অনুসন্ধানী সংবাদ

রেলে উন্নয়নের নামে যে লুটপাট ,সাবেক রেলমন্ত্রীর ৮ বছরের দুর্নীতির ফিরিস্তি দুদকে

mOJIBUL 674c950426b73
print news

ইত্তেহাদ নিউজ ডেস্করেলে গত ১৫ বছর উন্নয়নের নামে যে লুটপাট হয়েছে, তার সিংহভাগই সাবেক রেলপথমন্ত্রী মুজিবুল হকের হাত ধরে। রেলপথ মন্ত্রণালয়ে তিনি প্রায় ৮ বছর মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন। রেলে ১৫ বছরে প্রায় ১ লাখ ১৫ হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়েছে। এর প্রায় ৮৫ শতাংশ প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়ন হয়েছে মুজিবুল হকের দায়িত্ব পালনকালে। মুজিবুল হক তার দায়িত্বকালে একাই ৯০ হাজার ৮৯১ কোটি টাকার ৪৫টি প্রকল্প অনুমোদন করিয়েছেন। এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যাপক দুর্নীতি ও লুটপাট হয়েছে। সম্প্রতি দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চাহিদা অনুযায়ী মুজিবুল হকের দায়িত্বকালে নেওয়া প্রকল্পগুলোর সংখ্যা, প্রকল্প ব্যয় ও প্রকল্প পরিচালকদের তথ্য-উপাত্তের তালিকা তৈরি করেছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।

রেলওয়ে মহাপরিচালক ও পরিকল্পনা দপ্তর সূত্র বলছে, সাবেক রেলপথমন্ত্রী মুজিবুল হক পলাতক। তিনি ২০১২ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত রেলপথ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলেন। ওই সময়ের মধ্যে ৪৫টি উন্নয়ন প্রকল্প অনুমোদন করা হয়। যার মোট ব্যয় প্রায় ৯০ হাজার ৮৯১ কোটি টাকা। ওই সময়ের মধ্যে চাহিদা অনুযায়ী চলমান রেলপথ, রেলওয়ে ব্রিজ ও ইঞ্জিন-কোচ ক্রয় প্রকল্প গ্রহণ করা হয়নি। মুজিবুলের নজর ছিল নতুন রেলপথ, রেলওয়ে স্টেশন নির্মাণের দিকে। রাজনৈতিক বিবেচনায় নতুন রেলপথ, স্টেশন নির্মাণসহ জোড়াতালি দিয়ে ট্রেন উদ্বোধন এবং যত্রতত্র স্টেশনে আন্তঃনগর ট্রেনের বিরতি দিয়েছেন। রেলভবনে মুজিবুলের কক্ষ ও তার সরকারি বাসভবন ছিল রাজনৈতিক ব্যক্তি, দলীয় ঠিকাদার এবং রেলওয়ের ক্ষমতাধর পিডির দখলে।

অভিযোগ, তিনি যে কোনো প্রকল্প থেকে সর্বোচ্চ ৩৫ শতাংশ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। প্রকল্প পরিচালক দ্বারা অধিকাংশ প্রকল্পের সময় ও ব্যয় বাড়িয়ে লুটপাট আরও পাকাপোক্ত করেছেন। লুটপাটের বড় অঙ্কের ভাগ পেতেন সংশি্লষ্ট পিডিরা। মুজিবুল কিংবা পিডির লুটপাট অংশের একটি বড় অংশ যেত শীর্ষ পর্যায়ের ক্ষমতাধরদের কাছে। পরিকল্পনা দপ্তরের এক কর্মকর্তা বলেন, মুজিবুল হক তার দলীয় এমপি, মন্ত্রী এবং ঠিকাদারদের অনুকূলে প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়নে সব সময় সংশি্লষ্টদের চাপে রাখতেন। আওয়ামীপন্থি সব পিডিদের হাতে রেখে, একেকজনকে ৭ থেকে ১০টি প্রকল্পের দায়িত্ব দিতেন। সাম্প্রতিক সময়ে বারবার দুদক ও রেলপথ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় উন্নয়নের নামে তার (মুজিবুল) দুর্নীতির ফিরিসি্তর তালিকা করা হয়েছে। বেরিয়ে আসছে তার সঙ্গি পিডিসহ সংশি্লষ্ট রেলওয়ে কর্মকর্তাদের দুর্নীতি-অনিয়মের চিত্র।

