ইসলামী দলগুলোর জোট হচ্ছে না জামায়াতের সঙ্গে


ইত্তেহাদ নিউজ ডেস্ক : জামায়াতের সঙ্গে ইসলামী ধারার দলগুলোর জোট হচ্ছে এমন খবরে বিষ্ময় প্রকাশ করেছে ইসলামী ধারার দলগুলো। নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত এবং অনিবন্ধিত কয়েকটি ইসলামী ধারার দলের নেতারা জানান, জামায়তসহ যে সকল দলের আকিদা নিয়ে আপত্তি রয়েছে তাদের সাথে ঐক্য করা হবে আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত। আওয়ামী লীগ মাইন্যাস দেশে আগামী দিনের রাজনীতির তাদের গতিধারা কোন পথে এগুবে তা এখনো চূড়ান্ত না হলেও জামায়াতের সঙ্গে তারা কখনো জোট করবেন না। একাধিক নেতা জানান, তারা জোট বা নির্বাচনী সমঝোতা যেটাই হোক বিএনপি বাইরে কিছুই ভাবছেন না।
১২ দলীয় জোটের সমন্বয়ক ও বাংলাদেশ জাতীয় দলের চেয়ারম্যান সৈয়দ এহসানুল হুদা জানান, ৫ আগষ্ট হাসিনা ভারতের পালিয়ে যাওয়ার পর জামায়াতের সঙ্গে অন্যান্য দলের মতো ১২ দলীয় জোটের বৈঠক হয়েছে। সেটা নিছক মতবিনিময়। জোট গঠনের বিষয় সেখানে ছিল না। ১২ দলীয় জোট এক সময় বিএনপির সঙ্গে জোটে ছিল। তারও আগে জামায়াতও ওই জোটে ছিল। তবে আমরা রাজনৈতিক কৌশল হিসেবে ১২ দলীয় জোট গঠন করেছি বিএনপির পরামর্শেই। আমরা জোট বা রাজনীতির ক্ষেত্রে বিএনপির বাইরে কিছু ভাবছি না। আমরা ১২ দলীয় জোট হলেও বিএনপির সঙ্গেই লিয়াজো করেই আন্দোলন করেছি। অতীতে বিএনপির সঙ্গে ছিলাম, এখনো বিএনপির সঙ্গে আছি ভবিষ্যতে বিএনপির সঙ্গেই থাকবো। ১২ দলীয় জোটের শরীক জাতীয় পার্টি (জাফর) মহাসচিব আহসান হাবিব লিংকন বলেন, আমি বর্তমানে আমার নির্বাচনী এলাকা কুষ্টিয়ায়। ১২ দলের সঙ্গে জামায়াতের বৈঠকের ব্যাপারে কিছু জানিনা। তবে আমরা বিএনপির বাইরে কানো সঙ্গে যাব না। খালেদা জিয়া মুক্ত হয়েছেন, এখন তারেক রহমানের সব মামলা প্রত্যাহার করে তাদের দেশে ফিরিয়ে আনতে হবে। আমরা জোট হিসেবে ঘুমে-জাগরণে বিএনপিকেই দেখি। বিএনপির বাইরে কারো সঙ্গে জোট গঠনের প্রশ্নই ওঠে না।
গণমাধ্যমে খবর বের হয়েছে ঐক্যবদ্ধ হচ্ছে ইসলামিক দলগুলো। আর তাতে নেতৃত্বে থাকার সম্ভাবনা রয়েছে সবচেয়ে বড় ইসলামিক দল বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর। ইতোমধ্যে বিভিন্ন দল এবং সংগঠনের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে দলটি। গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে ভারত পালানোর দিন আলোচনায় আসেন জামায়াতে ইসলামীর আমির। তখন দলটি নিষিদ্ধ থাকলেও সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বিএনপির নেতার আগে জামায়াতের ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমানের নাম উচ্চারণ করতেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনায় আসে দলটি। যদিও তখন জামায়াতকে আওয়ামী লীগ অবৈধভাবে নিষিদ্ধ করেছিল। এরপর অন্তর্বতী সরকার গঠনের পর জামায়াতের উপর শেখ হাসিনা রেজিমের করা অবৈধ নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া হয়।
নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহরের পর জামায়াতের আমীর সক্রিয় হয়ে উঠেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় শহিদ পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে অর্থ সহযোগিতা থেকে শুরু করে ভারতের পানি আগ্রাসনের পর বানবাসী মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে জামায়াত ক্ষতিগ্রস্তদের প্রয়োজনীয় উপহার সামগ্রী দেয়। শুধু তাই নয়, এর মধ্যে বিএনপি দ্রুত সংস্কার করে নির্বাচনের দাবি এবং জামায়াতের অন্তর্বর্তী সরকারকে দীর্ঘ সময় নিয়ে সংস্কারের পর নির্বাচন ইত্যদি নিয়ে সোস্যাল মিডিয়ায় বিতর্ক শুরু হয়।
এর মধ্যে গত ১৫ আগস্ট থেকে ইসলামিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা শুরু করে জামায়াত। ওই দিন কওমি ঘরানার ইসলামি নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন মগবাজারে। অতপর ফরায়েজি আন্দোলনের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক হয় জামায়াতের। এমনকি শেখ হাসিনা পালানোর পর ১২ দলীয় জোটের সঙ্গেও জামায়াতের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এসব বৈঠক নিয়ে আওয়ামী লীগ ঘরানার গণমাধ্যমগুলোতে খবর প্রকাশ করা হয়। এতো বোঝানো হয় বিএনপির বাইরে জামায়াত ‘বৃহৎ রাজনৈতিক শক্তি’ হিেেসব আবির্ভূত হতে চাচ্ছে। ভারতের একাধিক গণমাধ্যমে খবর দেয়া হয় বিএনপির বিকল্প শক্তি হিসেবে জামায়াত ঘুরে দাঁড়াতে চায়। এ নিয়ে একজন রাজনৈতিক বিশ্লেষক এমন মন্তব্য করেন যে, বিএনপিকে ঠেকাতে দিল্লির ইন্দনে ‘বিএনপিকে সাইজ’ করতেই জামায়াতকে দিয়ে এমন জোট গঠনের প্রক্রিয়া চলছে। ১৯৮৬ সালে আওয়ামী লীগ ও জামায়াত মিলে এইচ এম এরশাদের পাতানো নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল। ’৯১ সালে বিএনপি ক্ষমতা গ্রহণের পর আওয়ামী লীগ, জামায়াত ও জাতীয় পার্টি মিলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন করে বিএনপিকে রাজনৈতিক ভাবে ঘায়েল করেছে। ফলে এবারও জামায়াতকে কাজে লাগিয়ে আওয়ামী লীগ কিছু একটা করলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।
সুত্রের দাবি গত ১৮ আগস্টের জামায়াতের সঙ্গে মতবিনিময়ে অংশগ্রহণ করেন বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের আলোচিত পেশ ইমাম মাওলানা মুফতি মহিউদ্দীন কাসেমী, মুফতি খুরশিদ আলম কাসেমী, মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী, মুফতি রেজাউল করীম আবরার, মাওলানা আব্দুল মজিদ আতহাবী, মুফতি আজহারুল ইসলাম, মুফতি ফখরুল ইসলাম, মুফতি রাদেশ বিন নূর, মাওলানা মুনির হোসাইন কাসেমী, মাওলানা আবু জাফর কাসেমী, মাওলানা মুফতি আবুল কালাম, মাওলানা শাহ আরিফ বিল্লাহ সিদ্দিকী, মাওলানা আব্দুল মোমেন নাসেরী, মাওলানা আবুল কাশেম কাসেমী, ইসলামি বক্তা মাওলানা আলী হাসান উসামা প্রমুখ। ওই বৈঠকে জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেন, এখন থেকে আমরা সবাই একে অপরের জন্য। সবাই সিসাঢালা প্রাচীরের ন্যায় ঐক্যবদ্ধ থাকব, ইনশাআল্লাহ। অতীতের কোনো আচরণের জন্য আপনারা যদি সামান্য কষ্ট পেয়ে থাকেন, আল্লাহর ওয়াস্তে আপনাদের কাছে ক্ষমা চাই।
