সংবাদ এশিয়া

আদানির বিরুদ্ধে চুক্তি ভঙ্গের অভিযোগ বাংলাদেশের

140622 f5
print news

ইত্তেহাদ নিউজ ডেস্কবিদ্যুৎ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান আদানি পাওয়ারের বিরুদ্ধে এবার শত শত কোটি ডলারের চুক্তি ভঙ্গের অভিযোগ করেছে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার। এ খবর দিয়ে বার্তা সংস্থা রয়টার্স বলছে, সরকারের অভিযোগ হচ্ছে- নয়াদিল্লির কাছ থেকে কর অব্যাহতি সুবিধা বাংলাদেশকে দেয়নি আদানি পাওয়ার। এ সংক্রান্ত নথি পর্যালোচনা করেছে রয়টার্স। সংবাদমাধ্যমটি বলছে, পূর্ব ভারতের ঝাড়খণ্ডের গোড্ডায় অবস্থিত কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ করার জন্য ২০১৭ সালে ভারতীয় ধনকুবের গৌতম আদানির প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করে বাংলাদেশ। তবে এ বছরের ৫ই আগস্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পতনের পর চুক্তিগুলোকে পর্যালোচনার কথা জানিয়েছে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার। রিপোর্টে আরও বলা হয়, ঢাকা জানিয়েছে, কোনোরকম টেন্ডার প্রক্রিয়া ছাড়াই চুক্তিটি করেছিলেন শেখ হাসিনা। এর ফলে অন্যান্য বিদ্যুৎ চুক্তির তুলনায় আদানি পাওয়ারের সঙ্গে করা চুক্তিতে খরচ বেশি হয়েছে। ২০২৩ সালের জুলাই থেকে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে আদানি পাওয়ার। এখনো বাংলাদেশের কাছে তারা কয়েকশ’ মিলিয়ন ডলার পাওনা রয়েছে। এ নিয়ে বিরোধের জেরে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। নভেম্বর মাসে আদানি পাওয়ার থেকে বিদ্যুৎ আসা প্রায় এক-তৃতীয়াংশ বা ৩৩ শতাংশ কমেছে। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান রয়টার্সকে জানান, আদানির সরবরাহ ছাড়াই বর্তমানে অভ্যন্তরীণ উৎপাদন সক্ষমতা দিয়ে পরিস্থিতি সামাল দিতে পারবেন তারা, যদিও দেশের সব বিদ্যুৎকেন্দ্র কার্যকর অবস্থায় নেই। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে হাসিনার পতনের পর বাংলাদেশের ক্ষমতায় আসেন শান্তিতে নোবেলজয়ী প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস। দেশের অর্থনীতি এবং গণতন্ত্রকে ধ্বংস করার জন্য বেশ সমালোচিত হয়েছেন শেখ হাসিনা। কমপক্ষে ১৫ বছর বাংলাদেশকে টানা শাসন করেছেন আওয়ামী লীগের ওই নেত্রী। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বেশ ঘনিষ্ঠ ছিলেন তিনি। রয়টার্স বলেছে, ভারতে কর অব্যাহতি পেয়েছে আদানি পাওয়ার। কিন্তু সেই সুবিধা থেকে তারা বাংলাদেশকে বঞ্চিত করছে। আদানির সঙ্গে ২৫ বছরের চুক্তি করেছিল আওয়ামী লীগ সরকার। তাদের পতনের পর অন্যান্য চুক্তির সঙ্গে পুরো চুক্তিটি পর্যালোচনা করছে অন্তর্বর্তী সরকার। এ ছাড়া সম্প্রতি আদানি ও তার কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ২৬৫ মিলিয়ন ডলারের ঘুষকাণ্ডের অভিযোগ উঠেছে যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে। যদিও আদানি এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে। তবে আদানি পাওয়ারের এক মুখপাত্র রয়টার্সকে জানিয়েছেন, বাংলাদেশের সঙ্গে কোনো অন্যায় করার জন্য এখনো অভিযুক্ত হয়নি আদানি পাওয়ার। তবে বাংলাদেশের সম্প্রতি তোলা অভিযোগের বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি আদানি পাওয়ারের ওই মুখপাত্র। কোম্পানিটি আরও বলেছে, বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তি