ইত্তেহাদ এক্সক্লুসিভ

জুলাই-আগস্টের আন্দোলন: হত্যা-আটক-নির্যাতন থেকে রেহাই পায়নি শিশুরাও

1744078462.july
print news

ইত্তেহাদ অনলাইন নিউজ ডেস্ক :  জুলাই-আগস্টের আন্দোলনে শিশুরাও পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে বিচারবহির্ভূত হত্যা, বেআইনি গ্রেপ্তার, অমানবিক পরিবেশে আটকের শিকার হয়েছে এবং নির্যাতনসহ ইচ্ছাকৃত শারীরিক ক্ষতির মুখোমুখি হয়েছে।

বাংলাদেশে ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে সংঘটিত ঘটনাপ্রবাহ নিয়ে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের দপ্তরের (ওএইচসিএইচআর) তথ্যানুসন্ধান প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১ জুলাই থেকে ১৫ আগস্টের মধ্যে এক হাজার ৪০০ জনের বেশি মানুষকে হত্যা করা হয়ে থাকতে পারে। নিহতদের মধ্যে ১২-১৩ শতাংশ শিশু। সেই হিসাবে নিহত শিশুর সংখ্যা ১৮২ জনের কম নয়।

অন্তর্বর্তী সরকারের নারী ও শিশু বিষয়ক উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ গত ৬ অক্টোবর জানান, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে নিহত শিশুর সংখ্যা ১০৫।

বৈষম্যবিরোধী ওই আন্দোলন দমনে ছাত্র-জনতার ওপর নৃশংসতা চালিয়েছিলো তৎকালীন হাসিনা সরকার ও সরকারের সমর্থকরা। এতে পুরুষের পাশাপাশি রেহাই পায়নি নারীরাও। তবে সব কিছু ছাপিয়ে শিশুর ওপর অমানবিকতার বিষয়টি নিয়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। শিশুদের রিমান্ডে নেওয়া, বড়দের সঙ্গে জেলাখানায় রাখা, হাতকড়া পরানো, গুলি করে হত্যার বিষয়টি উল্লেখযোগ্য। জাতিসংঘের চোখেও বিষয়টি গভীরভাবে ধরা পড়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, বহু শিশু-কিশোর বিক্ষোভে সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছিল, যাদের মধ্যে ছিল উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, মাদরাসার শিক্ষার্থী এবং অল্পবয়সী শ্রমিক। অন্য শিশুরা কৌতুহলবশত বিক্ষোভ দেখছিল। পথশিশু এবং সমাজের নিম্ন আয়ের পরিবারের শিশুরা (টোকাই নামে পরিচিত) আওয়ামী লীগ সমর্থকদের মধ্যেও দেখা গেছে, আবার বিক্ষোভকারীদের মধ্যেও ছিল।

ওএইচসিএইচআর অভিযোগ পেয়েছে, আওয়ামী লীগ এবং বিরোধীদল উভয়ই এই শিশুদের সংঘর্ষে অংশ নেওয়ার জন্য নিয়োগ ও অর্থ দিয়েছে। এই প্রতিবেদনের সত্যতা যাচাইয়ের জন্য আরও তদন্ত প্রয়োজন, কারণ ওএইচসিএইচআর এ ধরনের নিয়োগের কোনো প্রত্যক্ষ সাক্ষ্য পায়নি।

ঢাকার আজমপুর, বাড্ডা, ধানমন্ডি, ফার্মগেট, যাত্রাবাড়ী, মিরপুর, মোহাম্মদপুর এবং রামপুরা এলাকা ছাড়াও গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, রংপুর ও সিলেটসহ দেশের অন্যান্য অঞ্চলে শিশু নিহত বা গুরুতর আহত হওয়ার ঘটনা নথিভুক্ত করেছে ওএইচসিএইচআর।

এ ঘটনাকে পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড উল্লেখ করে জাতিসংঘের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, নিরাপত্তাবাহিনী রাইফেল ও গুলিভর্তি শটগান দিয়ে নির্বিচারে গুলি চালিয়ে শিশু বিক্ষোভকারীদের হত্যা করেছে। উদাহরণস্বরূপ, মোহাম্মদপুরে পুলিশ শান্তিপূর্ণবিক্ষোভকারী ও সহিংস দাঙ্গাবাজ মিশ্রজনতার ওপর নির্বিচারে গুলি চালায়। এতে ১৯ জুলাই মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে ১৭ বছর বয়সী এক শিক্ষার্থী নিহত হয়, যদিও সে তখন কোনো হুমকির সৃষ্টি করেনি। ১৮ জুলাই ধানমন্ডিতে পুলিশের গুলিতে ১৭ বছর বয়সী আরেক শিক্ষার্থী নিহত হয়। ধানমন্ডিতেই ১২ বছর বয়সী একশিশু বিক্ষোভকারী মারা যায়, যার শরীরে আনুমানিক ২০০টি ধাতব গুলি বিদ্ধ হয়েছিল এবং সে রক্তক্ষরণে মারা যায়। অন্য অনেক শিশু স্থায়ীভাবে পঙ্গু হয়ে গেছে বা গুরুতর আহত হয়েছে। ১৬ বছর বয়সী এক কিশোর আওয়ামী লীগ সমর্থকদের ধাতবগুলির আঘাতে গুরুতর জখম হয়, ফলে তার একটি পা কেটে ফেলতে হয়। ১৭ বছর বয়সী আরেক কিশোর পুলিশের ধাতবগুলির আঘাতে উভয় চোখের দৃষ্টি হারায়।