জানা যায়, গত ২১ সেপ্টেম্বর যাত্রাবাড়ী বড় মাদরাসায় বেফাক ও হাইয়াতুল উলিয়ার চেয়ারম্যান মাওলানা মাহমুদুল হাসানের আহবানে ‘দেশ ও জাতির চলমান পরিস্থিতি ওলামায়ে কেরাম এবং ইসলামী চিন্তাবিদদের করণীয়’ শীর্ষক জাতীয় পরামর্শ সভায় উপস্থিত হয়েছিলেন দেশের প্রায় শীর্ষ অনেক ওলামায়ে কেরাম। সে সভায় ঐক্যের প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করে উলামায়ে কেরাম বলেন, আমাদের আকিদার সাথে যাদের মিল রয়েছে তাদের মধ্যে জাতীয় ঐক্য হতে পারে। তবে জামায়তসহ যে সকল দলের আকিদা নিয়ে আপত্তি রয়েছে তাদের সাথে ঐক্য করা হবে আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত। তাছাড়া এদেশের সর্ববৃহৎ অরাজনৈতিক সংগঠন হেফাজতে ইসলামের শীর্ষ পর্যায়ের প্রায় সকল আলেমই জামায়াতে ইসলামের সাথে ঐক্য করতে নারাজ। আমাদের আকাবির-আসলাফগণ জামায়াতের ভ্রান্ত আকিদা সম্পর্কে যে সতর্কবাণী করে গেছেন বর্তমান জামায়াত তা থেকে চুল পরিমাণও সরে আসেনি বা সংশোধন হয়নি। নবী ও সাহাবাগণের সমালোচনাকারী এই জামায়াতের সাথে আহলে হক ওলামায়ে কেরামের ঐক্য কিছুতেই হতে পারে না। যদি সংশোধন না হয়।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মহাসচিব মাওলানা ইউনুছ আহমাদ বলেন, আওয়ামী লীগের সাথে ছিলো এমন কয়েকটি ইসলামী দলকে বাদ দিয়ে বাকীদের নিয়ে একত্রিত হওয়ার বিষয়টি নিয়ে আলাপ আলোচনা চলছে। ইতিমধ্যে কয়েকটি দলের সঙ্গে মতবিনিময়ও হয়েছে। পুরো বিষয়টি নির্ভর করবে সামনে নির্বাচন প্রক্রিয়া কেমন হয় তার ওপর। তবে ইসলামী সংগঠনগুলোর উপলব্ধি হলো মাঠের জনগণ চায় আমরা এক হই। এটাকে বিবেচনায় নিয়ে কথাবার্তা চলছে। তবে কোন ফরম্যাটে কী হবে তা নির্ভর করবে নির্বাচন কেমন হয় তার ওপর।
বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির নির্বাহী সভাপতি মাওলানা একে এম আশরাফুল হক বলেন, নেজামে ইসলাম পার্টি প্রতিষ্ঠা লগ্ন থেকেই দেশ ও জাতির বৃহত্তর স্বার্থে বিভিন্ন সময় চিন্তা ও সমমনা চেতনার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ঐক্য প্রতিষ্ঠায় বিশ্বাসী। এলক্ষ্যে ১৯৫৪ সনে যুক্তফ্রন্ট গঠন, ১৯৭১ পরবর্তী সময়ে আইডিয়াল ও ইত্তেহাদুল উম্মাহ, ১৯৯১ সনে ইসলামী ঐক্যজোট ও ২০০১ চার দলীয় জোট গঠনে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছে। এবারো আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে কোন সিন্ডিকেটেট নয়; বরং বাস্তব ও উদারপন্থী ঐক্য চায় নেজামে ইসলাম পার্টি। বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের সাংগঠনিক সম্পাদক মুফতি সুলতান মহিউদ্দিন বলেন, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন হযরত হাফেজ্জী হুজুর (রহ.) এর আদর্শের উপরে প্রতিষ্ঠিত হয়ে পরিচালিত হয়ে আসছে। যে সকল দলের ব্যাপারে হাফেজ্জী হুজুরের সতর্কবাণী রয়েছে তাদের সাথে খেলাফত আন্দোলন ঐক্য করবে না।
সর্বশেষ গুরুত্বপূর্ণ সব সংবাদ, ছবি ,অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ও লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন। ভিজিট করুন : http://www.etihad.news
* অনলাইন নিউজ পোর্টাল ইত্তেহাদ নিউজে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায় ।