রেলপথ মন্ত্রণালয় থেকে পাওয়া তথ্য-উপাত্ত থেকে জানা যায়, মুজিবুল হকের দায়িত্ব পালনকালে ৪৫টি প্রকল্পের অনুমোদন হয়। এসব প্রকল্প গ্রহণ থেকে বাস্তবায়নের সঙ্গে সম্পৃক্ত কর্মকর্তাদের তালিকা তৈরি করা হয়েছে। ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানসহ প্রকল্পের শুরুর ব্যয় এবং ওই প্রকল্পে পরবর্তীতে সময় ও ব্যয় বাড়িয়ে কত টাকা করা হয়েছে, সবই থাকছে তালিকায়। ইতোমধ্যে মুজিবুল হকের বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে অবৈধভাবে সম্পদ অর্জন-অর্থ পাচারের অনুসন্ধানে নেমেছে দুদক। প্রায় সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা লুটপাটের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। তাছাড়া তার নিজের নামে, স্ত্রী-স্বজনদের নামে একাধিক ফ্ল্যাট-প্লটের সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে, রেলে প্রায় ৮ বছর মন্ত্রীর দায়িত্ব পালনকালে টেন্ডার ও নিয়োগ বাণিজ্যসহ উন্নয়ন প্রকল্পগুলো থেকে অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে অর্থ লুটপাট-আত্মসাতের।

৪৫ প্রকল্পের ব্যয় প্রায় ৯১ হাজার কোটি টাকা। এসব প্রকল্প শুরুতে মোট ব্যয় ধরা হয়েছিল ৬৭ হাজার কোটি টাকা। পরবর্তীতে শুধু লুটপাটের জন্য প্রকল্পের সময় ও ব্যয় বাড়িয়ে করা হয় প্রায় ৯১ হাজার কোটি টাকা। রেলপথ মন্ত্রণালয় ও দুদক এসবের খোঁজ নিচ্ছেন।

পরিকল্পনা দপ্তর সূত্রের খবর, রেলে উন্নয়ন প্রকল্প ঘিরে সাবেক রেলপথমন্ত্রী মুজিবুল হকসহ বাকি ৫ মন্ত্রী-সচিব, পিডিদের মধ্যে একটি সিন্ডিকেট ছিল। নিজেদের পছন্দের ঠিকাদার এবং আত্মীয়স্বজনদের দ্বারা প্রকল্প বাস্তবায়ন করাতেন। দুর্নীতিবাজ সাবেক মন্ত্রী, সচিব, পিডিসহ বেশ কয়েকজন সাবেক রেলওয়ে মহাপরিচালকের আমলনামা পুরোপুরি প্রস্তুত।

মন্ত্রণালয় ও দুদকের নির্দেশনা অনুযায়ী তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে সংশি্লষ্টদের প্রদান করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পরিকল্পনা দপ্তর। এদিকে মন্ত্রণালয়ের বেশ কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, ৮ বছরে সাবেক রেলপথমন্ত্রী মুজিবুল হক এবং তার সঙ্গী রেলের পিডি ও সংশি্লষ্ট কর্মকর্তাদের দুর্নীতি-লুটপাটের চিত্র কঙ্কাল হয়ে ভেসে উঠছে। এক কর্মকর্তা বলেন, ‘মুজিবুল দ্বারা ৯১ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদন-বাস্তবায়নে লুটপাটের চিত্র স্পষ্ট হয়ে উঠছে। তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহে নেমে তাদের মনে হচ্ছে এই বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয়ের পেছনে মূল লক্ষ্যই ছিল দুর্নীতি।

রেলওয়ে মহাপরিচালক সরদার সাহাদাত আলী  বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্বরত উপদষ্টো-সচিবসহ সংশি্লষ্টরা রেলের সেবা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কাজ করছে। ইতঃপূর্বে রেলে উন্নয়নের নামে যে পরিমাণ অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। রেলপথ মন্ত্রণালয়সহ দুদক থেকে প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্ত চাওয়া হয়েছে আমরা তা প্রদান করছি। উন্নয়ন ঘিরে দুর্র্নীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত সবার বিচার নিশ্চিত করা হোক।

সাম্প্রতিক সময়ে রেলপথ সচিব আবদুল বাকী  বলেন, রেলে উন্নয়ন নামে যে মহা দুর্নীতি-লুটপাট হয়েছে তা নজিরবিহীন। সাবেক রেলপথমন্ত্রীসহ পিডি এবং সংশি্লষ্ট কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ বেরিয়ে আসছে। আমরা দুদকের চাহিদা অনুযায়ী তথ্য-উপাত্ত প্রদান করছি। একই সঙ্গে মন্ত্রণালয় থেকেও সব সংগ্রহ করা হচ্ছে। দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

 

 

সর্বশেষ  গুরুত্বপূর্ণ  সব  সংবাদ, ছবি ,অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ও লেখা পেতে আমাদের  ফেসবুক পেইজে  লাইক  দিয়ে  অ্যাকটিভ  থাকুন।  ভিজিট করুন : http://www.etihad.news

* অনলাইন  নিউজ পোর্টাল  ইত্তেহাদ নিউজে  লিখতে  পারেন  আপনিও। লেখার বিষয়  ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন  [email protected] ঠিকানায় ।

সংবাদটি শেয়ার করুন....
ইত্তেহাদ নিউজ ডেস্ক :

ইত্তেহাদ নিউজ ডেস্ক :

About Author

etihad news is one of the famous Bangla news portals published from Abudhabi-UAE. It has begun with a commitment to fearless, investigative, informative, and independent journalism. This online portal has started to provide real-time news updates with maximum use of Smart Technology.

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *