দুর্নীতির নানা অভিযোগেও বহাল চট্টগ্রাম ওয়াসার এমডি ফজলুল্লাহ


ইত্তেহাদ নিউজ,চট্টগ্রাম : আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ঢাকা ওয়াসার এমডি তাকসিম এ খানকে নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার অন্ত ছিল না। কিন্তু অনেকটা আড়ালে থেকেই চট্টগ্রাম ওয়াসার ‘মধু’ খেয়ে গেছেন সংস্থার এমডি প্রকৌশলী এ কে এম ফজলুল্লাহ। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর গত ১৪ আগস্ট পদত্যাগ করেছেন তাকসিম। অথচ এখনও চট্টগ্রাম ওয়াসাতে বহাল তবিয়তে আছেন ফজলুল্লাহ। গত ১৫ বছরে আট দফায় এমডি হিসেবে চট্টগ্রাম ওয়াসার গুরুত্বপূর্ণ পদটি দখলে রেখেছেন তিনি। ওয়াসার প্রতিটি ক্ষেত্রে অনিয়ম-দুর্নীতির আশ্রয় নিয়ে কয়েক হাজার কোটি টাকা ভাগবাটোয়ারা ও বিদেশে অর্থ পাচারের মতো গুরুতর সব অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে।
চট্টগ্রাম ওয়াসার জাতীয়তাবাদী শ্রমিক কর্মচারী দলের সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম বলেন, প্রকৌশলী ফজলুল্লাহর দুর্নীতি নিয়ে গত ১৫ বছর কেউ কোনো কথা বলতে পারিনি। সিন্ডিকেট দিয়ে ওয়াসা জিম্মি করে রেখেছেন এমডি। যে কারণে সরকারের পতন হলেও ওই সিন্ডিকেট দিয়ে স্বপদে বহাল আছেন তিনি।
জানা গেছে, প্রকৌশলী ফজলুল্লাহ ২০১১ সালে এমডি হওয়ার পর চট্টগ্রাম ওয়াসা পানি সরবরাহে চারটি বড় প্রকল্প গ্রহণ করে। এগুলো হলো– কর্ণফুলী পানি সরবরাহ প্রকল্প প্রথম ও দ্বিতীয় পর্যায়, চট্টগ্রাম পানি সরবরাহ উন্নয়ন ও পয়োনিষ্কাশন প্রকল্প এবং ভান্ডালজুড়ি পানি সরবরাহ প্রকল্প। এগুলো বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয় প্রায় ১০ হাজার ৩০০ কোটি টাকা। কিন্তু কোনো প্রকল্পই নির্ধারিত সময়ে শেষ হয়নি। উল্টো দুটিতে ব্যয় বেড়েছে ১ হাজার ৭১২ কোটি টাকা। নগরীর পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলতে ২০১৮ সাল থেকে ৩ হাজার ৮০৮ কোটি ব্যয়ে একটি প্রকল্পের কাজ করছে ওয়াসা। পাঁচ বছরে এ কাজের অগ্রগতি মাত্র ৩০ শতাংশ। ২০২৬ সালের আগে কাজ শেষ হবে না; ব্যয়ও বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবু একই ধরনের আরও পাঁচটি প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
সূত্র জানায়, প্রকল্প শেষ না হওয়া সত্ত্বেও এতে নিয়োজিত দেখিয়ে ওয়াসার ফান্ড থেকে ২৬ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে বেতন দিচ্ছেন এমডি। প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হলেও একক ক্ষমতাবলে কর্ণফুলী পানি সরবরাহ প্রকল্প দ্বিতীয় পর্যায়ে নিয়োজিত ২৬ জনকে পুনর্বহাল করেন এমডি। এখানেও দুর্নীতি হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এ ব্যাপারে আপত্তি করেছে অডিট কমিটিও।
জানা গেছে, ২০২৩ সালের ৩১ ডিসেম্বর থেকে অবসরোত্তর ছুটিতে যান এমডির পিএস দিদারুল আলম। গত ১৪ মার্চ ওয়াসার বোর্ড সভায় তাঁকে চুক্তিতে নিয়োগের প্রস্তাব দেন এমডি। দিদারকে এক বছরের জন্য অথবা নতুন কর্মচারী নিয়োগ না দেওয়া পর্যন্ত চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হয়। আবার ২০২২ সালের ৩০ জুন অবসরোত্তর ছুটিতে যান ওয়াসার মেডিকেল অফিসার ডা. মোসলেম। একই বছরের বোর্ড সভায় তাঁকে ছয় মাস অথবা নতুন মেডিকেল অফিসার নিয়োগ না হওয়া পর্যন্ত চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হয়। চুক্তি অনুযায়ী ডা. মোসলেম বেতন পান ১ লাখ ৫০০ টাকা। অথচ অবসরে যাওয়ার আগে সর্বশেষ মাসে তিনি বেতন উত্তোলন করেছিলেন ৮৮ হাজার ৭৩৫ টাকা করে। অর্থাৎ এমডির আশীর্বাদ থাকায় ডা. মোসলেমের বেতনও বেড়েছে।
শুধু পছন্দের লোক নন; এমডি ফজলুল্লাহ দুই দফায় নিজের বেতনও বাড়িয়েছেন। তিনি এখন বেতন পান মোট ৩ লাখ ১৭ হাজার টাকা। এর পরও ২০২২ সালের জানুয়ারিতে তৃতীয় দফায় ওয়াসার বোর্ড সভায় এমডি নিজের বেতন আরও বাড়ানোর প্রস্তাব করেন। সমালোচনা হলে পরে আবেদন প্রত্যাহার করে নেন তিনি।
দুর্নীতির নানা অভিযোগ অস্বীকার করে প্রকৌশলী ফজলুল্লাহ বলেন, ‘আমি কোনো দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত না। দুদকও তদন্ত করে আমার কোনো দুর্নীতি পায়নি। কোনো প্রকল্প থেকে কমিশন নেওয়ার প্রমাণ কেউ দিতে পারবে না। দিতে পারলে পদত্যাগ করব।
সর্বশেষ গুরুত্বপূর্ণ সব সংবাদ, ছবি ,অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ও লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন। ভিজিট করুন : http://www.etihad.news
* অনলাইন নিউজ পোর্টাল ইত্তেহাদ নিউজে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়