১৭ বছর পর মুক্ত রাজনৈতিক পরিবেশ পেয়েছে বিএনপি,কাউন্সিলের মাধ্যমে নতুন কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত


ইত্তেহাদ নিউজ,ঢাকা :গত ৫ আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ফ্যাসিবাদমুক্ত হওয়ায় দীর্ঘ ১৭ বছর পর মুক্ত রাজনৈতিক পরিবেশ পেয়েছে বিএনপি। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে দলকে সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী করতে চায় শীর্ষ নেতৃত্ব। এ লক্ষ্যে প্রথম দফায় তৃণমূল পর্যায়ের মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি ভেঙে কাউন্সিলের মাধ্যমে নতুন কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি। এ ছাড়া যেসব জেলা বা মহানগরে আহ্বায়ক কমিটি আছে, সেখানেও কাউন্সিলের মাধ্যমে নতুন নেতৃত্ব ঠিক করা হবে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।
জানতে চাইলে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আমাদের সময়কে বলেন, দলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গত বৃহস্পতিবার মেয়াদোত্তীর্ণ মাগুরা ও কুষ্টিয়া জেলা বিএনপির কমিটি ভেঙে দেওয়া হয়েছে। যেখানেই মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি বা আহ্বায়ক কমিটি আছে, এখন থেকে সেখানেই কাউন্সিলের মাধ্যমে নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন করা হবে।
দলীয় সূত্রে জানা যায়, ২০০৬ সালে ২৮ অক্টোবর নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট ক্ষমতা হস্তান্তর করে। ওই দিনটিতে রাজধানী ঢাকায় আওয়ামী লীগের লগি-বৈঠার সঙ্গে জামায়াতে ইসলামীর রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়। সারাদেশে ওই সংঘর্ষে সেদিন অন্তত ১৩ জন নিহত হন। এ অবস্থায় নানা ঘটনার মধ্য দিয়ে ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি সেনাসমর্থিত ওয়ান-ইলেভেন সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করে। সেই থেকে প্রতিকূল পরিবেশে রাজনীতি করে আসছে বিএনপি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এই দীর্ঘ সময়ে প্রতিকূল পরিবেশ-পরিস্থিতির কারণে বিএনপির ৮২ সাংগঠনিক জেলার অধিকাংশ কমিটি ঢাকা থেকে সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ঘোষণা করা হয়েছে। এর মধ্যে যেখানে পূর্ণাঙ্গ কমিটি আছে, তারা অধিকাংশই মেয়াদোত্তীর্ণ। আবার যেসব আহ্বায়ক কমিটি আছে; তার মেয়াদ তিন অথবা ছয় মাস দেওয়া হলেও বছরের পর বছর পার করছে কমিটিগুলো।
দলটির নেতারা বলেন, সেনাসমর্থিত ওয়ান-ইলেভেন ও ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা সরকারের আমল ছিল বিএনপির জন্য ‘ভয়ঙ্কর’ সময়। এই সময়ে বিএনপিকে ভাঙতে এবেং জিয়া পরিবারমুক্ত নেতৃত্ব গড়তে গত ১৭ বছর দেশি-বিদেশি নানা ষড়যন্ত্র হলেও তা সফল হয়নি। তবে এ জন্য মারাত্মক মূল্য দিতে হয়েছে নেতাকর্মীদের। প্রাণহানিসহ নানা ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন তারা।
জানতে চাইলে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ^র চন্দ্র রায় বলেন, গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতা যে মাঠে বিজয়ী হয়েছেন, কোচের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে গত ১৭ বছর ধরে সেই মাঠ তৈরি করেছেন আমাদের নেতা খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান। তাদের নেতৃত্বেই গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে বিএনপির অসংখ্য নেতাকর্মী রাজপথে প্রাণ বিসর্জন দিয়েছেন। এই ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে আমাদের বহু নেতাকর্মী শহীদ হয়েছেন, অসংখ্য নেতাকর্মী পঙ্গু হয়েছেন। এখন আমরা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় মুক্ত রাজনৈতিক পরিবেশে কাউন্সিলের মাধ্যমে নতুন নেতৃত্ব ঠিক করতে কাজ করছি।
দলীয় সূত্রে জানা যায়, প্রথম দফায় ২৫ থেকে ৩০টি জেলা ও মহানগরে কাউন্সিল করার চিন্তা করছে বিএনপি। এর আগে ইউনিয়ন, থানা, উপজেলা ও পৌর বিএনপির কমিটিও কাউন্সিলের মাধ্যমে করা হবে। জানতে চাইলে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব আবদুস সালাম আজাদ বলেন, কোনো জেলা বা মহানগরের কাউন্সিল করার আগে সংশ্লিষ্ট জেলার অধীনে যেসব কমিটি আছে, তাও মেয়াদোত্তীর্ণ হলে কাউন্সিলের মাধ্যমে নতুন নেতৃত্ব ঠিক করা হবে।
দলীয় সূত্রে জানা যায়, খুব শিগগিরই সাংগঠনিক ও সহ-সাংগঠনিক সম্পাদকদের সঙ্গে বৈঠক করে কাউন্সিলের দিনক্ষণ ঠিক করবেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। বিএনপির একজন সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক জানান, কোন জেলা বা মহানগরের সাংগঠনিক অবস্থা কেমন, তার সার্বিক একটি চিত্র দলের শীর্ষ নেতৃত্বকে দেওয়া হয়েছে। সে অনুযায়ী এখন সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে।
দলীয় সূত্রে জানা যায়, মেয়াদ থাকলেও যেসব কমিটির নেতারা বিগত আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন না, ৫ আগস্টের পর চাঁদাবাজি ও দখলবাজিসহ নানা অপকর্মে জড়িত, তাদের কমিটিও ভেঙে দেওয়া হতে পারে।
গত জুন মাসে একযোগে বিএনপির ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ, চট্টগ্রাম এবং বরিশাল মহানগরের আহ্বায়ক কমিটি বিলুপ্ত করা হয়। কিন্তু এক মাস পর ফের আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়। সেখানে শুধু আহ্বায়ক ও সদস্য সচিবের নাম ঘোষণা করা হয়েছিল। এখনও বাকিদের নাম ঘোষণা করা হয়নি।
সূত্র জানায়, মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ায় কেন্দ্রীয় মহিলা দল, তাঁতী দল, মৎস্যজীবী দল ও শ্রমিক দলের কমিটিও ভেঙে নতুন কমিটি ঘোষণা দেওয়া হবে। জাসাসের নতুন কমিটিও যে কোনো সময় ঘোষণা দেওয়া হবে।