বাংলাদেশ ঢাকা

বিশ্বজিৎ দাস হত্যার বিচার দেখতে চান বাবা-মা

print news

ইত্তেহাদ নিউজ,শরীয়তপুর : ৯ ডিসেম্বর, ২০১২ সালের আজকের দিনে শত শত মানুষ, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য আর সাংবাদিকদের ক্যামেরার সামনে প্রকাশ্যে নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছিলো বিশ্বজিৎ দাসকে। যার নেপথ্যে ছিলো সম্প্রতি নিষিদ্ধ হওয়া সংগঠন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। ঘটনার এক যুগ পার হলেও বিচার পায়নি বিশ্বজিতের বাবা-মা। বাবা-মার আকুতি, মৃত্যুর আগে ছেলের হত্যাকারীদের বিচার দেখে যেতে চান নিজের চোখে।

ঘরে থাকা ছেলের ছবির দিকে অপলকভাবে তাকিয়ে আছেন মা কল্পনা দাস। কিছুক্ষণ পর পর ছেলের একটি ছবি নামিয়ে পরম যত্নে আঁচল দিয়ে পরিষ্কার করছেন। কিছুক্ষণ পর ছেলের কথা মনে পড়তেই ফুপিয়ে কেঁদে উঠছেন। তার কান্নার শব্দ পেয়ে কেঁদে উঠছেন বাবা অনন্ত দাসও। ছবির মতো মানুষটাও এখন শুধুই স্মৃতি মাত্র। ছেলে আর বাড়ি ফিরবে না। ছেলের জন্য দীর্ঘ এক যুগ ধরে নীরবে চোখের জল ফেলে চলছেন মা কল্পনা দাস।

শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার ভোজেশ্বর ইউনিয়নের মশুরা এলাকার অনন্ত দাস ও কল্পনা দাসের ছোট ছেলে বিশ্বজিৎ দাস। ছোটবেলা থেকেই ভীষণ শান্ত স্বভাবের ছিলো। আর্থিক অবস্থা ততোটা ভালো না হওয়ায় পরিবারের পাশে দাঁড়াতে ছোটবেলা থেকে ঢাকার শাঁখারী বাজার এলাকায় ভাইয়ের দোকানে দর্জির কাজ শিখেছিলেন। এরপর ভাইয়ের পাশাপাশি নিজেও ধরেছিলেন সংসারের হাল। অধিকাংশ সময় ঢাকায় থাকলেও মা-বাবাকে দেখতে প্রায়ই বাড়ি আসতেন।

২০১২ সালের ৯ ডিসেম্বর বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮-দলের অবরোধ কর্মসূচি চলাকালে শিবির সন্দেহে ঢাকার ভিক্টোরিয়া পার্ক এলাকায় দিবালোকে কুপিয়ে হত্যা করা হয় বিশ্বজিৎ দাসকে।

এই ঘটনায় নাম উঠে আসে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস বিভাগের ষষ্ঠ সেমিস্টারের শিক্ষার্থী রফিকুল ইসলাম, বাংলা বিভাগের মাস্টার্সের ছাত্র মাহফুজুর রহমান নাহিদ, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের মীর নুরে আলম লিমন, শাকিলসহ বেশ কয়েকজনের নাম। যারা সবাই নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের রাজনীতিতে জড়িত ছিলেন।

বিশ্বজিৎ হত্যা মামলায় পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করার পরে ঢাকার দ্রুত বিচার টাইব্যুনালে রায়ে ২১ আসামির মধ্যে আট জনের মৃত্যুদণ্ড এবং ১৩ জনের যাবজ্জীবন সাজা হয়েছিল। যদিও পরবর্তীতে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে মৃত্যুদণ্ড পাওয়া আট আসামির মধ্যে ৬ জনই সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন দেওয়া হয়। আর দুই জনের ফাঁসির আদেশ হলে তাও কার্যকর হয়নি দীর্ঘ ১২ বছরে।

বিশ্বজিৎ দাসের মা কল্পনা দাস বলেন, আমার বিশ্ব (বিশ্বজিৎ) তো কখনো রাজনীতি করেনি। আমার ছেলে কাজ করে সংসার চালাতো। ছেলেকে জগন্নাথের ছাত্রলীগের পোলাপাইন মেরে ফেললো। আজ ১২ বছর হয়ে গেলো অপরাধীদের বিচার হলো না। তারা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। আর আমরা বিচার চাইতে চাইতে ক্লান্ত। আমি আমার বিশ্ব হত্যার বিচার চাই।

বিশ্বজিৎ দাসের বাবা অনন্ত দাস বলেন, ছেলে আমাদের ভরণপোষণ দিতো। ছেলেকে প্রকাশ্যে দিন দুপুরে নির্মমভাবে হত্যা করা হলো। আজ ১২ বছর ধরে এখনো বিচার পেলাম না। এই সরকারের আমলে আমার ছেলের হত্যার বিচার দেখে যেতে পারি। তাহলে মরে গেলো অন্তত আত্মা শান্তি পাবে।

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন শরীয়তপুরের সভাপতি অ্যাডভোকেট মাসুদুর রহমান বলেন, ২০১২ সালের ৯ ডিসেম্বরের আজকের দিনে বিশ্বজিৎ দাস হত্যা হয়েছে। প্রকাশ্যে তাকে কারা হত্যা করে তা আমরা জানি। তারা স্বৈরাচার সরকারের দোসর ছিলেন। তাই তারা অতি দ্রুত আইনের ফাঁক দিয়ে বের হয়ে প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। কিন্তু দীর্ঘ এক যুগ ধরে ন্যায় বিচারের আশায় আদালতের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন বিশ্বজিতের পরিবার। আমরা চাই অতি দ্রুত সব অপরাধীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি কার্যকর করা হোক।

 

 

সর্বশেষ  গুরুত্বপূর্ণ  সব  সংবাদ, ছবি ,অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ও লেখা পেতে আমাদের  ফেসবুক পেইজে  লাইক  দিয়ে  অ্যাকটিভ  থাকুন।  ভিজিট করুন : http://www.etihad.news

* অনলাইন  নিউজ পোর্টাল  ইত্তেহাদ নিউজে  লিখতে  পারেন  আপনিও। লেখার বিষয়  ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন  [email protected] ঠিকানায় ।

সংবাদটি শেয়ার করুন....
ইত্তেহাদ নিউজ ডেস্ক :

ইত্তেহাদ নিউজ ডেস্ক :

About Author

etihad news is one of the famous Bangla news portals published from Abudhabi-UAE. It has begun with a commitment to fearless, investigative, informative, and independent journalism. This online portal has started to provide real-time news updates with maximum use of Smart Technology.

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *