বাউফলে নওমালা বিএনপির সভাপতি পদে যেভাবে ব্যাটন’র উত্থান


ইত্তেহাদ নিউজ ডেস্ক : ব্যাটন তালুকদারের চাচা নওমালা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মরহুম মোঃ শহীদুর রহমান তালুকদার ৮০’র দশকে জাতীয় পার্টিতে সক্রিয় ছিলেন। স্বৈরাচার এরশাদের পতনের পর তিনি সৈয়দ আশরাফ’র ন্যাপে যোগদান করেন। ১৯৯৬ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পটুয়াখালী-২ বাউফলে বিএনপির মনোনয়ন প্রাপ্ত হন শহিদুল আলম তালুকদার। তখন শহীদুল আলম তালুকদারের হাত ধরে বিএনপিতে যোগদান করেন শহীদুর রহমান তালুকদার। এখান থেকেই তার বিএনপির রাজনীতি শুরু এবং পথচলা। অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় এলে ২০০৩ সালে ইউপি নির্বাচনে ভোট কারচুপির মাধ্যমে পল্লী চিকিৎসক আব্দুল খালেক বিশ্বাসকে হারিয়ে ইউপি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। পরে তিনি বেড়ে উঠে বাউফল বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন এবং নওমালা ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতির পদ পান। এমনকি উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর কাছে হেরে যান। ২৪ এপ্রিল ২০১৯ সালে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। সেই থেকে তার পরিবারের কেউ বিএনপির রাজনীতির সাথে জড়িত ছিল না বলে একাধিক অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে। সরেজমিনে আরো জানা যায়, ব্যাটন মূলত সক্রীয়ভাবে কোন দল করেনি। তার দাদার জায়গা জমিসহ বটকাজল, নিজ বটকাজল এবং নওমালা গ্রামে অবৈধ বেশকিছু খাস জমি তাদের দখলে আগলে রাখার জন্য আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ইউপি চেয়ারম্যান কামাল বিশ্বাসের সাথে আঁতাত করে বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয় হয় বলে সূত্র জানায়। খবরের মধ্যে খবর হল- মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে ২১ নভেম্বর ২০২২ ইং খ্রিষ্টাব্দে নওমালা ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি পদ ভাগিয়ে নেন মরহুম শহীদুর রহমান তালুকদারের ভাইয়ের ছেলে শফিকুর রহমান ব্যাটন তালুকদার। ছোট বেলা থেকে তিনি বিএনপির রাজনীতির সাথে জড়িত ছিল না এমনকি এলাকায় পর্যন্ত বড় হয়নি। সভাপতির পদ ভাগিয়ে নিয়ে সেই থেকে আর তাকে পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকায় তিনি আওয়ামী ঘরনার লোকজন নিয়ে চলাফেরা শুরু করেন। বর্তমানে ব্যাটন ফ্যাসিস্ট হাসিনার দোসরদের সাথে নিয়ে এলাকায় দোর্দান্ত প্রতাপে চলাফেরা করেন। যার ফলশ্রুতিতে নওমালা ইউনিয়ন বিএনপিতে বিভাজনের সৃষ্টি হয়।
গত ৫ আগস্ট ছাত্র জনতার অভ্যুত্থানে হাসিনা সরকারের পতনের পর ফ্যাসিস্ট দোসরদের পুনর্বাসনের দায়িত্ব নেন ব্যাটন। ওইদিন ফ্যাসিস্ট দোসর সাবেক জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ আনিসুর রহমান, তার এক ভাই বাউফল উপজেলা আওয়ামী লীগ সাংগঠনিক সম্পাদক, নওমালা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ও চেয়ারম্যান মোঃ কামাল বিশ্বাস এবং অপর ভাই বিমান বাহিনীর সাবেক উইং কমান্ডার মশিউর রহমান লাভলু বিশ্বাসের নিকট থেকে ১০ লাখ টাকা পান। শফিকুর রহমান ব্যাটন তালুকদারের সাথে জড়িত হয়ে পড়েন নওমালা ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মোঃ আনোয়ার হোসেন। ব্যাটন-আনোয়ার এলাকায় ‘আওয়ামী-বিএনপি’ নামে খ্যাত। জনমুখে শোনা যাচ্ছে তারা দিনে বিএনপি এবং রাতে আওয়ামী লীগ। ফ্যাসিস্ট দোসর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান কামাল বিশ্বাস আত্মগোপনে চলে গেলে আবদুর রশীদ খান ডিগ্রী কলেজের সভাপতির পদ ভাগিয়ে নেন ব্যাটন। এছাড়া নগরের বাজারের খাজনা গ্রহণ করেন এই ব্যাটনগংরা। অপরদিকে, গত সেপ্টেম্বরের শেষ সপ্তাহ এবং আগস্টের প্রথম দিকে ছাত্র জনতার আন্দোলনের মুখে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হলেও ৫ লক্ষাধিক টাকা ঘুষের বিনিময়ে পূর্ব নওমালা ছালেহিয়া দাখিল মাদ্রাসায় ফ্যাসিস্ট দোসর কামাল বিশ্বাসের বাড়ির লোক আবুল বশার বিশ্বাসকে নিয়োগ প্রদান করার অভিযোগ রয়েছে ব্যাটনের বিরুদ্ধে। অভিযোগ সূত্রে আরো জানা যায়, আবদুর রশীদ খান ডিগ্রী কলেজের সভাপতি ছিলেন কামাল বিশ্বাস এবং নগরের বাজারের ইজারাদার কামাল বিশ্বাস। তিনি আত্মগোপনে থাকায় ভাগ্য খুলে যায় ব্যাটন তালুকদারের। এছাড়া গত ০৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ইং তারিখ ব্যাটনগংরা আনিসুর রহমানের পটুয়াখালীর কলাতলা হাউজিংয়ের বাসায় গিয়ে ডিনার করেন এবং তাদের পরিবারকে পুনর্বাসনের জন্য ১০ লক্ষাধিক টাকার লেন-দেন করেন। রাতের ঘটনা হলেও পরের দিন এ খবর এলাকায় চাউর হয়ে যায়।
উপরোক্ত বিষয়ে সফিকুর রহমান ব্যাটনের কাছে জানতে চাইলে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ অস্বীকার করেন।
সর্বশেষ গুরুত্বপূর্ণ সব সংবাদ, ছবি ,অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ও লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন। ভিজিট করুন : http://www.etihad.news
* অনলাইন নিউজ পোর্টাল ইত্তেহাদ নিউজে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায় ।