পাথরঘাটায় ৩০ বছরে বঙ্গোপসাগরে ১৮৮ জেলে নিখোঁজ


ইত্তেহাদ নিউজ,বরগুনা : বরগুনার পাথরঘাটার অধিকাংশ মানুষ সমুদ্রে মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। জীবিকার তাগিদে গভীর বঙ্গোপসাগরে গিয়ে বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের সঙ্গে মোকাবেলা করতে হয় তাদের। ঝড়ের ও নানা দুর্যোগের সম্মুখীন হয়ে ১৯৯৩ সাল থেকে এখন পর্যন্ত পাথরঘাটার ১৮৮ জন জেলে নিখোঁজ রয়েছেন। নিখোঁজ জেলেদের ফিরে পেতে জেলেপল্লীতে এখনো শোনা যায় স্বজনদের আহাজারি।
উপজেলা প্রশাসনের তথ্য অনুসারে, ১৯৯৩ সাল থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে বেশি সংখ্যক জেলে ২০০৭ সালের সিডরে নিখোঁজ হয়েছে। ১৯৯৩ সালে ৫ জন, ১৯৯৪ সালে ২ জন, ২০০১ সালে ৫ জন, ২০০৬ সালে ১৪ জন, ২০০৭ সালে ৯১ জন, ২০১৪ সালে ৭ জন, ২০১৮ সালে ১৩ জন, ২০২৩ সালে ১৫ জনসহ এখনো পর্যন্ত মোট নিখোঁজ রয়েছেন ১৮৮ জেলে।
জেলে পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, স্বজন হারিয়ে নানা সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে তাদের। নিখোঁজদের কোনো মৃত্যু সনদ না থাকায় পরিবারের জমি-জমা বিক্রিসহ বিভিন্ন ধরনের জটিলতায় পড়েছে পরিবারগুলো। নিখোঁজ জেলেদের স্ত্রীরা বিধবাভাতাও পাচ্ছেন না।
১৯৯৩ সালে নিখোঁজ কালমেঘার জেলে হারুন সরদারের মা জবেদা বেগম বলেন, আমার ছেলে একটি ট্রলারে গভীর সমুদ্রে মাছ শিকারে যায়। ঝড়ের কবলে পড়ে ট্রলারটি সমুদ্রে ডুবে যায়। আমার ছেলে বেঁচে আছে না মারা গেছে তা আজও জানি না। নিখোঁজের পর তার স্ত্রী দুই সন্তানকে রেখে দুমাস পর বাবার বাড়ি চলে যায়। অন্যের বাড়ি কাজ করে আমি এই দুই সন্তানকে মানুষ করি। ৩০ বছরেও কোনো সরকারি অনুদান পাইনি।
২০১৪ সালে স্বামীসহ দুই সন্তানকে হারিয়েছে চরদুয়ানীর রানী বেগম। তিনি বলেন, আমার স্বামী ইসমাইল ফরাজী এবং দুই ছেলে সাইকুল ও শহিদুলকে হারিয়েছি। দীর্ঘ অপেক্ষার পর দুই পুত্রবধূ অন্যত্র বিয়ে করেছে। আমি অন্যের বাড়িতে কাজ করে মেয়ে রহিমাকে এসএসসি পাশ করিয়ে বিয়ে দিয়েছি। এযাবতকাল সরকারি সহায়তা পেয়েছি ২০০০ টাকা আর ৫ কেজি চাল।
পাথরঘাটা উপজেলার সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা জয়ন্ত কুমার অপু বলেন, এই অঞ্চলের বেশিরভাগ মানুষ মাছ শিকারের সঙ্গে জড়িত। নিখোঁজ জেলেদের তথ্য সংগ্রহ করেছি। যেসব জেলে নিখোঁজের ছয় মাস শেষ পার হয়ে গেছে, সেসব জেলে পরিবারকে আমরা ৫০ হাজার টাকা করে সহায়তা দিয়েছি। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে আরও সাহায্যের চেষ্টা করবো।
পাথরঘাটার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রোকনুজ্জামান খান বলেন, নিখোঁজ জেলেদের নামসহ উপজেলা পরিষদের মধ্যে একটি ম্যুরাল তৈরি করা হয়েছে। নিখোঁজ জেলেদের তালিকা প্রস্তুত করে রেশন ও আর্থিক সহায়তাসহ তাদের জমিজমা বিক্রির জন্য একটি সনদ দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে জেলা প্রশাসক ও মন্ত্রণালয় বরাবর।
সর্বশেষ গুরুত্বপূর্ণ সব সংবাদ, ছবি ,অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ও লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন। ভিজিট করুন : http://www.etihad.news
* অনলাইন নিউজ পোর্টাল ইত্তেহাদ নিউজে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায় ।