বাকেরগঞ্জ পৌর নির্বাহী প্রকৌশলী শহিদুল ইসলামের বিরুদ্ধে কোটি কোটি টাকার দুর্নীতির অভিযোগ


বরিশাল অফিস : বাকেরগঞ্জ পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী শহিদুল ইসলামের বিরুদ্ধে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয়দের দাবি, দীর্ঘদিন ধরে তিনি ক্ষমতার অপব্যবহার করে কোটি কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ গড়ে তুলেছেন এবং পৌরসভার উন্নয়ন কাজকে নিজের ব্যক্তিস্বার্থে ব্যবহার করেছেন। অভিযোগ রয়েছে, তিনি প্রায় এক দশক ধরে একই পদে বহাল থেকে নানা অনিয়ম করে যাচ্ছেন।
বিগত ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের শাসনামলে শহিদুল ইসলাম বাংলাদেশ আওয়ামী পৌর ইঞ্জিনিয়ারদের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। সেই রাজনৈতিক পরিচয় ও প্রভাব খাটিয়ে তিনি বাকেরগঞ্জ পৌরসভায় দীর্ঘ সময় ধরে অবস্থান নিশ্চিত করেন। সাধারণত সরকারি চাকরিতে এক জায়গায় দীর্ঘদিন থাকার নিয়ম না থাকলেও অজ্ঞাত কারণে তার ক্ষেত্রে এই নিয়মের ব্যতিক্রম ঘটেছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, তিনি পৌরসভার প্রায় ৫০ শতাংশ কাজ নিজেই বা আত্মীয়-স্বজনের নামে ঠিকাদারী নিয়ে সম্পন্ন করেছেন। এতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার বড় ধরনের সংকট তৈরি হয়েছে। বাকেরগঞ্জ থানা ব্রিজ থেকে সিনামাহল পর্যন্ত রাস্তা রিপিয়ারিং এর টেন্ডার হলে সেই কাজ তিনি নিজেই করেন টেন্ডার সিডিউল মোতাবেক ২৫ মিলি পিচ ঢালাই করার কথা থাকলেও শহিদুল ইঞ্জিনিয়ার তার ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে ১৫ মিলি পিচ ঢালাই দেয় যার কারনে ২/৩ মাস না যেতেই রাস্তার বিভিন্ন অংশ উঠে যাচ্ছে, বাকেরগঞ্জ পৌর মার্কেটের কাজেও তিনি নিজেই করেন কাজের গুণাগত নাম ছিল খুবই নিম্নমান, তার ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে এলজিইডি’র কাজ গারুড়িয়া পোড়া খান বাড়ি থেকে কলসকাঠি পর্যন্ত সড়ক নির্মাণ প্রকল্পের কাজ তার শালার লাইসেন্সে নেওয়া হয় এবং তিন-চার বছর আগে বিল উত্তোলন করা হলেও এখনো প্রকল্পের কাজ শেষ হয়নি।
শুধু তাই নয়, তার নামে-বেনামে বরিশাল শহরে ১০টি বাড়ি, একাধিক প্লট এবং তিনটি বিলাসবহুল গাড়ির মালিকানা রয়েছে বলে জানা গেছে। সাধারণ একজন সরকারি প্রকৌশলীর পক্ষে এসব সম্পদ অর্জন করা সম্ভব নয় বলে মন্তব্য করেন স্থানীয়রা।
একাধিক ঠিকাদার অভিযোগ করেছেন, শহিদুল ইসলাম পৌরসভার কোনো প্রকল্পে বিল পাস করাতে চাইলে তাকে প্রতি বিলের ৪ শতাংশ হারে ঘুষ দিতে হয়। এক ঠিকাদার নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, “ঘুষ না দিলে তিনি কোনো ফাইলে সই করেন না। বাধ্য হয়েই আমাদের দিতে হয়।” এছাড়া, তিনি ঢাকার বিভিন্ন দপ্তর থেকে প্রকল্প বা ফান্ড এনে দেওয়ার কথা বলে আলাদাভাবে ২ শতাংশ কমিশন নেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, ঠিকাদারি কাজ বিতরণের ক্ষেত্রেও অনিয়ম বিদ্যমান। মোটা অঙ্কের ঘুষ বা কমিশন ছাড়া কোনো কাজ কাউকে দেওয়া হয় না। এতে পৌরসভার প্রকৃত উন্নয়ন ব্যাহত হচ্ছে এবং জনগণের টাকায় প্রকল্প বাস্তবায়নে স্বচ্ছতা থাকছে না।
বাকেরগঞ্জ পৌরসভার সাধারণ জনগণ ও বিভিন্ন সচেতন মহল শহিদুল ইসলামের দুর্নীতির তদন্তপূর্বক কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন। তাদের মতে, একজন সরকারি কর্মকর্তা দীর্ঘদিন একই পদে থেকে যে হারে দুর্নীতিতে জড়িয়েছেন, তা রাষ্ট্রীয় প্রশাসন ও সুশাসনের জন্য হুমকিস্বরূপ। তারা দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও অন্যান্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন, যেন নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে এবং অপরাধীর শাস্তি নিশ্চিত হয়।
জনগণের অভিযোগ, শহিদুল ইসলামের দুর্নীতির কারণে বাকেরগঞ্জ পৌর এলাকার বাস্তব উন্নয়ন থেমে আছে, অথচ কাগজে-কলমে কাজ দেখিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। অবিলম্বে এসব অনিয়মের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে সাধারণ মানুষের মধ্যে সরকার ও প্রশাসনের প্রতি আস্থাহীনতা সৃষ্টি হবে।
সর্বশেষ গুরুত্বপূর্ণ সব সংবাদ, ছবি ,অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ও লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন। ভিজিট করুন : http://www.etihad.news
* অনলাইন নিউজ পোর্টাল ইত্তেহাদ নিউজে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায় ।