ঝিনাইদহে অধ্যক্ষ বাদশার দুই আলিশান বাড়ি


ইত্তেহাদ নিউজ,ঝিনাইদহ : ঝিনাইদহ অনার্স কলেজের অধ্যক্ষ বাদশা আলমের কোটি কোটি টাকার দুর্নীতি ও আলিশান ২টি বাড়ি নিয়ে হৈচৈ পড়ে গেছে শহরে। একজন ভুক্তভোগীর লিখিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসকের নির্দেশে সদরের সহকারী কমিশনার (ভূমি) সজল কুমার দাস তদন্তের দায়িত্ব পেয়েছেন। এদিকে অধ্যক্ষ বাদশা আলম হাসিনা সরকারের পতনের পর পরই পালিয়েছেন। তিনি কলেজে আসেন না।
দুদকে পাঠানো অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, ঝিনাইদহ ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ বাদশা আলম আপাদমস্তক একজন দুর্নীতিবাজ। এক সময় ঝিনাইদহ সদর সাব- রেজিস্ট্রি অফিসের দলিল লেখকের কাজ করতেন। এখনো দলিল লেখকদের তালিকায় তার নাম রয়েছে। তিনি ঝিনাইদহ কলেজে প্রথমে প্রভাষক ও পরে এক বছরের জন্য ভাইস প্রিন্সিপালের দায়িত্ব পালন করেন। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর যোগ্যতা না থাকার পরও প্রভাব খাটিয়ে জোরপূর্বক অধ্যক্ষের পদ দখল করে নেন। চাকরি জীবন থেকেই তিনি মাদকাসক্ত ছিলেন। ফলে তিনি কলেজ করেন না।
যদিও কোনো দিন কলেজে আসেন তাও দুপুরের পর। যে করণে কলেজের কাজকর্ম ব্যাহত হয়।
অভিযোগে বলা হয়, অধ্যক্ষ পদে যোগদান করার আগে তিনি ভাড়া বাড়িতে বসবাস করলেও বর্তমানে আরাপপুর এলাকায় তার দুইটি আলিশান বাড়ি। যার মধ্যে একটি পাঁচতলা ও একটি চারতলা বাড়ি যার প্রতিটি ফ্লোরে ৪টি করে ফ্ল্যাট। বাড়ি দুইটির আনুমানিক মূল্য ১৪-১৫ কোটি টাকা হবে বলে তার প্রতিবেশীরা দাবি করেন। বেসরকারি কলেজের একজন অধ্যক্ষের এমন দু’টি আলিশান বাড়ি কীভাবে হলো তা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। ১৩ বছর অধ্যক্ষ হওয়ার সুবাদে তিনি কলেজের কোটি কোটি টাকা পকেটস্থ করেছেন। কলেজে ভর্তির সময় নেয়া টাকার কোনো হিসাব নেই। লাইব্রেরি ফান্ডে টাকা নেয়া হলেও বই কেনা হয় না। শিক্ষার্থীদের আইডি বাবদ ভর্তির সময় টাকা নেয়া হয়, কিন্তু আইডি দেয়া হয় না। ভর্তির সময় বিজ্ঞানাগারের জন্য টাকা কেটে রাখা হলেও ১৩ বছরে কোনো যন্ত্রপাতি কেনা হয়নি। আইসিটি ও কৃষি শিক্ষার ব্যবহারিক পরীক্ষায় বাধ্যতামূলকভাবে ৩০০ টাকা করে জোরপূর্বক আদায় করেন অধ্যক্ষ বাদশা আলম। অনার্স লেভেলে ইনকোর্স পরীক্ষার নামে প্রতি ছাত্রের কাছ থেকে ৭০০ টাকা করে আদায় করেন বলে শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন। অনার্স ফাইনাল ইয়ারে ভাইভা পরীক্ষার নামে ছাত্র প্রতি ২০০০ হাজার টাকা করে আদায় করা হয়। এসব বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ২০২৩ সালে কলেজের ছাত্ররা তালা ঝুলিয়ে প্রতিবাদ করলেও অধ্যক্ষ বাদশা এখনো জোরপূর্বক টাকা আদায় অব্যাহত রেখেছেন। কলেজে প্রতিটি নিয়োগে কয়েক কোটি টাকার বাণিজ্য করা হয়েছে।
খুলনা, যশোর ও কুষ্টিয়ায় বসবাস করেন সেসব শিক্ষকরা নিয়মিত কলেজ করেন না। এজন্য তাদের প্রতি মাসে অধ্যক্ষকে মাসোহারা দিতে হয়। ডিগ্রি ও উন্মুক্ত পরীক্ষায় নকল সরবরাহের জন্য কলেজের মালি আসলামের মাধ্যমে অর্থ আদায় করেন অধ্যক্ষ। শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ভর্তির সময় উন্নয়ন বাবদ টাকা আদায় করা হলেও ১৩ বছরে কলেজের ফান্ড থেকে দৃশ্যত কোনো উন্নয়ন করা হয়নি। অথচ কলেজের ৬টি অ্যাকাউন্ট থেকে ভুয়া বিল ভাউচারের মাধ্যমে অ্যাকাউন্টেন মো. আইয়ুব হোসেনের সহায়তায় কয়েক কোটি টাকা আত্মসাৎ করে ঝিনাইদহ শহরের আরাপপুরে দুইটি বাড়ি নির্মাণ করেছেন। এ ছাড়া অধ্যক্ষ বাদশা আলমের চাকরির বয়স শেষ হলেও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জাল কাগজ তৈরি করে জোরপূর্বক অধ্যক্ষের চেয়ার দখল করে বসে আছেন। অর্থ আত্মসাৎ ও অবসরের পরও অবৈধভাবে চেয়ার দখল করা নিয়ে অধ্যক্ষ বাদশা আলমের কাছে ফোন করা হলে তার ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়। তার অফিসে গিয়ে জানা যায়, সরকার পতনের পর থেকেই তিনি পলাতক রয়েছেন। এ বিষয়ে ঝিনাইদহ সদর সহকারী কমিশনার (ভূমি) সজল কুমার দাস জানান, অধ্যক্ষ বাদশা আলমের আর্থিক দুর্নীতি নিয়ে তিনি তদন্ত করবেন। তদন্ত করে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে মন্ত্রণালয়ে তদন্ত প্রতিবেদন পাঠানো হবে বলে জানিয়েছেন।
সর্বশেষ গুরুত্বপূর্ণ সব সংবাদ, ছবি ,অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ও লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন। ভিজিট করুন : http://www.etihad.news
* অনলাইন নিউজ পোর্টাল ইত্তেহাদ নিউজে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়