বাংলাদেশ ঢাকা

‘যতো গুলি করুক আমরা পিছু হটবো না’ এ দৃঢ়তা ছিল শহিদ আরাফাতের

image 163087 1732443493
print news

বাসস : বড় হয়ে সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে চেয়েছিলেন আরাফাত। দেশের সেবা করবেন, তাই। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস, বিজয় মিছিলে গিয়ে লাশ হয়ে ফিরলেন তিনি।
গত ৫ আগস্ট বিকেলে বিজয় মিছিলে গিয়ে আশুলিয়া থানার সামনে বুকের বামপাশে গুলিবিদ্ধ হয়ে শহিদ হন আরাফাত।

আশুলিয়া বার্ডস স্কুল এ্যান্ড কলেজের সপ্তম শ্রেণীর ছাত্র আরাফাত মুন্সি (১৪) গোপালগঞ্জ জেলার মুকসুদপুর উপজেলার মহারাজপুর ইউনিয়নের ছোট বনগ্রামের স্বপন মুন্সি ও মায়া আক্তার দম্পতির একমাত্র সন্তান। মায়া আক্তার (৩৪) ঢাকার আশুলিয়ার একটি গার্মেন্টস ফ্যাক্টরীতে চাকরি করতেন। বাবা স্বপন মুন্সি (৩৬) পেশায় ভ্যান চালক।

আরাফাতের মা মায়া আক্তার জানান, গত ৫ আগস্ট ১১ টার দিকে মায়ের হাতে ভাত খায় আরাফাত। মাকে আরাফাত বলে, আমরা পড়াশোনা করব, অথচ আমাদের চাকুরি হবে না। এটি হতে দেওয়া যাবে না। আমরা আমাদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করব। যতো গুলি করুক আমরা পিছু হটবো না। দেশ স্বাধীন করব। দেশ স্বাধীন করে ঘরে ফিরব। এই বলে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায় আরাফাত।

তিনি আরো জানান, সেদিন সন্ধ্যা আনুমানিক ৬ টার দিকে খবর আসে আরাফাত গুলিবিদ্ধ হয়েছে। তাকে সহযোদ্ধারা সাভার গণস্বাস্থ্য হাসপাতালে নিয়ে গেছে।
খবর পেয়ে মায়া আক্তার হাসপাতালে গিয়ে ছেলের নিথর দেহ পড়ে থাকতে দেখেন। সেখান থেকে পোস্টমর্টেম ছাড়াই আরাফাতের লাশ নিয়ে গ্রামের উদ্দেশ্যে রওনা দেন তারা। ওই দিন রাতেই আরাফাতের লাশ গ্রামে পৌঁছায়। পরের দিন ৬ আগস্ট বনগ্রাম মাঠে জানাজা শেষে তার লাশ দাফন করা হয়।

মায়া আক্তার বলেন, ‘ছেলেকে ভাল লেখাপড়া শেখাতে আশুলিয়ায় গার্মেন্টেসে চাকরি নিয়েছিলাম। তাকে ভাল স্কুলে ভর্তি করিয়েছিলাম। আরাফাত আমার সবসময় আমার হাতে ভাত খেত। গলা জড়িয়ে ঘুমিয়ে থাকত। মাত্র ১৪ বছর বয়সেই তার উচ্চতা ৫ ফুট ৭ ইঞ্চি হয়েছিল । বড় হয়ে সে সেনাবাহিনীতে চাকরি করতে চেয়েছিলো। বৈষম্য-বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গিয়ে আমার ছেলে আজ শহিদ হলো। সে হারিয়ে গেলো আমার জীবন থেকে চিরতরে।’

সন্তান হারানোর শোকে গার্মের্ন্টস-এর চাকরি ছেড়ে এক মাস আগে গ্রামে চলে এসেছেন মায়া। ভ্যানচালক স্বামীর আয়েই কোনমতে সংসার চলছে তাদের। ছেলের স্মৃতি নিয়ে গভীর শোকে ও দুঃখে দিন কাটছে। আরাফাত ছিল তার সবেধন নীলমণি। ছেলের মধুমাখা সকল স্মৃতি সারাক্ষণই তাড়া করে ফিরছে মাকে।

মায়া বলেন, প্রায়ই আরাফাতের কবরের পাশে যাই। তার জন্য দোয়া-মোনাজাত করি। ছেলেকে তো আর ফিরে পাব না। তাই আমার ছেলেকে যারা নির্মমভাবে গুলি করে হত্যা করেছে, তাদের বিচার চাই।

আরাফাতের বাবা স্বপন মুন্সি বলেন, একমাত্র সন্তান হারিয়ে আমি দিশেহারা। আমাদের গ্রামে ভিটে মাটি নেই। নিজস্ব ঘর নেই। ছেলেকে গ্রামে কবর দিয়েছি। তাই এক মাস আগে আশুলিয়া ছেড়ে গ্রামে চলে আসি। এখানেই এক মাস ধরে বসবাস করছি। জামায়াতে ইসলামী আমাদের ২ লাখ টাকা, আসসুন্নাহ ফাউন্ডেশন ১ লাখ টাকা, দক্ষিণাঞ্চল ছাত্র ঐক্য ২৫ হাজার টাকা ও বিএনপি ১০ হাজার টাকা অনুদান দিয়েছে। এখন সরকার আমাদের ভিটেমাটি ও বাড়িঘরের ব্যবস্থা করে দিলে বাকি জীবনটা ছেলের স্মৃতি নিয়ে গ্রামেই কাটাতে চাই।

তিনি বলেন, আমার ছেলেসহ যারা বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে শহিদ হয়েছেন আমি প্রত্যেকের রুহের মাগফিরাত কামনা করি। আল্লাহ যেন তাদের জান্নাতুল ফেরদৌস নসিব করেন।

গোপালগঞ্জের জেলা প্রশাসক মুহম্মদ কামরুজ্জামান বলেন, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গোপালগঞ্জে ৭ জন শহিদ হয়েছে। আমরা শহিদদের তালিকা প্রণয়ন করেছি। এ তালিকা ঢাকা পাঠিয়েছি। জেলা প্রশাসন প্রতিটি শহিদ পরিবারের পাশে রয়েছে। তাদের জন্য প্রয়োজনীয় সব উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। সরকার তাদের যে সাহায্য সহযোগিতা করবে, তা তাদের পরিবারের সদস্যদের কাছে পৌঁছে দেওয়া হবে।

 

সর্বশেষ  গুরুত্বপূর্ণ  সব  সংবাদ, ছবি ,অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ও লেখা পেতে আমাদের  ফেসবুক পেইজে  লাইক  দিয়ে  অ্যাকটিভ  থাকুন।  ভিজিট করুন : http://www.etihad.news

* অনলাইন  নিউজ পোর্টাল  ইত্তেহাদ নিউজে  লিখতে  পারেন  আপনিও। লেখার বিষয়  ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন  [email protected] ঠিকানায় ।

সংবাদটি শেয়ার করুন....
ইত্তেহাদ নিউজ ডেস্ক :

ইত্তেহাদ নিউজ ডেস্ক :

About Author

etihad news is one of the famous Bangla news portals published from Abudhabi-UAE. It has begun with a commitment to fearless, investigative, informative, and independent journalism. This online portal has started to provide real-time news updates with maximum use of Smart Technology.

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *