পিরোজপুরের এলজিইডি থেকে হাজার কোটি টাকা লোপাট:বিচারের দাবিতে মানববন্ধন


বরিশাল অফিস : টেন্ডারবাজির মাধ্যমে পিরোজপুরের এলজিইডি থেকে হাজার কোটি টাকা লোপাটের সঙ্গে জড়িতদের বিচারের দাবিতে রোববার (৬ অক্টোবর) স্থানীয় এলজিইডি অফিসের সামনে মানববন্ধন হয়েছে। এই লোপাটের নায়ক জেলা আওয়ামী লীগ নেতা সাবেক সংসদ সদস্য মহিউদ্দিন মহারাজ, তার ভাই ভান্ডারিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মিরাজুল ইসলাম, পিরোজপুর এলজিইডির সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুস সাত্তার, নেছারাবাদের সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান সফিকুর রহমান সুমনের ফাঁসি দাবি করেন বক্তারা।
বক্তারা বলেন, উল্লেখিত ব্যক্তিরা গত কয়েক বছরে পিরোজপুর এলজিইডির মাধ্যমে ১৫’শ কোটি টাকা টেন্ডারবাজি করেছেন। তারা জেলার সাতটি উপজেলায় কয়েক’শ প্রকল্প নিয়ে শতাধিক প্রকল্পের কাজ না করেই অর্থ উঠিয়ে নিয়ে আত্মসাৎ করেছেন। ১০৪টি প্রকল্পের কোনো কাজ না করে ৮০ শতাংশ টাকা মহারাজ-মিরাজ-সুমন এলজিইডির সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুস সাত্তারের সহযোগিতায় লোপাট করেছেন।
বক্তারা আরও বলেন, এই দুই ভাইয়ের এই দুর্নীতিকে বিভিন্ন সময় সহযোগিতা করেন এলজিইডির সদর দপ্তরের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তারা। তারা এই দুই ভাইয়ের ইচ্ছানুযায়ী পিরোজপুরসহ আশেপাশের জেলার এলজিইডি’র বিভিন্ন অফিসের প্রকৌশলী ও কর্মচারীদের নিয়োগ দেন। এ সব জেলার আওয়ামী লীগ দলীয় সাবেক সংসদ সদস্য ও রাজনৈতিক নেতাদের সহযোগিতায় এলজিইডির প্রকল্পগুলোর টেন্ডার বাগিয়ে নিয়ে ব্যাপক দুর্নীতি করেছেন এবং তাদের কমিশন দিয়েছেন মহারাজ-মিরাজরা।
এ সময় আন্দোলনকারীরা পিরোজপুর সদর আসনের সাবেক এমপি ও সাবেক মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম ও তার ছোট ভাই নাজিরপুর উপজেলা সদ্য সাবেক চেয়ারম্যান নূরে আলম সিদ্দিকী শাহীন মহারাজদের সহযোগী হওয়ায় তাদেরও বিচার দাবী করেন। পাশাপাশি তারা এই প্রতিবাদ কর্মসূচির পরবর্তী পদক্ষেপ হিসাবে সাংবাদিক সম্মেলন, বিক্ষোভ মিছিল, ঘেরাও ইত্যাদির ঘোষণা দেন।
মানববন্ধনে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ঠিকাদার সাইদুল ইসলাম কিসমত, কৃষকদল সভাপতি নাসির উদ্দিন বাচ্চু, ঠিকাদার আক্তারুজ্জামান মাসুম, খায়রুল ইসলাম বাবু, যুবদল নেতা এস এম ফেরদৌস, আসাদুজ্জামান মিঠু প্রমুখ। মানববন্ধনের খবর পেয়ে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির আশঙ্কায় পিরোজপুর জেলা প্রশাসকের নির্দেশে জেলার সেনাবাহিনীর ক্যাম্প থেকে একটি দল মানববন্ধন স্থলে আসেন। পরে সেনা সদস্যদের অনুরোধে মানববন্ধনের উদ্যোক্তারা কর্মসূচি সংক্ষিপ্ত করে এলজিইডি অফিসে ত্রিপক্ষীয় এক বৈঠক করেন। বৈঠকে সেনাবাহিনীর কর্মকর্তা, মানববন্ধনের কয়েক জন উদ্যোক্তা ও এলজিইডি পিরোজপুরের নির্বাহী প্রকৌশলী বসে কথা বলেন।
এ সময় সেনা কর্মকর্তাকে উদ্যোক্তারা জানান, পিরোজপুর এলজিইডি অফিসের মাধ্যমে প্রায় ১৫’শ কোটি টাকা লোপাট করা হয়েছে বলে তাদের কাছে খবর আছে। এই উদ্দেশ্যে সম্প্রতি এলজিইডি’র নির্বাহী প্রকৌশলীকে তথ্য অধিকার আইনে লিখিত আবেদন করা হয়েছে। তখন নির্বাহী কর্মকর্তা রনজিত দে জানান, তিনি কিছু দিন আগে এই পদে যোগদান করেছেন। তিনিও শুনেছেন তার অফিসের মাধ্যমে অতীতে বিভিন্ন অনিয়ম হয়েছে। ৫ আগস্টের পর সংশ্লিষ্ট ঠিকাদাররা গা ঢাকা দেয়ায় জেলার বিভিন্ন এলাকায় অনেক প্রকল্প অসমাপ্ত অবস্থায় পড়ে আছে। তার আসার আগে যে সব প্রকল্পের কাজ না করে কোটি কোটি উঠিয়ে নেয়া হয়েছে সে ব্যাপারে তিনি খোঁজ-খবর নিচ্ছেন। তথ্য অধিকার আইনে পাওয়া আবেদন অনুযায়ী তিনি কাগজপত্র যাচাই-বাছাই শুরু করেছেন। আগামী ৩১ অক্টোবরের মধ্যে আবেদনের চাহিদা অনুযায়ী তথ্য প্রদান করা হবে বলে নির্বাহী প্রকৌশলী জানিয়েছেন।
এ সময় সেনা বাহিনীর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা মানববন্ধনের উদ্যোক্তাদের প্রতি এই মর্মে অনুরোধ করেন, জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে আগামী এক মাসের মধ্যে চাহিদা মোতাবেক তথ্য সরবরাহ করা হবে এবং মানববন্ধনের উদ্যোক্তাদের ধৈর্য্য ধারণ করতে হবে।
মানববন্ধনের অন্যতম উদ্যোক্তা বিএনপি নেতা ও ঠিকাদার সাইদুল ইসলাম কিসমত বলেন, মহিউদ্দিন মহারাজ ও তার ভাই মিরাজুল ইসলামের এই ব্যাপক দুর্নীতির সঠিক ও যথাযথ বিচারের জন্য পিরোজপুরবাসী ধৈর্য্য ধরে অপেক্ষা করবেন। মানববন্ধন ছাড়াও তারা যে সব কর্মসূচি নেয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে তা আপাতত স্থগিত থাকবে।
সর্বশেষ গুরুত্বপূর্ণ সব সংবাদ, ছবি ,অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ও লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন। ভিজিট করুন : http://www.etihad.news
* অনলাইন নিউজ পোর্টাল ইত্তেহাদ নিউজে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায় ।