২১ দিনেও বুলেট বের হয়নি, টাকার অভাবে হচ্ছে না অপারেশন


ইত্তেহাদ নিউজ,গাজীপুর: এক্স রে রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে একটি বুলেট মেরুদণ্ডের নিচের অংশে কশেরুকায় আটকে আছে। এমন একটি বুলেট মেরুদণ্ডের ভেতরে নিয়ে বিছানায় শুয়ে কাতরাচ্ছেন শাকিল আহাম্মেদ (২৬) নামে এক পিকআপচালক। অসহায় শাকিল টাকার অভাবে অপারেশন করতে পারছেন না। ব্যথানাশক ওষুধে চলছে তার দিন।গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার মাওনা ইউনিয়নের সিমলাপাড়া গ্রামের বাসিন্দা শাকিল। তিনি ওই গ্রামের বর্গাচাষি নাসির উদ্দীনের বড় ছেলে।গত ৫ আগস্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাত্রজনতার এক দফা দাবির মুখে পদত্যাগ করে দেশ ছাড়েন। টিভিতে এমন খবর পেয়ে বাড়ি থেকে বের হন শাকিল। বাড়ি থেকে অন্তত ৫ কিলোমিটার দূরে মাওনা চৌরাস্তায় ছুটে গিয়েছিলেন তিনি।শাকিল বলেন, ৫ আগস্ট বাড়ি থেকে বের হয়ে বিজয় মিছিলে গুলিবিদ্ধ হই। আমাদের মিছিল মাওনা পল্লীবিদ্যুৎ মোড়ে গেলে সেখানে ছাত্রজনতার হাতে অবরুদ্ধ বিজিবি সদস্যরা আত্মরক্ষার্থে গুলি ছোড়ে। তার একটি গুলি পিঠের নিচের অংশে মেরুদণ্ডে লাগে। প্রথমে বুঝতে পারিনি। পরে রক্ত দেখে মাটিতে লুটিয়ে পড়ি।তিনি বলেন, ওই সময় অন্তত ১৫০ লোক মাটিতে লুটিয়ে পড়েছিল। কিছুক্ষণ পর তিনি পাশের একটি বাড়িতে নিজেকে আবিষ্কার করেন। ওই বাড়ির লোকজন প্রাথমিক সেবা দিয়ে তাকে বাড়িতে পাঠান।
শাকিলের স্ত্রী রিপা আক্তার বলেন, সংসারে শ্বশুর-শাশুড়ি, ননদ ও দেবর আছে। তারা পড়াশুনা করে। বাবুর আব্বা (স্বামী শাকিল) পিকআপ, প্রাইভেটকার চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন। ছেলে রাফির বয়স ৫ বছর। তার বাবা গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর থেকে নিদারুণ কষ্ট পাচ্ছে পরিবার। একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি মৃত্যু যন্ত্রণা নিয়ে বিছানায় পড়ে কাতরাচ্ছেন। আমরা শুধু দেখছি আর অন্ধকারের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। শাকিলের বাড়ি গিয়ে দেখা যায়, জরাজীর্ণ মাটির ঘরে কোমরের এক পাশে ক্ষত নিয়ে কাত হয়ে বিছানায় শুয়ে আছেন। ক্ষতস্থানে ব্যান্ডেজ লাগানো। ব্যথায় ভালোভাবে কথা বলতে পারছিলেন না শাকিল। পাশে বসে একমাত্র সন্তান রাফি। সে প্রায় সময় বাবার মাথার পাশে বসে থাকে।শাকিল জানান, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (ঢামেক) চিকিৎসকরা প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে তাকে রিলিজ দেন। কিছুটা সুস্থ হলে অপারেশন করে বুলেট বের করার পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা। এজন্য মোটা অঙ্কের টাকা লাগবে।
শাকিল বলেন, আমরা খুব অসহায় মানুষ। সামান্য চাকরি করে সংসার চালাই। কিন্তু এ বুলেট বের করতে ৫-৬ লাখ টাকা খরচ হবে। এ খরচ বহন করার সামর্থ্য আমার ও আমার পরিবারের নাই।নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক সার্জন বলেন, বুলেটটি বেশ জটিল স্থানে আটকে আছে। মেরুদণ্ডের হাড়ের কারণে শরীর ভেদ করে বাইরে আসেনি। অপারেশনটি জটিল ও ব্যয় সাপেক্ষ। দ্রুত বুলেট অপসারণ করা না হলে ভেতরে ইনফেকশন হবে। পচনও ধরতে পারে। শাকিল চিরতরে পঙ্গুত্ব বরণ করতে পারেন।শাকিলের বাবা নাসির উদ্দীন বলেন, ছেলের মুখের দিকে তাকাতে পারি না। নাতি সারাক্ষণ বাবার শিয়রে বসে থাকে। সরকার বা কোনো দানশীল ব্যক্তি না দাঁড়ালে এ বিপদ থেকে উদ্ধার পাব না। তাকিয়ে আছি আসমানের দিকে। দেখি কী ফয়সালা হয়। আপনারাও চেষ্টা করবেন যেন আমার ছেলেটা বেঁচে থাকে।মাওনা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম খোকন সবাইকে শাকিলের পাশে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন।
সর্বশেষ গুরুত্বপূর্ণ সব সংবাদ, ছবি ,অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ও লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন। ভিজিট করুন : http://www.etihad.news
* অনলাইন নিউজ পোর্টাল ইত্তেহাদ নিউজে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়