বাউফলে স্বৈরাচারের দোসর সেই কামাল’র হাজতবাস, পাশে নেই পরিবার

ইত্তেহাদ নিউজ,পটুয়াখালী : অপারেশন ডেভিল হ্যান্ট খাঁচায় পটুয়াখালীর বাউফলের ১৪ নং নওমালা ইউনিয়নের বটকাজল গ্রামের নগরের হাট এলাকার পল্লী চিকিৎসক খালেক বিশ্বাসের পুত্র জুলাই-আগস্টের ছাত্র-জনতার আন্দোলনে হামলাকারী আওয়ামী লীগ নেতা সেই কামাল হোসেন দুইদিন পর্যন্ত হাজতবাসে আছেন, পাশে নেই তাঁর পরিবার। এমনকি জামিনের জন্য আবেদনটুকু পর্যন্ত করেনি কেউ। এ তথ্য একাধিক সংশ্লিষ্ট সূত্রের।

বাউফল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. কামাল হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, বাউফল থানার বিস্ফোরক দ্রব্যের আইনের একটি মামলার তদন্তে গ্রেপ্তারকৃত ইউপি চেয়ারম্যানের সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পাওয়া গেছে। তাঁর গ্রেপ্তারের খবর এলাকায় ছড়িয়ে পরলে সাধারণ মানুষের মধ্যে স্বস্তি ফিরিয়ে আসে। মনের আনন্দে অনেকে চায়ের দোকানে বসে আনন্দ-উল্লাস করতে থাকেন।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, বহু অঘটন পটিয়াসি পটুয়াখালীর বাউফলের নওমালা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোঃ কামাল হোসেন বিশ্বাসকে শনিবার (০৫ এপ্রিল, ২০২৫) সন্ধ্যার দিকে পটুয়াখালী থেকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছে ডিবি পুলিশ। বাউফল উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক, নওমালা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কামালের বিরুদ্ধে ক্ষমতার আমলে দুর্নীতি, নিরীহ মানুষকে অত্যাচার, নির্যাতন, চাঁদাবাজি, আগুন দিয়ে বাড়িঘর জ¦ালিয়ে দেওয়া এবং জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে হামলার অভিযোগ রয়েছে। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তন হলেও এত অপকর্মের হোতা হয়ে তিনি এলাকায় দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন, যা নিয়ে ইউনিয়নবাসী ক্ষোভে ফুঁসছিল। এবং এই আওয়ামী লীগ নেতাকে চেয়ারম্যান পদ থেকে অপসারণ পরবর্তীতে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসার দাবি জানিয়ে আসছিলেন। সর্বশেষ সংক্ষুব্ধ স্থানীয় জনগণ গণস্বাক্ষর সংগ্রহ করে যখন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে যাওয়ার ঘোষণা দিয়ে প্রক্রিয়া চলমান রাখে, ঠিক সেই সময়ই স্বৈরাচারের সহযোগী কামাল হোসেন বিশ্বাসকে গ্রেপ্তার করা হলো।

বাউফল পুলিশ জানিয়েছে, বিষ্ফোরক মামলায় অভিযুক্ত নওমালা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক কামাল হোসেন বিশ্বাসকে শনিবার সন্ধ্যা রাতে পটুয়াখালীর কালিকাপুর এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। রোববার সেই মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হলে বিচারক কারাগারে প্রেরণ করেন।

স্থানীয় একাধিক সূত্র জানিয়েছে, আওয়ামী লীগ শাসনামলে কামাল বিশ্বাস বহুমুখী অনিয়ম-দুর্নীতিসহ সরকারি অর্থ লুটপাট করে কাড়িকাড়ি টাকা কামিয়েছেন, যা দুর্নীতি দমন কমিশন তদন্ত করছে। এছাড়াও নৌকাকে পুঁজি করে স্থানীয়ভাবে আধিপত্য বিস্তার করতে গিয়ে নিরাপদ মানুষকে মারধর-হয়রানিসহ জুলাই-আগস্ট মাসে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে হামলা করেছেন।

৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে সরকার পরিবর্তন হলে কামাল বিশ্বাস একাধিক মামলার আসামি হয়ে গ্রেপ্তার এড়াতে আত্মগোপনে চলে গেলে ইউনিয়নবাসী পড়েন চরম দুর্ভোগে। দীর্ঘদিনেও চেয়ারম্যান পরিষদে না বসা এবং নাগরিকসেবা থেকে সাধারণ মানুষ বঞ্চিত হওয়ায় অনেকেই ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। একপর্যায়ে দাবি ওঠে, চেয়ারম্যানকে অপসারণ এবং গ্রেপ্তারের। এতে অনেকটাই চাপের মুখে পড়ে বাউফল পুলিশ।

এদিকে, ইউনিয়নবাসী চেয়ারম্যানের অপসারণ এবং গ্রেপ্তার চেয়ে সংগ্রহ করা গণস্বাক্ষর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে দিতে যাওয়ার ঠিক একদিন আগে অর্থাৎ শনিবার সন্ধ্যা রাতে তাকে পটুয়াখালী শহর থেকে গ্রেপ্তারের খবর দেয় বাউফল পুলিশ।

গণস্বাক্ষর সংগ্রহকারী একাধিক নাগরিক জানিয়েছেন, ৫ আগস্টের পর থেকে কামাল বিশ্বাস পলাতক থাকায় ইউনিয়ন পরিষদ থেকে কোনো নাগরিক সেবা মেলেনি। এতে সাধারণ মানুষ ভোগান্তিতে পড়ে যায়। তাই অনেকেই চেয়ারম্যান পদ থেকে তার অপসারণ এবং অতীত অপকর্মের অভিযোগে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসার জোর দাবি রাখেন। প্রাসঙ্গিক এই বিষয়টি নিয়ে ইউনিয়নবাসীর গণস্বাক্ষরও সংগ্রহ করা হয়, যা পরবর্তীতে ইউএনওর হাতে তুলে দেওয়া হবে।

স্বৈরাচারের দোসরকে গ্রেপ্তার এবং অপসারণে জোরদার পদক্ষেপ হিসেবে ইউএনও’র কাছে যাওয়ার আগেই তাকে গ্রেপ্তারের খবর দিয়েছে পুলিশ, যা স্বস্তিদায়ক বলে মনে করছে সাধারণ মানুষ। এখন চাওয়া হচ্ছে তার অপসারণ।

ইউনিয়নবাসী ইউএনও’র সাথে সাক্ষাতের পরপরই হয়তো কামাল বিশ্বাসকে অপসারণে উদ্যোগ দেখা যেতে পারে, এমনটি মনে করছেন অনেকে।

সর্বশেষ  গুরুত্বপূর্ণ  সব  সংবাদ, ছবি ,অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ও লেখা পেতে আমাদের  ফেসবুক পেইজে  লাইক  দিয়ে  অ্যাকটিভ  থাকুন।  ভিজিট করুন : http://www.etihad.news

* অনলাইন  নিউজ পোর্টাল  ইত্তেহাদ নিউজে  লিখতে  পারেন  আপনিও। লেখার বিষয়  ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন  [email protected] ঠিকানায় ।