মাগুরার সেই ‘ধর্ষকের’ বাড়ি গুঁড়িয়ে দিলো জনতা


ইত্তেহাদ নিউজ ডেস্ক : মাগুরার শিশুটিকে ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনায় অভিযুক্ত হিটু শেখের বাড়িকে ‘শয়তানের বাড়ি’ আখ্যা দিয়ে গুঁড়িয়ে দিয়েছে স্থানীয়রা। শুক্রবার ওই বাড়ির ইট-কাঠ, দরজা-জানালা থেকে শুরু করে সবকিছু ভেঙে খুলে নিয়ে যায় তারা। বাড়ির গাছপালাও কেটে নেয় অনেকে। এর আগে বৃহস্পতিবার বাড়িটিতে আগুন দেওয়া হয়েছিল।
জানা যায়, মাগুরার শহরতলি নিজনান্দুয়ালী গ্রামের মাঠপাড়ায় হিটু শেখের বাড়ি। এ বাড়িতেই বেড়াতে এসে ৫ মার্চ রাতে ধর্ষণের শিকার হয়েছিল শিশুটি। বৃহস্পতিবার দুপুরে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় তার। সন্ধ্যা ৭টায় মাগুরা শহরের নোমানী ময়দানে শিশুটির প্রথম জানাজা শেষে বিক্ষুব্ধ লোকজন হিটু শেখের বাড়িতে পেট্রোল ঢেলে আগুন দেয়।
শুক্রবার দ্বিতীয় দফায় তার বাড়িতে হামলা চালায় বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী। বিকাল ৩টায় সেখানে গিয়ে দেখা যায়, শত শত লোক ব্যাপক উৎসাহ নিয়ে বাড়িটি ঘিরে দাঁড়িয়ে আছে। অনেকে হাতুড়ি-শাবল নিয়ে বাড়ির দেওয়াল ভেঙে গুঁড়িয়ে দিচ্ছেন। কেউ দরজা-জানালাসহ ঘরের বিভিন্ন জিনিস নিয়ে যাচ্ছেন। এর আগে সকাল থেকে বাড়ির গাছপালাও কেটে নিয়ে যান কেউ কেউ।
হাতুড়ি হাতে বাড়িটির দেওয়াল ভাঙার কাজে যোগ দেওয়া নিজনান্দুয়ালী গ্রামের মোস্তাক হোসেন বলেন, হিটুর এ বাড়িটি শয়তানের বাড়ি। এ বাড়িতে শিশুকে ধর্ষণ করা হয়েছে। তাই বাড়িটি গুঁড়িয়ে দেওয়াই ভালো।
ধর্ষণের ঘটনায় ৮ মার্চ হিটু শেখের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ এনে সদর থানায় মামলা করেন শিশুটির মা। ওই মামলায় ধর্ষণে সহযোগিতার অভিযোগ এনে আসামি করা হয়েছে হিটু শেখের স্ত্রী জাহেদা, দুই ছেলে রাতুল ও সজিবকে। চার আসামিকেই পুলিশ গ্রেফতার করেছে। তারা বর্তমানে মাগুরা কারাগারে আছে।
শিশুটির কবর ঘিরে শোকাহত সহপাঠীরা
শিশুটির সহপাঠীরা শুক্রবার তার কবরে গিয়ে শোক প্রকাশ করেছে। দুপুর ৩টায় শিশুর দাদাবাড়ির ওই কবরস্থানে গিয়ে দেখা যায়, একই বয়সি কয়েকটি শিশু কবর ঘিরে দাঁড়িয়ে আছে। সবার চোখে পানি টলমল করছে। শোকাহত হাসিবুল জানায়, শিশুটি তার সঙ্গে একই বিদ্যালয়ে পড়ত। সে অনেক ভালো ছাত্রী ছিল। একসঙ্গেই তারা স্কুলে যাওয়া-আসা করত। তার এমন মৃত্যু কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছে না।
এদিকে সকালে শ্রীপুর উপজেলার জারিয়া গ্রামে শিশুটির বাড়িতে যান জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাস, মাগুরার সাবেক সংরক্ষিত মহিলা সংসদ-সদস্য নেওয়াজ হালিমা আরলি, মাগুরা জেলা বিএনপি সদস্য সচিব মনোয়ার হোসেন খান, ঢাকা দক্ষিণ মহানগর যুবদলের সদস্য সচিব রবিউল ইসলাম নয়ন, বাংলাদেশ কংগ্রেসের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান রেজাউল হোসেনসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা। তারা শিশুটির পরিবারের খোঁজখবর নেন। আগামী দিনে অসচ্ছল এ পরিবারটির পাশে থাকার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন তারা।
মাগুরা কারাগার ঘেরাও শিক্ষার্থীদের
ধর্ষণের ঘটনায় জড়িতদের ফাঁসির দাবিতে শুক্রবার দুপুরে মাগুরা কারাগার ঘেরাও করেন মাগুরা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা। জুমার নামাজের পর শিক্ষার্থীরা কারাগারের সামনে মাগুরা-ঝিনাইদহ সড়কে অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। এতে সড়কের উভয় পাশে কয়েক শ যানবাহন আটকা পড়ে। পরে তারা সড়ক ছেড়ে কারাগারের মূল ফটকের সামনে গিয়ে বিক্ষোভ করেন।
মাগুরার সেই হিটু শেখের লাম্পট্য অনেকদিনের
মাগুরায় বোনের বাড়িতে বেড়াতে গিয়ে ধর্ষণের শিকার শিশুটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়। বৃহস্পতিবার রাতে দাদাবাড়ি শ্রীপুর উপজেলার সোনাইকুণ্ডি গ্রামের কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। এ ঘটনায় মূল অভিযুক্ত শিশুটির বোনের শ্বশুর মাগুরার শহরতলি নিজনান্দুয়ালী গ্রামের হিটু শেখ। এলাকাবাসী জানিয়েছেন, তার লাম্পট্য দীর্ঘদিনের। এর আগেও নারীঘটিত নানা অপকর্মে জড়িয়েছিলেন তিনি।
তারা জানান, হিটু শেখের বাবার বাড়ি একই গ্রামের নলুয়া পাড়ায়। তিনি তার বাবার দ্বিতীয় স্ত্রীর সন্তান। দশ-পনেরো বছর আগে হিটু শেখ নিজনান্দুয়ালী গ্রামের মাঠপাড়ায় বাড়ি করেন।
নিজনান্দুয়ালী গ্রামের মোস্তাক মিয়া বলেন, দুই বছর আগে হিটু শেখ তারই এক প্রতিবেশী নারীকে গোসলের সময় ঝাপটে ধরেন। এ ঘটনায় এলাকাবাসী তাকে আটক করে নাকে খত এবং গলায় জুতার মালা ঝুলিয়ে শাস্তি দিয়েছিল। শুধু তাই নয়, রাজমিস্ত্রি হিটু বেশ কয়েক বছর আগে ফরিদপুর এলাকায় একটি বাড়িতে কাজ করতে গিয়ে ওই বাড়ির এক নারীর সঙ্গে অশালীন আচরণ করেন। এরপর তাকে মেরে হাসপাতালে পাঠিয়েছিলেন তারা।
প্রতিবেশী জাহিদ শেখ জানান, হিটুর বড় ছেলে রাতুলের সম্পর্কে খারাপ কিছু এলাকার কেউ বলতে পারবে না। তবে অন্য ছেলে সজিব ৭-৮ মাস আগে একই গ্রামের নবম শ্রেণিতে পড়ুয়া একটি মেয়েকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে আসে। পরে সেই মেয়েটির পরিবার তাকে ফিরিয়ে নিয়ে যায়। এর দুই মাস পর শ্রীপুরের জারিয়া গ্রামে সেই শিশুটির বোনের সঙ্গে সজিবের বিয়ে হয়।
এদিকে ছেলের নতুন বউয়ের সঙ্গেও হিটু অশালীন আচরণ করায় সজিবের স্ত্রী বাবার বাড়িতে চলে যায়। ওই ঘটনার পরই সজিবের স্ত্রী ৮ বছরের ছোট বোনকে সঙ্গে নিয়ে ১ মার্চ স্বামীর বাড়িতে ফিরে যায়। এরপর ৫ মার্চ রাতে শিশুটিকে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে হিটু শেখের বিরুদ্ধে।
ধর্ষণের ঘটনায় ৮ মার্চ হিটু শেখের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ এনে সদর থানায় মামলা করেন শিশুটির মা। ওই মামলায় ধর্ষণে সহযোগিতার অভিযোগ এনে আসামি করা হয়েছে হিটু শেখের স্ত্রী জাহেদা, দুই ছেলে রাতুল ও সজিবকে। চার আসামিকেই পুলিশ গ্রেফতার করেছে। তারা বর্তমানে মাগুরা কারাগারে আছে।
মাগুরা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আইয়ুব আলী বলেন, হিটু শেখের বাড়িতে সবচেয়ে ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটেছে। ৮ বছরের একটি শিশুর ওপর তারা নির্যাতন চালিয়েছে। তবে এ ঘটনার আগে তার বা তার পরিবারের কারও নামে মাগুরা কিংবা অন্য কোনো থানায় কোনো অভিযোগের খবর পাওয়া যায়নি।
সর্বশেষ গুরুত্বপূর্ণ সব সংবাদ, ছবি ,অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ও লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন। ভিজিট করুন : http://www.etihad.news
* অনলাইন নিউজ পোর্টাল ইত্তেহাদ নিউজে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায় ।