ভারতের পররাষ্ট্র বিষয়ক নীতির লক্ষ্যকে আরও সহায়তা করেছে। এই বিদ্যুৎকেন্দ্রটিকে বিশেষ অর্থনৈতিক জোনের অংশ হিসেবে ২০১৯ সালে ঘোষণা দিয়েছে দিল্লি। তারা আয়কর ছাড় ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধার মতো প্রণোদনা উপভোগ করছে। ২০১৭ সালের ৫ই নভেম্বর আদানি পাওয়ার এবং রাষ্ট্রপরিচালিত বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) মধ্যে চুক্তি এবং তা বাস্তবায়নের চুক্তি স্বাক্ষর হয়। সে অনুযায়ী, ভারত সরকারের পক্ষ থেকে যদি কোম্পানিটি কোনো রকম আয়কর বিষয়ক অবস্থানের পরিবর্তন করে এবং তারা কোনো আয়কর সুবিধা পায়- তাহলে তা বাংলাদেশকে জানানোর কথা তাদের। কিন্তু ২০২৪ সালের ১৭ই সেপ্টেম্বর এবং ২০২৪ সালের ২২শে অক্টোবর বিপিডিবি যে চিঠিগুলো পাঠায় সে অনুযায়ী আদানি পাওয়ার চুক্তি অনুযায়ী ওসব সুুবিধা পাওয়ার বিষয়টি বাংলাদেশকে অবহিত করেনি। চুক্তি এবং ওই চিঠিগুলো জনসমক্ষে প্রকাশ করা হয়নি। তবে তা দেখতে পেয়েছে রয়টার্স। বিপিডিবি’র দু’জন কর্মকর্তা বলেছেন, তারা ওই চিঠিগুলোর প্রেক্ষিতে কোনো সাড়া পাননি। কর্মকর্তারা বলেছেন, যদি ওই সুবিধা বাংলাদেশকে দেয়া হতো তাহলে বিপিডিবি প্রতি ইউনিট বিদ্যুতে প্রায় ০.৩৫ সেন্ট সাশ্রয় করতে পারতো। বাংলাদেশ সরকার যে পরিমাণ বিদ্যুৎ কেনে তার একটি তারিখবিহীন পরিমাণ দেখতে পেয়েছে রয়টার্স। সে অনুযায়ী, এ বছর ৩০শে জুন পর্যন্ত গোড্ডায় অবস্থিত আদানি পাওয়ার থেকে ৮১৬ কোটি ইউনিট বিদ্যুৎ সরবরাহ দিয়েছে। যদি প্রতি ইউনিটে ০.৩৫ সেন্ট সাশ্রয় হতো তাহলে মোট সাশ্রয় হতো প্রায় দুই কোটি ৮৬ লাখ ডলার। উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান বলেন, আদানি পাওয়ারের সঙ্গে ভবিষ্যৎ আলোচনার গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হবে এই সাশ্রয় নিয়ে। উল্লেখ্য, বাংলাদেশ মোট যে পরিমাণ বিদ্যুৎ কেনে তার সারমর্ম অনুযায়ী, ঢাকার কাছে ভারত মোট যে বিদ্যুৎ বিক্রি করে তার গড় দামের চেয়ে গোড্ডায় আদানির বিদ্যুতের প্রতি ইউনিটের দাম শতকরা ৫৫ ভাগ বেশি। এমন অবস্থায় আদানি পাওয়ারকে বাংলাদেশ অন্যান্য বেঞ্চমার্ক ব্যবহার করে চাপ দিচ্ছে, যাতে শুল্ক কম হয়। এ বিষয়ে আদালতের তদন্ত সাপেক্ষে যে রিপোর্ট আসে সে অনুযায়ী বাংলাদেশ ব্যবস্থা নেবে বলে জানান ফাওজুল কবির খান। তিনি বলেন, এটা প্রমাণিত যে, ঘুষ এবং অনিয়মের ঘটনা ঘটেছে। এক্ষেত্রে আমরা আদালতের নির্দেশ অনুসরণ করবো।

 

সর্বশেষ  গুরুত্বপূর্ণ  সব  সংবাদ, ছবি ,অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ও লেখা পেতে আমাদের  ফেসবুক পেইজে  লাইক  দিয়ে  অ্যাকটিভ  থাকুন।  ভিজিট করুন : http://www.etihad.news

* অনলাইন  নিউজ পোর্টাল  ইত্তেহাদ নিউজে  লিখতে  পারেন  আপনিও। লেখার বিষয়  ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন  [email protected] ঠিকানায় ।

সংবাদটি শেয়ার করুন....
ইত্তেহাদ নিউজ ডেস্ক :

ইত্তেহাদ নিউজ ডেস্ক :

About Author

etihad news is one of the famous Bangla news portals published from Abudhabi-UAE. It has begun with a commitment to fearless, investigative, informative, and independent journalism. This online portal has started to provide real-time news updates with maximum use of Smart Technology.

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *