেটা প্রতিবন্ধী। ওর দেখা শোনা করতেই হিমশিম খাই। এখন আবার ছোট ছেলের চোখ দুটি নষ্ট হয়ে গেল। আমি এখন দুই প্রতিবন্ধী সন্তানকে নিয়ে কোথায় গিয়ে দাঁড়াব। অভাবের সংসারে কষ্ট করে মেঝ ছেলেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করিয়েছি। ওর যদি একটা চাকরি হয় তাহলে অন্তত আমরা খেয়ে পরে বাঁচতে পারব।

মবিনের মামা নূর মোহাম্মদ হাওলাদার বলেন, অল্প কিছু দিন আগে ওর বাবা মরে যায়। একটা প্রতিবন্ধী ছেলেসহ তিন সন্তান নিয়ে কোনোরকম সংসার চলছিল আমার বোনের। হঠাৎ ছোট ছেলে মবিন আহত হয়ে প্রতিবন্ধী হয়ে ঘরে পড়ে আছে। মেঝ ছেলে একটা বেসরকারি কোম্পানিতে ড্রাইভার হিসেবে কাজ করে। আমরাও গরিব মানুষ, ওদের যে একটু সহায়তা করব তাও পারি না।

 

সর্বশেষ  গুরুত্বপূর্ণ  সব  সংবাদ, ছবি ,অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ও লেখা পেতে আমাদের  ফেসবুক পেইজে  লাইক  দিয়ে  অ্যাকটিভ  থাকুন।  ভিজিট করুন : http://www.etihad.news

* অনলাইন  নিউজ পোর্টাল  ইত্তেহাদ নিউজে  লিখতে  পারেন  আপনিও। লেখার বিষয়  ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন  [email protected] ঠিকানায়

সংবাদটি শেয়ার করুন....
ইত্তেহাদ নিউজ ডেস্ক :

ইত্তেহাদ নিউজ ডেস্ক :

About Author

etihad news is one of the famous Bangla news portals published from Abudhabi-UAE. It has begun with a commitment to fearless, investigative, informative, and independent journalism. This online portal has started to provide real-time news updates with maximum use of Smart Technology.

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *