ফিচার

কান্না থামছে না শহীদ রুবেল ইসলামের মায়ের

image 186976 1742786546
print news

ইত্তেহাদ নিউজ,নীলফামারী:  কান্না থামছে না শহীদ রুবেল ইসলামের (১৯) মায়ের। ঘটনার পর প্রায় সাত মাস হয়ে এলেও ছেলে হারানোর শোক এখনও সামলে উঠতে পারছেন না তিনি। ছেলের রেখে যাওয়া স্মৃতি মনে পড়লেই চোখের পানি গড়িয়ে পড়ে এখনও।

ছেলে বলেছিল, ‘আব্বা-আম্মা, তোমরা টেনশন করো না। ভাইয়ের লেখাপড়া আর বাড়ি করার দায়িত্ব আমার। ছোট ভাইকে লেখাপড়া শিখিয়ে অনেক বড় করব। তখন অনেক সুখ আসবে আমাদের ঘরে।’

ছেলের এমন আশ্বাসে বুকে বল পেতেন রিকশাচালক বাবা মো. রফিকুল ইসলাম (৫০) ও গৃহিণী মা মোছাম্মৎ মিনি খাতুন (৪৫)। এজন্য গ্রাম ছেড়ে ছেলেকে নিয়ে পাড়ি জমিয়েছিলেন ঢাকা শহরে।
রাজধানীর আদাবর এলাকায় থেকে ছেলে কাজ করছিল পোশাক কারখানায়। আর বাবা নেমেছিলেন রিকশা চালানোর কাজে। বাবা-ছেলের জমানো টাকায় ধরতে চেয়েছিলেন অধরা স্বপ্নগুলো। কিন্তু ৫ আগস্ট একটি বুলেটের আঘাত ভেঙে তছনছ করে দেয় সব স্বপ্ন। সেদিন স্বৈরাচার পতনের এক দফা আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলেন রুবেল ইসলাম।

বেলা ১১টার দিকে উত্তাল মিছিল পৌঁছে আদাবর থানার সামনে। সে মিছিলের অগ্রভাগে ছিলেন তিনি। এসময় গুলিবিদ্ধ হলে আহত অবস্থায় তাকে নেওয়া হয় হাসপাতালে। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৭ আগস্ট মৃত্যু হয় তার।

নীলফামারী সদর উপজেলার গোড়গ্রাম ইউনিয়নের ধোবাডাঙ্গা আরাজীপাড়া গ্রামে শহীদ রুবেল ইসলামের বাড়ি। স্বপ্ন ছিল আয়-রোজগার করে ছোট ভাইকে লেখাপড়া শেখাবেন। কিনবেন বাড়ির ভিটা, গড়বেন পরিবারের স্থায়ী ঠিকানা।

স্বপ্ন্ পূরণের আশায় চাকরি নিয়েছিলেন ঢাকার একটি পোশাক কারখানায়। এগিয়ে যাচ্ছিলেন স্বপ্ন পূরণের পথে। ছোট ভাই মো. রনি ইসলামকে পড়াচ্ছিলেন ষষ্ঠ শ্রেণিতে। স্বপ্ন পূরণে বাবা-মাকে নিয়ে বসবাস করতেন ঢাকার মোহাম্মদপুরের জেনেভা ক্যাম্প এলাকায়।

সেদিনের ঘটনার কথায় মা মিনি খাতুন বলেন, ‘বাসা থাইকা বাইর হইবার সময় কইলো, আম্মা, ছোটভাইর তিন মাসের বেতন বাকি হইছে। মাদ্রাসার স্যার ফোন দিয়া কইছে, একটা ব্যবস্থা করো। বেতনের টাকা পাঠাইতে হইব। কিন্তু মোর ছাওয়াতো আর ফিরা আইলো না।’

বাবা মো. রফিকুল ইসলাম জানান, আদাবর এলাকায় একটি পোশাক কারখানায় কাজ করতেন রুবেল ইসলাম। রাতের ডিউটি থাকায় সেখান থেকে প্রতিদিন সকালে বাড়িতে ফিরতেন। তাকে রেখে তিনি নিজে বেরিয়ে যেতেন রিকশা চালানোর কাজে।

৫ আগস্ট ফিরতে দেরি হওয়ায় সকাল নয়টার দিকে ফোন করে খবর নেন ছেলের। এরপর বাসায় এসে বেলা ১১টার দিকে যোগ দেন আন্দোলনে।

সেদিনের ঘটনা বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, ‘ছেলে ফোনে কইছিল, আব্বা, কিছুক্ষণের মধ্যে বাসায় আসছি। কথাটা শুনে নিশ্চিন্ত মনে রিকশা চালাইতে গেছিলাম। বেলা সাড়ে তিনটার দিকে খবর পাই, ছেলে মিছিলোত গেছিল, আদাবর থানার সামনোত গুলি লাগি আহত হইছে। তারপর হাসপাতাল গিয়া দেখি, ওর অপারেশন শুরু হইছে।’

তিনি জানান, চিকিৎসা চলার পর ৭ আগস্ট শ্যামলীর সিটি কেয়ার জেনারেল হাসপাতালে সকাল সাড়ে নয়টার দিকে মৃত্যু হয় তার। এরপর সেখান থেকে গ্রামের বাড়িতে লাশ এনে রাত সাড়ে নয়টার দিকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।

পারিবারিক সূত্র জানায়, দুই ভাই তিন বোনের মধ্যে শহীদ রুবেল ইসলাম ছিলেন তৃতীয়। লেখাপড়া করেছিলেন সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত। তার তিন বোনের বিয়ে হয়েছে। ছোট ভাই রনি ইসলাম পড়ছে এলাকার একটি মাদ্রাসায় ষষ্ঠ শ্রেণিতে। ঢাকায় অবস্থানের কারণে রনিকে রেখেছিলেন ওই মাদ্রাসার আবাসিকে।

এরপর একমাত্র অবলম্বন রুবেল ইসলাম আন্দোলনে শহীদ হলে গ্রামে ফিরে আসেন তার বাবা-মা। নিজের বসতভিটা না থাকায় বর্তমানে ছোট ছেলেকে নিয়ে অন্যের জমিতে ঘর তুলে বসবাস করছেন।

বিভিন্ন সহযোগিতার প্রসঙ্গে বাবা রফিকুল ইসলাম জানান, লাশ আনার সময় ২৫ হাজার, জেলা প্রশাসন ৩০ হাজার, আসসুন্নাহ ফাউন্ডেশন এক লাখ, জামায়াতের পক্ষ থেকে দেড় লাখ এবং জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন থেকে পাঁচ লাখ টাকার সহযোগিতা পেয়েছেন এ পর্যন্ত। সে টাকা থেকে চিকিৎসাসহ অন্যান্য খরচ বাবদ দেনা পরিশোধ করেছেন এক লাখ টাকা।

গোড়গ্রাম ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মতিউর রহমান বলেন, ‘শহীদ রুবেল ইসলামের পরিবারের খোঁজখবর রাখছি আমরা। আমাদের সুপারিশে তার বাবাকে এলাকার নীলসাগর গ্রুপের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী আহসান হাবীব লেলিন চাকরি দিয়েছেন। পরিবারটির কষ্ট লাঘবে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’

গোড়গ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান রেয়াজুল ইসলাম বলেন, ‘পরিবারটি একেবারেই অসহায়। ছেলের অকাল মৃত্যু পরিবারটিকে আরও অসহায় করেছে। আমরা সকলে পাশে থেকে সে ঘাটতি পূরণ করতে চাই।

 

 

সর্বশেষ  গুরুত্বপূর্ণ  সব  সংবাদ, ছবি ,অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ও লেখা পেতে আমাদের  ফেসবুক পেইজে  লাইক  দিয়ে  অ্যাকটিভ  থাকুন।  ভিজিট করুন : http://www.etihad.news

* অনলাইন  নিউজ পোর্টাল  ইত্তেহাদ নিউজে  লিখতে  পারেন  আপনিও। লেখার বিষয়  ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন  [email protected] ঠিকানায় ।

সংবাদটি শেয়ার করুন....
ইত্তেহাদ নিউজ ডেস্ক :

ইত্তেহাদ নিউজ ডেস্ক :

About Author

etihad news is one of the famous Bangla news portals published from Abudhabi-UAE. It has begun with a commitment to fearless, investigative, informative, and independent journalism. This online portal has started to provide real-time news updates with maximum use of Smart Technology.