নিহতদের মধ্যে কিশোর ছাড়াও কমবয়সী শিশুরাও ছিলো। সে বিষয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, সেসব শিশুরা বাবা-মার সঙ্গে বিক্ষোভে গিয়েছিল অথবা পথচারী হিসেবে সেখানে উপস্থিত ছিল। নারায়ণগঞ্জে ছয় বছর বয়সী এক মেয়ে তার বাসার ছাদে দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যায়, যখন সে সংঘর্ষ দেখছিল।

শিশুদের আটক নিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, শিশুদের নির্বিচারে গ্রেপ্তার করা হয় এবং প্রায়ই পুলিশ স্টেশন, গোয়েন্দা শাখার সদর দপ্তর এবং কারাগারে প্রাপ্ত বয়স্ক বন্দিদের সঙ্গে আটকে রাখা হয়। সেখানে তাদের ওপর চালানো হয় বিভিন্ন ধরনের নির্যাতন, সহিংস আচরণ এবং স্বীকারোক্তি আদায়ের জন্য জোরপূর্বক চাপ প্রয়োগ করা হয়। বেশ কয়েকজন কিশোরকে পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) সদর দপ্তরে অনেক প্রাপ্তবয়স্ক বন্দির সঙ্গে আটক রাখা হয়। রংপুরে ১৬ বছর বয়সী এক কিশোরকে ১৩ দিন ধরে আটক রাখা হয়। আরও শিশুসহ ছেলেটিকে শত শত লোকের সাথে রাখা হয়, যাদের পুলিশ কর্তৃক আবু সাঈদের হত্যাকে কেন্দ্র করে মিথ্যা অভিযোগের ভিত্তিতে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল।

তবে তখন যাত্রাবাড়ী এলাকার এক কিশোরকে আটক করা নিয়ে বেশ আলোচনা সমালোচনার ঝড় উঠেছিলো। সেই কিশোরকে নিয়ে জাতিসংঘের প্রতিবেদনে বলা হয়, ১৭ বছর বয়সী এক কিশোরকে যাত্রাবাড়ী থানায় দুইদিন ধরে নির্যাতন করা হয়, যাতে সে পুলিশের এক কর্মকর্তাকে হত্যার মিথ্যা স্বীকারোক্তি দেয়। এরপর তাকে গোয়েন্দা শাখার সদর দপ্তরে নিয়ে যাওয়া হয় এবং সেখানে আবার তার ওপর নির্যাতন চালানো হয়। আটক হওয়ার তিনদিন পর তাকে আদালতে হাজির করা হয়, যেখানে বিচারক তাকে আরও সাত দিনের রিমান্ডে পাঠানোর আদেশ দেন। যদিও তার আইনজীবী আদালতে উল্লেখ করেন যে, সে একজন ভুক্তভোগী শিশু। পরে গণমাধ্যমে ব্যাপক প্রচারের পর, অন্য এক বিচারক তাকে স্থানান্তরের নির্দেশ দেন ও শিশু আটক কেন্দ্রে রাখার আদেশ দেন, যেখানে সে ৬ আগস্ট পর্যন্ত বন্দি ছিল।

 

সর্বশেষ  গুরুত্বপূর্ণ  সব  সংবাদ, ছবি ,অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ও লেখা পেতে আমাদের  ফেসবুক পেইজে  লাইক  দিয়ে  অ্যাকটিভ  থাকুন।  ভিজিট করুন : http://www.etihad.news

* অনলাইন  নিউজ পোর্টাল  ইত্তেহাদ নিউজে  লিখতে  পারেন  আপনিও। লেখার বিষয়  ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন  [email protected] ঠিকানায় ।

সংবাদটি শেয়ার করুন....
ইত্তেহাদ নিউজ ডেস্ক :

ইত্তেহাদ নিউজ ডেস্ক :

About Author

etihad news is one of the famous Bangla news portals published from Abudhabi-UAE. It has begun with a commitment to fearless, investigative, informative, and independent journalism. This online portal has started to provide real-time news updates with maximum use of Smart Technology.