বাংলাদেশ চট্টগ্রাম

কক্সবাজারে চেকপোস্ট বসিয়ে চাঁদাবাজি

subscribe 676fb4bc6e789
print news

ইত্তেহাদ নিউজ,কক্সবাজার : কক্সবাজারের উখিয়া বৃহত্তর বালুখালী বাজার ও এর আশপাশের অন্তত আটটি পয়েন্টে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর স্টাইলে চেকপোস্ট বসিয়ে প্রতিদিন লাখ লাখ টাকা চাঁদা আদায় করা হচ্ছে। বেপরোয়া চাঁদাবাজির কারণে ব্যবসায়ীরা বিপাকে পড়েছেন।

অভিযোগ রয়েছে, যুবদল নেতা দুই সহোদর সানোয়ার সিকদার ও আনোয়ার সিকদারের নেতৃত্বে ১৬ জনের একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট এই চাঁদাবাজিতে জড়িত। সংশ্লিষ্টরা সবাই স্থানীয় বিএনপি ও যুবদলের নেতাকর্মী হিসাবে পরিচয় দেন বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীরা। স্থানীয়রা জানান, এই সিন্ডিকেটের পেছনে উখিয়া উপজেলা বিএনপির শীর্ষ নেতাদের সরাসরি মদদ রয়েছে।

অবাক করার বিষয় হচ্ছে, চাঁদাবাজি বৈধতা পেতে চাঁদার টাকা থেকে প্রতিদিন নির্দিষ্ট একটি অঙ্ক জমা করা হচ্ছে উপজেলা প্রশাসনের রাজস্ব খাতেও। এমনটাই জানিয়েছেন চাঁদাবাজির নেতৃত্ব দেওয়া যুবদল নেতা আনোয়ার সিকদার। রাজস্ব খাতে কিছু টাকা জমা হওয়ার বিষয়টি স্বীকার করলেও উপজেলা প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা জানিয়েছেন, তিনি অভিযুক্তদের কাউকে টাকা তোলার দায়িত্ব দেননি।

রোহিঙ্গা ক্যাম্প ঘিরে গড়ে ওঠা বৃহত্তর বালুখালী বাজারটি বর্তমানে একটি বাণিজ্যিক কেন্দ্র হিসাবে পরিচিত। বাজারটিতে দুই হাজারেরও বেশি দোকানপাট ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। বাজারটি আইনি জটিলতায় গত এক বছরে সরকারিভাবে ইজারা হয়নি। বাজারের একাধিক ব্যবসায়ী বলেন, ‘বাজারটি নিয়ে রাজনৈতিক নেতাদের কেন মাথাব্যথা তা জানি না। রাজনৈতিক প্রতিযোগিতায় এই বাজারকে লাগামহীন দামে নিলামে তোলা হচ্ছে। ৫০ টাকার জায়গায় ২০০ টাকা টোল আদায় করা হচ্ছে। সাধারণ ব্যবসায়ীদের কথা কেউ ভাবে না। ভাবছিলাম, আওয়ামী লীগ সরকার চলে গেলে এসব বন্ধ হবে। কিন্তু এখন আরেক দল বিএনপি এসে আরও বেশি করছে।’

সংশ্লিষ্টরা জানান, বালুখালী বাজারটি ৩ কোটি ২০ লাখ টাকা পর্যন্ত সরকারিভাবে নিলাম হয়। ভ্যাট-ট্যাক্সসহ ইজারার সব টাকা সরকারি রাজস্ব খাতে জমা পড়ত। তখন নয়-ছয় হওয়ার সুযোগ ছিল না। সম্প্রতি বাজারটি ঘিরে সর্বত্রই বিস্তর চাঁদাবাজির অভিযোগ উঠেছে, যা স্থানীয় ব্যবসায়ীদের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে। সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা যায়, বালুখালী বাজারের বিভিন্ন পয়েন্টে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী স্টাইলে চেকপোস্ট বসিয়ে যুবদল নেতারা যেমন ইচ্ছা তেমন টোলের টাকা আদায় করছেন। সেখানে টোল বা খাস কালেকশনে কোনো নিয়মনীতি দেখা যায়নি। ফুটপাত ও মালবাহী গাড়ি থেকে যেমন ইচ্ছা তেমন টোলের টাকা নিচ্ছে। নির্ধারিত কোনো টোল আদায়ের চার্টও দেখা যায়নি। দৈনিক কত উঠছে, কত সরকারি রাজস্ব খাতে জমা হচ্ছে তারও কোনো জবাবদিহি নেই।

দেখা গেছে, বালুখালীর পান বাজার স্টেশন, পশ্চিমপাড়া রোড, মরা গাছতলা, আর্মি ক্যাম্প সড়ক, রোহিঙ্গা ক্যাম্প সড়কসহ মোট ৮টি পয়েন্ট থেকে ১৬ জনের একটি গ্রুপ ভাগ হয়ে চাঁদার টাকা তুলছেন। আবার কেউ কেউ প্রশাসনের মতো চেকপোস্ট আকারে বসে আদায় করছেন চাঁদার টাকা। খাস জায়গা, ব্যক্তিমালিকানা জায়গা কোনো পার্থক্য নেই তাদের। মালবাহী গাড়ি, ফুটপাত, কাঁচাবাজার ইত্যাদি ঝুপড়ি দোকান পর্যন্ত বাদ যাচ্ছে না।

বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ী বলেন, বালুখালী বাজারে প্রতিদিন প্রশাসনের নাম ভাঙিয়ে খাস কালেকশন দাবি করে ৯০ হাজার থেকে ১ লাখ ২০ হাজার টাকার মতো চাঁদা তোলা হচ্ছে। টাকা না দিতে চাইলে বিএনপি-যুবদল নেতারা ভয়ভীতি দেখিয়ে বাধ্য করছেন চাঁদা দিতে। তাদের পেছনে বিএনপির সিনিয়র নেতারা জড়িত থাকার কারণে ভয়ে কোথাও অভিযোগ করতে পারছেন না বলে জানান ব্যবসায়ীরা। তারা আরও জানান, খাস কালেকশনের নামে এ টাকা তোলা হলেও কোনো সরকারি কর্মকর্তাকে তারা কখনো দেখেননি। এ টাকা কোথায় যাচ্ছে তাও কেউ জানেন না।

বালুখালী বাজার কমিটির সভাপতি ও পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এম গফুর উদ্দিন চৌধুরী বলেন, বালুখালী বাজারের খাস কালেকশন করা হচ্ছে। নিয়ম হচ্ছে দৈনিক যে টাকা উত্তোলন হবে, সে টাকা ইউনিয়ন তহশিলদার দৈনিক সংশ্লিষ্ট ব্যাংক হিসাবে জমা করবেন। কিন্তু ব্যবসায়ীদের অভিযোগ এখানে বিপুল পরিমাণ চাঁদাবাজি ও অনিয়ম হচ্ছে। যা সংশ্লিষ্ট প্রশাসন তদন্ত করলে বের হয়ে আসবে। এই বাজার নিয়ে টালবাহানা করে সরকারকে রাজস্ব বঞ্চিত করে নেতাদের পকেট ভারী করা উচিত নয়।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে যুবদল নেতা আনোয়ার সিকদার বলেন, ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের আগ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের লোকজন বালুখালী বাজার থেকে টাকা তুলত। তারা পালিয়ে যাওয়ার পর আমরা, বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত এমন ১৬ জন টাকা তোলার দায়িত্ব পেয়েছি। আমরা উপজেলা প্রশাসনের রাজস্ব খাতে এ টাকা প্রতিদিন জমা করি।

টাকা তোলার দায়িত্ব কে দিয়েছেন জানতে চাইলে উপজেলা বিএনপির এক শীর্ষ নেতা ও ভূমি অফিসের তহশিলদার রাশেদা বেগম এ দায়িত্ব দিয়েছেন বলে দাবি করেন আনোয়ার। একপর্যায়ে তিনি (আনোয়ার) প্রতিবেদককে ম্যানেজ ও ঘুস দেওয়ার চেষ্টা করেন।

জানতে চাইলে ভূমি তহশিলদার রাশেদা বেগম  বলেন, আমি যুবদল বা বিএনপি নেতাদের কাউকে বালুখালী বাজার থেকে খাস কালেকশন বা টাকা তোলার দায়িত্ব দিইনি। আমরা নিজেরাই প্রশাসনের লোকজন দিয়ে এ টাকা তুলি।

বালুখালী বাজার নিয়ে ব্যাপক চাঁদাবাজির বিষয়ে জানতে চাইলে উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ কামরুল হোসেন চৌধুরী  বলেন, আমি সবে নতুন এসেছি। মূলত বালুখালী বাজারটি আমি আসার আগেই খাস কালেকশন করা হচ্ছিল। দৈনিক ২১ হাজার টাকা করে রাজস্ব কোষাগারে জমা হচ্ছে।

বিএনপি বা যুবদল নেতারা ইচ্ছামতো তুলে এ টাকা কোষাগারে দিচ্ছেন, নাকি তাদের টাকা তোলার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে-এমন প্রশ্নের জবাবে ইউএনও বলেন, যেটুকু জানি, এ টাকা তোলার দায়িত্বে ভূমি (কর্মকর্তা) তহশিলদার রাশেদা বেগম রয়েছেন। ইউএনও বলেন, আমি শুনেছি বাজারের বাইরে গিয়ে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বিভিন্ন স্পট ও গাড়ি থেকে চাঁদা আদায় করা হচ্ছে। আমি নিজে সরেজমিন গিয়ে দেখে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব।

এদিকে চাঁদাবাজির বিষয়ে বিএনপি ও যুবদল নেতাদের প্রশ্রয় দেওয়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে উখিয়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি সরওয়ার জাহান চৌধুরী বলেন, বালুখালী বাজারে চাঁদা তোলার বিষয়ে যাদের নাম শোনা যাচ্ছে, তাদের মধ্যে আনোয়ার নামের ছেলেটাকে একটু চিনি, আর কাউকে আমি চিনি না। আমি এ ধরনের অপকর্মের সঙ্গে জড়িত কাউকে কখনোই প্রশ্রয় দেব না। খবর নিয়ে যদি দেখা যায়, সেখানে দলীয় লোকজন জড়িত আছে, তবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

 

 

সর্বশেষ  গুরুত্বপূর্ণ  সব  সংবাদ, ছবি ,অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ও লেখা পেতে আমাদের  ফেসবুক পেইজে  লাইক  দিয়ে  অ্যাকটিভ  থাকুন।  ভিজিট করুন : http://www.etihad.news

* অনলাইন  নিউজ পোর্টাল  ইত্তেহাদ নিউজে  লিখতে  পারেন  আপনিও। লেখার বিষয়  ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন  [email protected] ঠিকানায় ।

সংবাদটি শেয়ার করুন....
ইত্তেহাদ নিউজ ডেস্ক :

ইত্তেহাদ নিউজ ডেস্ক :

About Author

etihad news is one of the famous Bangla news portals published from Abudhabi-UAE. It has begun with a commitment to fearless, investigative, informative, and independent journalism. This online portal has started to provide real-time news updates with maximum use of Smart Technology.